খড়কুটোর জীবন : ক্রিং ক্রিং সাইকেল। পর্ব ১৯। লিখছেন সুপ্রিয় ঘোষ

0

রবি ঠাকুরের বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকে আজও বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে আছে সাইকেল। তবে দ্বিজেন্দ্রনাথ চালাতেন তিন চাকার ট্রাই সাইকেল। হাওয়া খেতে যেতেন চৌরঙ্গী অঞ্চলে। সে কথা অন্য। আমি বলবো খড়কুটোর জীবনে ক্রিং ক্রিং স্মৃতিগুলি। কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন তার
‘ একঝলক ‘ কবিতায় লিখছেন —
‘সাইকেলের চাকা
আমি তো তার ভিতর দিয়ে
ইচ্ছেগুলো ঘুরিয়ে আনি
পথের কাজ ওদের মনে রাখা। ‘

তো চলুক সাইকেল। স্মৃতির চক্কর। মনে আছে তখন আমি বেশ ছোটো। বাবা বা কাকারা মাঝে মাঝে আমাকে সাইকেল চড়াতো । মা সাইকেলের সামনের রডে একটা গামছা জড়িয়ে তার উপর বসিয়ে দিতো। চকচকে হ্যাণ্ডেলটা ধরে বসতাম। মাঝে মাঝে বেলটা বাজাতাম ক্রিং ক্রিং করে। সে এক মধুর সুর। কেউ সাইকেলের বেল বাজাতে বাজাতে বাড়ি ঢুকলেই ছুটে যেতাম। সাইকেল চড়ার নেশা এমন পেয়ে বসতো যে তখন যে-কারোর সাইকেল দেখলেই আমাকে একটু চাপতেই হবে। না হলেই বুক ভাসিয়ে আকুল কান্না। আর একটু বড়ো হতেই নিজেই উঠান জুড়ে ঠেলে নিয়ে বেড়াতাম বাড়ির একমাত্র সাইকেলটি। তারপর শুধু ঠেলা না। চালানো। বাঁহাতে হ্যান্ডেল আর ডানহাতের বাহুমূল সিটের উপর রেখে উপরের রডটা ধরে ত্রিভূজ কাঠামোর মাঝ দিয়ে ডানপা অপর দিকের প্যাডেলে রেখে ছ্যাক খেতে খেতে প্রথমে হাফ-প্যাডেল ,তারপর ফুল-প্যাডেল , তারপর বছর যেতে না যেতেই সিটে চেপে দুচাকায় দুনিয়া জয়। ঠোঁটে বাংলাদেশ বেতারে শোনা গান —
‘চলেরে আমার সাইকেল
হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া,
ঢাকা শহর দেখমু আজ দুইজনে
ঘুইরা ঘুইরা। ‘

গ্রামাঞ্চলে গত শতাব্দীর শেষের দশকেও কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তার হবু জামাতাকে যৌতুক হিসেবে সাইকেল, ঘড়ি, রেডিও ইত্যাদি উপহার দিতেন। এখন অবশ্য সাইকেলের জায়গা নিয়েছে মোটর বাইক , ঘড়ির বদলে মোবাইল। আহা ! পণেরও কী পরিবর্তন।বিবাহে পাওয়া নতুন সাইকেলে ধুলো উড়িয়ে রাস্তা দিয়ে চলে যেতো কত নববর। তা দেখে কত যুবক গোপন করতো দীর্ঘশ্বাস। তাই বলে সাইকেল প্রাপ্তির একমাত্র পন্থা বিবাহ ছিলো না। গ্রামের প্রায় অনেক বাড়িতেই প্রযোজনে কেনা হতো সাইকেল। বিড়ি চেয়ে খাওয়ার মতো তখন অনেকে একে অপরের সাইকেল চেয়ে নিয়ে যেতেন কোথাও যাবার জন্য। কোনো খরচ নেই, তাই সহজেই সাইকেল চাইলেই পাওয়া যেতো। এখন কেউ কারোর বাইকটা একটু চেয়ে দেখবেন তো। আচ্ছে দিনের জামানাতে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গাধা ধার দিতে না চাওয়ার অজুহাত পাবেন নিকট বন্ধুর কাছেও।

হাম্বার, র্যালে, হারকিউলিস, বি. এস. এ, হিরো, অ্যাটলাস, অ্যাভন, রেসিং, লেডি বার্ড কত না সেসব সাইকেলের নাম। সেসব নিয়ে এক এক জনের গর্ব কত। আজকের দিনের ল্যাম্বারঘিনি কার নিয়ে গর্ব করার মতো এক্কেবারে। গ্রামের ধনাঢ্য লোকেদের ছেলে- মেয়েরা লাল রেসিং সাইকেল আর লেডি বার্ড চেপে স্কুলে যেতো। আর আমরা নবারুণ কথিত ফ্যাতাড়ুর দল মদন আর ডি এস – এর মতো সব লণ্ডভণ্ড করার উদ্দেশ্যে স্কুলে গোপনে ওদের সাইকেলের হাওয়া খুলে দিয়ে অমন সাইকেল না পাওয়ার জ্বালাটা মেটাতাম । আমাদের রঙ চটা, মাডগার্ড ভাঙা সাইকেলে চেপে বসতাম তিন জন করে। জামার বোতাম খুলে ফ্যাঁত্ ফ্যাঁত্ সাঁই সাঁই করে মেঠো পথের রাঙা ধুলোয় খুশির রাশি ছড়িয়ে  দিতাম।

সাইকেল চালানো শেখার পর আমার প্রতিদিন সকালে দায়িত্ব ছিলো নিমাই মাস্টারের বাড়ি পেপার দিয়ে আসা। আমাদের গ্রামে কোনো খবরের কাগজ ওয়ালা আসতো না গঞ্জ থেকে দূরত্ব বেশি বলে। পাশের বড় আন্দুলিয়া থেকে নিমাই মাস্টার ‘ গণশক্তি ‘ পত্রিকা কিনতেন। বাবা বা বংশী দাদু প্রতি দিন বড় আন্দুলিয়া যাওয়ার কারণে সেই কাগজ সন্ধ্যা বেলা নিয়ে আসতো। সকালে কাকারা বা আমি সেই কাগজ পড়ে দিয়ে আসতাম মাস্টার বাড়িতে। সাইকেলের হ্যাণ্ডেলে ব্রেকের সরু রডের ফাঁকে ভাঁজ করে কাগজ গুঁজে নিয়ে প্যাডেলে ছ্যাঁকা খেতে খেতে পৌঁছে দিতাম কাগজ। কাগজ দিতে গিয়ে ঐ বাড়িতেই দেখা হয়ে যেতো আমাদের আলফা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেণু পিসির সঙ্গে। তিনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। সকালে গেলেই হাতে বিস্কুট বা লজেন্স তুলে দিতেন। ঐ বাড়িতে দুটো জিনিসে আমার একটু সময় অতিবাহিত হতো। এক খাঁচায় বন্দী টিয়া আর দুই উঠানে থাকা এক বিশালাকৃতির লোহার সিন্দুক। সিন্দুকটি নাকি খনন কার্যের ফলে পাওয়া গিয়েছিলো আমাদের গ্রামের স্কুল পাড়াতে রাজার ভিটা নামক উঁচু জায়গাটাতে । কৌতূহলী আমি সেই সিন্দুকটি নেড়েচেড়ে দেখতাম।

সাইকেল নিয়ে আমার বন্ধুদের মতো আমারও মাতামাতি কম ছিলো না। সাইকেল ধোয়া থেকে শুরু করে তেল দেওয়া সব কাজই করতাম। একবার রিমটাকে আরো চকচকে করার জন্য অ্যাসিড ঢেলে রিমের নিকেল গুলো তুলে ফেলে ছিলাম। সাইকেলে ক্যারিয়ার লাগানো, সামনে বাস্কেট বা লাইট লাগানো নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কম হতো না। টেপরেকর্ডার এর ক্যাসেটের ফিতে গুলো কেটে গোছা করে হ্যাণ্ডেলে লাগাতাম। সাইকেল নিয়ে বন্ধুরা কায়দাবাজিও কম করতাম না। হ্যাণ্ডেল ছেড়ে দিয়ে সাইকেল চালানো বা সাইকেলে সর্বাধিক কয়জন কে নিয়ে যাওয়া যায় বা কে কত আস্তে সাইকেল চালাতে পারে ইত্যাদি। সাইকেল নিয়ে রেসও হতো।  গ্রামে সাইকেল খেলা দেখাতে আসা নিজাম ভাই বা ফিরোজ ভাই হয়ে উঠতো অনেকে। তাদের সাইকেল নিয়ে দেখানো কসরত গুলো অভ্যাস করা ছিলো আমাদের আবশ্যিক কর্ম। বন্ধুরা মিলে মাঝে মাঝে চলে যেতাম গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে পিচ রাস্তা ধরে  বহু দূরে। রাস্তার দুই দিকে অর্জুন, সুবাবুল,বাবলার সাড়ি আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ। এক কিলোমিটার যাওয়ার পরেই বেতবেড়িয়া বাওর। টলটলে জল। নেমে পড়তাম সাইকেল থেকে। দেখতাম জলে মাছেদের আনাগোনা।জলের উপর ছায়া ফেলে পাখিরদের উড়ে যাওয়া। জ্বলন্ত সূর্যটা বেলা গড়াতেই  আস্তে আস্তে রঙ ছড়াতে ছড়াতে ডুবে যেতো বাওরের জলে।কোনো দিন বেতবেড়িয়া ছেড়ে চার কিলোমিটার দূরে চলে যেতাম বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম হৃদয়পুরে । বি. এস. এফ ক্যাম্প পেরিয়ে তারাকাঁটা ঘেরা দুই দেশের দৃষ্টির মাঝে। নির্জন এই সীমান্ত পথ সাধারণের নয়। বি. এস. এফ চৌকিতে অনুমতি নিয়ে আমরা যেতাম তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে ফেরার শর্তে। কাঁটাতারের মধ্যে কাশ ফুলের সমারোহ মাইলের পর মাইল। বর্ষায় ইতিউতি জমা জল। অপর পারে চোখ রেখে দেখতাম একই রকম মানুষ, গাছপালা, ফসলের মাঠ আর নীল আকাশ। পাখিরা কী ভালো। তাদের তারকাঁটার বেড়া নেই। এই এখন বাংলাদেশে তো এখনি ভারতে। ছোট্ট মনে উত্তর খুঁজে পেতাম না আমরা কেন পাখিদের মতো ওপারে যেতে পারি না। ফিরে আসতাম যখন তখন কাঁটাতারে উড়ে বেড়াতো প্রজাপতি এ-মন।
সাইকেল নিয়ে পাশের গ্রাম বানিয়াখড়ি থেকে আসতেন দিলীপ পিয়ন। ক্যাম্বিশের ব্যাগ কাঁধে সাইকেল থেকে নেমে তিনি হাঁক পড়তেন  — —ভীষ্মদেব বিশ্বাস তোমার চিঠি আছে। খুব মজার মানুষ ছিলেন। তার বাঁধানো দাঁতের পাটি ছিলো। আমরা বলতাম — দাঁত দেখাও। তিনি হাসি মুখে সেই দাঁত দেখাতেন। নকল দাঁত দেখে দিলীপ পিয়ন আর আমাদের আসল হাসিতে উচ্চকিত হয়ে উঠতো মহল। সাইকেলে দুধের ড্রাম বেঁধে দুধ দিতো কেষ্ট গোয়াল। সাইকেলে ঝাঁকা বেঁধে আসতো ফেরি ওয়ালার দল। দুই মন ধান সাইকেলের ক্যারিয়ারে বেঁধে নিয়ে চলে যেতো ফরের দল।

গ্রামে সাইকেল সারায়ের দোকান ছিলো গোপাল কাকা আর শিবু দাদুর। লিক সারাইয়ের কসরত ছিলো দেখার মতো। প্রথমত সাইকেলটাকে মাটিতে শুইয়ে টায়ারের ভিতর থেকে টিউব টিকে বার করে হাওয়া ভরে বালতির জলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে ক্ষতস্থান খুঁজে বার করা। সে যেন লখিন্দর -এর বাসর ঘরের ছিদ্র। তারপর চিহ্নিত স্থানটি কাঠের বাক্সের উপর রেখে লিকের মুখে ঝামা ঘষা অন্তে চকের চুন দেওয়া এবং সমাপ্তিতে সলিউশন আঠা লাগিয়ে পট্টি চাপা দিয়ে কাইচির হাতলের পেটাই। আবার হাওয়া ভরে বালতি জলে ডুবিয়ে চেক করে টায়ারের মধ্যে প্রবেশ করানো। মেয়েরা সাইকেলে হাওয়া দিতে পারতো না। বন্ধুরা সে কাজটি উৎসাহের সঙ্গে করে দিতো। দেখেছি পছন্দের মেয়েটির সাইকেল খারাপ হয়ে গেছে । ছেলিটিও সাইকেল থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল থেকে ফিরছে। তবে নিজের সাইকেলের হাওয়াটা সে নিজেই খুলেছে।

গ্রামে বাউলের আসর বসলেই এই গানটা অবশ্যই হতো —
‘ সাইকেলের দুইদিক চাকা, মধ্যে ফাঁকা
ভাইরে ভাই, চাপতে হবে ঠ্যাং তুলে
আয় আয় চড়বি কে ভাই কলির সাইকেলে। ‘
সহজিয়া গানে কত সহজেই এক হয়ে যেতো সাইকেল আর মানব জীবন। —
‘ও ভেবে ক্ষ্যাপা বাউল কয়
এই সাইকেল মানবদেহ হয়
আরে, লিক করে পাম্প বেরিয়ে যাবে
কখন কোন সময়। ‘ — সত্যই তো খাঁচার ভিতরের অচিন পাখি কখন উড়ে যাবে কেউ জানে না। তখন —
‘ সাধের গাড়ি পড়েই রবে
টানবে কুকুর -শেয়ালে । ‘
সাইকেলের উপমায় এমন জীবন সত্য পৃথিবীর আর কোথাও প্রকাশ পেয়েছে কিনা জানিনা।
গ্রামে অনেক ‘বাইসাইকেল থিভস’ ছিলো। লক করে রাখলেও কাঁধে করে নিয়ে চলে যেতো। ধরা খেয়ে অনেকে গ্রামের বিচার সভায় জমি বেচে জরিমানা দিতো। বারতি পাওনা থাকতো মার। এখনও চুরি হয় সাইকেল। তবে ততটা নয়। এখন হয় বাইক চুরি। তাতে চোরেদের লাভ বেশি। সাইকেলের সঙ্গে দেহতত্ব আর চোরের তত্ব আলাদা।
সাইকেল থাকবে আর অ্যাক্সিডেন্ট হবে না তা হয় না। নিজে সাইকেল চালাতে গিয়ে বহুবার উল্টে গিয়েছি, ধাক্কা খেয়েছি। নতুন বউকে ক্যারিয়ারে বসিয়ে আটবদনে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া বরকে উল্টে যেতে দেখে হেসেছি। বরের প্রেস্টিজ পাংচারের বদলে সাইকেল পাংচার হওয়া অনেক ভালো ছিলো মনে হয়েছে। কবি সুনির্মল বসু তাই মজা করে লিখেছিলেন —
‘বলিয়া গেছেন তাই মহাকবি মাইকেল,
যেওনা যেওনা সেথা যেথা চলে সাইকেল। ‘

সাইকেল নিয়ে একটা মজার স্মৃতি আছে। দু-হাজার আট সালের দিকের কথা। বি. এড পড়ি তখন বহরমপুর ইউনিয়ন ক্রিশ্চান ট্রেনিং কলেজে। এক বর্ষার দিনে অফ পিরিয়ডে বন্ধুরা যাদের মধ্যে অনেক ডেপুটেড দাদারা রয়েছেন – তো সকলে সাইকেল গ্যারেজের সেডের নীচে পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করছি। বিষণ্ণ মুখে এক বন্ধু দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো সে সাইকোলজির পেপারটা বুঝতে পারছে না। আমারও একই অবস্থা। আমি আবার ‘ মেণ্টালি ডিজ অর্ডার গাইডেন্স অ্যাণ্ড কাউন্সেলিং ইন স্কুল ‘ নামে অ্যাডিশনাল পেপার নিয়ে ছিলাম। বইপত্র এবং নোটস খুব একটা সুলভ নয়। সিনিয়র সুধাংশু দা বললেন — ‘ শোন, এটা কোনো সমস্যা নয়। মনে যা আসবে উত্তরগুলো লেখার সময় লিখবি।ইংরেজিতে লিখবি কোটেশন গুলো। সেও মনে যা আসবে। কিন্তু সাইকোলজিস্টদের নাম জানিস না তাই তো? সহজ। এই দেখ সাইকেলের পার্টস গুলো – টায়ার, টিউব এগুলোর সঙ্গে একটি করে ইংরাজী বর্ণ জুড়ে দিবি প্রথমে। এই ধর যেমন – ও. টায়ার, ইয়ান বেল, মাইক স্পোক, পি হ্যাণ্ডেল , এ. রিম, জে হবস, কে. গিয়ার, আর. প্যাডেল ইত্যাদি। এরাই হলেন পৃথিবী বিখ্যাত সব সাইকোলজিস্ট। ‘ শুনে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম সে সমাধান সূত্রে। প্রয়োগ এবং কাজ দুটোই হয়েছিলো। বুঝেছিলাম আমাদের বি. এড শিক্ষার অন্ত:সার শূন্যতা।তাহলে সাইকেল চেপে শুধু স্কুল-কলেজে যাওয়া নয়,পরীক্ষা পাশেও সাইকেল মাস্ট।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *