ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। পর্ব : বাইশ। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

0

(গত পর্বের পর)

২০২৩ এর বিশ্বকাপের পটভূমিকায় এক করুণ ঘটনাবলী তৈরী হয়েছে,; যার সবশেষে পরে আছে ব্যর্থতা। যে ব্যর্থতা বলছে ভিভ – লারা – হল – মার্শাল – ওরেলের দল দুবারের একদিনের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবারের বিশ্বকাপ খেলছে না।

‘কেন এমন হলো’- র উৎস খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি গুরুতর বিষয় নজরে এলো। তবে তার আগে  আমরা একটু জেনে নিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটির ঘরোয়া কাঠামো।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্য ও সহযোগীদের মধ্যে পূর্ণ সদস্যরা হলো  বার্বাডোজ, গায়ানা, জ্যামাইকা, লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো এবং উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, এই ছয়টি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।  লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন দুটি স্বাধীন রাজ্যের তিনটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন একটি অ্যান্টিগুয়া-বারবুডা এবং দুটি সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস থেকে;  তিনটি ব্রিটিশ উপনিবেশ (ওভারসিজ টেরিটরি) অর্থাৎ অ্যাঙ্গুইলা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং মঁসেরা, একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল অর্থাৎ মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, এবং একটি ডাচ সাম্রাজ্যের দেশ সেন্ট মার্টেন নিয়ে গঠিত। উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ ক্রিকেট বোর্ড অফ কন্ট্রোল চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট লুসিয়া, এবং সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস সমিতি নিয়ে গঠিত।

আগে আরও দুটি ব্রিটিশ উপনিবেশ যুক্ত ছিল যা একসময় প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফেডারেশনের  অংশ ছিল, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং তুর্কস এবং কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ, বর্তমানে তাদের নিজস্ব জাতীয় দল রয়েছে।

বিভিন্ন দ্বীপের জন্য জাতীয় দলগুলিও রয়েছে, যেগুলি সমস্ত আলাদা দেশ হওয়ায় তাদের স্থানীয় পরিচিতিয বজায় রেখে চলেছে। এই জাতীয় দলগুলি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান প্রথম-শ্রেণীর প্রতিযোগিতা, আঞ্চলিক চার দিনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় (আগে বাস্তা কাপ, শেল শিল্ড, ক্যারিব বিয়ার কাপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিদেশি দল এলে  প্রস্তুতি খেলার জন্য দ্বীপ দলগুলিতে খেলাও হতো নিয়মিত।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্য সমিতিগুলি হল:

(ক) বার্বাডোজ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)

(খ) গায়ানা ক্রিকেট বোর্ড (জিসিবি)

(গ) জ্যামাইকা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (জেসিএ)

(ঘ) লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এল আই সি ); যার অন্তর্গত

(১) অ্যাঙ্গুইলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(২) অ্যান্টিগা এবং বারবুডা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৩) ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৪) মঁসেরা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৫) নেভিস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (শুধু  নেভিস দ্বীপের জন্য)

(৬) সেন্ট কিটস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (শুধু সেন্ট কিটস দ্বীপের জন্য)

(৭) সিন্ট মার্টেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৮) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভার্জিন আইল্যান্ডস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(ঙ) ত্রিনিদাদ টোবাগো ক্রিকেট বোর্ড (টিটিসিবি)

(চ) উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ড অফ কন্ট্রোল (ডব্লু আই সি বি সি); যা আবার –

(১) ডমিনিকা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(২) গ্রেনাডা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৩) সেন্ট লুসিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

(৪) সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে গঠিত।

ভবিষ্যতে বাহামা, ফ্রান্সের উপনিবেশ সাঁ বার্থালেমি ও  সাঁ মার্তাঁ, ফরাসী প্রজাতন্ত্রের বিদেশী অঞ্চল গুয়াদেলোপ ও মার্টিনিক, নেদারল্যান্ডের বিশেষ পৌরসভা

সাবা ও সিন্তেস্তাসিয়েস ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য হতে পারে।

১৯২০ এর দশকের শেষে টেস্টে আগমন ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৩০/’৪০/ কাটে প্রবল লড়াকু কিন্তু দূর্বল দেশ হিসেবে। ১৯৫০ এর দশকে থ্রি ডব্লিউ (ওরেল, ওয়ালকট, উইকস), সোবার্স, কানহাই, রামাধিন, ভ্যালেন্টাইন, হল, গিলক্রিস্ট দের হাথ ধরে উত্থান ঘটে তাঁদের। তবে ১৯৬২ থেকে ‘৬৭-র অপ্রতিরোধ্য চরিত্র ধাক্কা খায় ১৯৬৭-‘৭৩ এর পর্বে। ১৯৭৪ থেকে যে উত্থান ঘটে তা চরমে ওঠে ১৯৮০ এর দশকে। চার পেসার, সেরা ওপেনার, দশ্রেষ্ঠ মিডল অর্ডার তাঁদের পৃথিবীর ভয়ানক ক্রিকেট দলে পরিণত করে।

কিন্তু এই যুগের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯১ এর ইংল্যান্ড সফরে।

সেইবার ইংল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বে তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক এবং পাঁচটি টেস্ট খেলেছিল, গোটা সফরে তারা ১১টি প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি দলের বিরুদ্ধে প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচও খেলেছিল। এছাড়া মাইনর কাউন্টি, অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজের সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি বিশ্ব একাদশ, আরও একটি প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি (গ্লস্টারশায়ার) এবং ডাচেস অফ নরফোকের আমন্ত্রণী একাদশের বিরুদ্ধে ৫০-ওভারের একদিনের ম্যাচ খেলে।

প্রথম ম্যাচই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে যায় লাভিনিয়া ডাচেস অফ নরফোক দলের বিরূদ্ধে। ৫০ ওভারে ২১১/৮ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই রান ৪৭.৪ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় নরফোক। ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটার জন মরিস ৯৭ বলে ৯৮ করেন। উল্লেখ্য, এই ম্যাচে নরফোক দলের অধিনায়ক ছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তিনি গ্রিনিজ, সিমন্স ও রিচার্ডস কে ক্যাচ লুফে ফিরিয়ে দেন। এটি ওই সফরে আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে একমাত্র পরাজয় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

দ্বিতীয় খেলায় গ্লস্টারকে সহজে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হেইন্স সেঞ্চুরী করেন। এরপর উর্স্টার এর বিরূদ্ধে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ড্র হয়। সিমন্স (১৩৪) ও ভিভ রিচার্ডস (১৩১) সেঞ্চুরী করেন। তবে উর্স্টার এর হয়ে ইয়ান বোথাম ১৩৯ বলে ১৬১ করেন। ৩২টা চার ও একটা ছয় মারেন তিনি। বোথাম গ্রিনিজ ও রিচি রিচার্ডসনের উইকেটও নেন। মিডলসেক্স তো দাঁড়াতেই পারেনি পরের ম্যাচে, সিমন্স তো আবার সেঞ্চুরি।

ঘটনাচক্রে এজবাস্টনের প্রথম ওডিআই হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাও ১ উইকেটে। বোথাম ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেন। অ্যামব্রোজ, ওয়ালস, প্যাট্রিক প্যাটার্সন আর মার্শাল থাকা সত্বেও ইংল্যান্ড জয়ী হয়। পরের ম্যাচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ রানে হেরে যায়। সেটাও ওডিআই। লর্ডসে তৃতীয় খেলায় আবার ইংল্যান্ড জিতে যায়। হিক (৮৬) ও ফেয়ারব্রাদার (১১৩) তৃতীয় উইকেটে ২১৫ রান যোগ করেন।

সমারসেট দলের বিরূদ্ধে প্রথম শ্রেণির খেলা ড্র করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হুপার ১২৩ করে। সমারসেট দলের হয়ে স্টিফেন কুক ও ক্রিস ট্যভারে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। তারপর লিস্টারশায়ারকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে। রিচার্ডসন দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১৪২ বলে ১৩৬ করে জিতিয়ে দেন।

অঘটন আবার ঘটে ৬ই জুন, ১৯৯১। লিডসে প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫ রানে হেরে যায়। রিচার্ডস (৭৩) ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি প্রথম ইনিংসে। ফিল ডেফ্রিটাস ৩৪ রানে ৪ উইকেট পান।

দ্বিতীয় ইনিংসে কার্টলি অ্যামব্রোজ (৬/৫২) ও মার্শাল (৩/৫৮) ব্রিটিশ দের চরম বিপদে ফেললেও একটা দিক ধরে রেখেছিলেন গুচ (অপরাজিত ১৫৪)। ফলে ইংল্যান্ড (১৯৮ ও ২৫২) লিড পায় ২৭৭ রানের। জবাবে ১ উইকেটে ৬১ থেকে হঠাৎ ৮৮/৫ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে রিচার্ডসন (৬৮) আর দুঁজো (৩৩) ষষ্ঠ উইকেটে ৪৮ রান যোগ করেন। কিন্তু তারপর আর কেউ দাঁড়াতেই পারেনি; ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬২ রানে অল আউট হয়ে যায়। ডেফ্রিটাস ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন।

পরের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ড্র হয়। যদিও দু ইনিংসেই ক্যারিবীয় বোলাররা ডার্বিশায়ারকে ঝাঁঝরা করে দেয়। রিচার্ডসন ( প্রথম ইনিংসে ১১৪) ও হুপার (৮২ ও অপরাজিত ৯৫) দারুন ব্যাট করেন। পঞ্চম উইকেটে হুপার ও রিচার্ডসন (অপরাজিত ৪৮) ১৫১ যোগ করলে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান দাঁড়ায় ১৯৯/৪। ২৫৬ রান তাড়া করতে নেমে ১৮৫/৯ ওঠার পর ম্যাচের সময় শেষ হয়ে যায়।

পরের ম্যাচ নর্দ্যান্ট এর সঙ্গে খেলা, মূলত বৃষ্টির জন্য ম্যাচ ড্র হয়। এমনকি লর্ডসের টেস্ট ও বৃষ্টির জন্য ড্র হয়। হিক ইংল্যান্ডের পক্ষে ও হুপার ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ম্যাচ ড্র করেন।

সেই সময় অবধি সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চরম ব্যর্থ। ওডিআই সিরিজ ৩-০ হেরেছে। টেস্টে ১-০ পিছিয়ে, বাকি তিনটে টেস্ট। ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ গুলোয় একটা কেবল জয়। এমনকি দূর্বল নরফোক ও হারিয়েছে।

অক্সফোর্ড আর কেমব্রিজের সম্মিলিত দলের বিরূদ্ধে লারা শতরান করলেও ম্যাচ ড্র হয়। লীগ ক্রিকেট কনফারেন্স কে হারালো ৯ উইকেটে। ল্যাম্বার্ট শতরান করেন। হুপারের শতরান (১৯৬) সত্বেও হ্যাম্পশায়ার ম্যাচ ড্র হলো।

অত:পর নটিংহ্যামের তৃতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে দুরমুশ করলো। অ্যামব্রোজের ম্যাচে ১৩৫ রানে ৮ উইকেট ও ওয়ালসের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪ রানে ৪ উইকেট ইংল্যান্ড কে দাঁড়াতেই দেয়নি। ব্যাট হাতে রিচার্ডস (৮০), লোগী (৭৮), মার্শাল (৬৭), হেইনস (দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৫৭) ও রিচার্ডসন (অপরাজিত ৫২) সহজ জয় এনে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

এরপর তিনটে নন ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে মাইনর কাউন্টি, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস মাইনর কাউন্টি কে হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্ল্যামারগণের বিরূদ্ধে ল্যাম্বার্ট (৯৯), রিচার্ডসন (১০৯) ও হুপার (৮০) এমনকি মার্শাল (অপরাজিত ৪৬) ভালো রান পান। অ্যামব্রোজ ৫ উইকেট নেন। ম্যাচ অবশ্য ড্র হয়।

কেন্ট অস্বাভাবিক লড়াই করে। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১০/৭ তোলে। ল্যাম্বার্ট ৭৭ ও লোগি ৭০ করেন। জবাবে নীল টেলর অপরাজিত ১৩৮ করলে কেন্ট ২৪৭/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ফিল সিমন্স ৯৭ বলে ১০৭ করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ৫০ ওভারে ২৭৮/৫ তুলে ডিক্লেয়ার্ড দেয়। কেন্টের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪২।

৮০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর গ্রাহাম কাউড্রে ও ম্যাথু ফ্লেমিং ব্যাপক পিটানো শুরু করেন। চতুর্থ উইকেটে ১৯২ যোগ হয়। ফ্লেমিং ১২২ বলে ১১৬ রান করে আউট হন। এরপরেই ওয়ালস, হামিশ অ্যান্টনি (ভার্জিন আইল্যান্ডের ক্রিকেটার, পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আইসিসি ট্রফি খেলেন) ও প্যাট্রিক প্যাটারসন বিধ্বংসী বল করে ৩৩৭ রানেই ফেলে দেয় কেন্ট কে। কাউড্রে ১৭৪ বলে ১০৪ করেন। লারা কিপার হিসেবে ক্যাচ লোফেন তাঁর।

বার্মিংহ্যামের চতুর্থ টেস্টে প্রথম ইনিংসে মার্শাল (৪/৩৩) ও অ্যামব্রোজ (৩/৬৪) ইংল্যান্ড (১৮৮) কে দাঁড়াতে দেয় নি। জবাবে রিচার্ডসনের ১০৪ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৯২ অবধি টেনে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রিঙ্গল ৮ নম্বরে নেমে ৪৫ ও ক্রিস লুইস দশম ব্যাটার হিসেবে ৬৫ করে নবম উইকেটে ৯২ যোগ করে একটু লড়াই করার মতো জায়গায় নিয়ে যান। প্যাটার্সন ৮১ রানে ৫ উইকেট পান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪ রানে ৩ উইকেট হারালেও হুপার (অপরাজিত ৫৫) ও ভিভ রিচার্ডস (অপরাজিত ৭৩) চতুর্থ উইকেটে ১২৭ রান যোগ করে দলকে জয় এনে দেন।

গ্লস্টারের বিরূদ্ধে ম্যাচ ড্র হয়। হেইনস ও রিচার্ডসন প্রথম ইনিংসে ও হুপার দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। এসেক্সের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ড্র করে। যদিও দুঁজো প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৪২ ও ল্যাম্বার্ট (১১৬ ও ৮২) করেন।

ওভালের শেষ টেস্টে রবিন স্মিথ শতরান করেন (১০৯)। গুচ (৬০), মরিস (৪৪) ও লুইসের (অপরাজিত ৪৭) জন্য ইংল্যান্ড ৪১৭ তোলে। হেইনস (ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু ৭৫) ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। টাফনেল ২৫ রানে ৬ উইকেট নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭৬ করে ফলো অনের মুখে পড়ে। রিচার্ডসন (৫১২ বলে ১২১), হুপার (৫৪) ও রিচার্ডস (শেষ টেস্ট ইনিংসে ৬০) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৮৫ অবধি নিয়ে যান। ডেভিড লরেন্স ১০৬ রানে ৫ উইকেট পান।

ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ১৪৬ রান তুলে সিরিজ ড্র করে।

টেস্ট সিরিজ শেষ হলেও কয়েকটা খেলা ছিল। সেই সব খেলার মধ্যে নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেইনস্ এর নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ (হুপার, রিচার্ডসন, দুঁজো, ওয়ালস, প্যাটারসন সহ) ৫ উইকেটে হেরে যায়। ক্রিকেট বিশ্ব রীতিমত চমকে যায়। পরের ম্যাচেই পুরো দল নেমে ৮৮ রানে হারিয়ে সম্মান বাঁচায়।

শেষ ম্যাচে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে খেলায় হুপার অপরাজিত ১৬৪ করেন। ল্যাম্বার্ট ৮০, হার্পার অপরাজিত ৬৩ করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪২৩/৬ তোলে। ৭ম উইকেট জুটিতে এঁরা দুজন ১৯১ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন থেকে।

জবাবে অধিনায়ক মিয়াঁদাদের ৮৮, শচীনের ৬১, ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই উইনস্টন ডেভিসের অপরাজিত ৫৪ বিশ্ব একাদশ কে ৩৭৫ অবধি নিয়ে যায়। রিচার্ডসনের ৯৮, স্ট্যাপলের ৫৬, হপারের ৫৫ ও গ্রিনিজের অপরাজিত ৫৫ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৬২/৭ অবধি টানে। জবাবে লক্ষ্যমাত্রা ৪১১ তাড়া করে বিশ্ব একাদশ ২৫৫/৫ তুললে ম্যাচ ড্র হয়। সঞ্জয় মঞ্জেরেকার ১৬০ বলে অপরাজিত ১৫৫ করেন ওপেন করতে নেমে।

গোটা বিশ্ব দেখলো সম্পূর্ন সফর ধরে ট্যুর ও আন্তর্জাতিক খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু বিপদেই পড়েনি, হেরেছে পর্যন্ত। এবারে লাগলো সমস্যা।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *