পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ৩। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

চুট উট্টি, কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড ও বৃক্ষচ্ছেদনের অনিঃশেষ উত্তরাধিকার

………………………………………………………………

‘হিডেন ক্রাইসিস’। পরিবেশকর্মী হত্যা সংক্রান্ত গ্লোবাল উইটনেসের প্রথম রিপোর্ট। ১৯ জুন, ২০১২। প্রেরণা কোথায়? সেই গল্পে আসার আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃক্ষচ্ছেদনের অনিঃশেষ জার্নি। লাল কাঁকুড়ে মাটি। হলুদ লতানে গাছ, দুর্মূল্য কাঠ এবং একজন মানুষের লড়াই। ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল কম্বোডিয়ার কার্ডামম মাউন্টেন সংলগ্ন মণ্ডল সেইমা জেলার ভিয়েল বেই পয়েন্টে খুন হন প্রখ্যাত পরিবেশকর্মী চুট উট্টি। গ্লোবাল উইটনেসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত চুটের হত্যার পরেই গ্লোবাল উইটনেসের নিয়মিত পরিবেশকর্মী হত্যা-ডেটাবেস তৈরি হচ্ছে।

প্রে ল্যাং অভয়ারণ্যে পরিবেশকর্মী চুট উট্টি (ছবিসূত্র – গ্লোবাল উইটনেস)

কম্বোডিয়ায় কাজ করা গ্লোবাল উইটনেসের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং পরে নিজের তৈরি ন্যাচারাল রিসোর্সের প্রোটেকশন গ্রুপের ডিরেক্টর, প্রাক্তন সেনাকর্মী চুট উট্টির লড়াই দীর্ঘদিনের। ২০০১-এ চুট ও অন্যান্যদের উদ্যোগে কার্ডামম পাহাড়ের ৪,০২০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত অরণ্যকে সেন্ট্রাল কার্ডামম প্রোটেক্টেড ফরেস্ট আখ্যা দিয়ে তার সংরক্ষণ শুরু হয়, নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় কম্বোডিয়া সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া-বেসড সংস্থা কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল। এবং সেখান থেকেই অন্ধকারের আয়রনি। আর্থিক উন্নয়ন, বিদেশি লগ্নি এবং কর্মসংস্থান – ফলাফল অরণ্য লোপাট। কম্বোডিয়ার অরণ্য খুঁজলে মূলত রোজউড ও ইয়েলো ভাইন গাছের যত্রতত্র ছেদন চোখে পড়বেই। এই লাল ক্রিমসন রঙের সায়ামিজ রোজউডের অন্যতম দাবিদার চীন এবং সেখানকার আন্টিক স্টাইলের হংমু ফার্নিচার। ভিয়েতনাম হয়ে চীনে যাওয়া এই কাঠের প্রতি টনের দাম ১৭,০০০ মার্কিন ডলার। এবং তার সঙ্গে আছে স্থানীয় অধিবাসীদের পেটের সমস্যায় বহুকাল ধরে ব্যবহৃত ওষধি গাছ ইয়েলো ভাইন বা কসিনিয়াম ফেনেস্ট্রেটাম, যার অবাধ ছেদনের অন্যতম কারণ এই ইয়েলো ভাইন বারবেরিন নামক অ্যান্টিডিপ্রেসিভ ড্রাগের উৎস। টিমবারগ্রিন ইনকর্পোরেশন মূলত এই বিলাসবহুল কাঠ ও ইয়েলো ভাইনের প্রোসেসিং প্ল্যান্ট হিসেবে কাজ করলেও পাশাপাশি চায়না ডাটাং কর্পোরেশনের হয়ে স্টুং রুসেই ক্রুম ও স্টুং টাটায় নামের দুটি বাঁধ তথা জলবিদ্যুৎ প্রোজেক্টের জন্য অবাধ জমি তৈরির জন্য বৃক্ষচ্ছেদনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে এসেছে। রাষ্ট্র ও কর্পোরেটের আইনি মধ্যস্থতায় শেষ হয়ে যায় সংরক্ষিত এলাকার অসংখ্য বৃক্ষ। টিমবারগ্রিনের কেটে রাখা এই পরিত্যক্ত গাছের অংশগুলি থেকে মূল্যবান অংশাবশেষ তুলে নিয়ে বাকি গাছগুলির নিথর, ‘কাজে না লাগা’ দেহাংশ পড়ে থাকে জমির পর জমিতে। এবং এই জমিতেই চায়না ডাটাং কোম্পানির জলাধার তৈরির জন্য বিপুল জল ছাড়ে। পরিণতিতে বীভৎস হারে গ্রিন হাউস গ্যাস মিথেন নিঃসরণ। নাহ, টিমবারগ্রিন এবং তার সহযোগী কর্পোরেট পৃথিবীতে একের পর এক অপরাধের শৃঙ্খল তৈরি করলেও রাষ্ট্রকর্তৃক শাস্তি হয়নি কিছুই। বরং ২০১২ সালে চুট হত্যার বছর প্ল্যান্টের কাজ বন্ধ করার আগে ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম-এর ধ্বজা নিয়ে কী আশ্চর্যভাবে ‘পুরস্কৃত’ হয়ে গেছে টিমবারগ্রিন। বিতর্কিত বাঁধগুলির কাজ নির্বিঘ্নে শেষ হয়ে গেছে ২০১৪ সালেই।

কো কং এলাকায় বৃক্ষচ্ছেদন করে তৈরি হওয়া স্টুং টাটে প্রোজেক্ট (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

মূলত ড্রাগের জন্য ইয়েলো ভাইনের অগাধ কর্তনের সন্দেহ চুটের বহুদিন ধরে ছিল। পাশাপাশি ওয়াচ ডগ হয়েও ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাওয়া তাঁর কার্ডামম পাহাড়, প্রিয় কম্বোডিয়া। প্রে ল্যাং অরণ্যের ঠিক গায়ে লাগানো কাম্পং থং প্রভিন্সে রবার প্ল্যান্টেশনের যত্রতত্র কাজ চলছিল রাষ্ট্র অনুমোদিত কোম্পানি মারফত। অবৈধ গাছ কাটার কিছু খবর পেয়ে ‘দ্য কম্বোডিয়া ডেইলি’-র দুই তরুণী সাংবাদিক ওলেশিয়া প্লোখি ও ফোর্ন বোফাকে এসকর্ট করে ক্রমশ লাল কাঁকুড়ে মাটিতে গাড়ি নিয়ে এগোচ্ছিলেন চুট। ‘ডেথ অফ আ ফরেস্টার’ কলামে ওলেশিয়া বলছেন ২০১২-র সেই ২৬ এপ্রিল ক্রমশ ডেথ জোনের কাছাকাছি পৌঁছে চিন্তিত ও অন্যমনস্ক হয়ে যান চুট। ইয়েলো ভাইনের পাউডার করা টনের পর টন। ছবি তোলার পর বচসা। বাকি সাংবাদিক সহ চুটেরও ক্যানন ক্যামেরা, মেমরি কার্ড কেড়ে নিয়েও শান্তি হল না সিকিউরিটি ও মিলিটারি অফিসারদের। গাড়ির ভেতর গুলি। অসম্ভব ভয়ে পালান দুই সাংবাদিক। ফিরে এসে দেখেন চুট এবং একজন মিলিটারি অফিসার রক্তাক্ত, মৃত পড়ে। রাষ্ট্রপ্রদত্ত ধামাচাপা কমিটি। তিন মাসের মধ্যে কেস ইজ ক্লোজড। বলা হল, চুটের হত্যাকারী মিলিটারি গার্ড নিজেই নিহত, তাই মামলা অপ্রয়োজনীয়। একের পর হাস্যকর ভার্সনে আরও আরও বড় মাথাকে অপরাধ থেকে ঢাকতে কী আশ্চর্য রাষ্ট্রীয় প্লট …

চুট থেকে আরও অনেক চুট। ২০১২-র ১৬ মে ক্লং জেলার ব্রোমা গ্রামে রবার প্ল্যান্টেশন ফার্মের জন্য ১৮০০ হেক্টর জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া গ্রামবাসীদের মিছিলে পুলিশের গুলি। পেটে এবং ঊরুতে গুলি লেগে চলে যায় ১৪ বছরের মেয়ে হেং চ্যান্থা। আটদিন পর ফমপেন বোয়েং কাক লেক এলাকার লাক্সারি প্রোজেক্টের জন্য চাইনিজ কোম্পানিকে জমি দেওয়া এবং নামমাত্র ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১৩ জন মহিলার প্রতিবাদ, গ্রেপ্তারি এবং বিনা বিচারে জেল, যাঁদের মধ্যে ছিলেন এক ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধাও। এই গ্রেপ্তারির সংখ্যা ২০১২-র তুলনায় ১৪৪ শতাংশ বেড়ে যায় ২০২১-এ। অভিশপ্ত ২০১২-র সেপ্টেম্বরে ‘ভোরাকচেন খমেহ’ ডেইলি পত্রিকার সাংবাদিক বছর চুয়াল্লিশের হ্যাং সেরেই ওউডোম আগের দিন স্ত্রীকে বললেন, অবৈধ বৃক্ষচ্ছেদনের একটা দুরন্ত লিড পেয়েছেন। পরের দিন অবৈধ গাছ সাফাইয়ের জন্য কুখ্যাত রাতানাকিরি প্রভিন্সের একটি কাজুবাগানের মধ্যে একটি গাড়ি পাওয়া গেল। গাড়ির ট্রাঙ্কে হ্যাং-এর নিথর শরীর, মাথায় কুঠারের গভীর ক্ষতচিহ্ন। ২০১৮-র ৩০ জানুয়ারি ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কর্মী থুল খোনা, সঙ্গে ফরেস্ট রেঞ্জার টিউর্ন সোকনাই ও পুলিশ এসকর্ট সেক ওয়াথানা পূর্ব কম্বোডিয়ার মন্ডুলকিরি প্রভিন্সের কেও সেইমা অভয়ারণ্যে একটি ইল্লিগাল লগিং ধরার পরেই ছিন্নভিন্ন, গুলিতে শেষ তিনজনই। প্রায় একইরকম ঘটনা ২০১৫-য় উত্তর পশ্চিম কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার সংরক্ষিত অরণ্যে রেঞ্জার সিয়েং ডারং এবং পুলিশ সাব ইয়োহ-র সঙ্গেও, অবৈধ একটি দলকে ধরে, জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার পর রাতেই ঘুমের মধ্যে গুলি, প্রতিশোধ। ২০১৬-র গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ পেলেন চুট পরবর্তী ন্যাচারাল রিসোর্সের প্রোটেকশন গ্রুপের ডিরেক্টর, নির্ভীক আন্দোলনকর্মী লেং আউচ। তখন থেকেই হেনস্থা শুরু। ২০২০-র ১৩ মার্চ আউচ, পরিবেশকর্মী মেন মাট এবং প্রে ল্যাং কমিউনিটি নেটওয়ার্কের সদস্য খেম সোকে ও স্রে থেই প্রে ল্যাং-এর বাইরে কারখানার লিজ পাওয়া থিক বায়োটেক কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন, মেন মাটকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করার চেষ্টা করা হল, অথচ পুরস্কার হিসেবে বিনা বিচারে কম্বোডিয়া পুলিশ মারফৎ এই চারজনকে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল জেলে। প্রসঙ্গত এই থিক বায়োটেক কোম্পানির মালিকের আগের একটি কোম্পানি ২০০১ সালে প্রিয়া বিহার অরণ্যে রেজিন ট্রি কাটার অপরাধে অভিযুক্ত হয়। পরে এই থিক বায়োটেক এবং আঙ্কোর প্লাইউডের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অবৈধ গাছ কাটার অভিযোগ ওঠে, সমস্ত অভিযোগ থেকেই বেকসুর খালাস হয়ে যায় রাষ্টীয়মদতপুষ্ট কর্পোরেট। প্রে ল্যাং অরণ্যে গাছে গাছে বৌদ্ধদের পবিত্র কাপড় বেঁধে অবৈধ লগারদের কিছুটা হলেও গাছ কাটার আগে দ্বিতীয়বার ভাবার জন্য বার্ষিক ট্রি সেরিমনি করেন প্রে ল্যাং কমিউনিটি নেটওয়ার্কের সদস্যরা। ২০২০-র ফেব্রুয়ারি সেই সেরিমনি করতে গিয়ে সংবিধানের আর্টিকল ১১-র দোহাই দিয়ে আটকে দিল পরিবেশ মন্ত্রক থেকে পাঠানো পুলিশবাহিনী। বলা হল, সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে বাইরের লোকেদের ঢোকা অসাংবিধানিক। আন্দোলনকর্মীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, প্রথমত কোর জোন ছাড়া যেকোনও এলাকায় যাওয়ার কোনও বাধা নেই, এবং আশ্চর্যের এটাই যে প্রে ল্যাং অরণ্যকে তেমন কোনও জোন-এ শ্রেণিবিভাগই করা হয়নি কখনও। অরণ্যে ঢুকে নজরদারি করতে ক্রমাগত প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা, প্রে ল্যাং নেটওয়ার্কের সদস্যরা বাধ্য হয়ে স্যাটেলাইট ইমেজারির সাহায্যে বৃক্ষচ্ছেদনে নজরদারির দ্বারস্থ হলেন, এবং সেখানেও বাধা। বলা হল, নিরাপত্তার খাতিরে নাকি রেজিস্টার্ড সংস্থা ছাড়া আর কারও স্যাটেলাইট ইমেজারির ব্যবহার বেআইনি। পিএলসিএন-কে রেজিস্ট্রেশনে প্রলুব্ধ করা হল। কারণ আর কিছুই না, একবার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সেই সংস্থার ওপর সরকারি নজরদারির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। রেজিস্ট্রেশন এড়াতে পিএলসিএনের লড়াই চলছে এখনও। এই রাষ্ট্রই ২০০৪ সালে গ্লোবাল উইটনেসকে দেশে অভ্যর্থনা জানালেও ২০০৫ সালে সংস্থার রিপোর্ট ‘টেকিং আ কাট – ইনস্টিটিউশনালাইজড কোরাপশন অ্যান্ড ইল্লিগাল লগিং ইন কম্বোডিয়া’জ অরাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি’ পড়ে বদলে যায় সেই রাষ্ট্রেরই চেহারা। পরিণতি ২০০৫-এর ২০ ফেব্রুয়ারি পোচেনতং এয়ারপোর্টে রিপোর্টটির ২,১০০ কপি বাজেয়াপ্ত করে আর কোনওদিন ছাপতে না দেওয়ার আদেশ এবং শেষমেশ সেবছরই গ্লোবাল উইটনেসের ৫ জন স্টাফকে দেশে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা, দেশে পা রাখলে হত্যার হুমকি – কণ্ঠরোধের পরাকাষ্ঠা হয়ে দেখা দিচ্ছে পরিবেশলুঠেরা প্রোকর্পোরেট কম্বোডিয়া।

কো কং প্রভিন্স, ২০২২। চুট উট্টির হত্যার সেই জায়গা। দশ বছর পর। (ছবিসূত্র – ভিওডি)

 

মধ্য কম্বোডিয়ার ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত প্রে ল্যাং অরণ্য অভয়ারণ্যের তকমা পায় ২০১৬ সালে। গাছ কাটার বিধিনিষেধ সেবছর থেকেই, এবং অবৈধ লগিং খুব স্বাভাবিক বাড়তে থাকে তখনই। পিএলসিএন-এর রিপোর্ট বলছে ২০০১ থেকে ২০১৮-র মধ্যে প্রে ল্যাং ইল্লিগাল লগিং-এ মোট ৪১,০০০ হেক্টর অরণ্য হারিয়েছে, যা মোট অভয়ারণ্যের শতকরা ১০ ভাগ। সামগ্রিকভাবে দেখলে কম্বোডিয়ার মোট বনভূমির শতকরা ৭৫ ভাগ লোপাট হয়েছে গত তিন দশকে। রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগিকালচার অর্গানাইজেশনের গ্লোবাল ফরেস্ট রিসোর্সেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট বলছে, ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় ফরেস্ট কভার ধ্বংস হয়েছে প্রতি বছর ১.১ শতাংশ বা ১,৪২,৫০০ হেক্টর হিসেবে মোট ২২ শতাংশ বা ২৮,৫০,০০০ হেক্টর। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ-এর রিপোর্ট বলছে, চুট উট্টির হত্যার পর থেকে আজ অবধি দেশে ১.৯৩ মিলিয়ন একর বা ৭,৮১,০০০ হেক্টর প্রাইমারি ফরেস্ট শেষ হয়ে গেছে, যা মোট ট্রি কভারের শতকরা ৫১ ভাগ। ট্রি কভারের এই ক্ষতির হিসেব ওই একই সময়সীমায় ১.৫৩ মিলিয়ন হেক্টর।

এখানেই চলে আসছে ইকোনমিক ল্যান্ড কনসেশন বা ইসিএল-এর ইতিহাস। কম্বোডিয়ান লিগ ফর দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড ডিফেন্স অফ হিউম্যান রাইটস এবং গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ-এর রিপোর্ট বলছে ১৯৯৮ সাল থেকে দারিদ্য দূরীকরণ, অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিপ্লব এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যে ইকোনমিক ল্যান্ড কনসেশন শুরু হয়েছিল কম্বোডিয়ায় এখনও অবধি সেই কাজে অধিগ্রহণ করা জমির হিসেব ২২ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৬৮ হেক্টর বা সংক্ষেপে ২.২৪ মিলিয়ন হেক্টর, যা দেশের ১৪ শতাংশ জমির মোট ৩৩৪টি কনসেশন প্রোজেক্টে ছড়িয়ে আছে, যার ভেতর ১০৪টি সরাসরি কোনও না কোনও সংরক্ষিত অরণ্যের ভেতর পড়ছে। সুগার, পাম অয়েল ইত্যাদি অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোজেক্টের নামে সরকারি উদ্যোগে নথিভুক্ত বৃক্ষচ্ছেদন ছাড়াও কখনও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য, কখনও বস্ত্র উৎপাদক কারখানার জ্বালানি হিসেবে চলছে দেদার অরণ্য লোপাট। ১৯৯৮ থেকে প্রতি বছর এই অধিগ্রহণ চলছে ১ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমি। ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক মরেটোরিয়াম অর্থাৎ নতুন কোনও কনসেশন না নেওয়ার ঘোষণা হলেও তারপর ২০১৪ এবং একদম সম্প্রতি ২০২৩-এর মে মাসে স্টুং ট্রেং প্রভিন্সে একটি কোরীয় কোম্পানিকে ৯,৭৮৮ হেক্টর জমির ইসিএল দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়েছে গত তেইশ বছরে এই কনসেশনের জন্য মোট ১,৭০,৮৪২ পরিবারের মোট ৭,৩৪,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকক্ষেত্রে সুগার প্ল্যান্টেশনের নামে কনসেশন নিয়ে সেইসমস্ত জমি বহু বছর ধরে পড়ে আছে প্রায় মৃতবৎ, অথচ জমিতে প্রবেশের অনুমতি নেই আদি বাসিন্দাদের। স্থানীয় মানুষের মতামত নেওয়া, কনসেশনের আগে করা বাধ্যতামূলক এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, কনসেশনের জন্য নেওয়া জমির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ – প্রায় সবকিছুই হয় হচ্ছে না বা হলেও নামমাত্র। যেমন ২০০৮-এ কো কং প্রভিন্সের বোটুম সাকোর ন্যাশনাল পার্কে দেওয়া দারা সাকোর নামের একটি লাক্সারি প্রোজেক্ট কনসেশন পেয়েছে চীনের তিয়াঞ্জিন ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ। আছে লাক্সারি হোটেল, ক্যাসিনো, গলফ কোর্স। উচ্ছেদ হওয়া আন্দোলনকর্মীরা বলছেন, আগে ভালো রাস্তা ছিল না, পেটে খাবার ছিল, কাজ ছিল, এখন রাস্তা হয়েছে, খাবার নেই, কাজ নেই।

কম্বোডিয়ার পিচ নিল অঞ্চলে অরণ্য পরিদর্শনে ব্যস্ত পরিবেশকর্মী লেং আউচ (ছবিসূত্র – গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ)

 

এবং পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। বাকি পৃথিবীর কাছে থাই মানে খাবার, রেসর্ট, সমুদ্র। পরিবেশ আন্দোলনের ইতিহাসে থাই মানে বৃক্ষচ্ছেদন, আদিবাসী উচ্ছেদ। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০০২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশ মোট ট্রি কভার এবং হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট হারিয়েছে যথাক্রমে ২.৪১ মিলিয়ন হেক্টর এবং ১৩১ কিলো হেক্টর। এবং বৃক্ষচ্ছেদনের পাশাপাশি বৃক্ষ বাঁচানোর ক্রুসেডরদের সরিয়ে দেওয়ার লেগ্যাসি। ২০১৪-র গ্লোবাল উইটনেস রিপোর্টে থাইল্যান্ডকে পরিবেশকর্মী হত্যার নিরিখে পৃথিবীর অষ্টম বিপজ্জনক দেশ এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এবং হত্যার সঙ্গে চলে আসে দেদার এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সের ঘটনা, কোথায় লুকোনো আছে শরীর, তার ট্রেসটুকুও নেই। ২০১২ থেকে ২০২১-এ মোট ১৩টি হত্যার রিপোর্ট পেয়েছে গ্লোবাল উইটনেস, যদিও নিরুদ্দেশের সংখ্যার তেমন কোনও ডেটাবেস নেই। সামান্য কয়েকটি এখানে ধরা যাক। এঁদের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে আলোচিত নাম এথনিক কারেন কমিউনিটি থেকে আসা তরুণ পরিবেশকর্মী পোর চা ‘বিলি’ রোকচাংচারেন। ক্রেং ক্রাচেন ন্যাশনাল পার্কের অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে বেআইনি উচ্ছেদ ও ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন বিলি। ২০১৪-র ১৭ এপ্রিল সেই ন্যাশনাল পার্কেই বেআইনি মধু আহরণে আটক করা হল বিলিকে, অথচ গ্রেপ্তারির কোনও রিপোর্ট জমা পড়ল না। সেদিনই শেষ দেখা গেছিল বিলিকে। ২০১৯-এর মে মাসে ন্যাশনাল পার্কের ভেতর একটি ২০০ লিটার অয়েল ট্যাঙ্কের নিচে মানুষের মাথার বাঁদিকের খুলির পুড়ে যাওয়া হাড়ের অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। বিলির মায়ের ডিএনএ-র সঙ্গে ম্যাচ করিয়ে বোঝা যায় এ হাড় কার! ২০১৯-এ অপহরণের পর কোনওক্রমে বেঁচে ফেরেন থাথালুং সাউথ প্রভিন্সের পাথরের খাদান নিয়ে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ করা পরিবেশকর্মী একাচি ইতসারাথা। ২০০৫-এর ১৭ জুন ফাং জেলার চায়াং মাই প্রভিন্সের অরণ্যের কাছে ছুরিকাহাত হয়ে চলে যান বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ফ্রা সুপোজ সুয়াজানো। তাঁর অপরাধ ছিল শান্তি ধম্মা মনাস্টেরির কাছে একটি অবৈধ গাছ কাটার চক্রকে ধরিয়ে দেওয়া, সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যথেচ্ছ জমি অধিকার নিয়ে সরব হওয়া। ২০১১-র ১১ জুলাই ও ২২ জুলাই সামুট সাখোন প্রভিন্সের একটি কোল ডিপো ও সেপারেশন ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ১০০০ জনের প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব এবং বেআইনি কয়লা ট্র্যাক্টর ধরার টিমের প্রধান উদ্যোগী ছিলেন পরিবেশকর্মী থংনাক সাবেকচিন্দা। পরিণতিতে ২৮ জুলাই পরপর ন’টা গুলিতে শেষ করে দেওয়া হল থংনাককে। ২০১৩-র ২৫ ফেব্রুয়ারি চাচেংসাও প্রভিন্সে দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টক্সিক বর্জ্য নিয়ে সোচ্চার থাকার অপরাধে দিনের আলোয় চার চারটে বুলেটে শেষ হয়ে যান পরিবেশকর্মী বছর তেতাল্লিশের কর্মী প্রোজাব নাও-ওপাস। পরিবেশ রক্ষা ও জমি অধিকার কর্মী এবং সাউথ পিস্যান্ট ফাউন্ডেশন অফ থাইল্যান্ডের সদস্য চাই চুনথাংলেক স্থানীয় জিউ কাং জুই পাম অয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে জমিবিবাদে সোচ্চার ছিলেন। ২০১৫-র ১১ ফেব্রুয়ারি গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান চুনথাংলেক।

পরিবেশকর্মী বিলি রোকচাংচারেনের দেহাংশ ৫ বছর পর খুঁজে পাওয়ার পর বিলির স্মরণসভায় তাঁর স্ত্রী পিন্নাফা (ছবিসূত্র – আল জাজিরা ও এ এফ পি)

 

সমস্ত আলোচনা ট্যুরিজম বৃত্তে ঘুরিয়ে দিয়ে লাক্সারিয়াস থাইল্যান্ড, ঐতিহাসিক কম্বোডিয়া ইত্যাদি চিরাচরিত বিস্মৃতিতে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও, স্থানীয় ক্ষেত্রে, বহু বহু পরিবেশ আন্দোলনকর্মী তাঁদের দৈনন্দিনতার ভেতর মনে রেখে দিচ্ছেন এইসমস্ত নাম। যেমন ব্যাঙ্ককের ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহক লুক ডুগলেবি প্রোটেকশন ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা থেকে দেশে পরিবেশকর্মী হত্যার ডেটাবেস খুঁজে সংস্থার এক কর্মীকে নিয়ে দেশের ৬০০০ মাইল অঞ্চল ঘুরে বেড়ালেন। নিহতদের ছবি সংগ্রহ করে ফ্রেমগুলি রাখলেন ঠিক হত্যার এলাকায়, কখনও রবার গাছের প্ল্যান্টেশনে, কখনও হাইওয়ের পাশে, কখনও পেট্রোল পাম্পে। এবং ওইভাবেই ফ্রেমগুলির ছবি তুলে জেনেভা শহরে ২০১৬ সাল থেকে আশ্চর্য এক প্রদর্শনী শুরু করলেন, যার নাম – ‘ফর দোজ হু ডায়েড ট্রায়িং’। গোটা পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় হল ফ্রেমে হাসা ক্রুসেডরদের। ২০২৩-এর ২৬ এপ্রিল চুট উট্টির এগারোতম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফমপেন শহরের ওয়াট বটুম পার্কে মিলিত হলেন বহু পরিবেশকর্মী, মুখে চুটের মাস্ক, হাতে পোস্টার, এখনও বিচার চাওয়ার আশায় তাকিয়ে আছেন তাঁরা। কম্বোডিয়ার লেং আউচের নির্ভীক লড়াইয়ে মৃত্যুভয়ের পাশাপাশি উঠে আসছে ২০১৪ সালে ভিরাচে ন্যাশনাল পার্কে দুটি কোম্পানিকে দেওয়া ২ লক্ষ জমি কনসেশন দিয়েও প্রবল আপত্তিতে প্রত্যাহার করে নেওয়ার এখনও জ্বলজ্বল করা স্মৃতি। তবু, কতদিনের লড়াই, কত দীর্ঘ? সামনে কোনও আলো নেই কেন? ১৯৮৬ সালে চেউ লাম ড্যাম ১৮৫ বর্গ কিলোমিটার চিরহরিৎ অরণ্য ভাসিয়ে দিলে শতাধিক পশুকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন ওয়াইল্ডলাইফ ইভাকুয়েশনের হেড সায়েব নাখাসাথিয়েন। হুয়াই খা খায়েং স্যাংচুয়ারির সুপারিন্ডেন্ট হয়েও অবৈধ চোরাকারবারি, এনক্রোচারদের হাতে সহকর্মীদের মৃত্যু দেখে দেখে ক্লান্ত মানুষটি মরণকামড় হিসেবে স্যাংচুয়ারিকে বাঁচাতে তাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৯১-এ হেরিটেজ সাইটের তকমা পায় স্যাংচুয়ারি। অবশ্য তার দেড় বছর আগে ১৯৯০-এর ১ সেপ্টেম্বর গানশটে আত্মঘাতী হন ক্লান্ত, সংরক্ষণকর্মী নাখাসাথিয়েন। তাহলে কি চেষ্টার পরেও এভাবে শেষ হওয়াটাই ডেস্টিনি? রাষ্ট্র, চোরাগোপ্তা লোভ বনাম ব্যক্তিগত বা ছোট ছোট জোটকেন্দ্রিক দৃঢ়বদ্ধ চেষ্টার অসম লড়াইয়ে কতটা লাভ আদৌ? চুট উট্টির বন্ধু, গ্লোবাল উইটনেসের মার্কাস হার্দকে বলেছিলেন – ‘কম্বোডিয়ার আরও অনেক চুট উট্টি প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক এটাই যে, এঁরা তখনই পরিচিতি পান যখন কাজ করতে গিয়ে নিহত হন এঁরা’। এবং সেইজন্যেই হয়তো ভয়ঙ্কররকম প্রাসঙ্গিক ইকুয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম না করে একটি পরিবেশ সংস্থার কর্মীর সেইসমস্ত কথা –

 

‘ইট ইজ জাস্ট আ ম্যাটার অফ টাইম আনটিল ইট অল ডিজঅ্যাপিয়ায়ার্স, গিভেন দ্য লেভেল অফ গ্রিড ইনভলভড। নো সেনসিবল রেঞ্জার উইল পুট হিমসেলফ ইন হার্মস ওয়ে ফর আ স্যালারি অফ টুহান্ড্রেড ইউএস ডলার পার মান্থ। […] দেয়ার ইজ নো গ্লোরি ইন সেভিং দ্য ফরেস্ট …’

থাইল্যান্ডের একটি প্রদর্শনীর জন্য রাখা লুক ডুগলেবি’র ছবি সিরিজ ‘ফর দোজ হু ডায়েড ট্রায়িং’

 

২০২৩-এর ২৬ এপ্রিল চুট উট্টির এগারো মৃত্যুবার্ষিকীতে বিচারের দাবিতে ফমপেন শহরে পথসভা, জমায়েত

 

ঋণস্বীকার

১. Brook Jack, Sarath Som. Government approves new economic land concession despite moratorium, conflict ensues. Comboja News. January 16, 2023.

. Campaign Update – Cambodia: Teenage girl killed in land demonstration. Cultural Survival. May 25, 2012.

৩. Cambodia Land Concessions. Global Forest Watch. November 7, 2020.

৪. Cohen, Josie. Five Years since the murder of our friend Chut Wutty. Global Witness. April, 2017.

৫. Camps, Francois. The intractable problem of land grabbing in Cambodia. Equal Times. December 11, 2023.

৬. Dara, Mech & Keeton-Olsen, Danielle. Forest crusador’s death couldn’t stop destruction in cardamoms. VOD. April 25, 2022.

৭. Davies, Jack. Cambodia: where saving the forests is a matter of life and death. Equal Times. April 18, 2018.

৮. Flynn, Gerald. Calls grow to repurpose land squandered in Cambodia’s concession policy. November 8, 2023.

৯. Flynn, Gerald. Cambodian activists commemorate 11th anniversary of Chut Wutty’s murder. Mongabay. April 28, 2023.

১০. Flynn, Gerald & Ball, Andy. Forests in the Furnace: Cambodians risking life and liberty to fuel garment factories. Mongabay. July 13, 2023.

১১. Global Witness calls for end to judicial harassment of prize winning Cambodian activist Ouch Leng and environmental defenders protecting Cambodia’s climate-critical Prey Lang Forest. Global Witness Press Release. March 16, 2020.

১২. Hance, Jeremy. Environmental journalist investigating illegal logging murdered in Cambodia. Mongabay. September 13, 2012.

১৩. Kakonen, Mira & Touan, Try. Overlapping zones of exclusion: carbon markets, corporate hydropower enclaves and timber extraction in Cambodia. The Journal of Peasant Studies. July 17, 2018.

১৪. Macinnes, Megan. Threats against Cambodian forest defenders escalate amid Covid-19. Global Witness. May 21, 2020.

১৫. Meet Lengh Ouch. Goldman Environmental Prize. 2016.

১৬. Mydans, Seth. Murdered after defending Thailand’s environment. New York Times. May 23, 2016.

১৭. Plokhii, Oleisia. Death of a forester. Newsweek. April 27, 2012.

১৮. Quinley, Caleb. Thai activists risk murder, abduction in fight for land rights. Aljazeera. September 24, 2019.

১৯. Thailand: investigate murder of environmentalist. Human Rights Watch. July 30, 2011.

 

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *