পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ১২। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

ইকুয়েডরভেনেজুয়েলাতেল, সোনা পরিবেশহত্যার হটস্পট

কলম্বিয়া থেকে ক্রমশ গায়ে লাগানো ভেনেজুয়েলা। অবৈধ খননকার্য, উচ্ছেদ এবং হত্যাকাণ্ড। পরিবেশকর্মীহত্যা ইত্যাদি হয়তো ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। গ্লোবাল উইটনেসের হিসেবে ২০১২ থেকে ২০২২-এ দেশে অন্তত ১৭টি হত্যা হয়েছে, যার ভেতর ২০২১ ও ২০২২-এ হয়েছে চারটি করে হত্যা। ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া ও পেরুর মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজ করা সংস্থা ‘অবজারভেটরি ফর দ্য ডিফেন্স অফ লাইফ’ বা ‘ওডেভিডা’-র হিসেবে ২০১২ থেকে ২০২২-এ হয়েছে ৪০টি মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী হত্যা, যার ভেতর ২৫টির হত্যাকারী কলম্বিয়ান রেবেল আর্মি ও অপরাধী চক্র এবং বাকি ১৫টির জন্য দায়ী ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় মিলিটারি শক্তি। হন্ডুরাসের সঙ্গে ভেনেজুয়েলাও লাতিন আমেরিকার পরিবেশকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত ঐতিহাসিক এসক্যাজু এগ্রিমেন্টে র‍্যাটিফাই করেনি এখনও। পাশাপাশি বৃক্ষচ্ছেদনের হিসেবে এলে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০০২ থেকে ২০২২-এ মোট ৫৭৬ কিলোহেক্টর হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট লোপাট হয়েছে, যা মোট ট্রি কভার লসের (২.৩৫ মিলিয়ন হেক্টর) ২৬ শতাংশ। এই হিসেবে দেশের দুই প্রধান আমাজনীয় রাজ্য বলিভার এবং জুলিয়াতে বৃক্ষচ্ছেদনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ৪৭৫ ও ২৪২ কিলোহেক্টর। ‘ক্লাইমা টোয়েনটিওয়ান’ সংস্থার হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২২-এ প্রতি বছরে গাছ কমেছে ১,৫৭,৩০৭ হেক্টর করে। আমাজন কনজারভেশন সংস্থার হিসেবে ২০২১ থেকে ২০২২-এর মধ্যে মোট ৭৫০ হেক্টর গাছ কাটা হয়েছে শুধুমাত্র ইয়াপাকানা ন্যাশনাল পার্কেই। এবং এই বৃক্ষচ্ছেদন থেকেই অবৈধ মাইনিং-এর হিসেব। লাতিন আমেরিকার ভয়ঙ্কর পরিবেশ নিধন সংক্রান্ত অন্যতম একটি রিপোর্টে ‘সায়েন্স প্যানেল ফর দ্য আমাজন’ দেখাচ্ছে, ভেনেজুয়েলার ৯০ শতাংশ মাইনিং অবৈধ। ২০২২-এর হিসেবে শুধুমাত্র দক্ষিণ ভেনেজুয়েলাতেই রিপোর্ট হয়েছে ৩,৭১৮টি ইল্লিগাল মাইনিং। কলম্বিয়ান রেবেল ও ড্রাগ কার্টেল নেক্সাসের সৌজন্যে ইল্লিগাল গোল্ড মাইনিং ও সোনা পাচার চলছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও গায়ানায়, যা থেকে পরে তথাকথিত প্রথম বিশ্বে। এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলছে দেদার অয়েল স্পিলেজ। ‘অবজারভটরি ফর পলিটিকাল ইকোলজি’ বলছে শুধুমাত্র ২০২১-এই গোটা দেশে ৮৬টি স্পিলেজ হয়েছে, যার ভেতর ৩১টিই জুলিয়া রাজ্যের লেক মারাকাইবোতে। এইসবের সরাসরি প্রভাব দেশের আদিবাসী অংশে। দক্ষিণ ভেনেজুয়েলার অল্টো ওরিনোকো ক্যাসিকেরে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে আদিবাসী ইয়েকোইয়ানা, সানেমা, ইয়ানোমামি’দের ওপর প্রায়শই আক্রমণ করে পড়শি ব্রাজিলের গ্যারিমপেইরোস জবরদখলকারীরা। হত্যা, হত্যার চেষ্টা, ভয় দেখানো – এনজিও ‘ফুন্ডানেডেস’-এর হিসেবে এলাকাছাড়া হয়েছেন প্রায় ১৩,০০০ আদিবাসী। গোটা দেশের নিরিখে হিসেব করলে ‘ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার’-এর হিসেবে শুধুমাত্র ২০২১-এই দেশছাড়া হয়েছেন ৩২,০০০ জন।

এবং এইসবের ভেতর দক্ষিণ-মধ্য অংশের ওরিনোকো মাইনিং আর্কের উত্থান, যার দক্ষিণেই আরেক পরিবেশঘাতক বেল্ট পূর্বঘোষিত ওরিনোকো অয়েলফিল্ড। ১,১১,৮৪৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে দেশের ১২.২ শতাংশ অঞ্চল নিয়ে থাকা এই মাইনিং রিজার্ভে ২০১৬ সালে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ৩৫টি দেশের দেড়শ’র ওপর কোম্পানিকে সোনা, তামা, কোলটান ও বক্সাইট আকরিক এক্সপ্লোরেশনে খোল্লামখোল্লা আব্দার করে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশ পেয়ে ৭,০০০ টন গোল্ড মাইনিং ক্ষমতা থাকা এই ওরিনোকো অঞ্চল মেশিনারি এবং পো-কর্পোরেট লবি-সাইট হয়ে যায় হঠাৎ। এই ওরিনোকো অঞ্চলেই দেশের ৫টি ন্যাশনাল পার্ক ও ৭টি ন্যাচারাল মনুমেন্ট আছে, যার ভেতর ৩০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কানাইমা ন্যাশনাল পার্ক। কী নেই সেখানে? অন্তত ৯,৪০০টি গাছের প্রজাতি, যার ভেতর ২,১০০টি এন্ডেমিক, ২২৫ প্রজাতি সরীসৃপ, ১,২০০ প্রজাতি পাখি এবং ১৮০ প্রজাতির উভচর। ওরিনোকো মাইনিং আর্ক এইসমস্তর ওপর বীভৎস প্রশ্নচিহ্ন। এবং এর সঙ্গে আদিবাসিন্দা এবং খনিশ্রমিকদের ওপর অসম্ভব ফেটাল এফেক্ট। আকরিক থেকে সোনা নিষ্কাশনে ব্যবহৃত মার্কারি অবিশ্বাস্য বেড়ে যাচ্ছে স্থানীয় জলাশয়, নদীতে, এবং এর সঙ্গেই জলজ প্রাণিদের শরীরে তুমুল বায়োম্যাগনিফিকেশন। স্থানীয় ক্যারোনি নদী, যা দেশের অর্ধেক অংশের বিদ্যুতের চাহিদার জোগান দেওয়া গুরি হাইড্রোইলেকট্রিক প্রোজেক্টের উৎস, সেই ক্যারোনির ৭০ ভাগেই মার্কারি স্পিলেজ সন্দেহ করা হচ্ছে। ‘সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর রিপোর্টে ওরিনোকোর উপনদী কওরা নদী উপত্যকার বাসিন্দা ৯২ শতাংশ আদিবাসী মহিলাদের দেহেই অবিশ্বাস্য বেশি মাত্রায় মার্কারি পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে ম্যালেরিয়া। লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা ভেনেজুয়েলায় রোগ ফিরে আসার প্যারাডক্স। উন্নয়নের এপিক ওরিনোকো মাইনিং অঞ্চলের অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকা খনি শ্রমিকদের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যেই ঘটেছে ৩,২৩,৩৯৩টি ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ঘটনা, যার সিংহভাগ ফেটাল।

ওপরে ওরিনোকো মাইনিং আর্কের একটি অংশ, নিচে মাইনিং আর্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার দেশের পরিবেশকর্মীরা (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

শেষে ভার্জিলিও ট্রুজিল্লো আরানা-র গল্প। প্রেক্ষিত দক্ষিণ ভেনেজুয়েলার আমাজন অঞ্চলের পুয়ের্তো আয়াকুচো শহরের অটানা মিউনিসিপ্যালাইটির উয়াত্তুজা আদিবাসী অংশ। ‘উয়াত্তুজা টেরিটরিয়াল গার্জিয়ানস’-এর কোঅর্ডিনেটর ভার্জিলিও জমি ও অরণ্য অধিকার সংস্থা ‘আয়াসে হুয়ানামি’-কে একাই দাঁড় করিয়েছিলেন লড়াইয়ে। এসেছিলেন বাকিরাও। অটানা মিউনিসিপ্যালিটি কোনওভাবেই ওরিনোকো মাইনিং আর্কের অংশ না হলেও এবং গোটা দক্ষিণ ভেনেজুয়েলার আদিবাসী অংশে ১৯৮৬-এর আইনে মাইনিং নিষিদ্ধ হলেও একাধিক এলাকায় ইল্লিগাল মাইনিং লেগেই আছে, ছিল। ১৫,০০০ আদিবাসীর হয়ে সোচ্চার হন অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় ভার্জিলিও। পাচ্ছিলেন একাধিক শাসানি, ডেথ-থ্রেট। ২০২২-এর ৫ জুলাই বছর আটত্রিশের ভার্জিলিও ট্রুজিল্লো-র মাথায় তিন তিনটে ফেটাল বুলেট ঢোকে। শেষযাত্রায় সঙ্গীদের ওপর ডেথ-থ্রেট চলতে থাকে। মৃত্যুভয়ে কফিন এগোতেও আসতে পারেনি একাধিক প্রতিবাদী উয়াত্তিজা’রা।

ওপরে ভার্জিলিও ট্রুজিল্লো আরানা, নিচে শেষযাত্রায় ভার্জিলিওর কফিন এগোচ্ছেন সামান্য কিছু উয়াত্তিজা পরিবেশকর্মী (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

ইকুয়েডর। মোঙ্গাবে-র রিপোর্ট বলছে। ইকুয়েডরীয় আমাজনের ৬১ শতাংশ অঞ্চল অয়েল-কনসেশনের ভেতর। ‘সায়েন্স প্যানেল ফর দ্য আমাজন’-এর হিসেবে দেশের ৭৭ শতাংশ মাইনিং অবৈধ। এবং এসব ঠেকাতেই পরিবেশকর্মীদের উত্থান, হিংসা এবং শিকার। এনজিও ‘অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস’ বলছে ২০২১-এ পরিবেশরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত মোট ৪৪৯টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে ইকুয়েডরে। গ্লোবাল উইটনেসের হিসেবে ২০২১-এর অন্তত ৩টি হত্যা সরাসরি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বছর চল্লিশের কুফান পরিবেশকর্মী এডোয়ার্ডো মেন্ডুয়া ছিলেন ‘কনফেডারেশন অফ ইন্ডিজেনাস ন্যাশনালিটিজ অফ ইকুয়েডর’-এর সক্রিয় সদস্য। উত্তর ইকুয়েডরের সুকুমবিওস প্রভিন্সের লাগো আগ্রিও ক্যান্টনের ডিউরেনো অঞ্চলে পেট্রোইকুয়েডর কোম্পানি অ্যাগোয়ারিকো নদীসংলগ্ন ৩০টি নতুন তৈল কূপ বসিয়ে উৎপাদন বহুগুণ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু করে। ডিউরেনোর অয়েল স্পিলেজ ইতিহাস নতুন না। কুফান কমিউনিটির ৯,৫০০ হেক্টর অঞ্চল এমনিতেই ৭০টি তেলকূপ (অয়েল-ওয়েল) দিয়ে ছেয়ে গেছে। এর পরেও এক্সটেনশন। মাটির পর মাটি খোঁড়া, মেশিনারি, আক্ষরিকভাবে অ্যাগোয়ারিকোর ‘রিচ ওয়াটার’ তেলে ঢাকা। প্রতিবাদে ’২১-এর ৯ জানুয়ারি সংঘর্ষে আহত হলেন কুফান আদিবাসীদের ৬ জন প্রতিবাদী। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইকুয়েডর সরকারের বিরুদ্ধে আদিবাসী অঞ্চলে তৈল নিষ্কাশন বন্ধের পূর্বপ্রতিশ্রুতি ভাঙার প্রতিবাদে দেশজোড়া ধর্মঘট হল এডোয়ার্ডোর নেতৃত্বে। দুদিন পর (২৬ ফেব্রুয়ারি) ডিউরেনোয় নিজের বাড়ির বাগানে ১২টি গানশটে রক্তাক্ত হয়ে গেলেন মানুষটি। ক্যানো দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে রাখা লাতিন আমেরিকার ৭৫০ কুফান আদিবাসী বা ‘ওয়াটার পিপল’দের লড়াই চলছে এখনও। কুফানদের পর সুয়ার। ইকুয়েডরের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী। সুয়ার-অধ্যুষিত ‘এল ডোরাডো’ কর্ডিলেরা ডেল কন্ডোর অঞ্চলের ২.১৫ মিলিয়ন টন কপার-গোল্ড মাইনিং রিজার্ভে বহুজাতিকের চকচকে নজর ছিল। বিতর্কিত মিরাডোর কপার মাইনিংয়ের মালিকানা কানাডীয় থেকে চাইনিজ সংস্থার হাতে গেল ২০১০-এ। ১০,০০০ হেক্টর অরণ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। বিলুপ্তির দিকে রেড-থ্রোটেড উড-লিজার্ড বা কিংসবেরি’জ রকেট ফ্রগের মতো প্রজাতি। সোচ্চার ছিলেন সুয়ার পরিবেশকর্মী হোসে টেন্ডেৎজা আন্তুন। ২০১৪-র ২৮ নভেম্বর সরকারি অধিকর্তাদের সঙ্গে মিটিং সেরে ফেরার পর থেকে নিখোঁজ হোসের শরীরের অংশ ট্রেস করে পরের মাসে (৪ ডিসেম্বর) পাওয়া গেল জামোরা নদীর ধারে একটি নামপরিচয়হীন কবরের ওপর। হোসে পড়শি দেশ পেরুর রাজধানী লিমায় আসন্ন কপ টোয়েন্টি সম্মেলনে মিরাডোরের বিরুদ্ধে রাইটস অফ নেচার ট্রিবুনালে আংশে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। টিকিট ছিল শরীর খুঁজে পাওয়ার দুদিন আগেই। প্রসঙ্গত, এই মিরাডোর প্রোজেক্টের বিরুদ্ধে কথা বলে ২০০৯ ও ২০১৩-য় খুন হলেন আরও দুই সুয়ার আদিবাসী পরিবেশকর্মী যথাক্রমে বোস্কো উইসাম এবং ফ্রেডি তাইশ।

কুফান আদিবাসী পরিবেশকর্মী এডোয়ার্ডো মেন্ডুয়া (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

দক্ষিণ-মধ্য ইকুয়েডরের টাইশা ক্যান্টনমেন্টের শিঙ্কিনটাম গ্রামের সুয়ার আদিবাসীরা ২০২১-এর ২৬ মার্চ কেঁদে উঠেছিলেন। বাসস্টপে বীভৎসভাবে গাড়ি চাপা পড়ে গেলেন পঞ্চাশ পেরনো পরিবেশকর্মী মারিয়া তাঁত। দক্ষিণ ইকুয়েডরের আদিবাসী এলাকায় তেল উত্তোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার মারিয়া ২০১৮-য় সহস্রাধিক মহিলা আদিবাসী পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে কুইটোর প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস ঘেরাও ও সনদ জমা দেওয়ার ভিড়ে ভীষণভাবে ছিলেন। নির্দেশক-চিত্রগ্রাহক প্যাচো আলভারেজের একটি ছবিতে চিৎকার করছেন মারিয়া – ’আমাদের সংস্কৃতি আমাদের জীবন তৈরি করে।’ মৃত্যুও তৈরি করে হয়ত। চার সন্তানের মা, স্বামীহারা মারিয়া ১০০০ জন আদিবাসীর সেই শিঙ্কাটাম গ্রামের একমাত্র প্রতিনিধি যিনি নতুন ফসল ওঠানোর প্রার্থনা সঙ্গীত ‘অ্যানেন্ট’ গাইতে পারতেন। মারিয়া চলে গিয়ে পরিবেশচেতনার সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি, মিথ খুন হল। অথবা আরেক প্রতিবাদী আন্দ্রেজ ডিউরাজনো। চীনা কোম্পানি জুনফিল্ড মাইনিং রিসোর্সেস হোল্ডিং লিমিটেড এবং হুনান গোল্ড গ্রুপের সাবসিডিয়ারি ইকুয়াগোল্ডমাইনিং-এর নেতৃত্বে রিও ব্ল্যাঙ্কো মাইনিং প্রোজেক্ট শুরু হয়েছিল  কাজাস ন্যাশনাল পার্ক বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কাছে। ৬,০৫,০০০ আউন্স সোনা, ৪.৩ মিলিয়ন আউন্স রুপোর রিজার্ভ। ২০১৮-র সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রোজেক্ট বন্ধ হলেও এলাকায় চোরাগোপ্তা মাইনিং লেগেই ছিল। অ্যাজুয়া প্রভিন্সের লান্তাহুয়াকো গ্রামের প্রতিবাদী আন্দ্রেজ ফেটাল ধারালো অস্ত্রাঘাত পেলেন ২০২১-এর ১৭ মার্চ। সেবছরই ১৯ ডিসেম্বর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না পাস্তোজা প্রভিন্সের স্থানীয় লগার-মাইনারদের সঙ্গে বিরোধে যাওয়া ওয়াওরানি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ‘পিকেনানি’ (বা ‘বয়স্ক জ্ঞানী’) প্রতিনিধি নাঙ্গে ইয়েতি নিমোঙ্কা-কে। দুদিন পর ২ ডিসেম্বর স্থানীয় কুরারে নদীর ধারে পাওয়া নিথর বৃদ্ধ নাঙ্গের মাথায়, ঘাড়ে ছিল ফেটাল অস্ত্রাঘাত।

সুয়ার আদিবাসী পরিবেশকর্মী মারিয়া তাঁত (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

ওয়াওরানি আদিবাসী পরিবেশকর্মী নাঙ্গে ইয়েতি (ছবিসূত্র – কুয়েঙ্কা ডিসপ্যাচ)

 

প্রসঙ্গত, এই পাস্তাজো অঞ্চলেই আমাজন-উপনদী পিয়াতুয়ার ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। পরিবেশ মন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র পাওয়া ক্লিন এনার্জি ট্রানজিশনের অন্তর্গত এই প্রোজেক্টের দায়ভার ছিল জেনেফ্রান এস.এ. কোম্পানির ওপর। কিচোয়াদের পবিত্র নদীর ৯০ শতাংশ জল শুষে নিতে যাচ্ছিল জেনেফ্রানের বাঁধ। আদিবাসীদের মুষ্টিবদ্ধ আন্দোলনে মামলা, যদিও প্রভিন্সিয়াল কোর্ট প্রথমে কিচোয়াদের আদিবাসী পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেনেফ্রানের পক্ষে রায় দেয়। বিচারক কমিটির একাধিক দুর্নীতিতে সেই রায় বানচাল হয়ে গিয়ে পরে চলে যায় কনস্টিটিউশনাল কোর্টের দরজায়। সেখানে এখনও প্রতীক্ষায় কিচোয়ারা। একাধিক ডেথ-থ্রেট, হেনস্থার শিকার হয়েও অবিচল পিয়াতুয়া রেসিস্তে ডিফেন্স ফ্রন্ট-এর পরিবেশকর্মী বছর ছাব্বিশের অ্যালেক্সিস গ্রেফার মতো তরুণ। টাইম পত্রিকার এক সাংবাদিককে গ্রেফা বলছিলেন – ‘আমরা পৃথিবীতে আমাদের অংশটুকুই প্রতিরোধ করছি মাত্র, তার বেশি না’। ক্লিন এনার্জি ট্রানজিশনের তথাকথিত নিরাপদ পরিণতির সামনে আরেক প্যারাডক্স দেখা গেছিল ইকুয়েডরীয় আমাজনের নাপো ও সুকুমবিওস প্রভিন্সের মাঝে কায়াম্বে কোকা পার্কে, ২০২০-র ২ ফেব্রুয়ারি। কোকো নদীর অংশ হিসেবে হাজার বছর ধরে টিকে থাকা দেড়শ মিটার উঁচু দেশের উচ্চতম জলপ্রপাত সান রাফায়েল ওয়াটারফলস সেদিন হঠাৎ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। আকস্মিক কোকো নদীর গতিপথ বদল। দেশের পক্ষ থেকে সিসমিক কারণ দেখিয়ে খুব স্বাভাবিক এক তত্ত্বকে খাড়া করার চেষ্টা করা হলেও আইইউসিএন থেকে ২০১৬ সালে কাজ শুরু করা সান রাফায়েল জলপ্রপাত থেকে ২০ মিটার আপস্ট্রিম কোকো কোডো সিনক্লেয়ার হাইড্রোইলেকট্রিক প্রোজেক্টের একটি ডাইভারসন রিজার্ভারের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, বলা হয়েছে বাঁধের রিজার্ভার দিয়ে নদীবক্ষ থেকে অতিরিক্ত পলি শুষে নেওয়ার কারণে একটি জলপ্রপাত ক্রমশ শেষ হয়ে যেতে পারে, যা আদৌ অস্বাভাবিক না। হাজার বছর ধরে ঝাঁপ দেওয়া একটি প্রপাত এতদিন অবিচল থাকলেও ঠিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কয়েক বছরের মধ্যে ‘প্রাকৃতিক সিসমিক’ কারণে শেষ হয়ে গেল – সত্যিই, কী আশ্চর্য সমাপতন! এবং স্মরণ করা যেতে পারে, এই কোকো কোডো প্রোজেক্ট নির্মাণের দায়িত্বে ছিল হন্ডুরাস-খ্যাত বিতর্কিত চীনা কোম্পানি সাইনোহাইড্রো।

পিয়াতুয়া নদীর কাছে পবিত্র পাথরের সামনে দাঁড়িয়ে কিচোয়া পরিবেশকর্মী অ্যালেক্সিস গ্রেফা (ছবিসূত্র – টাইম)

শেষ হয়ে যাওয়ার আগে ও পরে সান রাফায়েল জলপ্রপাত (ছবিসূত্র – ডায়ালগো চায়নো)

পরিবেশ ও পরিবেশকর্মী হত্যা, হেনস্থা থেকে অন্য এক অসম ক্রুসেডের গল্প। ১৯৬৪ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টেক্সাকো কোম্পানি ইকুয়েডরীয় আমাজনের ‘আমাজন চেরনোবিল’ লাগো আগ্রিও অঞ্চলের ২০,০০০ হেক্টর জমিতে ১৬ মিলিয়ন গ্যালন ক্রুড অয়েল এবং ১৮ বিলিয়ন গ্যালন ওয়েস্টওয়াটার রেইনফরেস্টে ছড়িয়ে গেছিল। এলাকার প্রায় ৩০,০০০ কুফান, সিওনা, সেকোয়া, কিচোয়া, হুয়াওরানি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভেতর ছড়িয়ে পড়ছিল অস্বাভাবিক মারণ রোগ। ১৯৯৩ সালে আইনজীবী স্টিভেন ডোঞ্জিগারের নেতৃত্বে মামলা শুরু হয়। ২০০১-এ টেক্সাকোকে কিনে নেয় শেভরন। দূষণের সমস্ত দায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলির ওপর চাপিয়ে নয়ের দশকের শুরুতেই প্রোজেক্ট ছেড়ে দেয় টেক্সাকো-শেভরন, মালিকানা পায় পেট্রোইকুয়েডর। ১৮ বছরের লড়াইয়ের পর ২০১১-য় ঐতিহাসিক কোর্ট ভার্ডিক্ট। ৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লসুটে হেরে যায় শেভরন। সেবছরই নিউ ইয়র্কে স্টিভেনের ওপর ব্যক্তিগত জিঘাংসা মেটাতে শুরু করে শেভরন। ৯.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি টাকাও না দিয়ে প্রভাবশালী ল ফার্ম, আইনজীবী নিয়ে মামলার পর মামলায় স্টিফেনকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়, সৌজন্যে ২০১৮ ও তার পরের ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুনাল। ১৯৯৩ থেকে আড়াইশোর বেশিবার ইকুয়েডরে যাওয়া স্টিভেনের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে ইকুয়েডর সহ সমস্ত আদিবাসী অধ্যুষিত দেশে কাজ করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল টিম শেভরন। যদিও লাগো আগ্রিওর পরিত্যক্ত অয়েল ডাম্পিং সাইট থেকে লিকেজ বন্ধ হয়নি এখনও।

স্টিভেন ডোঞ্জিগার (ছবিসূত্র – ইন্ডিপেন্ডেন্ট)

শেভরনের পরিত্যক্ত অয়েল-ডাম্পিং সাইট (ছবিসূত্র – ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রাই)

প্রসঙ্গত, টেক্সাকো-শেভরনের দূষণ হটস্পট ব্লক ৫৭-এ ২০১২ থেকে ২০২২-এর মে মাস পর্যন্ত দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের নথিতে রেকর্ড হয়েছে ৩৫২টি অয়েল স্পিলেজ, যা ওই সময়সীমায় গোটা ইকুয়েডরীয় আমাজনের ৮৩টি ব্লকের মোট ১,৫৮৪টি স্পিলেজের ২২.২ শতাংশ। শুধুমাত্র ২০২১ থেকে ২০২২-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্লক ৫৭ থেকে লিকেজ হয়েছে ১৫,৭৮০ ব্যারেল তেল। ২০১৯-এর ২ এপ্রিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লা ভিক্টোরিয়া কমিউনিটির নেত্রী মারিয়া সারাঙ্গো দেখছিলেন, রাস্তা ফুলে যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। মনে হচ্ছে এক ভয়ঙ্কর বোয়া সাপ ভেতর থেকে বেরোচ্ছে। আসলে বেরোচ্ছে, গ্যাস, হাইড্রোকার্বন, লুকোনো গ্যাস পাইপলাইন থেকে। লা ভিক্টোরিয়া ও আশেপাশের ১০টি কমিউনিটিকে সাশ্রয় দেওয়া জল শোধন প্ল্যান্টের কাছেই এই দুর্ঘটনা। ক্রমশ প্রতিটি ঘরের ব্যক্তিগত কুয়োগুলিতে ওঠা তেলের চাদর। পরিণতিতে কমিউনিটির ভেতর অসম্ভব বেড়ে যাওয়া পাকস্থলী, ত্বক এবং স্তন ক্যানসার – যা সরাসরি তেল-মাখানো জলের কার্সিনোজেনিক পদার্থগুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ব্লক ৫৭-এর গুয়ান্টা-ওয়ান অয়েল প্ল্যাটফর্মের অসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত সিঞ্চিরুকো কমিউনিটির ৪০০-র ওপর কিচোয়া আদিবাসী। বাসিন্দা দম্পতি মারিয়া গ্রেফা-কার্লোস আলভারাদোর স্মৃতিতে বছর তিরিশ আগে নিহত আট বছরের সন্তানের মুখ। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে অয়েল প্ল্যাটফর্মের ট্রান্সফর্মারে শরীর ঝলসে যায় শিশুটির। মারিয়ারা ক্ষতিপূরণ পাননি। উপরন্তু ১৯৮৫ থেকে সিঞ্চিরুকোতে কাজ করা টেক্সাকোর অয়েল-প্ল্যাটফর্ম (পরে পেট্রোইকুয়েডরের মালিকানায়) কেড়ে নিয়েছে তাঁদের জমি, ঘর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে অয়েল-ফ্লেয়ার, মেশিনারির কান-ফাটানো শব্দ, ধোঁয়া এবং একের পর এক স্পিলেজ। ২০ বছর আগের একটি অয়েল-স্পিলেজ সাইট মারিয়াদের ঘরের ঠিক ৫০০ মিটার দূরে, হলুদ ফিতে দিয়ে চিহ্নিত সেই জলাশয়ের উৎস, লেখা ‘ডেঞ্জার’। জল-শোধন? নাহ, আদিবাসী ইকুয়েডরে সেসব হয় না। প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায় ২০০৮-এ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রকৃতির নিজস্ব অধিকারকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়ার তাৎপর্য।

ঘরের ভেতর মারিয়া গ্রেফা-কার্লোস আলাভারাদা এবং কাছেই গুয়ান্টা ওয়ান প্রোজেক্টের দৃশ্য (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

এইসমস্ত লেগ্যাসি নিয়েই লাতিন আমেরিকার মানচিত্রে টিকে থাকা দুই দেশ। মৃত্যুর আগের শেষ রেকর্ড করা ভিডিওতে ভার্জিলিও ট্রুজিল্লোর কণ্ঠস্বর – ‘যা হবে হোক, তবু এই জমি ছাড়া তো আমাদের আর কিছুই নেই। তাই, আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে’। প্রসঙ্গত, আদিবাসী নেত্রী পরিবেশকর্মী প্যাট্রিসিয়া গুয়ালিঙ্গার নেতৃত্বে ইয়াসুনি ন্যাশনাল পার্কের সারায়িকু অঞ্চলের কিচোয়ারা মামলা করে আর্জেন্টাইন কোম্পানিয়া জেনারেল ডি কমবাস্টিবলস-এর দীর্ঘ বারো বছর ধরে চলা অয়েল এক্সপ্লোরেশনের বিরুদ্ধে। ২০১২-য় ‘ইন্টার-আমেরিকান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস’ থেকে সেই ঐতিহাসিক মামলায় জিতে যায় কিচোয়ারা, ইকুয়েডর সরকার থেকে ক্ষতিপূরণসহ ক্ষমা চাওয়া হয় প্যাট্রিসিয়াদের কাছে। মোঙ্গাবে পত্রিকার প্রতিনিধির সঙ্গে একটি কথোপকথনে প্যাট্রিসিয়া বলছিলেন – ‘আমাদের শরীর মাটি দিয়ে তৈরি। তাই আমরা এমনভাবে আমাদের জমিকে, আমাদের মাটিকে দেখি, যেন এই মাটি খুব পবিত্র কিছু, এই মাটিতেই আমরা জন্মেছি, এই মাটিরই অংশ আমরা, যখন চলে যাবো, এই মাটিতেই আমরা মিশে যাবো। আমাদের কাছে জমির অর্থ এটাই’। মনে পড়ছে চিলিয়ান লেখক লুইস সেপালভেদা’র কিংবদন্তী উপন্যাস ‘প্রেমের গল্প পড়া বৃদ্ধ’ (ইংরিজি অনুবাদে ‘দ্য ওল্ড ম্যান হু রিড লাভ স্টোরিজ’) এবং তার প্রোটাগনিস্ট সেই বৃদ্ধ আন্টোনিও হোসে বলিভারের কথা। গল্পে ভেসে ভেসে আসে বৃদ্ধের পড়া অসংখ্য বইয়ের পাতা, ভালোবাসার গল্প, একটি জাগুয়ার, তরুণী জোসেফিনা, আমাজন রেইনফরেস্ট এবং তথাকথিত উন্নয়নের ভয়ঙ্কর আহ্বান, মেশিনারি, ধোঁয়া, তেল। বৃদ্ধের মুখ দিয়ে লুইস বলছেন – ‘আমাদের ক্ষতগুলিই আমাদের সম্পদ হবে, যদি আমরা সেসব ক্ষতকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে পারি’।

 

ভার্জিলিও ট্রুজিল্লো, এডোয়ার্ডো মেন্ডুয়া, মারিয়া তাঁত, নাঙ্গে ইয়েতি, হোসে টেন্ডেৎজা, আন্দ্রেজ ডিউরাজনো এবং বাকিদের ক্ষতকে কতটা জড়িয়ে ধরতে পারবে আমাজনীয় ইকুয়েডর-ভেনেজুয়েলা?

পরিবেশকর্মী প্যাট্রিসিয়া গুয়ালিঙ্গা (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

পরিবেশকর্মী ভার্জিলিও ট্রুজিল্লো আরানা’র হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে ভেনেজুয়েলার উয়াত্তিজা আদিবাসী আন্দোলন (ছবিসূত্র – হার্টস অফ ভেনেজুয়েলা)

 

ঋণস্বীকার

১. Alvarado, Ana Cristina. Indigenous leader assassination amid conflict over oil that divided community. April 17, 2023. Mongabay.

২. Alvarado, Ana Cristina. Obsolete oil pipelines: half a century of breaks and spill in Ecuatorial Amazon. July 12, 2022. Mongabay.

৩. Alvarado, Ana Cristina. ‘Sinchiurco is coated with oil’: The Kichwa people going up agianst Petroecuador. April 19, 2022. Mongabay.

৪. Alvarado, Ana Cristina. The death of the Shuar defender Maria Taant remains unpunished. July 3, 2022. La Barra Espaciadorra.

৫. Broner, Tamara Taraciuk & Ragozzino, Martina Rapido. Venezuela tainted gold. April 19, 2022. Human Rights Watch.

৬. Brown, Kimberley. Environmental defenders in Ecuador aren’t safe, new report shows. July 9, 2021. Mongabay.

৭. Butler, Rhett A. Mining in Venezuelan Amazon threatens biodiversity, indigenous people. November 9, 2006. Mongabay.

৮. Dahl, Mie Hoejris. Venezuela Indigenous leader’s killing terrifies defenders of Amazon lands. July 7, 2022. The Guardian.

৯. Espinoza, Venessa, Romo & Alvitres, Gloria. Crime and no punishment: impunity shrouds killings of indigenous Amazonian defenders. August 17, 2022. Mongabay.

১০. Gabay, Aimee. Killing of indigenous Ecuador anti-oil activist spurs questions. May 22, 2023. Al Jazeera.

১১. Godin, Melissa & Yepez, Andres. The fight to save Ecuador’s sacred river. October 25, 2022. Time.

১২. Graterol, Maria de Los Angeles. The deadly work of defending the environment in Venezuela: 40 environmental activists murdered in the last decade. December 1, 2023. Hearts of Venezuela.

১৩. Gupta, Priyanka. Long wait for justice in Amazon pollution case. November 3, 2015. Al Jazeera.

১৪. Hance, Jeremy. Indigenous leader murdered before he could attend Climate summit. December 8, 2014. Mongabay.

১৫. Indigenous leader who defended Amazon killed in Venezuela, rights group says. July 1, 2022. Voice of America.

১৬. Lerner, Sharon. How the environmental lawyer who won a massive judgment against Chevron lost everything. January 29, 2020. The Intercept.

১৭. Kyte, Billy. Ecuadorian indigenous leader killed days before planned protest at COP20. December 8, 2014. Global Witness.

১৮. Medina, Angeles Zuniga. The cost of defending the environment in Latin America. Novemver 7, 2022. Human Rights Foundation.

১৯. Miranda, Bryan van Hulst. Shuar tribe face government in Amazon mining protests. December 29, 2016. Al Jazeera.

২০. Moises, Rendon, Sandin, Linnea & Fernandez, Claudia. Illegal Mining in Venezuela: Death and Devastation in the Amazonas and Orinoco Regions. April 16, 2020. Center for Strategic and International Studies.

২১. Moll-rocek, Julian. How an indigenous community in Ecuador stood up to big-oil and won. December 5, 2014. Mongabay.

২২. Paz, Antonio. Why did Ecuador’s tallest waterfall suddenly disappear? March 9, 2020. Dialogo Chino.

২৩. Perry, Kevin EG. Crusading lawyer Steven Donziger on his 993 days of house arrest amid battle with oil companies. January 8, 2024. Independent.

২৪. Radwin, Maxwell. Lifted sanctions on gold, oil could slow conservation efforts in Venezuela. November 8, 2023. Mongabay.

২৫. Radwin, Maxwell. Venezuela’s environmental crisis is getting worse. Here are seven things to know. June 13, 2023. Mongabay.

২৬. Standing Firm. September 13, 2023. Global Witness.

২৭. Torres, Jeanfreddy Gutierrez. Thirst for coltan, gold threatens Venezuelan forests, indigenous lands. October 31, 2016. Mongabay.

২৮. Weyler, Rex. Chevron’s Amazon Chernobyl case moves to Canada. September 9, 2017. Intercontinental Cry.

 

(ক্রমশ)

 

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *