অক্সিজেন। পর্ব ২৩। লিখছেন সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

0

গত পর্বের পর

“মনও লাগেনা”

সন্ধে দিয়ে ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে মীরা ছাদে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিভুর মুখ বহুদিন দেখেনি। ভিডিও চ্যাটে দেখে।কিন্তু তাতে ঠিক মন ভরেনা।গতকাল রাতে ফোন হয়েছিল।বলল “এই পরিস্থিতিতে ভিসা পাওয়া যাচ্ছেনা। সবকিছু একটু খুলুক,তারপর যাওয়ার  চেষ্টা করব।”

সেইথেকে মনখারাপ হয়ে আছে তার।এবারেও বাধা পড়ল। ওর বয়স কম হল না ।এখনও বিয়ে হল  না।তাদের নিজেদেরও বয়স বাড়ছে। এরপরে তো সব দিক দিয়েই সমস্যা হবে। আত্মীয়স্বজনদের যা ছিরি। কাজের সময় কাউকেই পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না।

দুপুরে ভাত ধরে গিয়েছিল। রঞ্জিত হাসতে হাসতে বলল, “ছেলের জন্য অত মনখারাপ করো না।আসবে ঠিক। একটু দেরি হচ্ছে, এই যা।”

মীরা বিরক্ত হয়ে  বলেছিল, “হঠাৎ একথা? ভাত ধরে যাওয়ার  সঙ্গে বিভুর কী সম্পর্ক?”

“না।তাই বলছি।কাল থেকে দেখছি তো।একেবারে মুখ ভারী করে আছ।”

“ছেলের বিয়ের কথা ভেবেছ কিছু? দিব্যি আছ। খাচ্ছ দাচ্ছ ঘুমোচ্ছ।”মীরা সুযোগ পেয়ে শুনিয়েছিল।

“আরে ও তো তোমার ভাবনা।আমাকে ভাবতে হবে কেন?ছেলে ভাববে তুমি ভাববে।আমাকে যা বলবে করে দেব।”

মীরা বিরক্ত হয়ে ঘর থেকেই বলে, “ঠিক আছে। রাধাকে খাঁচা খুলে উড়িয়ে দিয়ে আমিও বাপেরবাড়ি চলে যাব।তখন বুঝবে।”

কিছুই বলেনি রঞ্জিত।মিটিমিটি হেসেছিল।মীরা জানে রঞ্জিত কিছু ভাববে না।সবটা তার ওপর ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত আছে। চিরকাল সবটা সামলে এলেও আজকাল ভয় পায় ও। কে জানে কোথাও কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা।

এদিকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়েছে।ছবি কাকীমার ছেলের বউএর হঠাৎ মাথাখারাপের মত হয়েছে। ওর চেহারাটা একটু শুকনো মত।মুখচোখ কাটাকাটা। অরূপ মানে ওর বরের মহিলা সংক্রান্ত গোলমাল আছে বলেই ভাবে ও। তেমন কিছু নয়।এদিক ওদিক তাকায়।একে ওকে দেখে।তারা সব মহিলা। ওর বউ অনেকদিন ধরেই লক্ষ করেছে হয়ত।এখন একে ওকে  গালাগালি দেওয়া শুরু করেছে।

প্রথম ঘটনাটা ঘটে অদ্ভুত ভাবে।এবাড়ির মধ্যে পাড়ার লোকেদের সঙ্গে তারই একটু বেশি মেলামেশা। তার কাছেই সবাই আসে যায়।সেদিন সন্ধেবেলা পাশের বাড়ির বিল্টুর বউ তার কাছে এসেছিল।এসে একচোট কান্নাকাটি করল।তার বক্তব্য শুনে মীরা অবাক।তাকে নাকি লতা মানে অরূপের বউ নাম করে ডেকে অশ্রাব্য গালাগাল দিয়েছে।

মূল কথা ছিল , “তুই জানলা খুলে এদিকে যদি তাকিয়ে দেখিস,আমি তোর চোখ গেলে দোব।আমার বরের দিকে নজর দেওয়ার মজা টের পাইয়ে দেব।”

আরো অনেককিছুই বলেছে। কিন্তু ও লজ্জায় সেসব বলল না। কি করে বলবে?বয়সে মীরা যে অনেকটাই বড়।

ওটা প্রথম ঘটনা।অরূপকে ডেকে পাঠিয়ে সাবধান করা হয়। কিন্তু ওখানেই শেষ নয়।এখন ওই ঘটনা নিত্যদিন ঘটছে।নয় অরূপের সঙ্গে চেঁচামিচি করছে,নয়ত পাড়ার কোন না কোন বউকে ধরে গালাগাল দিচ্ছে।ওকে সামলাতে বাড়িশুদ্ধু লোক হিমসিম খাচ্ছে।

সেদিন দ্বিজেনের বউ চুল এলো করে ছাদে চুল শুকোচ্ছিল।তাকে ধরে গালাগাল দিতে দ্বিজেন ছুটে এসে বাড়িশুধু লোককে শাসিয়ে গেল। ও বলে গেছে , “আমার বউকে ফারদার লতা বৌদি একটা কথা বললে আমি সোজা থানায় যাব।এসব যে সহ্য করে করুক,আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

ছবি কাকীমা বুঝি বোঝাতে গেসলেন। “মাথা গরম করে দু’একটা কথা বলে ফেলেছে।এবারটা ছাড়ান দাও,পরে আর করবেনা।”

শুনে দ্বিজেন বলে গেছে “ওসব আমাকে বলতে আসবেন না।আর একদিন আমার বউকে একটা কথা বললে সোজা পাগলা গারদে দিয়ে আসব।কথাটা মনে রাখবেন।”

বাড়ির পাশেই এসব গোলমাল অথচ এ বাড়ির সব লোকেরা কেমন নির্বিকার আছে।সবাই যে যার মত খাচ্ছে –দাচ্ছে, বেড়াতে যাচ্ছে।শুধু ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে মীরা। এমনকি রঞ্জিতেরও কোন হেলদোল নেই। সকালে যখন মীরা বলেছিল, “কী অসভ্যতা হচ্ছে! কি করে এটা থামানো যায় ভেবেছ?”

রঞ্জিত অম্লান বদনে বলল, “ও এখন থামবে না।মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।”

মাঝখান থেকে ওইসব চেঁচামিচি শুনে শুনে রাধার বোল ফুটেছে। সেদিন নিজের মনেই বলছিল, “নচ্ছার মেয়েছেলে,বজ্জাত,তুই জাহান্নমে যা।”

শুনে মীরা অবাক!রঞ্জিত হেসে বলল, “ওকে থামাও।দ্বিজেন এসে যাবে।”

কথাটা কিছু ভুল বলেনি।একদম লতার গলা নকল করে চেঁচাচ্ছিল ও।

লতা একেবারে বাড়ির না হলেও এই ফ্যামেলির লোক।বাড়ির পরিবেশ দিনদিন খারাপ হচ্ছে।তার মধ্যে ইন্ধন যোগাচ্ছে আশপাশের লোকজন।মাঝেমাঝে তার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা মনে হচ্ছে ।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই  নজরে এলো দুটো সাইকেল কুহুদের বাড়ির সামনে এসে থামল।একটাতে কুহু।অন্যটাতে একটি ছেলে।দুজনেই কুহুদের বাড়িতে ঢুকে গেল।ছেলেটি কী ওর বিশেষ কেউ?

নিজের লালিত স্বপ্নের কথা ভেবে একটু অস্থির লাগছিল মীরার।পরে এই ভেবে নিজেকে স্থির করল ,যা হবার তাই হয়।ভবিতব্য পালটে দেবার মালিক সে নয়।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *