ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। পর্ব : তেইশ। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

0

(গত পর্বের পর)

এই সফরের পরেই ভিভ রিচার্ডস, ম্যালকম মার্শালরা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। অনেকেই মনে করেন রিচি রিচার্ডসন পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন এই অবসরের জন্য। বলা মুশকিল, তবে ঘটনা হলো যে ১৯৮৭-১৯৯৩ কালপর্বে সমগ্র সত্তর ও আশির কিংবদন্তীদের প্রায় পুরোটাই অবসর নেন। একমাত্র মিয়াঁদাদ ১৯৯৬ সালে অবসর নেন।

রিচার্ডস ছেড়ে দেওয়ার পর একমাত্র দক্ষ ও অভিজ্ঞ ছিলেন রিচার্ডসন। কারণ অজ্ঞাত কারণে ডেসমন্ড হেইন্স দল থেকে বাদ পড়েন। বহু বছর বাদে গাস লোগী দলে ফেরেন। রোজার হার্পার কে ডেকেও খুব বেশি ব্যবহার করা হয়নি।

নতুন ক্রিকেটারদের মধ্যে আসেন ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোজ, ইয়ান বিশপ, জিমি অ্যাডামস, কার্ল হুপার, ফিল সিমন্স, কিথ আর্থারটন ও উইনস্টন বেঞ্জামিন।

সাবিনা পার্কে ৭ই এপ্রিল, ১৯৯২ ঘটে ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেধড়ক পিটিয়ে ২৮৭/৬ করে। লারা ওপেন করে ৫০, সিমন্স ১১৩ বলে ১২২ (৫টি ছয় সহ); কেবল ডোনাল্ড (২/৪৭) ও কুইপার (৩/৩৩; অবশ্য ৫ ওভারে) একটু বলার মতো বল করে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৮০ রানে অল আউট করে। এর মধ্যে অ্যান্ড্রু হাডসন ৫০ ও হ্যান্সি ক্রোনিয়ে ৪২ করেন। উইনস্টন বেঞ্জামিন ৪৫ রানে ৩, অ্যান্ডারসন কামিন্স ৩৪ রানে ২ এবং প্যাট্রিক প্যাটারসন ১৭ রানে ২ উইকেট (৭-২-১৭-২) নেন।

১১ই এপ্রিল কুইন্স পার্ক ওভালেও একই ঘটনা। অ্যামব্রোজ ২৪ রানে আর কামিন্স ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫২ রানে আউট করে। কেবল জন্টি রোডস ৪৫ করেন। জবাবে হেইন্স (অপরাজিত ৫৯) ও লারা (অপরাজিত ৮৬) পিটিয়ে পিটিয়ে রান তুলে (১৫৪/০; ২৫.৫ ওভারে) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০ উইকেটে জিতিয়ে দেয়।

পরের দিন ওই মাঠেই তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৯/৬ তোলে। অধিনায়ক কেপলার ওয়েসেলস ৪৫ করেন। বেঞ্জামিন আর হার্পার ২ টি করে উইকেট পান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে ১৯০ তুলে নেয়। সিমন্স আবার ১০৪ করেন।

১৮ তারিখে ব্রিজটাউনের টেস্টে দেখা গেলো ওডিআই জিতলেও সমস্যা রয়ে গেছে। উল্লেখ্য , এটাই ফিরে আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট। রিচার্ড স্নেল প্রথম দিনেই ৮৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৬২ রানে আটকে দেন। হেইনস ৫৮ আর আর্থারটন ৫৯ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে ১৩/০।

দ্বিতীয় দিন রাসমেয়ার ১৪ রানের মাথায় আউট হলেও কোনো ঝুঁকি না নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে ২৫৪/৪। এর মধ্যে হাডসন অপরাজিত ১৩৫, কুইপার অপরাজিত ১৯, কেপলার ওয়েসেলস ৫৯। দ্বিতীয় দিন অনিয়মিত বোলার জিমি অ্যাডামস (৪/৪৩) দারুন বল করেন। অ্যামব্রোজ ও বেঞ্জামিন দুটি করে উইকেট পান। হাডসন ১৬৩ আর কুইপার ৩৪ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪৫ তোলে। ৮৩ রানের লিড।

দিনের বাকি সময় চরম বেকায়দায় পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দিনের শেষে ১৮৪/৭। কেবল লারা ৬৪ আর আর্থারটন ২২। জিমি অ্যাডামস অপরাজিত ২৩। স্নেল আর ডোনাল্ড ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। মাত্র ১০১ রানে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হাতে মাত্র তিনটি উইকেট। এখনও দুই দিনের খেলা বাকি।

চতুর্থ দিন বেঞ্জামিন ১৯৬ রানে ফিরে গেলে ওয়ালস (১৩) আর প্যাটারসন (১১) কে সঙ্গে নিয়ে অ্যাডামস নবম উইকেটে ২৫ ও দশম উইকেটে ৫৮ রান যোগ করে দলকে ২৮৩ রানে পৌঁছে দেন। নিজে করেন অপরাজিত ৭৯। ডোনাল্ড (৪/৭৭), স্নেল (৪/৭৪) ও বশ্চ (২/৬১) সেরা বোলিং করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ২০১। চতুর্থ দিনের শেষে ১২২/২ তুলে নেয়। শেষ দিনে লক্ষ্য ৭৯ রান। হাতে ৮ উইকেট। ওয়েসেলস অপরাজিত ৭৪ ও পিটার কার্স্টেন অপরাজিত ৩৬ করে। তৃতীয় উইকেটে ৯৫ রান তখনই যোগ হয়ে গেছে।

পরের দিন সকালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাণ্ডব শুরু করে। প্রথমেই ওয়ালসের বলে লারার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ওয়েসেলস (৭৪)। ১২৩/৩। ক্রোনিয়ে (২) নেমে উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন ১৩০ রানের মাথায় অ্যামব্রোজের বলে। এরপরই কুইপারও (০) উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন ১৩১ রানের মাথায় ওয়ালসের বলে। ১৪২ রানের মাথায় কার্স্টেন ৫২ করে বোল্ড হলেন ওয়ালসের বলে। এর পরে কিছুই বাকি ছিল না। ১৪৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেলো। অ্যামব্রোজ ৩৪ রানে ৬টি ও ওয়ালস ৩১ রানে ৪ উইকেট নেন।

এই ম্যাচ জিতলেও চারদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাধান্য দেখালো ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্বলতাকে।

ওই বছরই শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। প্রথম ম্যাচ থেকেই লারার সেঞ্চুরি শুরু হয় (১০৬ বনাম অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশ)। এই ম্যাচ তারা জিতে নেয়। পরের দুটি ম্যাচেও হারায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে। লিস্ট এ ও প্রথম শ্রেণির ডুই ধরনের ম্যাচেই ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে হারায়। কিথ আর্থারটন অপরাজিত ১০৪ করে। হেইনস (দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি), হুপার, লারা, জিমি অ্যাডামসও রান করেন। হুপার বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে তুলে নেন ৭ উইকেট।

প্রথম ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রাইম মিনিস্টার ইলেভেনের বিরূদ্ধে খেলায়। বর্ডারের নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রীর দল গিলক্রিস্ট, বেভান, রাইফেল, মার্ক ওয়, ল্যাঙ্গার এর মতো প্রায় জুনিয়রদের নিয়ে ৩ রানে হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পরে ক্রিকেটে অস্ট্রেলীয় আধিপত্যের সূত্রপাত এঁদের হাত দিয়েই নিয়েছিল। রাইফেল ৪৪ রানে ৪ উইকেট পান। ডিন জোন্স ৭৬ করেন।

পরের ম্যাচে ফিল সিমন্সের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও অস্ট্রেলীয় একাদশকে হারাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ড্র হয় খেলা। স্টিভ ওয় (ম্যাচে ৯৫ ও অপরাজিত ১০০) দারুন ব্যাট করেন।

এমনকি নিউ সাউথ ওয়েলসের(৪৭৩/৫ ও ৩৪/১) সঙ্গে ড্র হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৮৩ ও ৫০৩) ফলো অন খায়। হুপার ৮১ ও ১২৪ করেন। সিমন্স করেন ১০৯। লোগী ৯৯ করেন। রিচার্ডসন করেন ৭৫। নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে মার্ক ওয় অপরাজিত ২০০ ও মার্ক টেলর ১০১ করেন।

২৭ শে নভেম্বর ব্রিসবেনের প্রথম টেস্ট ড্র। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাঁচলো অবধারিত হার থেকে। হুপার (৪/৭৫) দারুন বল করে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯৩ রানে আটকে দেয়। বর্ডার একা কেবল অপরাজিত ৭৩ করেন। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৭১ করে ৭৮ রানের লিড নেয়। আর্থারটন করেন অপরাজিত ১৫৭। ব্রুস রিড ১১২ রানে ৫ উইকেট নেন। বুন ১১১ ও মার্ক ওয় ৬০ করায় অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৮ তোলে। আয়ামব্রোজ ৫৬ রানে উইকেট নেন।

২৩১ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রিচার্ডসন (৬৬) আর অ্যাডামস (৩২) যা একটু খেলেন। ম্যাকডরমট ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে কোমর ভেঙ্গে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইয়ান বিশপ ১০৭ মিনিটে ৮২ বলে ১৬ অপরাজিত করে ড্র করেন। একসময় ৯ ম্যাচে ৪ উইকেট পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

প্রথম টেস্টের পরেই বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লারা কেবল ৫৯ করেন। আক্রম (৪/৪৬) দাঁড়াতেই দেননি। পরের ম্যাচে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে ৯ উইকেটে হারিয়ে দেন তাঁরা। হেইনস করেন অপরাজিত ৮১। কিন্তু সিডনিতে বৃষ্টি ভেজা মাঠে অস্ট্রেলিয়া দলের বিরূদ্ধে পরের ম্যাচে মাত্র ৮৭ রানে অল আউট হয়ে ১৪ রানে হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে মাত্র ৪ রানে হারিয়ে দেয় তারা। রিচার্ডসনের অপরাজিত ৭৬ বাঁচায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

কিন্তু মেলবোর্নে আবার হার অষ্ট্রেলিয়ার বিরূদ্ধে ৪ রানে। মার্ক ওয় ৫৭ করেন ও ২৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে একাই হারিয়ে দেন। অথচ লারা (৭৪) ও রিচার্ডসন (৬১) একসময় দলকে ১৫৮/২ অবধি পৌঁছে দিয়েছিলেন।

সিডনির পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২১৪) অসম্ভব কৃপণ বোলিং করে। পাকিস্তান ৪৮ ওভার ব্যাট করে ৮১ রান করে। গোটা ইনিংসে ৩টি মাত্র চার। ফিল সিমন্স ১০ ওভার বল করে ৮ টি মেডেন দিয়ে ৩ রানে ৪ উইকেট নেন। একসময় ইনিংস শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে ১২ ওভার হওয়ার আগেই ১৪ রানে ৫ উইকেট গিয়েছিল। ২২ মিনিটের মধ্যে ৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন।

এরপরে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে ট্যুর ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ১৩৯ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয়। বর্ডার (১১০) ও মার্ক ওয় (১১২) করলে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তোলে ৩৯৫। ওয়ালস ৯১ রানে ৪টি, বিশপ ৮৪ রানে ৩টি ও অ্যামব্রোজ ৭০ রানে ৩ উইকেট নেন। আর্থারটন ৭২, লারা ৫২ আর অ্যাডামস ৪৭ করলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩৩ এর বেশি তুলতে পারেনি। ম্যাকডরমট ৬৬ রানে ৪ ও হিউজ ৫১ রানে ৪ উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৯৬ এর বেশি তুলতে পারেনি। ড্যামিয়েন মার্টিন কেবল ৬৭ করেন। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ৩৫৯ করে জেতা অসম্ভব ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তাঁরা মাত্র ২১৯ তোলে। সিমন্স করেন ১১০। শেন ওয়ার্ন ৫২ রানে ৭ উইকেট নেন।

সিডনির ফেদারবেড উইকেটে তৃতীয় টেস্ট ড্র হয়। অস্ট্রেলিয়া ৫০৩/৯ তোলে। স্টিভ ওয় ১০০, গ্রেগ ম্যাথু ৭৯, বুন ৭৬, বর্ডার ৭৪ ও মার্ক ওয় ৫৭ করেন। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৬০৬। লারা করেন ২৭৭। রিচার্ডসন ১০৯ ও জিমি অ্যাডামস অপরাজিত ৭৭। দ্বিতীয় ইনিংসে বাকি সময় অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে ১১৭ করে। বুন অপরাজিত ৬৩ ও মার্ক টেলর অপরাজিত ৪৬।

বেনসন অ্যান্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজের পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭১ রানে অল আউট করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইয়ান বিশপ ২৫ রানে ৫ উইকেট পান। অ্যামব্রোজ ১৩ রানে ৩ উইকেট পান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে ৭২ তুলে নেয়।

পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হুপার ৫৬ করেন।

ফাইনালের আগে অস্ট্রেলিয়ান কান্ট্রি ইলেভেনের সঙ্গে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৯৪ করে ৫০ ওভারে। আর্থারটন ৯৪ করেন। অ্যান্ডারসন কামিন্স ৯ নম্বরে নেমে ৩৪ বলে ৪৯ করেন। জবাবে অস্ট্রেলিয়ান কান্ট্রি ২৪৩ করে। স্প্যানার ৬৮ ও আরভিন ৫৬ করেন। লক্ষনীয় বিষয় হলো চূড়ান্ত দূর্বল এই দলটির একজন ছিলেন অ্যান্থনি স্টুয়ার্ট যিনি অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে বছর চারেক পর তিনটি ওডিআই খেলেন। ছিলেন পল হফম্যান যিনি প্রায় দেড় বছর বাদে স্কটল্যান্ড দলের হয়ে ১০টি ওডিআই খেলেন। এছাড়া বি জে স্প্যানার একটি লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন।

তারপরেও ২৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরেও ২৪৩ অবধি টেনে নিয়ে যায় অষ্ট্রেলিয়ার কান্ট্রি একাদশ।

যাই হোক, সিডনির প্রথম ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩৯/৮ করে। লারা করেন ৬৭।  এরপর অ্যামব্রোজ ৩২ রানে ৫ উইকেট নিলে অস্ট্রেলিয়া ২১৪ রানে শেষ।

দ্বিতীয় ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১৪৭ করে। জবাবে মাত্র ২৩/৩ হয়ে গেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ মূলত লারা (৬০) ও হুপার (অপরাজিত ৫৯) ১০৯ অবধি টানলেও একসময় ১২৬/৬ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ অবধি ৪ উইকেটে জয়ী হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এডিলেটের চতুর্থ টেস্ট মারাত্মক উত্তেজনার ম্যাচ হয়ে যায়। মার্ভ হিউজের ৬৪ রানে ৫ উইকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫২ রানে আটকে দেয়। লারা ৫২ করেন। জুনিয়র মারে অপরাজিত ৪৯ করেন। এরপর অ্যামব্রোজ ৭৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া কে ২১৩ রানে আটকে দেয়। জবাবে রিচার্ডসন ৭২ করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৬ করে। টিম মে ৯ রানে ৫ উইকেট নেন। ১৮৬ করলে জিতবে এমন অবস্থায় ১৮৪ করে অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয়ে যায় ও ১ রানে জয়ী হয়। অ্যামব্রোজ ৪৬ রানে ৪টি ও ওয়ালস ৪৪ রানে ৩ উইকেট নেন। ১৬/২ হওয়ার পর ল্যঙ্গার (৫৪) ও মার্ক ওয় (২৬) করে দলকে ৫৪ রানে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে ১০২/৮ হয়ে যায়। ল্যাঙ্গর ও মে (৪২ অপরাজিত) ১৪৪ অবধি টেনে নিয়ে যায়। শেষ উইকেটে ম্যাকডরমড (৮৮ মিনিটে ১৭) ৪০ রান যোগ করেন শেষ উইকেটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

পঞ্চম ও শেষ টেস্টে পার্থে অ্যামব্রোজ ২৫ রানে ৭ উইকেট (একটা স্পেলে ছিল ১ রানে ৬ উইকেট) নিলে বুন (৪৪) ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া ১১৯ করে। এরপর সিমন্স ৮০, আর্থারটন ৭৭, রিচার্ডসন ৪৭ ও মারে করেন ৩৭ । ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২২ করে। মার্ভ হিউজ ৭১ রানে ৪ উইকেট পায়। ম্যাকডরমট ৮৫ রানে ৩ উইকেট নেন। এরপর ইয়ান বিশপ (৬/৪০) ধ্বংস করে দেন অস্ট্রেলীয় (১৭৮) দলকে। বুন করেন ৫২।

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর থেকে ওডিআই ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আধিপত্যের অবসান ঘটে। যদিও প্রবল শক্তিশালী ক্যারিবীয় দল চ্যাম্পিয়ন সেভাবে না হলেও বেশিরভাগ ম্যাচই জিতে যেত। টেস্টে অপ্রতিরোধ্য। টানা সিরিজ জিতছিল তারা। ঘটনাচক্রে ১৯৯১-৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে ফেরৎ এসেই একমাত্র টেস্টে চারদিন দাপট দেখায়। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টে হারিয়েই দিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।  দ্বিতীয় টেস্টে হারিয়ে দেয়। চতুর্থ টেস্ট ১ রানে হেরে যায়।

এই ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে যে একাধিক বড় খেলোয়াড়দের অবসর ও নবীনদের অনভিজ্ঞতা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দূর্বল করেছিল। তবে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল সম্ভবত খেলোয়াড়দের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্ধ।  এই সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করবে ১৯৯৬ নাগাদ। এবং একই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খালি জায়গা দখল করতে লড়ছিল বাকি দেশ গুলো। সামনের সারিতে ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন নিয়ে আরও কিছু কথা হবে।

১৯৯৩ এর শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে টোটাল ইন্টারন্যাশনাল সিরিজের আসর। প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ম্যাচে অনায়াসে হারায় পাকিস্তান কে (রানরেটে)। তৃতীয় ম্যাচে আবার হারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪ রানে। এরপরে লারার সেঞ্চুরি (১২৮) দলকে ১২৪ রানে জয় এনে দেয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে হারায়। লারা আবার সেঞ্চুরি করেন (১১১ অপরাজিত)। লীগের শেষ খেলায় ৪৩ রানে পাকিস্তানকে অল আউট করে ওয়েস্ট। এরপর ৩ উইকেটে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান তুলে নেয়। ফাইনালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী হয়। পাকিস্তানের ১৮৭ তুলতে হেইনস (৫৯), লারা (৪৯), লোগী (অপরাজিত ৪১) অসুবিধে হয় নি।

এরপর কেবল অ্যান্ড ওয়ারলেস সিরিজ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। প্রথম দুটি ম্যাচে লারার ১১৪ ও ৯৫ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় এনে দেয়। পরের ম্যাচ ইনজামাম উল হকের ৯০ পাকিস্তান কে জিতিয়ে দেয়। চতুর্থ ম্যাচে বাসিত আলি ৬০ করেন ও আক্রম ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সিরিজ ২-২ করেন। শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ২৪৪/৬ তোলে। হক ৫৩ ও বাসিত আলি ৫৭ করেন । হেইন্স ৮২ ও হুপার অপরাজিত ৬৯ (৭০ বলে) করেন। শেষ বলে রান নিতে দৌড়লে দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ে খেলা শেষ হওয়ার আগেই। কিন্তু এর ফলে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে ম্যাচটিকে টাই বলে ঘোষণা করা হয়।

এরপর শারজায় পেপসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির খেলায় প্রথম দুটো ম্যাচে শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ম্যাচে আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে যায়। চতুর্থ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে আবার হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফাইনালে বাসিত আলীর করা ১২৭ অপরাজিত পাকিস্তানকে ২৮৩/৪ তুলতে সাহায্য করে। সেলিম মালিক করেন ৮৪। কিন্তু লারার ১৫৩ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৫.৩ ওভারে ২৮৫/২ অবধি তুলে নিতে সাহায্য করে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে (পোর্ট অফ স্পেনে) ২০৪ রানে জিতলেও প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে মাত্র ১২৭ রান। আক্রম ওয়াকার জুটিই ফেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দ্বিতীয় ইনিংসে হেইন্স ১৪৩, লারা ৯৬ ও রিচার্ডসন ৬৮ না করলে ৩৮২ উঠতো না। কারণ ৩২৯/২ ছিল একসময়। পাকিস্তান ১৬৫ রানে শেষ। প্রথম ইনিংসে বিশপ ও দ্বিতীয় ইনিংসে হুপার ৫ টা উইকেট পান।

দ্বিতীয় টেস্টে হেইন্স ১২৫ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫৫ তুললে, পাকিস্তান ফলো অন করে। বাসিত আলী (প্রথম ইনিংসে ৯২) ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ উইকেটে জিতেছিল। তৃতীয় টেস্ট ড্র হয়। হুপার অপরাজিতা ১৭৮ ও ইনজামাম উল হক ১২৩ করেন।

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল, মূলত পেসার ও কিছু টপ অর্ডার ব্যাটার। এরা ছেড়ে দিলে বা কিছুদিন বাদে বয়স হয়ে গেলে মুশকিল হবে। তাছাড়া প্রায় ৭/৮ বছর উপমহাদেশের উইকেটে ম্যাচ খেলেনি। ১৯৯৬ এর বিশ্বকাপ উপমহাদেশে হওয়ার কথা। ফলে এই পরীক্ষা বাকি। তবে টেস্টে যেভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জয় আসছে তা আসলেই পতনের বার্তা ছিল।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *