পুনর্ভবাপুত্র। ধারাবাহিক উপন্যাস। পঞ্চম পর্ব। লিখছেন আহমেদ খান হীরক

0

গত পর্বের পর…

ফেরেশতার ঘোড়া

আমাদের ঘোড়াটার কোনো নাম ছিল না।

কিন্তু না থাকলেই যে দিতে নেই, তা তো না। বছরখানেক পরে বোধহয় আমরা ঘোড়াটার নাম দিয়েছিলাম। অদ্ভুত নাম, বলতেই হয়।

তবে নাম কেচ্ছার আগে ঘোড়ার পটভূমিটা একটু বলা দরকার।

ঘোড়া পালতেন আব্বা।

দেশভাগ হলো ৪৭-এ।

আব্বারা ভাই-বোন মিলে ৪৮-এ এপারে এলেন। মনে বোধহয় তখন নতুন স্বপ্নই ছিল। ভেবেছিলেন এবার ন্যায় হবে। নিজেদের দেশ হবে। কিন্তু চোখে তার আমি বেদনা দেখেছি অনেক বছর। দেশ ছাড়ার বেদনা।

মালদাহ জেলার এক নিরেট গ্রামে আব্বারা থাকতেন।

গ্রামের নাম জগন্নাথপুর।

আটচল্লিশে আব্বারা সেই গ্রাম ছেড়ে পাকিস্তানে ঢুকলেন। মুসলমান বলেই হয়তো ঢুকতে হলো তাদের। সম্পদ অদল-বদল হলো। কেনাবেচাও হলো। আব্বারা বাড়ি তুললেন রহনপুরে। আর নিজেদের ধানী জমি ইত্যাদি রাখলেন মাইল দশেক দূরে। ধানই তখন একমাত্র আয়ের উৎস। ফলে চাষবাস নিয়মিত দেখাশোনা না করলে ছেলেমেয়েদের মুখে তুলবেন কি? তাই রহনপুর থেকে আব্বার নিত্য যাওয়া-আসা। আর এই যাওয়া-আসায় সহায় আমাদের ঘোড়া।

পরে আব্বা সাইকেলও করলেন। কিন্তু ঘোড়ায় তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলেই আমার ধারণা। বা অভ্যাসের চাইতেও বেশি কিছু হয়েছিল। হয়তো ভালোবাসা। তাই তিনি গরুর ঘরে ঘোড়ারও খুঁটি রেখেছিলেন। নিয়ম করে যত্ন নিতেন ঘোড়ার। আর যত্নের এই কালটা ছিল ভোর।

আমাদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে… একটা খামারবাড়ির মতো জায়গা। আমরা বলতাম ওবাড়ি। ওবাড়িতে দুইটা মাটির ঘর। একটাতে ঘোড়াগরুর আস্তাবল। অন্যটাতে রাখাল জাহাঙ্গিরের বাস। গাছ দিয়ে গড়া বেড়া সামনেই। বেড়ার ভেতরে গাছের মাখামাখি। আমগাছ-জামগাছ-কাঁঠালগাছ এমনকি কমলারও। একদিকে নিশিন্দা গাছ ছিপছিপে হয়ে মাথা তুলে দিয়েছে তো অন্যপাশে তালগাছ কেবল পাখা মেলেছে। ঘর তুলতে যে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে… সেই মাটির শূন্যস্থান পূর্ণ করেছে পানি। ডোবা একটা। ডোবায় খলবলানো তেলাপিয়া। আর ডোবার ওপর শরীর এলিয়ে দেয়া দুটো কাগজিলেবুর গাছ। এমন কোনো মৌসুম নেই যে তাতে ফল ধরে না। ফল ধরে এত যে সবগুলো তোলাও হয় না… পেকে হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে থাকে ডোবাটায়। অন্যপাশে অল্প একটু জায়গা ধরে সবজি চাষ। যত রকমের শাক আছে আর টমাটো-শসা, মরিচ কি বেগুন…আলু…সব!

জায়গাটায় আব্বা ছিলেন সম্রাট। উনি এখানে আসলেই যে গর্ব অনুভব করতেন সেটা তার চোখ দেখলে বোঝা যেত। আমি তার গর্ব বোঝার জন্য না অবশ্য, পিছু নিতাম সকালবেলাটা মুগ্ধ কাটানোর জন্য। ফলে আব্বা ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হলেই আমিও আঙুলটা বাড়িয়ে দিতাম। ধরতাম আব্বার তর্জনি। আব্বাকে তখন অন্য মানুষ মনে হতো। চিরচেনা গাম্ভীর্য ফেলে তিনি কেমন একটা আমুদে মানুষ হয়ে যেতেন। বলতেন, শোন, গাছেরা হলো একেকটা শক্তি। এই শক্তি তাদের কাছে গেলে বোঝা যায়। শুধু সবুজের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দিন পার করে দেয়া যায় জানিস?

আমি জানি না। তাই চুপ থাকি। আব্বা বলেন, গাছের জীবন আছে কে বলছে এইটা মনে আছে?

‘জগদীষচন্দ্র বসু।’

‘গাছের মূল্য এখন বুঝছে না মানুষ। একদিন বুঝবে। কিন্তু তখন অনেক মূল্য দিতে হবে।’

আব্বা মাঝে মাঝে ভারী ভারী কথা বলতেন। একটা দার্শনিকসুলভতা ছিল তার মধ্যে। বইপত্র পড়ার কারণে এমন হতে পারে বলে আমার ধারণা। পেপার-পত্রিকা যেমন নিয়মিত পড়তেন, তেমনি সাহিত্য পড়া লোকও ছিলেন তিনি। ছবিও আঁকতেন। একটা অদ্ভুত কম্বিনেশন ছিল সব মিলিয়ে। অদ্ভুতই। কারণ পরে আর এমন কাউকে পাই নি আমি।

আব্বার সাথে ভোরের এই হাঁটাটা সুখের ছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে যে সুখটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারতাম না। হতে পারে তখনকার আব্বারা এত বেশি আস্কারা ছেলে-মেয়েদের দিতেন না। ফলে আমি নিজেকে অনন্য ভাবতে শুরু করেছিলাম। কিংবা, আব্বার মতো আমার ভেতরেও, কোনোভাবে সবুজ প্রোথিত হয়েছিল—আমি ঠিক কূল পাই না এই ভাবনার।

আব্বা গরুর দেখভাল করতেন। লাল দুই গরু, কালো গাই। জাহাঙ্গির ভাইকে বলতেন, ওদের ঠিকমতো খৈলভূষি দেয়া হয়েছে কিনা। গরুদের গলায় আদরও করে দিতেন। আমিও চেষ্টা করতাম। গরুরা আব্বাকে দেখলেই ডেকে উঠত। মনিবের আগমনে কে না রবরবায়?

কিন্তু তিনটা গরুকে আব্বা যে সময় দিতো তারচেয়েও বেশি সময় দিতো ঘোড়াটাকে।

খয়েরি রঙের ছোটখাটো ঘোড়া। কর্কশ লেজ। নাকের ওপরটা সাদা। বেশি হুল্লোড় নেই। আব্বাকে দেখে ছোট্ট করে একটা ডাক… আব্বা বলতো, কী রে কেমন আছিস?

ঘোড়াটা ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে। আব্বা এবার শুধু তদারকি না, ঘোড়াটাকে খাওয়াতেই ধরে। আর আমার শুধু মনের টিঙটিঙানি–কখন উঠব তার পিঠে! কখন?

খাওয়ানো হয়ে গেলে আব্বার পেছন পেছন ঘুরি। আব্বা জিজ্ঞেস করেন, কী?

আমি বলি, একটু উঠতাম!

আব্বা হাসেন। আমাকে কোলে ধরে উঠিয়ে দেয় ঘোড়াটার ওপর। না জিন না লাগাম। আমি বসে থাকে। ঘোড়াটা চড়ে বেড়ানোর মতো করে হাঁটে। আমাকে যে সে ফেলে দিতে চায় না, এই আনন্দে আমার ছোট্ট বুকে খুশি আর ধরে না। আমি পিঠের ওপরে বসেই লাফাই… চল মেরে ঘোড়া…

আমার ঘোড়া দৌড়ায় না। কিন্তু বসে বসে আমি দৌড়ের অনুভূতি নিই। ছোট ছোট গল্প জমা হতে থাকে বুকের ভেতর। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের গল্পগুলো শোনাতে হবে। আমার বন্ধুদের বড় বাড়ি আছে, কারো বাড়িতে মিউজিক প্লেয়ার আছে, একজনের বাড়িতে ভিসিআরও আছে… কিন্তু কী অবাক কাণ্ড কারো বাড়িতেই ঘোড়া নেই। আমি ঘোড়ায় চড়ে থাকতে থাকতে বিভোর হয়ে পড়ি। মনে হয় এটা একটা পঙ্খিরাজ ঘোড়া। ইচ্ছা করলেই পিঠের ভেতর থেকে ডানা বের করে ফেলবে। তারপর সাঁই সাঁই করে উড়ে যাবে আকাশে।

আকাশের ওইপাড়ে কী আছে? মেঘের আড়াল পাড়ি দিলে কী কী পাওয়া যায় দেখতে?

আমার মনে হয় আকাশের ওইপাড়ে আরো কোনো ঘরবাড়ি আছে। নদী আছে, গাছ আছে, অনেক ফুল আছে। শুধু প্রজাপতি খেলা করে এমন জায়গাও আছে। মাঠ আছে। ঘাসে ভরা ঘন সবুজ মাঠ। আমি বলি, চল মেরি ঘোড়া… আকাশের ওইপাড়ে! চল চল চল… ঘোড়াটা একটু দুলে ওঠে। চিঁহিহিঁও করে ওঠে। আমার মনে হয় এবার সে লাফ দেবে। তারপর সোজা আকাশে…

কিন্তু আব্বা আমাকে জমিনে নামিয়ে ফেলে। গাঁদাফুলের বাগানে ঢুকিয়ে দেয়। এত হলুদ। আর কেমন যে একটা চাপা ঘ্রাণ। আমি ফুলের ভেতর ঢুকে আমাদের ঘোড়াটাকে দেখি। টুকটুকে গল্প নিয়ে স্কুলে চলে যাই–

আমাদের ঘোড়া আছে!

বন্ধুরা এটুক শুনেই দমবন্ধ করে তাকিয়ে থাকে। অবিশ্বাস্য লাগে তাদের কাছে।

আমি গল্প আরো বাড়াই। বলি, ওই ঘোড়াটা উড়তেও পারে!

শফিকুল বলে ওঠে, ঝাড়ি মারো না! ঘোড়া কোনো দিন ওড়ে!

আমি বলি, আমাদেরটা ওড়ে। সব সময় না। যখন ইচ্ছা হয় তখন ওড়ে। উড়তে উড়তে মেঘের ওইপাড়ে চলে যায়।

মনোজের চোখ বড় বড়—তুমি গেছো কোনোদিন?

আমি হাসি। বলি, গেছি তো। দুইবার গেছি।

স্বপন বলে, কী আছে বে ওইপাড়ে?

আমি এবার আর কিছু বলি না। গৌতম স্যার টেবিল আঁকতে দেয়। আমি তিনকোণা টেবিল এঁকে নিয়ে যাই। গৌতম স্যার আমার চিপ ধরে টানাটানি করে। খাতার ওপর লালকালি দিয়ে লিখে দেয়—ভালো না!

আমি খাতা লুকিয়ে ফেলি। কিন্তু ব্যাগ খুলতে গিয়ে আম্মা খাতা দেখে ফেলে। ভালো না দেখেও অবশ্য কিছু বলে না। আব্বাকে দেখায় শুধু। আব্বা বলেন, টেবিল আঁকা এমন কিছু না।

আব্বা টেবিল এঁকে দেখায়। দেখা যায় আব্বারও টেবিলও তিনকোণা। আম্মা রাগ করতে গিয়ে হেসে ফেলে। আব্বা বলে, দুনিয়াতে আঁকার জন্য টেবিলের থেকেও ভালো জিনিস আছে!

আব্বা মানুষ আঁকতে বসেন। আমিও আঁকতে বসি মানুষ। এরপর আব্বা একটা ঘোড়া আঁকেন—একেক টানে ঘোড়ার মুখ, বুক, পা…আর ঝাঁকড়া লেজ! আমি আব্বার ছবিটায় মন খুলে রঙ দিতে বসি। আম্মা বলে, আপনি যে কী! কই ছেলেটাকে একটু স্কুলের আঁকা শেখাবেন… আপনি নিজেই আমাদের ঘোড়া আঁকতে বসছেন!

আব্বার চোখ ঝিলিক দিয়ে ওঠে–একদম আমাদের ঘোড়াটার মতন হয়েছে না?

আম্মা আর কথা বাড়ায় না। আমরা ছবির ভেতর ডুবে যেতে থাকি। এর মধ্যেই আম্মা ডাক দিতে থাকেন… হীরক, এই হীরক… তোর ছবি আপা আসছে!

আমার বুকটা এবার ধড়াস করে ওঠে। ছবি আপার চিঠিটা যে রুবেল ভাই ছিঁড়ে দিয়েছে এ কথা কীভাবে তাকে বলি। আমি তাই যেতে চাই না। ঘোড়ার রঙে আরো মন দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু লাভ হয় না। উঠান পেরিয়ে বারান্দা, বারান্দা পেরিয়ে ঘর… ঘরের ভেতর আমাদের খাট… ছবি আপার অবাধ বিচরণ। আমাকে দেখেই বলে, এই, তোর না দেখা করার কথা!

আমি পিটপিট করে তাকিয়ে থাকি। আমার মাথার ভেতর গল্প জমতে শুরু করে। বলি, আম্মা না আমতা দিয়েছে ছাদে!

ছবি আপার মুখটা হাসিতে ভরে যায়। দুজনে ছুট দিই আমতার উদ্দেশ্যে। আম্মা রান্নাঘর থেকেই বোঝে–চিৎকার করে বলে, সাবধানে ছিঁড়বি। ধুলা লাগালে দুই জনেরই কান ছিঁড়ে নিবো কিন্তু!

ছবি আপা হেসে দেয়। আমি একটু ভয়ে ভয়ে বলি, আম্মা সত্যিই কান ছিঁড়তে পারে কিন্তু…

ছবি আপা আমার হাত ধরে টান দেয়– আয় তো!

আমরা আমতা সাবধানেই মেলে দেয়া কাপড় থেকে ওঠাই। আমের আঁটি যেখানে জায়গাগুলোতে আছে, সেই জায়গাগুলো দেখে দেখে ছিঁড়ি। ছবি আপা একটা বড় পাতাকে গোল্লা বানিয়ে মুখে পুড়ে টকে চোখটা কুঁচকে বলে, চিঠি দিয়েছিলি?

‘কবেই!’

‘কিছু বলছে?’

‘কী বলবে?’

‘কিছুই বলে নাই?’

‘না।’

‘পড়ছে?’

‘আমি কী জানি?’

‘বাল!’

আমার সাত আসমান কেঁপে ওঠে। ছবি আপার মুখে এই ধরনের কথা? মাথাটা কেমন ঝাঁঝাঁ করতে থাকে। মুখটা শুকিয়েও যায় বোধহয়। তা দেখে ছবি আপা ভ্রু কুঁচকায়—উহ! ঢং!

আমি তাকিয়ে থাকি। ছবি আপা বলে, যেন আগে কোনোদিন এইসব কথা শুনিস নাই?

আমি কাঁপাস্বরে বলি, মেয়েদের মুখে শুনি নাই।

ছবি আপা চোখ পাকিয়ে বলে, ওরে আমার জানের টুকরা! তুই এখনই মেয়ে ছেলে আলাদা করতে শুরু করছিস? তুই তো হাফপ্যান্টই ছাড়িস নাই এখনো!

‘আমার দুইটা ফুলপ্যান্ট আছে।’

ছবি আপা হেসে দেয়। তারপর সাধারণত যা করে আবারও তাই করে। গাল ধরে টান দেয়। অন্যরা টানলে খারাপ লাগে। ছবি আপা টানলে কেমন যেন আদর আদর লাগে। আমার কানের কাছে তার মুখটা নিয়ে, মুখ নিলে কী যে হয়, ছবি আপার শরীর থেকে কেমন বিবশ করা আমলার চাপা গন্ধ আসতে থাকে, বলে, বাল বাল বাল!

আমার কান লাল হয়ে যায়। ছবি আপা বলে, তুই তো বড় হয়ে যাচ্ছিস রে। দেখেছিস তোর কানের রঙ? তোর তো বিয়ে দিয়ে দরকার…

আমি বলি, যাহ!

‘যাহ আবার কী? বিয়ে করবি না তুই?’

আমি ছবি আপার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর ঝপ করে চোখটা নামিয়ে নিই। ভেতরে ভেতরে কী হয় কে জানে! বলি, তুমি করলে করব!

আমার ধারণা ছিল এই কথার পর ছবি আপা খিলখিল করে হাসবে। কিন্তু অবাস্তবের মতো লাগে যে ছবি আপা না হেসে আমার মাথাটা ধরে ফেল। তারপর চকাস করে গালে চুমু খায়। এবার একটু হাসে। খুবই মৃদু। বলে, তোদের রুবেল ভাই না করলে করতে পারি।

আমলা ঘ্রাণে নাকি কিসে কে জানে… আমার আকাশটা সাঁ করে মিলিয়ে যেতে থাকে… মনে হয় একটা সরু কোনো শিসিতে ঢুকে যাচ্ছে। যেভাবে বালি ঢোকে শিসির ভেতর, একটা পুরো আকাশ ওভাবেই ঢুকতে থাকে।

ছবি আপা আবার ঝোঁকে। আবার সেই ঘ্রাণ থাপ্পড় মারে। বলে, স্কুলে যাওয়ার আগে, কালকে দেখা করে যাবি। ঠিক আছে?

আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকি। ছবি আপা নেমে যেতে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয়, আকাশের সাথে, আমিই আসলে, নেমে যাচ্ছি।

কিন্তু পরদিন সকালে ছবি আপার বাড়ি যাওয়া হয় না স্কুলে যাওয়া আগে। এমনকি স্কুলেও যাওয়া হয় না। এমনকি আমাদের সকালও হয় না। আমাদের একটা ঘোরভাঙা ভোর হয়। যে ভোরে দরজায় আসে কড়ানাড়ার জোর শব্দ। আম্মা তখনও নামাজে। আব্বা তখন বারান্দায়। আর আমি ঘুমের ভেতর থেকে ছবি আপাকে নিয়ে জেগে উঠছি।

দরজা খোলে বড় ভাই। এত শব্দ ঘুমকাতুরে ইতি আপাও বেরিয়ে এসেছে বারান্দায়। দরজায় জাহাঙ্গির ভাই। আব্বা বকা দেয়—এত জোরে দরজা থাপড়ায় কেউ?

বড় ভাই বলে, কী হয়েছে?

আম্মা জায়নামাজ নিয়েই উঠে এসেছে। জাহাঙ্গির ভাই হাঁপাচ্ছে। কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না… আম্মা বলে, ইতি, ওকে পানি দে তো মা…

জাহাঙ্গির ভাই পানি খায় না অবশ্য। নিজেকে সামলাতে সামলাতে বলে, তাত্তাড়ি চলেন আপনারা। হাড়ঘে ঘোড়াটা কেমন জানি করছে। খালি কামড়াইতে আসে। আর মুখ দিয়া গ্যাঁজা আর গ্যাঁজা…

আব্বাকে ওভাবে বেরোতে আমি আর কোনো দিন দেখিনি। বড় ভাইও প্রায় দৌড় দেয়। আমি কার সাথে যাবো বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু এটুকু শুধু বুঝতে পারি আমাকেও যেতে হবে… যেতেই হবে!

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *