রান্নাঘরের গল্প। পর্ব ৬। লিখছেন মহুয়া বৈদ্য

0

(গত পর্বের পর)

ডালচচ্চড়ি

মামাবাড়ির রান্নাঘরের পরে আসে দুই মাসির রান্নাঘর। মেজোমাসি একটু কড়া ধরণের ছিলেন বলে আমি কখনোই একা থাকি নি তাঁর বাড়িতে। তবে, মায়ের সঙ্গে থেকেছি এখানে। মেজোমাসিরা ছিলেন দত্তপাড়ার অতিসম্ভ্রান্ত দত্ত বাড়ি। দত্তপাড়া নামটি তাদের বাড়ির পদবী ব্যবহার করেই। একটি সুবিশাল প্রাচীন বাড়ি ছিল তাদের, জমিদার বাড়ির মতো। আমি যখন ছোটবেলায় সেই বাড়ি দেখি, তখন সেটি ঝুরঝুরে।

এদিক থেকে ঢালাই খসে পড়ে ওদিক থাকে দেওয়ালের ইঁট। কিন্তু সে যে কী মজার বাড়ি ছিল! যেন ভুলভুলাইয়া। একদিন এদিক ওদিক সেদিক দিয়ে ঘুরতে  ঘুরতে দেখলাম আমি মেসোদের ভাইয়ের বাড়ির অংশে চলে গেছি, তাঁরা আবার আমাকে মাসির কাছে দিয়ে গেলেন। মাসিকে সাবধান করে গেলেন, আমি বাড়ি চাপা পড়তে পারতাম বলে। আমিও জব্বর বকুনি খেলাম। মেজোমাসির এই বাড়িতে ছিল লম্বা লম্বা থাম, তাদের পলেস্তারা খসে যাচ্ছে। সেই থামের মাথায় কী সুন্দর খাঁজকাটা ফুলের নকশা ছিল। নীচের তলার ঘরের ছাদে ছিল ভারি কড়িকাঠ। রেললাইনের মতো করে পাতা মনে হত আমার। দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে চারিদিকে ভাঙা দেওয়ালের স্তূপ…একটা ঘর যাহোক করে বেঁচে ছিল, তার ছাদ থেকে অহরহ ঢালাই খসে পড়ত। এমন বিশাল বাড়ির অমন অবস্থা আমাকে অবাক করতো। এইবাড়ির নীচের তলায় একটি সুবিশাল পাকশাল ছিল। এইবড় একটা উনুন যাতে এত্তবড় একখান কড়াই বসিয়ে যজ্ঞিবাড়ির রান্না করা যায়। যারা টেনিদা দেখেছেন, তারা “খাবো তোকে…” গানের সাথে একখানা উনুন দেখেছেন নিশ্চয়ই…ঠিক অমন একখানা উনুন ছিল। প্রাচীন সময়ে তাতে হয়ত রোজ শ’খানেক লোকজনের রান্না হত। এসব গল্প অবশ্য কোনো দিনই মাসির সাথে হয় নি। অই উনুনের নীচে মাসির একটা কাঠের উনুন ছিল, যাতে রান্নাবান্না হত। মেঝেতে বসে তিনি রাঁধতেন। কুটনো বাটনা করে দিত একজন সহায়িকা। আলোর সমস্যার জন্য সেইঘরে সবসময় জ্বলত বেশ বড়োসড়ো একটা বাল্ব। আমাদের দেখা সাধারাণ একশ পাওয়ারের বাল্বের চেয়ে সেটি অনেক বড় ছিল। সুবিশাল ঘরের সঙ্গে সুবিশাল ল্যাম্প। সেই আলোর নীচে বসে মাসি রান্নাবান্না করতেন। প্রচুর ফোড়ন দিয়ে রাঁধতেন, আর তাতে আমি শঙ্করদাদা মিঠুদিদি একসাথে হাঁচতাম। মিঠুদিদি খুব রেগে যেত। এখন বুঝি, শুকনো লঙ্কা ফোড়নে পড়ত।

এই বিশাল রান্নাঘরে একখানা পাথরে যাঁতা ছিল। তখন ছোট্ট আমি সবে বর্ণ পরিচয় পড়ছি, ” যাঁতা ঘোরে হাতের জোরে…” তা সত্যিই দেখতাম! এমন ভারী যে কিছুতেই সেটিকে নাড়াতে পারতাম না। আমার এত

আগ্রহ দেখে মাসি একদিন একমুঠো ছোলার ডাল দিয়ে যাঁতা ঘুরিয়ে দেখালেন, দেখি ডাল গুঁড়ো হয়ে ধুলো হয়ে গেছে। আমি অবাক মেনে মনে মনে ভাবলাম, মেজোমাসির হাতে অনেক জোর।

পরের দিকে এই বিশাল পুরাতন বাড়িটি ভেঙে ফেলতেই হয়। মাসিরা একটি দুইকামরার বাড়ি করে নেয়, ওই বাড়ির পাশেই। সেখানকার রান্নাঘরটি ছিল একেবারেই মেজোমামির রান্নাঘরের স্টাইলে। সেই একই জোড়া কাঠের উনুন, সিমেন্টের তাক… সবকিছু এক। পরে এই রান্নাঘরে গ্যাসের উনুন এসে যায়। তখন অবশ্য গ্যাসের জন্য টেবিল তৈরি হয়েছিল।

বড়মাসির রান্নাঘরের সাথে আমার লেপ্টে থাকার সম্পর্ক। আসলে বড়মাসির সাথেই সম্পর্কটি আমার অমন। যখনি যেতাম তার গায়ের সাথে জড়িয়ে মড়িয়ে লেগে থাকতাম। সকলে বলতো বড়মাসি আমার মা হয়। সেই কোন আঁতুড়ের সময় থেকে তিনি আমাকে সামলাচ্ছেন। ছেলেপুলে মানুষ করলে তাদের কাছে আমাদের কমবেশি চাওয়াপাওয়া তৈরি হয়, তিনি আমার মাসি আর আমি তার বোনঝি বলেই হয়ত আমাদের ভালোবাসা চাওয়াপাওয়া মুক্ত ছিল। শুধু অনেকদিন না দেখার কষ্ট ছিল, আর দেখতে পেলে লেপ্টে থাকা ছিল। সকাল থেকে বড়মাসি উঠোন ঝাঁট দিচ্ছেন পিছন পিছন আমি, বাসি বাসন কোসন কলতলায় বের করলেন পিছন পিছন আমি, বড়মাসি বাসি কাপড় ছাড়ছেন দরজার বাইরে আমি, তিনি রান্নাঘরে ঢুকলেন, সেখানেও তো আমি! একটা ছোট্ট পিঁড়ে পেতে দিতেন তিনি পাশে বসার জন্য। আমিও বসে পড়তাম।

বড়মাসির রান্নাঘরটি ছিল পাকা রান্নাঘর, ছাদ আঁটা। রান্নাঘরে ছিল তিনটে বেশ বড় দুই ভাগের জানালা, আর উনুনের সামনে ধোঁয়া যাওয়ার জন্য ইঁটের খুপরি কাটা। উনুনের জায়গাটুকু ছড়া রান্নাঘরের বাকি মেঝে ছিল সিমেন্টের। পাশাপাশি দুটো একানে কাঠের উনুন ছিল। একটি ছোট, একটি বড়। উনুনের উলটো দিকের গোটা দেওয়াল জুড়ে ছিল চওড়া চওড়া তাক। সেখানে বাসন কোসন, রান্নার সরঞ্জাম এবং একটা উঁচু তাকে রান্নাকরা খাবার রাখা থাকতো। একেবারে নীচের তাকে বড় বড় কৌটোতে সারা মাসের চাল আটা থাকত, সম্ভবত। সারা মাসের অন্যান্য রান্নার জিনিসপত্র থাকত, ভিতর ঘরের একটা মস্ত মিটকেসে। আর সেই মিটকেস খুললেই সেখান থেকে বেরোত মিষ্টি গ্লুকোজের গন্ধ। অত জিনিসের মধ্যে থেকে কেন গ্লুকোজের গন্ধ বেরোত এ আমার কাছে আজো বিস্ময়। আর সবচে মজার ব্যাপার হল বড়মাসি মিটকেস খুললেই আমার হাতে একচামচ গ্লুকোজ দিতেন এম্নি এম্নি খাওয়ার জন্য। সেইজন্যই গ্লুকোজের গন্ধ পেতাম কিনা কে জানে!

রান্নাঘরে উনুনের পাশে থাকত উনুন জ্বালানোর কাঠ। সেই কাঠ এত শৈল্পিকভাবে রাখা থাকতো, আমি কোথাও অমন দেখি নি। হালকা আগুন জ্বালাবার জন্য ছোট ছোট পল্কা কাঠ এক সাইজে কাটা থাকত। আরেকটু বেশি বা মাঝারি তাপের আগুনের জন্য আরেকটু বেশি লম্বা কাঠ, তাদেরও সব্বার সাইজ এক। আর দাউদাউ আগুনের জন্য বেশ একটু মোটা কাঠ। তিন ধরণের কাঠ রাখার জন্য তিনটে আলাদা খোপ ছিল রান্না ঘরে। মেসো বা প্রদীপ দাদা এই কাঠগুলি অমন সুন্দর করে কেটে গুছিয়ে রাখতেন। দুপুরবেলা মাঝেসাঝে মাসির কোল ছেড়ে আমি ওদের কাঠ কাটার সঙ্গী হতাম। আমার কাজ ছিল, কাঠ মাপ মতো কেটে দেওয়ার পর এক একটা বান্ডিলের মধ্যে এক একটা কাঠ গুছিয়ে রাখা। এত যত্ন থাকত কাজটিতে, আমার বেশ ভালো লাগতো এ কাজের অংশীদার হতে পেরে। তখন চারপাশে আর যত রান্নাঘর দেখতাম, কারোর কাঠের উনুনের কাঠ অমন সুন্দর করে গোছানো থাকতো না।

বড়মাসির রান্নাঘরে যিনি সহায়িকা ছিলেন, তিনি বাসন মাজতেন রূপোর মতো ঝকঝকে করে। মাজা বাসন কলতলার একটা সিমেন্টের তাকে জল ঝরত, সেগুলিকে সাদা কাপড় দিয়ে মুছে, তিনি তাকে তুলতেন। তারপর হাঁড়ি কড়া চায়ের কেটলির পিছনে পুকুর থেকে আনা হলুদ মাটি লেপে দিতেন, যাতে রান্নার কালি তুলতে তাকে বেগ পেতে না হয়। রান্নার পর যখন তিনি বাসন মাজতেন, দেখতাম একটা ছোট্ট ঢিল দিয়ে হাঁড়ি বা কড়ার পিছন ঠুকতেন। তাতে সেই কালো ঝুল লেপামাটি ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে হাঁড়ি কড়ার পিছনের চকচকে অংশ বেরিয়ে আসত।

রোজ সকালে ছোট উনুন হালকা আগুনের কাঠ দিয়ে ধরিয়ে মাসি তাতে আগে থেকে মাটি লেপে রাখা চায়ের কেটলি জল ও চিনি সমেত বসিয়ে দিতেন। জল ফুটে উঠলেই তাতে চা পাতা দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করতেন। তারপরেই বসে যেত দুধের গামলা। ছোটদের জন্য সকালবেলায় দুধ বরাদ্দ। চা বা দুধের সাথে আমরা সবাই খেতাম এত্ত বড় বড় জিবেগজা বিস্কুট। তারপরেই বড়মাসি রুটি তরকারির জোগাড়ে লেগে যেতেন। বড়মাসির আটা রাখার কৌটোটি ছিল খুব অদ্ভুত! সম্পূর্ণ লোহার কৌটো তার উপরে লোহার হেলমেটের মতো ঢাকনা, ঢাকনা থেকে একটা  হ্যাঁচকলের মতো ছিটকিনি ছিল। অমন অদ্ভুত কৌটো আমি আজ পর্যন্ত কোথাও দেখি নি। ওই কৌটোতে রুটিবেলার আটা থাকতো। বড় করে খবরের কাগজ বিছিয়ে ধুলিদিদি বা ডলিদিদি রুটি বেলতো আর মাসি রুটি সেঁকে ফেলতেন। এরপর ক্রমে ক্রমে রান্না হত ডাল তরকারি মাছের ঝোল… অত ব্যস্ততার মধ্যে ও আমি আমার সেই পিঁড়েটি কিন্তু ছাড়ি নি!

সেইসময় রেশনে গম দিত। সেই গম কুলোয় করে ঝেড়ে বেছে তারপর ভাঙাই করে আটা করে আনা হত। একবার সেই গমের মধ্যে কী একটা অদ্ভুত পোকা ছিল, গম ঝাড়তে গিয়ে সেই পোকা বড়মাসির চোখের চারপাশে কামড়ে দিল। সেই পোকার কামড়ে মাসির দুই চোখ জুড়ে বীভৎস একটা সংক্রমণ হল। বড়মাসির প্রতিমার মতো সুন্দর মুখ কী ভয়ংকর হয়ে উঠল! এই সংক্রমণ তখন র‍্যাশনের গম থেকে বারুইপুরে আরো অনেকের হয়েছিল শুনেছিলাম। বড়মাসিকে দেখে আমি দেখে এমন ভয় পেলাম যে মাসির কাছে যেতে পারলাম না! এই নিয়ে মাসির খুব অভিমান ছিল, অনেকদিন। বড়বেলাতেও কথায় কথায় বলে উঠেছেন, “তুমি তো সেইসময় আমার কাছে আসো নি, ভয় পেয়েছিলে…” আমিও খুব লজ্জায় মিশে যেতাম, কেন যে তখন ভয় পেয়েছিলাম!

বড়মাসির সমস্ত রান্নার মধ্যে আলু ছোলার তরকারি  ডাল-চচ্চড়ি আর বিভিন্ন রকমের পিঠের কথা আমার খুব মনে আছে। এগুলি খেয়ে একরকম ধ্বংস করতাম বলা যায়৷ প্রতি পৌষ পার্বণের পরদিন ভোরবেলায় বড়মাসি আমার জন্য যতরকমের পিঠে করতেন, সব পাঠিয়ে দিতেন। মেসো রাসমাঠে জুনিয়র অ্যাথলেটদের ট্রেনিং দেওয়ার আগে আমাদের বাড়িতে পিঠে ভর্তি একটা বা দুটো টিফিন কৌটো নামিয়ে দিয়ে যেতেন। ঘুম ভেঙে উঠে দাঁত মেজেই সেই বাসি পিঠে নিয়ে বসে যেতাম, আহা!

রান্নাবান্নার শেষে বড়মাসি সাবান জল করে গোটা রান্নাঘর মুড়ো ঝ্যাঁটা দিয়ে ধুয়ে সাফ করে ফেলতেন রোজ। তারপর রান্নাঘরে জানলাগুলি বন্ধ করে দরজায় শিকল এঁটে বালতি গামছা নিয়ে চলতেন বাগানের ভিতর কালোজলের পুকুরের জলে নাইতে। সেখানেও তার সঙ্গে আমি। ঘন বাগানের আম কাঁঠাল গাছ পেরিয়ে ঝকঝকে কালো জলের পুকুর দেখলেই মন ভাল হয়ে যেত। একবার বাগানের বেড়ার পাশে কি একটা গাছের নিচু ডালে পাতাসেলাই করে টুনটুনি পাখি বাসা করেছিল। সেই নীচু ডালের বাসার মধ্যে গোলাপি গায়ের হলুদ ঠোঁটের পাখি ছানা প্রথমবার দেখে কী অবাকই না হয়েছিলাম!

মেসো বাড়িতে থাকলে, তাঁকে খেতে দিয়ে বড়মাসি স্নানে যেতেন। এইদিন গুলিতে আমি আর মাসির সাথে যেতাম না। ধোয়া রান্নাঘর তখন সবে শুকিয়েছে, সেখানে আসন পেতে মেসো বেশ তরিবত করে খেতে বসেছেন, আমি উঠলুম গিয়ে তার পিঠের উপর। তিনি আমাকে পিঠে করে নিয়েই খেতে লাগলেন। মাঝে মাঝে হাতে করে কুমড়ো ভাজা কি মাছের টুকরো আমার মুখে দিচ্ছেন, আমি তার পিঠে দোল ও খাচ্ছি, খাবার ও খাচ্ছি… কী কষ্টটাই না দিতাম তাঁর খাবার সময়, এখন বুঝি। তারপর তার হাতে মাখা পাকা কলা আর ভাত… সেই স্বাদের তুলনা হয় না। যেদিন আগে বেরোতেন বা খাবার সময় আমি পাশটিতে নেই, হাঁক দিতেন, ” কে খাবে আমার কলা ভাত?” আমি ডাক শুনেই এক ছুটে চলে আসতাম তার পিঠের উপর।

 

বড়ো-মেসোর থুত্থুরে বুড়ি মা কে আমরা সবাই ডাকতাম আপুই মা বলে। এমন নাম কেন বা কোত্থেকে সৃষ্টি হয়েছিল জানি না। তখন তাঁর টকটকে ফর্সা রঙে বয়সের আঁকবুঁকি রেখা, মাথার চুল কয়গাছি শণের মতো সাদা। সেই চুল টানটান করে বেঁধে মাথার পিছনে একটু উপর দিকে একটা ছোট্ট গুলির চেয়ে একটু বড় সাইজে খোঁপা বাঁধতেন তিনি। চুল পাতলা হলেও লম্বা ছিল। সেই চুল আঙুলে জড়িয়ে জড়িয়ে তিঁনি প্যাঁচাতে থাকতেন, যতক্ষণ না সেটা গোল্লা পাকিয়ে অমন গুলির সাইজের খোঁপা হয়। ধবধবে সাদা থান পরে একটু কুঁজো হয়ে চলতেন । খুব কম দিনই তাঁকে দেখেছি। বয়সের ভারে তখন রান্নাবান্না করার অবস্থায় ছিলেন না। কিন্তু চুপচাপ বসেও থাকতেন না। বারান্দার একধারে বসে একটা ছোট্ট শিলনোড়া নিয়ে কী অদ্ভুত স্বাদের এক নাড়ু বানাতেন তিনি! ঝাল ঝাল অথচ মিষ্টি মিষ্টি সেই নাড়ুতে থাকত ঝাঁঝালো গন্ধ। আর সেই নাড়ু ছিল ইঁটের মতো শক্ত। যতদূর মনে পড়ছে, এই নাড়ুর মূল উপাদান ছিল চালভাজা। চালভাজা গুড়ো করে নিয়ে তাতে জিরে গুঁড়ো গোলমরিচ গুঁড়ো গরমমশলার গুঁড়ো আদা শুঁট এবং হয়তো আরো কিছু মিশিয়ে আগুন বসিয়ে গুড় দিয়ে একটা পাক করে দিত বড়মাসি। দেখতাম, সেই পাক একটু ঠান্ডা হলে, অল্প অল্প করে শিলে বাটছেন আর নাড়ু গড়ছেন। নাড়ু খানিকক্ষণ পরেই অমন ইঁটের মতো শক্ত হয়ে যেত। সে নাড়ু এমন, যে গন্ধে আপনার মনে হবে এক্ষুনি খেয়ে ফেলবো, কিন্তু এত শক্ত আর ঝাল এমন যে কিছুতেই তাড়াতাড়ি খেতে পারবেন না। ঝালের সাথে মিষ্টি আর মশলা এমন ব্যালেন্স করে মেশানো যে আপনি মায়া ত্যাগ করে ফেলতেও পারবেন না। ছোটবেলায় এই নাড়ু হাতে নিয়ে আধা খেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছি, নাক জ্বালা করছে আর চোখ দিয়েও জল গড়াচ্ছে অথচ নাড়ু ফেলছি না, এ আমার বেশ মনে পড়ে। বাড়িতে অতিথ এলে আপুই মা তাকে এই নাড়ু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সঙ্গে বেঁধে দিতেনই। আমার মায়ের, মেজোমাসির বেশ পছন্দের ছিল এই নাড়ু।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *