পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ১৩। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

পেরু, বলিভিয়া, চিলিএডুইন চোটা অন্যান্য উত্তরাধিকার

পেরুর সায়েটো গ্রামের নিহত আসানিঙ্কা আদিবাসী পরিবেশকর্মী এডুইন চোটা (ছবিসূত্র – গ্লোবাল উইটনেস)

লেখক লুইস সেপুলভেদার কথা হচ্ছিল। ক্ষতকে জড়িয়ে ধরার গল্পে লুইসের নিজের দেশ চিলির অবস্থান। অ্যালবার্তো কুরামিল। দেশের বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী মাপুচে’দের প্রতিনিধি। ‘মাপুচে’ মানে ‘পিপল অফ দ্য লান্ড’। জমি কাড়তে দেবো না। এবং এ প্রসঙ্গে দেশের পরিবেশ-হত্যার লেগ্যাসি। ফ্যাসিস্ট পিনোশেত সরকারের তিরিশ বছরের কুখ্যাতির মাঝেই দেশের জলসম্পদের বেসরকারিকরণ। ১৯৮১-র ন্যাশনাল ওয়াটার কোড। আদিবাসীদের জল, নদী আর তাঁদের নয়, বহুজাতিকের। ২০১০ থেকে ২০১৫-র মাঝে দেশব্যাপী অস্বাভাবিক খরা মেটাতে বৃহত্তর এনার্জি প্ল্যানের অন্তর্গত ৪০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, যার অন্যতম দেশের দরিদ্রতম ডিভিশন মধ্য চিলির অ্যারাউকেনিয়ার কটিন নদীর ওপর দেওয়া দুটি প্রকল্প – অল্টো কটিন এবং ডোনা অ্যালিসিয়া প্রোজেক্ট। কটিন নদী থেকে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন গ্যালন তুলে নেওয়ার মারাত্মক প্রচেষ্টা। সেডিমেন্টেশন, কৃষিজ সম্পদের তুমুল ক্ষতি, বৃক্ষচ্ছেদনের গোড়া তৈরি এবং সামগ্রিকভাবে স্থানীয় মাপুচেদের গৃহহীনতা – বিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিলেন অ্যালবার্তো কুরামিল। সংঘবদ্ধ প্রতিরোধে ২০১৬-র মে-তে অল্টো কটিন এবং ডিসেম্বরে ডোনা অ্যালিসিয়া প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে যায় মাপুচে’দের সঙ্গে কোনওরকম প্রাক-আলোচনা না করার অপরাধে। এইসব জয়ের পেছনে জয়ের কাণ্ডারিদের ওপর ব্যক্তিগত থ্রেট কাজ করে। ২০১৪ ও ২০১৮-য় অ্যালবার্তোর গ্রেপ্তারি, যার ভেতর দ্বিতীয়টিতে ১৫ মাসের জেল খাটিয়ে একটি প্রমাণবিহীন চুরির মামলায় ফাঁসানো। এবং ভয়ঙ্করতম ২০২১-এর ২৯ এপ্রিল। অ্যারাউকেনিয়ার পারকোয়েঞ্চা শহরতলিতে মাপুচে’দের ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ প্রতিবাদে অ্যালবার্তোর গোটা শরীরে ঢুকেছিল ১৮টি পুলিশি বুলেট – তবু, টিকে আছেন অ্যালবার্তো। পেয়েছেন ২০১৯-এর গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ।

মাপুচে কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় পরিবেশকর্মী অ্যালবার্তো কুরামিল (ছবিসূত্র – গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ)

ফেরেননি জেভিয়েরা রোজাস। বছর তেতাল্লিশের তরুণী জেভিয়েরা ২০১৬ সালে তুমুল প্রতিবাদে বন্ধ হয়ে যাওয়া লা ট্রাঙ্কা রিজার্ভার বিরোধী সফল আন্দোলনের অংশ ছিলেন। বিরোধিতা করে এসেছেন প্রাইম থার্মোইলেকট্রিক প্রোজেক্ট নিয়েও। নিজের এল ডোরাজনো শহরের একাধিক বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনে জেভিয়েরা ছিলেন পরিচিত মুখ। ২০২১-এর ২৮ নভেম্বর আটাকামা মরুভূমি ঘেঁষা আন্তোফাগাস্তা অঞ্চলের কালামা শহরের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর জেভিয়েরার অত্যাচারিত শরীর খুঁজে পাওয়া যায়। ফেমিসাইড নাকি পরিবেশকর্মী হত্যার স্রেফ প্লাস ওয়ান – উত্তর নেই। মাঝখান থেকে ২০০১ থেকে ২০২৩-এর ভেতর দেশজুড়ে শেষ হয়েছে মোট ২.৩৫ মিলিয়ন হেক্টর ট্রি কভার, যা ২০০০ সালের হিসেবে ১২ শতাংশ কম। এবং দেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর দুই বৃক্ষচ্ছেদক অঞ্চল বায়ো বায়ো এবং অ্যালবার্তো কুরামিলের সেই অ্যারাউকেনিয়া, ধ্বংসের পরিমাণ যথাক্রমে ৬৭৯ ও ৪৮৮ কিলোহেক্টর।

পড়শি দেশ বলিভিয়ায় বৃক্ষচ্ছেদন সীমানা ছাড়িয়েছে বহুদিন। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের রিপোর্টে ২০০২ থেকে ২০২৩-এর মাঝে দেশ হারিয়েছে ৪.১৯ মিলিয়ন হেক্টর হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট, যা ওইসময়ের মোট ট্রি কভার লসের (৭.৯৭ মিলিয়ন হেক্টর) ৫৪ শতাংশ। ৫.৩৬ মিলিয়ন হেক্টর অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ ট্রি কভার শেষ হয়েছে ‘ডেডলি’ সান্টা ক্রুজ অঞ্চলেই। ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার অফ বলিভিয়া (সেডিব) সংস্থার রিপোর্টে ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে ২০২২-এর মে পর্যন্ত পরিবেশ ও জমি অধিকার কর্মীদের ওপর ১৯১টি আক্রমণ হয়েছে, যার ভেতর শিকার কিন্তু মাত্র ৩৮ জন। অর্থাৎ একই ব্যক্তির ওপর এসেছে একাধিক আক্রমণের ঘটনা। দেখা যাচ্ছে সেই ৩৮-এর ৪ জন মাইনিং, ৯ জন জলবিদ্যুৎ ও ৫ জন পরিকাঠামোগত প্রকল্পেবিরোধী পরিবেশ-আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। এবং সেই ১৯১-এর ভেতর কাটাছেঁড়া করলে সেডিব-এর হিসেব বলছে ৪৫ শতাংশ ও ২৯ শতাংশ আক্রমণ এসেছে যথাক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারি মদতে, ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী কোম্পানিগুলি, ৬ শতাংশে আক্রমণকারী দেশের পুলিশ ও মিলিটারি শক্তি এবং বাকি ৪ শতাংশের জন্য দায়ী এক বা একাধিক অংশ যারা ব্যক্তিগতভাবে পরিবেশ-আন্দোলন বিরোধী। দৃষ্টান্তস্বরূপ মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক ঘেঁষা আমাজনীয় বলিভিয়ার বেনি নদী উপত্যকা। চেপেটে-এল বালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দুটি বাঁধ – প্রকল্প রূপায়িত হলে উচ্ছেদ হতে পারেন ৫,০০০ আদিবাসী। রাজধানী লা পাজের সাতগুণ অঞ্চল চলে যেতে পারে জলের নিচে। টেন্ডার ডেকে দেখা হচ্ছে এলাকার সিসমিক এবং প্রযুক্তিগত দিক। ওই ৫,০০০ চোখ—নাক-মুখ বেনির জলের দিকে তাকিয়ে। অন্যদিকে গ্লোবাল উইটনেস থেকে প্রকাশিত ২০২৩-এর একটি রিপোর্টে দেশের ২০,০০০ হেক্টর বৃক্ষচ্ছেদন ও সয় ফার্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মার্কিন ফুড জায়ান্ট কার্গিল কোম্পানির নাম।

ওপর থেকে তোলা মাদিদি ন্যাশনাল পার্কের দৃশ্য (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

মাদিদি-র কথা হচ্ছিল। গ্রহের মোট পাখির ১০ শতাংশেরও বেশি আছে মাদিদি’তে। আছে ১০,০০০ প্রজাতির প্রজাপতি, মথ। মাদিদির ১.৮ মিলিয়ন হেক্টর অরণ্যের মোট রেঞ্জার মাত্র ২৬। কাছেই অ্যামবোরো ন্যাশনাল পার্কের ৬,৩৭,০০০ হেক্টরে মাত্র ৯ জন রেঞ্জার। এই রিসোর্স নিয়ে কিভাবে সম্ভব বাঁচানো অরণ্য সংরক্ষণ? অ্যামবোরো-মাদিদি বায়োডাইভারসিটি করিডর স্থানীয়ভাবে ‘মারা’ নামে পরিচিত বিগ-লিফ মেহগনি গাছের হটস্পট। আইইউসিএন-এর রেড লিস্টে ‘ভালনারেবল’ পর্যায়ভুক্ত এক একটি ‘মারা’ বেঁচে থাকে প্রায় একশ বছর। ১৬৫ ফুট উঁচু মারা’র চকচকে মোটা গুঁড়ি, দামি কাঠ। ‘আপনা মাংসে হরিণী বৈরি’। কাঠের রপ্তানি ২০১১ থেকেই নিষিদ্ধ বলিভিয়ায়। ফলত চলছে চোরাগোপ্তা গাছ কাটা এবং পাচার। পাশাপাশি রেঞ্জারদের ওপর থ্রেট, একাধিক হত্যার চেষ্টা। বলিভিয়ার বাজারে প্রতি বোর্ড ফুটে মেহগনির দাম ১৫-১৬ বলিভিয়ান সল (২.২-২.৩ মার্কিন ডলার)। আর এই দেদার মেহগনি কাঠ পাচার হচ্ছে পেরু, ব্রাজিল হয়ে সমুদ্রপারে। মাদিদির কাছে মারা গাছের অন্যতম হটস্পট কলোরাডো নদী উপত্যকায় নেমে আসছে লগারদের করাত, যে কলোরাডো উপত্যকা দেশের অন্যতম ‘আনকন্টাক্টেড ট্রাইব’ টরোমোনাস-দের ঘর, আকাশ – অবৈধ গাছ কাটার চক্রে অস্তিত্ব সঙ্কটে এরাও। এর সঙ্গেই কুখ্যাত বৃক্ষচ্ছেদক সান্টা ক্রুজ অঞ্চলের ৬৫টি পরিবার নিয়ে টিকে থাকা মাদিদি সংলগ্ন টাম্বোপাতা নদীতীরবর্তী সান ফারমিন কমিউনিটির কোকো চাষ। কোকো চাষে লাভ, দেশের দারিদ্র, কোকেন ব্যবসা এবং ড্রাগ কার্টেল – সমস্ত প্রভাব পড়ছে আমাজনীয় বলিভিয়ায়। ২০১৬ সালে সরকার থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল সান ফারমিন, কোকোস ল্যাঞ্জা, কলোরাডো কমিউনিটির ৫০ হেক্টর বেআইনি কোকো প্ল্যান্টেশন। ওইটুকুই। অন্তত তারপর রাষ্ট্রকর্তৃক বড় আকারে রেইড আর শোনা যায়নি। বরং দেশের সর্বোচ্চ অংশ থেকে কোকো চাষের সরাসরি মদত চলে এসেছে। দেদার গাছ কেটে কোকো-কোকেন চক্রের ‘ইকোনমিক রিফর্ম’ তত্ত্বের ফ্যানফেয়ার ঢেকে দিয়েছে মুষ্টিমেয় পরিবেশ-আন্দোলনকে।

কলোরাডো নদীর ধারে কেটে নেওয়া অসংখ্য ‘মারা’ গাছ (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

এবং পেরু। পরিবেশকর্মীহত্যার দিগন্তবিস্তৃত ইতিহাস। গ্লোবাল উইটনেস বলছে ২০২১-এর ৭ জনকে ধরলে ২০১২ থেকে ২০২১-এর মধ্যে চলে গেছেন ৫১ জন। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কো-অর্ডিনেটর অফ পেরুর সমীক্ষা বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৩-এ নিহত হয়েছেন ১৫ জন পরিবেশকর্মী, যার অধিকাংশই আদিবাসী – এই রিপোর্টেই ২০১২ থেকে ২০১৯-এর ৭ বছরে ৭টি হত্যার পাশে আশ্চর্যজনক ভয়ঙ্কর ২০২০ থেকে ২০২১-এর মধ্যে মাত্র এক বছরে ৯টি হত্যার হিসেব। এবং বৃক্ষ বাঁচাও কর্মীদের সঙ্গে বৃক্ষলোপাটের হিসেব। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের হিসেবে ২০০২ থেকে ২০২৩-এ শেষ হয়েছে ২.৬২ মিলিয়ন হেক্টর হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট, যা মোট ট্রি কভার লসের (৪.০৮ মিলিয়ন হেক্টর) ৬৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৃক্ষচ্ছেদন হয়েছে লরেটো, উকায়ালি ও সান মার্টিনে, যথাক্রমে ৮৮৯, ৭৯০ ও ৭১৯ কিলোহেক্টর। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের রিপোর্টে ১৯৯০-এ দেশের মোট ৫৯.৭ শতাংশ ফরেস্ট কভার ২০২১-এর সাম্প্রতিকতম হিসেবে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৪ শতাংশে। প্রসঙ্গত, এনজিও এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এই উকায়ালিতেই ২০১২ থেকে ১৩০ বর্গকিলোমিটার অরণ্য লোপাট করেছে ওকো সুর কোম্পানির পাম অয়েল মনোকালচার ফার্ম, প্রোডাক্ট চলে গেছে কেলগ, কোলগেট, নেসলে’র মতো বহুজাতিকের কাছে। অন্তত ৩০০টি প্রজাতির গাছে ঘেরা এই উকায়ালিতেই আন্দিজ পাহাড় মিশেছে আমাজন অববাহিকায় – গ্রহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জীববৈচিত্রের ‘ডেন’, বিপন্ন পেরুভিয়ান স্পাইডার মাঙ্কি, জায়ান্ট অ্যান্ট-ইটার – সঙ্কটে সবাই।

বাজেয়াপ্ত করা গাছের কেটে রাখা গুঁড়ির সামনে এডুইন চোটা (ছবিসূত্র – নিউ ইয়র্ক টাইমস)

পেরুর পরিবেশ আন্দোলন সংক্রান্ত বেশ কিছু ফুটেজ, রিপোর্ট ঘাঁটলে দেখা যায় ২০১৩-র এক পেরুভিয়ান গ্রামে ৭৫০-৮০০ বাজেয়াপ্ত গাছের গুঁড়ির পাশ দিয়ে হাঁটছেন সাদা পোশাকের এক দৃঢ়, স্থিতধী পরিবেশকর্মীর মুখ। বলছেন – ‘এদেশে আইন নেই, তদন্ত করার টাকা নেই, শুধু ধ্বংস করার টাকা আছে’। এসেছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একাধিক খবরে। ব্রাজিল সীমান্তে পেরুর অলটো-তামায়া নদী সংলগ্ন সায়েটো গ্রামের আসানিঙ্কো কমিউনিটির সেই পরিবেশকর্মী এডুইন চোটা ভ্যালেরা দীর্ঘ পরিবেশ আন্দোলনের তীব্র উচ্চতায় উঠলেন ২০১৩-র আগস্টে। উকায়ালির সদর শহর পাকুলপার থানায় একাধিক অবৈধ লগারদের ছবিসহ পুলিশি অভিযোগ করলেন। ২০১৪-র ১ সেপ্টেম্বর আরও তিন আসানিঙ্কা পরিবেশকর্মী জর্জে রায়স পেরেজ, লেওনসিও কুইন্টিসিমা মেলেন্ডেজ, ফ্রান্সিসকো পিনেডো রামিরেজের সঙ্গে ব্রাজিলের কিছু আন্দোলনকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। দেখা আর হয়নি। স্বামীর হত্যার রিপোর্ট সদর শহরের থানায় জমা দিতে আসেন স্ত্রী জুলিয়া পেরেজ, টানা ছ’দিন জার্নি করে। শোক কখনও অদম্য কাঠিন্যের জন্ম দেয়। দেশের প্রথম প্রাইভেট নেচার রিজার্ভ ৩৪০ বর্গকিলোমিটার শুষ্ক ক্রান্তীয় অরণ্যের ‘চাপেরি ইকোলজিকাল রিজার্ভ’ আকস্মিক খবরে আসে ২০১৭-য়। লাতিন আমেরিকার একমাত্র দেশীয় ভালুক স্পেক্ট্যালড বিয়ার বা এককালে বিলুপ্ত বলে ধরা হলেও পরে খুঁজে পাওয়া হোয়াইট-উইংড গুয়ান পাখির হটস্পট চাপেরি রিজার্ভে কমিউনিটি নেতা, লেফটেনান্ট গভর্নর, এলাকার অন্যতম সক্রিয় পরিবেশকর্মী হোসে নেপোলিয়ন টারিল্লো আস্তোনিতাসের ওপর পারিবারিক ফেটাল আক্রমণ আসে ২০১৭-র ৩০ ডিসেম্বর। নিজে কোনওক্রমে বেঁচে গেলেও ইলেকট্রিক তার দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশকর্মী স্বামীর মারণ-চিৎকারের স্মৃতিতে বাকি জীবন অভিশপ্ত হয়ে যায় হোসে’র স্ত্রীর। ২০২০-র ১২ নভেম্বর কাকাতাইবো আদিবাসী নেতা পরিবেশকর্মী আরবিল্ডো মেলেন্ডেজ নিহত হন। বোন সরিতার স্মৃতিতে ভাসছে দাদার শেষ কথাগুলো – নিরাপত্তার জন্য সদর শহর পুকালপায় চলে আসতে বলা হয়েছিল পরিবার থেকে, কমিউনিটির উনিপুকাইয়াকু ছেয়ে, অরণ্য বাঁচাও আন্দোলন ছেড়ে, জমি অধিকার ছেড়ে বেরোতে রাজি হননি আরবিল্ডো। ড্রাগ পাচার, কোকো চাষ – জমির ওপর বেদখলের চোরাগোপ্তা চেষ্টা চলছিলই। দৃঢ় আরবিল্ডো বোনকে বলেছিলেন, ‘আমার রক্তের বদলে ওরা আমার জমি পাবে।’ কাকাতাইবো আদিবাসী অংশ থেকে আরও কিছু শিকার। ২০২১-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি নিহত হন যথাক্রমে পুয়ের্তো নোভো কমিউনিটির কর্মী ইয়েনেস রায়স বোনসানো এবং সিঞ্চি রোকা কমিউনিটির নেতা তরুণ হেরাসমো গারসিয়া গ্রাউ। দুজনেই ফরেস্ট পেট্রোলার, টহল দিতেন পেরুভিয়ান আমাজনে। পরের মাসে (১২ মার্চ) দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ক্রমশ ডেথ-থ্রেট পাওয়া আসানিঙ্কা আদিবাসী বৃদ্ধা বছর পঞ্চান্ন’র এস্তেলা ক্যাসান্টো মরিসিওর কোকো পাতা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করা শরীর পাওয়া যায় পেরান উপত্যাকায় তাঁর বাড়ির কাছেই। এস্তেলা পরিবেশ আন্দোলন, জমি অধিকার রক্ষা ছাড়াও এলাকার ট্রাডিশনাল হিলার ছিলেন, অরণ্য, গাছ, শেকড় চিনতেন হাতের তালুর মতো। সান্তা রোসিল্লো ডি ইয়ানাইয়ুকা কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট কিচোয়া আদিবাসীদের প্রতিনিধি দেশের অন্যতম পরিবেশ-কর্মী কুইন্টা ইনুমা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। জিপিএস ট্র্যাকার দিয়ে গাছ কাটা ধরার ‘আপু প্রোজেক্ট’-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত কুইন্টা ২০২৩-এর ২৯ নভেম্বর নৌকা করে অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে বৃক্ষচ্ছেদন-বিরোধী মিটিং সেরে ফিরছিলেন। বিকেল পাঁচটায় নৌকা আটকে যায় গাছের গুঁড়ির প্রাচীরে। মুখোশ পরা গানম্যান এবং পরপর আটটা গুলি। ঝাঁজরা হতে বেশি সময় নেয়নি কুইন্টার শরীর। দেশের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে বিবৃতি পাওয়া গেলেও কুইন্টা-হত্যার বিচার আদৌ হবে তো! সন্দেহ, সন্দেহ …

দুই নিহত পরিবেশকর্মী – ওপরে আরবিল্ডো মেলেন্ডেজ, নিচে কুইন্টা ইনুমা (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

কর্মী হত্যার সঙ্গে সামগ্রিক পরিবেশ-নিধনের কিছু ছবি। দেশের ৭০ শতাংশ জমিই বিভিন্ন তেল কোম্পানিকে দেওয়া অয়েল কনসেশনের মধ্যে পড়ছে। শিকার হচ্ছেন আদিবাসীরা। ১৯৮৪ সালে সেল কোম্পানির অয়েল এক্সপ্লোরেশনে আদিবাসী নাহুয়া’দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অস্বাভাবিক রোগ, নাহুয়াদের ৬০ শতাংশ শেষ হয়ে যায়। এই নাহুয়াদের জমিতে নতুন করে আর্জেন্টিনীয় কোম্পানি প্লাসপেট্রলের সঙ্গে মার্কিন হান্ট অয়েল, স্পেনীয় রেপসল ইত্যাদির নেক্সাসে চলা কামিসিয়া গ্যাস প্রোজেক্টের বিতর্কিত ‘ব্লক ৮৮’এর এক্সপ্যানশনের ভাবনাচিন্তা চলছে। এই ব্লক ৮৮-এর ৭৫ শতাংশ অংশই নাহুয়া-নান্তি রিজার্ভের মধ্যে পড়ছে, যা প্রকৃতপক্ষে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট লাতিন আমেরিকার অন্যতম জুয়েল মনু ন্যাশনাল পার্কের বাফার জোন। তথ্যের পর তথ্য। ২০১২-র ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট বলছে দেশ থেকে রপ্তানি করা ৮০ শতাংশ কাঠ অবৈধভাবে সংগ্রহ করা। এইসব তথ্যের ওপর স্মৃতিবিলোপের মলম। ব্রাজিল-পেরু যোগাযোগ দেশের বিভিন্ন প্রোডাক্ট রপ্তানির জন্য জরুরি এবং সেই হিসেবে অরণ্য কেটে একাধিক রাস্তা তৈরি পেরুর ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। আছে প্যাসিফিক বা ইন্টার-ওসিয়ানিক হাইওয়ে বি-৩১৭-এর নাম। সেইসঙ্গে বি.আর-৩৬৪ সড়ককে ২৩০ কিলোমিটার বাড়ানো হচ্ছে, যার মধ্যে পড়ছে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বায়োডাইভারসিটি হটস্পট প্রায় ১,১৬৩ প্রজাতির গাছ, আরও অসংখ্য এন্ডেমিক প্রাণি নিয়ে টিকে থাকা ‘সেরা ডো ডিভিসর’ ন্যাশনাল পার্কের ওপর দিয়ে যাওয়া ২০ কিলোমিটার রাস্তা। গাছ, প্রাণিসম্পদের সঙ্গে অঞ্চলের অন্তত ১৫টি নেটিভ আনকন্টাক্টেড ট্রাইবের ওপর আবার আঘাত। উন্নয়ন আটকাতে পরিবেশকর্মী ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’দের তরফ থেকে জোর করে আনকন্টাক্টেড ট্রাইব-দের উদ্ভাবন করা হচ্ছে বলে আশ্চর্য প্রচার চলছে রাষ্ট্র থেকে, বলা হচ্ছে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য আদিবাসীই নাকি নেই সেরা ডো ডিভিসরের ওই ২০ কিলোমিটারের মধ্যে।

ক্যামিসিয়া গ্যাস প্রোজেক্ট ও বৃক্ষনিধন (ছবিসূত্র – সার্ভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল)

ওপর থেকে তোলা সেরা ডো ডিভিসর ন্যাশনাল পার্কের ঘন অরণ্যের দৃশ্য (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

এবং রেপসল-পর্ব। পেরুর ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম পরিবেশ-হত্যার লেগ্যাসি। ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের টোঙ্গা আগ্নেয়গিরির নিঃসরণ ২০২২-এর ১৫ জানুয়ারি তীব্রতম জায়গায় যায়। এবং সেইদিনই উত্তর পেরুর ভেন্তানিলা জেলার কাল্লাও বন্দরের কাছে ইতালীয় ট্যাঙ্কার মারা ডোরিকাম থেকে ক্রুড অয়েল পরিবহন চলছিল স্পেনীয় রেপসল কোম্পানির লা প্যাম্পিনা রিফাইনারিতে। অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামি অ্যালার্টের পরেও কিভাবে চলতে পারে এমন এক ঝুঁকির কাজ? উত্তর পাওয়া যায়নি রেপসলের কাছ থেকে। তবে ১১,৯০০ ব্যারেল তেল খোলা সমুদ্রে জায়গা নিতে বেশি সময় নেয়নি। ১৮,০০০ বর্গমিটারের তেলের চাদর (অয়েল স্লিক) ছড়িয়ে পড়েছিল গুয়ানো আইল্যান্ডস, আইলেটস অ্যান্ড কেপস ন্যাচারাল রিজার্ভ সমন্বিত প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর সামুদ্রিক এলাকায়। অন্তত ১,৮৫০ সামুদ্রিক পাখি ও জীবের মৃত্যু। তেলচকচকে সমুদ্রে তারপর থেকে আর ফিশিং বোট নিয়ে নামতে পারেননি অসংখ্য মাছচাষি। এবং টুইস্ট এখানেই যে, রেপসল স্পিল সাধারণ একক কোনও দুর্ঘটনা না। সুনামি সাবধানবাণী অস্বীকার করে তেল-পরিবহনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমণীয় অপরাধ ছাড়াও ছিল ইতিহাসের লিঙ্কেজ। ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৮-য় পরপর তিনটে অয়েল স্পিলেজ ঘটিয়েও ২,৩০,০০০ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাজ করছিল রেপসল। রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়নি।

রেপসল স্পিলেজের পর নিহত সামুদ্রিক পাখির সারি, অয়েল-ক্লিনিংয়ের কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা (ছবিসূত্র – রয়টার্স)

 

রেপসল অয়েল স্পিলেজে অসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত পাসামায়ো অঞ্চলের প্রতিবাদী মৎস্যচাষিরা (ছবিসূত্র – ডায়ালগো চায়নো)

এডুইন চোটা-রা নেই। কী আছে? সেভাবে কিছুই না। হত্যার বছরখানেকের মধ্যেই বহুদিন ধরে আটকে থাকা জমি অধিকার, সায়েটো-রা ল্যান্ড রাইট পায় ২০১৫-র ৩০ জানুয়ারি এলাকার ৮০,০০০ হেক্টর জমিতে। আত্মরক্ষার্থে সামান্য একটা ছুরি নিয়ে ঘুরতেন চোটা। লগারদের করাত, বুলেটের সঙ্গে পেরে উঠবেন কিভাবে? হত্যার ন’বছর পর ২০২২-এর জুনে হত্যার ট্রায়াল শুরু হয়ে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি রায়ঘোষণা, ৫ হত্যাকারীর ২৮ বছরের জেলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ছমাসের মধ্যেই আকস্মিক উল্টো পথে ঘুরে ফের সিদ্ধান্তহীনতায়, পেরু আদালত থেকে অক্টোবরে ফের সিদ্ধান্ত বদলে বলা হল সমস্ত আইনি নথিপত্রের নতুন করে যাচাইয়ের কথা। এডুইনের স্ত্রী তিন সন্তানের মা জুলিয়া পেরেজ এবং অন্য তিন নিহত পরিবেশকর্মীর স্ত্রী অ্যাডেলিনা ভার্গাস, লিটা রোজাস, ও আর্গেলিয়া রেঞ্জিফো আশাহীনতায় লড়ছেন। ২০২৪-এর ১০ জুন পেরুর পরিবেশ আইনের নতুন বদল করে যত্রতত্র ‘এগ্রিকালচারাল এক্সক্লুশন জোন’ গালভরা নাম দিয়ে সেখানে পরিবেশনিধন, দেদার বৃক্ষচ্ছেদনে কোনও পারমিট লাগবে না – এমন আশ্চর্য অ্যামেন্ডমেন্টে চমকে উঠেছেন পরিবেশকর্মীরা, পাশাপাশি এই অ্যামেন্ডমেন্টেই ‘ল্যান্ড ইউজ’ বিষয়টি পরিবেশ মন্ত্রক থেকে সরিয়ে কৃষি-উন্নয়ন ও সেচ-বিষয়ক মন্ত্রকের হস্তান্তরে করে দেওয়ায় দেশের একতৃতীয়াংশ আদিবাসী অংশের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে আরও। চেষ্টা চলছে এরপরেও। প্রেসিডেন্ট ফর কাউন্সিল অফ মিনিস্ট্রিজের অধীনে কাজ করা দেশের অবৈধ গাছ কাটা নিয়ন্ত্রক স্টেট এজেন্সি ওসিনফোর বা ‘এজেন্সি ফর দ্য সুপারভিশন অফ ফরেস্ট রিসোর্সেস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ’-এর স্বাধীন সত্তা কমিয়ে তাকে পরিবেশ মন্ত্রকের পরামর্শে কাজ করার জাতীয় ডিক্রি দেওয়া হয় ২০১৮-র ডিসেম্বরে, তুমুল প্রতিরোধ আঁচ করে সেই আদেশ ফিরিয়ে আবার নিরপেক্ষ কাজ করার সনদ পেয়ে যায় ওসিনফোর। ২০১৪-র লিমার ‘কপ টোয়েন্টি’র বছরে নরওয়ে-জার্মানির সঙ্গে দেশের বৃক্ষচ্ছেদন আটকাতে যৌথ চুক্তি ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে, এসেছে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সাহায্য, অথচ সেই একই দেশ থেকে একাধিক বহুজাতিক গাছ লোপাটের কাজ করে যাচ্ছে নিঃশব্দে। রেঞ্জার কমে আসছে আমাজন অরণ্যে, লগার-বিরোধী দৃষ্টান্তমূলক কাজ করা একাধিক এনভায়রনমেন্টাল প্রসিকিউটরকে টেনিওর শেষের আগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হঠাৎ। এইসব ডাইকোটমির মধ্যেই পেরু এবং পাশাপাশি চিলি, বলিভিয়া টিকে আছে। দেশের শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মুখের বদল কখনও আশা দেখাচ্ছে বলিভিয়ান আমাজনে, যদিও সে আলো হয়তো নতুন কোনও অন্ধকারের দ্যোতক। প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে রায়ান গেল্পকে’র ‘পেরুভিয়ান নাইটস’-এর সেই অংশটা – ‘নদীপাড়ের অন্যদিকে লাইটহাউস জ্বলে উঠল – তার হলুদ আভায় রাত্রি এবং নদী-বদ্বীপের ওপর, আশেপাশের সমস্তকিছুর ওপর আলো পড়ল –  ক্রান্তীয় উষ্ণতা সত্ত্বেও আমি আরেকবার কেঁপে উঠলাম ঠাণ্ডায়। পেরুতে আরেকটি রাত্রি শুরু হল এবং তার সঙ্গে আরেকবার আশার আলো নিভে গেল …’

আসানিঙ্কা কমিউনিটির চার নিহত পরিবেশকর্মীর স্ত্রী – ছবির বাঁদিক থেকে অ্যাডেলিনা ভার্গাস, লিটা রোজাস, জুলিয়া পেরেজ ও আর্গেলিয়া রেঞ্জিফো (ছবিসূত্র – গ্লোবাল উইটনেস) 

 

 

ঋণস্বীকার

১. Berton, Eduardo Franco. Rare trees are disappearing as ‘wood pirates’ log Bolivian national parks. January 29, 2020. Mongabay.

২. Baffoni, Sergio. Indigenous Mapuche forest activist murdered in Chile by police. June 23, 2020. Environmental Paper Network.

৩. Brown, Kimberley. Peru is tackling water scarcity with nature-based solutions, leading the way in Latin America. November 29, 2022. Mongabay.

৪. Chavez, Leandro. Proposed Brazil-Peru road through untouched Amazon gains momentum. March 10, 2022. Dialogo Chino.

৫. Collyns, Dan. Oil spill at sea: who will pay for Peru’s worst environmental disaster? March 7, 2022. The Guardian.

৬. Custodio, Leslie Moreno. Repsol oil spill: one year on, no justice in sight for Peruvian fishers. January 17, 2023. Dialogo Chino.

৭. Espinoza, Venessa, Romo & Alvitres, Gloria. Crime and no punishment: impunity shrouds killings of indigenous Amazonian defenders. August 17, 2022. Mongabay.

৮. Furones, Laura. A few steps forward, several steps back: Peru’s timber sector faces its “moment of truth”. February 28, 2023. Global Witness.

৯. Furones, Laura. A historic sentence in Peru brings hope for land and environmental defenders. March 9, 2018. Global Witness.

১০. Furones, Laura. Peru’s forest inspection agency OSINFOR regains its independence. But what next? May 8, 2019. Global Witness.

১১. Gabay, Aimee. Critics decry controversial bill that loosens deforestation restrictions in Peru. February 9, 2024. Mongabay.

১২. Garate, Javier. The Saweto trials cannot lead to another missed opportunity for justice in the murder of four Peruvian indigenous leaders. November 16, 2023. Global Witness.

১৩. Gonzales, Gustavo Jimenez. Madidi: dredges stalk one of the most biodiverse parks in the world. May 14, 2020. Mongabay.

১৪. Hance, Jeremy. A tale of 2 Perus: Climate Summit host, 57 murdered environmentalists. November 18, 2014.

১৫. Hines, Ali. Decade of Defiance. September 29, 2022. Global Witness.

১৬. Justice eludes the Saweto case: a call for global solidarity. September 20, 2023. Rainforest Foundation.

১৭. Kyte, Billy. Peru’s deadly environment. November 17, 2014. Global Witness.

১৮. Medina, Angeles Zuniga. The cost of defending the environment in Latin America. November 7, 2022. Human Rights Foundation.

১৯. Miller, Liam. Fears of Chilean indigenous leader’s safety after police shooting. June 30, 2021. The Guardian.

২০. Neuman, Williams & Zarate, Andrea. Corruption in Peru aids cutting of rain forest. October 18, 2013. The New York Times.

২১. Peru: indigenous leaders murdered for protecting their forests. November 18, 2014. The Ecologist.

২২. Praeli, Yvette Sierra (Trans. by Westwood, Jeannette). Forest crimes persist in Peru following indigenous leader’s murder. August 3, 2020.Mongabay.

২৩. Praeli, Yvette Sierra (Trans. by Engel, Sarah). In Peru’s Amazon, deforestation and crime sweep through the indigenous communities. November 6, 2021. Mongabay.

২৪. Praeli, Yvette Sierra (Trans by Engel, Sarah). Oil spill contaminates wildlife, beaches and protected areas in Peru. March 25, 2022. Mongabay.

২৫. Reano, Guillermo. Alert in Alto Mayo Protection Forest: “We are losing the area in the hands of land traffickers and illicit crops”. February 28, 2017. Mongabay.

২৬. Rexhi, Rajmonda & Weaver, Matthew. Peruvian villagers face murder and intimidation from land traffickers. September 7, 2018. The Guardian.

২৭. Santos, Geraldine & Alvitres, Gloria. Safety of Peru’s land defenders in question after killing of indigenous leader in the Amazon. December 7, 2023. Mongabay.

২৮. Soros, Alex. Local activists are paying with their life to protect their forests in Peru. November 17, 2014. The Guardian.

২৯. Spring, Jake & Villegas, Alexander. Palm oil supplier to Nestle, Kellogg’s linked to Peru deforestation in report. February 7, 2024. Reuters.

৩০. Tamaya, Evan Paredes. Bolivia: study reveals that 191 attacks against nature defenders have been registered in the last five years. May 5, 2022. Mongabay.

৩১. The Uncontacted tribes of Peru. January 12, 2017. Survival International.

৩২. Tickell, Oliver. Amazon: rainforest road threatens Peru’s last isolated tribes. December 1, 2016. Ecologist.

৩৩. Tran, Delena. Dying for environmental democracy. June 28, 2021. The Ecologist.

৩৪. Vera, Enrique. Saweto: the endless battle of the widows of an Asheninka community against impunity. June 16, 2022. Mongabay.

৩৫. Weaver, Matthew & Rexhi, Rajmonda. Peru cracks down after environmental defenders’ murders. November 9, 2018. Mongabay.

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *