পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ৭। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

ডায়ান ফসে এবং ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক – কঙ্গো-রুয়ান্ডার মাউন্টেন-গোরিলা ও পরিবেশ-কর্মী হত্যার উত্তরাধিকার

 

ডিজিট, আঙ্কল বার্ট, ফ্রিটো, লিও, মার্চেসা, কোয়েলি, ম্যাকো ও অন্যান্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম। এদের ভেতর একটি প্লেকে লেখা – ‘ডায়ান ফসে’। মার্কিন সাংবাদিক-লেখক অ্যালেক্স সাউমাটফ-এর কথায় – “দিজ ইজ আ ফ্যামিলি প্লট। দিজ ওয়াজ ডায়ান’স ফ্যামিলি”। প্লেকে সময়সীমা নির্দিষ্ট – ১৬ জানুয়ারি, ১৯৩২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৫। কঙ্গো, রুয়ান্ডা, ভিরুঙ্গা পাহাড়, মাউন্টেন গোরিলা এবং মিথ ও খ্যাতি-কুখ্যাতি মিলিয়ে একজন মানুষ। পরিবেশ-কর্মী হত্যার ক্রনোলজির বিচারে স্রেফ প্লাস ওয়ান? নাকি ডায়ান ফসে অন্য কিছু, তারার আকাশে উজ্জ্বলতম কেউ? শুরুটা একটু অন্যরকম ছিল। একদম একা একটা মানুষ। মা এবং সৎ-পিতার সঙ্গে এক টেবিলে খাওয়া হত না কিশোরী ডায়ানের, সেই একাকীত্ব, বন্ধুহীনতা মানুষের প্রতি বিরাগ থেকে তৈরি হল মনুষ্যেতরর প্রতি প্যাশন। পোলিও এবং মাউন্টেন সিকনেস-আক্রান্ত শিশুদের সেবায় লুইসিয়ানার কেনটাকিতে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এবং প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ডায়ানের মন পড়ে আছে অরণ্যে। ১৯৬৩-র সাত মাসের আফ্রিকা ট্যুর, প্রাইমেটোলজিস্ট লুই লিকির তানজানিয়া, জর্জ স্যালারের কঙ্গো এবং তরুণ দম্পতি জোন ও অ্যালেন রুটের ফটোগ্রাফিক প্যাশনেট আফ্রিকা টানছিল ডায়ানকে। ফিরে এসে কয়েকবছর পর লুই লিকির আহ্বান। বাকি দুই লিকি লেডি অর্থাৎ ১৯৬০-এ জেন গুডলের তানজানিয়ার শিম্পাঞ্জি স্টাডি এবং ১৯৭১-এ বাইরুটে গ্যালডিকাসের বোর্নিও’র ওরাং-ওটাং গবেষণার মাঝে দ্বিতীয় ডায়ান – অবিবাহিত, সুস্থ, এনার্জেটিক ডায়ানকে লুই লিকি অনুরোধ করলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য গোরিলা গবেষণায় আফ্রিকায় গিয়ে থাকতে। বললেন, বাধ্যতামূলক অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের কথা। উত্তেজনায় সেখানেও কার্পণ্য করেননি ডায়ান। ডায়ান পরে জেনেছিলেন ছাত্রীর দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে স্রেফ মজা করেছিলেন স্যার লিকি। ১৯৬৬ থেকে কঙ্গোয় এসে মাস ছয়েকের মধ্যে কঙ্গোয় জর্জ স্যালার-খ্যাত কাবারা গ্রাসল্যান্ডে আস্তানা। স্থানীয় বিদ্রোহের আওতায় পড়ে রুমাঙ্গাবোয় কঙ্গোর বিদ্রোহীদের কাছে আটক এবং কোনওক্রমে বেঁচে ফিরে শেষমেশ ভিরুঙ্গার রুয়ান্ডার দিকে ঠিকানা। মাউন্ট কারিসিম্বা এবং মাউন্ট বিসোকো পাহাড়ের মাঝে দুই পাহাড়ের নাম মিলিয়ে ১৯৬৭-র ২৪ আগস্ট নিজের গোরিলা গবেষণাকেন্দ্রের নাম রাখলেন কারিসোকে রিসার্চ সেন্টার। লেগ্যাসির শুরু সেখানেই।

গোরিলাদের সঙ্গে ডায়ান, ইনসেটে তাঁর কেবিনে গবেষণার সময় (ছবিসূত্র – ভ্যানিটি ফেয়ার)

 

রুয়ান্ডার গোরিলা পোচিং-এর বিশদে গেলে বলতে হয় বাটুটসি এবং বাহুতু আদিবাসীদের দীর্ঘবিবাদ। উত্তর থেকে আগত ক্যাটল-র‍্যাঞ্চার দীর্ঘদেহী বাটুটসিদের কাছে বরাবর দ্বিতীয় সারিতে থেকে গেছিল বাহুতু উপজাতিরা। ১৯৬২-তে রুয়ান্ডার স্বাধীনতার পর বাহুতুদের প্রতিশোধ এবং ভলক্যানো ন্যাশনাল পার্কের দিকে কোণঠাসা বাটুটসিদের ভিড়। খুব স্বভাবতই বৃক্ষচ্ছেদন এবং গোরিলাদের ওপর প্রভাব পড়েছিল এর। এর সঙ্গে ছিল পোচার বাহুতু এবং অ্যান্টিলোপশিকারী বাটওয়া কমিউনিটির সহাবস্থান। মূলত অ্যান্টিলোপ শিকারে ব্যবহৃত ফাঁসে আটকে যেত বিশাল শরীরের গোরিলারাও। ফাঁস ছিঁড়ে বেরোতে সমস্যা না হলেও এই ছিঁড়ে বেরোনোর কাজে আহত হয়ে গ্যাংগ্রিন এবং সেখান থেকে মৃত্যুর ঘটনা আকছার ঘটত। এবং তার সঙ্গে বুশমিট বা বন্যপশু মাংস, এলিট সাদা চামড়ার জন্য গোরিলার দেহাংশ বিক্রি, গোরিলার হাতের তালু কেটে তৈরি হওয়া অ্যাশট্রে – এসবের জন্য সরাসরি গোরিলা পোচিং চলত হামেশাই। অথবা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে শিশু গোরিলাদের বলপূর্বক অপহরণে শেষ হয়ে যেত প্রতিবাদী অন্তত চার-পাঁচটি প্রাপ্তবয়স্ক গোরিলা। মাউন্টেন গোরিলারা এভাবেই এন্ডেঞ্জার্ড থেকে ক্রিটিকালি এন্ডেঞ্জার্ড হয়ে পড়ছিল। ডায়ানের গোরিলা সংরক্ষণ আন্দোলনে বন্ধু বলতে কয়েকজন আফ্রিকান ট্র্যাকার, ১৯৭২ পর্যন্ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফটোগ্রাফার বব ক্যাম্পবেল, লেখিকা-হিউম্যানিটারিয়ান রোজামুন্ড কার বা বেলজিয়ান মহিলা অ্যালিয়েট ডিমাঙ্কের মতো হাতে গোণা কিছু মানুষ। বাকিটা বৈরিতা, স্রেফ বৈরিতা। শেষ চিঠিতে রোজামুন্ড কার-কে ডায়ান লিখেছিলেন – ‘ওহ রোজ, আই নিড আ ফ্রেন্ড সো মাচ, সো মেনি পিপল আর এগেইন্সট মি’।

১৯৮৫-র ২৭ ডিসেম্বর ডায়ান ফসেকে সমাধিস্থ করা হচ্ছে (ছবিসূত্র – ভ্যানিটি ফেয়ার)

শত্রুতা এবং সম্ভাব্য হত্যার শুরু কোথায়? গোরিলা পোচিং আটকাতে ভিরুঙ্গা ঘুরে ঘুরে অ্যান্টিলোপ ট্র্যাপ ধ্বংস করতেন ডায়ান এবকং তাঁর গোরিলা ট্র্যাকার দল। ১৯৬৭-তে রুয়ান্ডায় ২০টি দলে ঘুরে বেড়ানো ২৪০টি মাউন্টেন গোরিলার এক একটা দলকে নেতৃত্ব দিত বিশালাকার সিলভারব্যাক গোরিলা। ১৯৭৭-এর শেষে ডায়ানের প্রিয়তম সিলভারব্যাক বারো বছরে ডিজিটের মাথা ও দুহাত কাটা শরীর আবিষ্কার করেন ডায়ানের সহকর্মী ইয়ান রেডমন্ড। ওয়াল্টার কঙ্ক্রাইটের সি.বি.এস. ইভনিং নিউজ রিপোর্টে ১৯৭৭-এর ৩১ ডিসেম্বর ডিজিটের মৃত্যুর খবর বেরোলে গোরিলা সংরক্ষণে টনক নড়ে বাইরের পৃথিবীর। ১৯৭৮-এ পোচার এবং ভিরুঙ্গা পার্কের অফিসিয়ালদের একটি দল শিশু গোরিলা কোয়েলিকে নিয়ে যেতে এলে সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয় ডিজিটের ‘গ্রুপ ফোর’-এর আরেক সিলভারব্যাক আঙ্কল বার্ট, সঙ্গে ওই আক্রমণেই শেষ হয় কোয়েলির মা ম্যাকো। কোনওক্রমে কোয়েলি বেঁচে গেলেও পোচারদের বুলেটে আঘাত পেয়ে তিন মাসের মধ্যে গ্যাংগ্রিনে চলে যায় সেও। একের পর এক প্রিয় সঙ্গীর মৃত্যুতে ডিপ্রেসিভ, রিক্লুসিভ, ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়া ডায়ান গোরিলা-গবেষণা থেকে সরে গিয়ে ক্রমশ একমুখী পোচারবিরোধিতাকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বেছে নিলেন। ডিজিট চলে যাওয়ার পর তৈরি হওয়া ‘ডিজিট ফান্ড’ (বর্তমানে ‘ডায়ান ফসে গোরিলাজ ফান্ড’)-এ আসা অর্থ দিয়ে ১৯৭৯ সালের চার মাসে মাত্র চারজন স্টাফ নিয়ে মোট ৯৮৭টি অ্যান্টিলোপ ট্র্যাপ নষ্ট করেন ডায়ান, আশ্চর্য, ঠিক ওই সময় ২৪ জন স্টাফের ভিরুঙ্গা পার্কের টিম একটিও ট্র্যাপের নাগাল পায়নি। ডিজিট প্রসঙ্গে স্মৃতিকথা ‘গোরিলাজ ইন দ্য মিস্ট’-এ ডায়ান লিখছেন – ‘ফ্রম দ্যাট মোমেন্ট অন, আই কেম টু লিভ উইদিন অ্যান ইনসুলেটেড পার্ট অফ মাইসেলফ’। স্থানীয় এক পোচারের ছেলেকে অপহরণ, গোরিলা মল জোর করে খাইয়ে পোচারদের সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত করার চেষ্টা, কালো জাদুর মতো সংস্কারাচ্ছন্ন বিষয়ে ঝুঁকে পড়ার – এইসমস্তই কথিত হয়ে আছে শেষ কয়েকছরের ডায়ানের সঙ্গে। এই সত্যি কিংবা অতিকথনের ভেতর, ডায়ান ফসে পাল্টে যাচ্ছেন ক্রমশ। বন্ধুহীন, শৈশব-কৈশোরবিহীন ডায়ান, কাদামাটির রুয়ান্ডা পাহাড়ে ওঠা, এম্ফাইসিমা আক্রান্ত ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়া ডায়ান, কঙ্গোয় সৈন্যশিবিরের অন্ধকার ইতিহাসের লেগ্যাসি নিয়ে খিটখিটে আনপ্রেডিক্টেব্ল ডায়ান কারণে অকারণে স্থানীয় আফ্রিকানদের ওপর বিরক্ত হয়ে পড়ছিলেন। ক্রিসমাস উপহার দিয়ে ঠিক পরমুহূর্তেই তাদের ছোট ছোট ভুলে চিৎকার করে উঠছেন – পরোক্ষভাবে হয়তো কলোনিয়াল, বর্ণবিদ্বেষ মানসিকতার প্রকাশভঙ্গি এসে যাচ্ছে তাঁর ওপর। শখের ট্যুরিস্ট তকমায় এঁটে দিয়ে, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করলেন কারিসোকে রিসার্চ সেন্টারে আসা তরুণ গবেষকদের। পাশাপাশি রুয়ান্ডা সরকার এবং ভিরুঙ্গা পার্ক সংস্থা ও.আর.টি.পি.এন.–এর ট্যুরিজম প্রচারকে গোরিলা-বিরোধী বলে সরাসরি বিরোধে নামলেন। মনুষ্যজনিত অসুখ গোরিলায় সংক্রামিত হয়ে যাওয়ার ভয় পেলেন, পাশাপাশি পড়শি দেশ জাইরের গোরিলাদের আচরণ দেখতে উল্লাস করে ভিড় করা ট্যুরিস্টদের ডায়ান চিনে নিয়েছিলেন আগেই। একবারের জন্যেও অ্যান্টিলোপ ট্র্যাপে হাত না দেওয়া এলিটিস্ট মার্কিন-ইউরোপীয় শৌখিন সংরক্ষণবাদীদের আঘাত করতে থাকলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩-র গবেষণার জন্য ইথাকায় ফিরে আসা এবং শেষ দু বছর আবার সেই আফ্রিকায় থাকা ডায়ান হয়ে গেছেন আরও গৃহবন্দী। নিজস্ব স্টাফ, গবেষক প্রত্যেকে ভয়ে, বিরক্তিতে এড়িয়ে চলছেন ডায়ানকে। ১৯৮৫-র ২৭ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ছ’টায় পরিচারক এবং এক সহকর্মী-ছাত্র প্রায় তছনছ হয়ে যাওয়া নিজস্ব কেবিনের ভেতর মাথায় কোণাকুণি একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শেষ হয়ে যাওয়া বছর চুয়ান্ন ছুঁতে যাওয়া ডায়ানের নিঃস্পন্দ শরীর খুঁজে পান। ডায়ানের একসময়ের পরিচিত, পরে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়া গবেষক বিল ওয়েবার বলেছেন – ‘শি ডিডন্ট গেট কিল্ড বিকজ শি ওয়াজ সেভিং দ্য গোরিলা’জ, শি গট কিল্ড বিকজ শি ওয়াজ বিহেভিং লাইক ডায়ান ফসে’।

ডিজিটের সঙ্গে ডায়ান ফসে, ১৯৭৭-এর মে (ছবিসূত্র – ডায়ান ফসে গোরিলা ফান্ড)

 

আসবাব দিয়ে ঠাসা গোটা কেবিনে মাত্র একটি ফাঁকা জায়গা ছিল আর সেখানেই সিঁদ কাঁটা হয় ২৬ ডিসেম্বর রাতে। তাহলে কি ডায়ানের পরিচিতদের কেউ? আমৃত্যু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকা, হিংসের ধারেকাছে না থাকা, রুয়ান্ডা উপজাতিদের চরিত্রের সঙ্গে কোনওভাবেই এই পরিকল্পিত বীভৎস হত্যা আসে কি? বিদেশি কেউ? দোষী ধরা পড়েননি। আনুমানিকভাবে কেউ কেউ চিহ্নিত হয়েছেন মাত্র। বাহুটু-বাটওয়া পোচার দল, আঠারো বছর আগে কঙ্গোর রুমাঙ্গাবো ক্যাম্পে বন্দী থাকাকালীন ডায়ানের কৌশলে উগান্ডা সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কঙ্গো বিদ্রোহী সেনাদের কেউ, কারিসোকে দখলের উদ্দেশে থাকা রুয়ান্ডা সরকার বা ভিরুঙ্গা পার্কের অফিসিয়ালদের ভেতর এক বা একাধিক ব্যক্তি, ডায়ানের নিজের বহু মূল্যবান নোট পেয়ে গবেষণা শেষ করার লোভে থাকা কারিসোকের গোরিলা-রিসার্চ টিমের কেউ – নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি কাউকেই। রুয়ান্ডা সরকার থেকে ডায়ানের এক ছাত্রকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়, যদিও সেই ছাত্রের পক্ষ থেকে ক্রমাগত অস্বীকার এবং যথেষ্ট প্রমাণের ওভাবে ডায়ান হত্যা মামলা আনরিজলভড হয়েই থেকে গেছে। শুধু আশ্চর্য প্রাসঙ্গিক হ্যাগেনিয়া বা হাইপেরিকাম গাছে ঘেরা কাদামাটির কারিসোকেতে স্থানীয়দের ভাষায় ‘নাইরামাকিবিলি’ বা ‘দ্য লেডি হু লিভস অ্যালোন ইন দ্য ফরেস্ট’ নামে কিংবদন্তি হয়ে থাকা ডায়ান ফসের সমাধিতে লেখা কথাগুলো – ‘নো ওয়ান লাভড গোরিলাজ মোর, রেস্ট ইন পিস, ডিয়ার ফ্রেন্ড’।

প্রিয় গোরিলাদের পাশে শায়িত ডায়ান ফসে (ছবিসূত্র – টিমবাকটু ট্রাভেল)

 

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো। গ্লোবাল উইটনেসের মতে পরিবেশ-কর্মী হত্যায় আফ্রিকার ভয়ঙ্করতম দেশ, পৃথিবীর নিরিখে অষ্টম ভয়ঙ্করতম দেশ কঙ্গো। ২০১২ থেকে ২০২২ – কঙ্গোয় মোট ৭২টি খুন। ২০২১-এই আটটি খুন, যার সবকটিই ডায়ানের সেই ভিরুঙ্গা পার্কে। ১৯৯৬ থেকে হিসেব করলে ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক অথরিটির ২০০-র ওপর পার্ক-রেঞ্জার স্থানীয় পোচারদের হাতে চলে গেছেন। ১৯২৫ থেকে টাটকা ভিরুঙ্গার ইতিহাস। সেবছর বেলজিয়াম শাসিত রুয়ান্ডা-কঙ্গোয় প্রতিষ্ঠিত আলবার্ট পার্ক ১৯৬০-এ স্বাধীন হলে ’৬৯-এ নাম হয় ভিরুঙ্গা। ১৯৭৯-তে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ পাওয়া ভিরুঙ্গা ১৯৯৪-এ ক্রমাগত পশুহত্যা ও বৃক্ষচ্ছেদনে জায়গা পেল ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ইন ডেঞ্জার’ তকমায়। ৭৮৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে থাকা ‘ভিরুঙ্গা’ শব্দের অর্থ আগ্নেয়গিরি। আফ্রিকার এডওয়ার্ড ও কিভু হ্রদের মাঝে আলবার্টাইন রিফটে সাতটি বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরির ভেতর থাকা ভিরুঙ্গা পার্ক আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র থাকা অঞ্চল। বায়োডাইভারসিটির তালিকায় আছে ২১৮টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১০৯টি সরীসৃপ, ৭০৬টি পাখি, ৭৮টি উভচর এবং ২২টি প্রাইমেট। একমাত্র এই ভিরুঙ্গাতেই এগ্রহের তিন ধরণের এপ – মাউন্টেন গরিলা, ইস্টার্ন লোল্যান্ড গোরিলা ও ইস্টার্ন শিম্পাঞ্জি একসাথে থাকে। আফ্রিকার ভিরুঙ্গা ম্যাসিফ ও বিউইন্ডি ফরেস্ট মিলে থাকা ১০৭৫টি মাউন্টেন গোরিলার ভেতর এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৫০টি এই ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কেই দেখা যায়। এবং এই গোরিলা পোচিং নিয়েই ডায়ান ফসের লড়াই, একের পর এক রেঞ্জার খুন।

ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে টহলরত রেঞ্জাররা (ছবিসূত্র – এ.এফ.পি ও গ্লোবাল উইটনেস)

কঙ্গোর বৃক্ষচ্ছেদনের ডেটার দিকে চোখ বোলানো যাক। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের হিসেবে ২০০২ থেকে ২০২২-এ ৬.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট ধ্বংস হয়েছে, যা এই সময়সীমার ১৮.৪ মিলিয়ন হেক্টর মোট ট্রি-কভার ধ্বংসের ৩৫ শতাংশ। ১৯৯৪-এর রুয়ান্ডা জেনোসাইডের পর ভিরুঙ্গার ওপর উদ্বাস্তু ভিড়, পোচিং এবং রেঞ্জার-পোচার সমস্যার শেষ নেই। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ভিরুঙ্গার বৃক্ষচ্ছেদন প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছিল, যা ২০১৯ ও ২০২০-র সাময়িক স্থিতাবস্থার পর আবার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ২০২১-এ। দারিদ্র থেকে অরণ্য ধ্বংস, চারকোল তৈরির জন্য কাঠ এবং কাঠের জন্য ক্রমাগত বৃক্ষচ্ছেদন, এবং স্থানীয়দের আর্থিক চাহিদা ও পেটের খিদেয় বুশমিট ও অবাধ পশুহত্যার করুণ দিক। ২০১৭ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি রিপোর্ট বলছে, সেবছরের হিসেবে রেবেল গ্রুপের মোট ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে অবৈধ গাছ কাটা ও পশুহত্যা থেকে। ২০২৩-এর মে মাসে মাউন্ট নাইরাগঙ্গোর অগ্ন্যুৎপাত এবং এম-টোয়েন্টিথ্রি ও এফডিএলআর রেবেল গ্রুপ বনাম কঙ্গো সরকারের লড়াইয়ে প্রচুর মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ভিড় করছেন উদ্বাস্তু শিবির এবং নাইরাগঙ্গোর আশেপাশে। ২০২৩-এর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গোটা ভিরুঙ্গার ৯৬৪ হেক্টর বৃক্ষচ্ছেদনের মধ্যে শুধু নাইরাগঙ্গোর পাদদেশেই গাছ কাটা হয়েছে ২০৯ হেক্টর। স্রেফ জীবনধারণের জন্য বাধ্যতামূলক চারকোল সংগ্রহ, আশ্রয়ের জন্য কাঠ, গাছের অংশ এবং পশুমাংস সংগ্রহ – রাজনীতি তৈরি করছে বৃক্ষচ্ছেদন, পরিবেশহনন, গোরিলা-পোচিং এবং রেঞ্জারহত্যার শৃঙ্খল। ২০১৮ সাল থেকে বৃক্ষচ্ছেদন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও চলছে চোরাগোপ্তা লগিং। ১৯৯৬ থেকে যে ২০০জন রেঞ্জার হত্যার খবর এসেছে, সেই ডিটেলে আসি। ২০১৮-র ১ এপ্রিল সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ও দশ মাসের শিশুসন্তান রেখে পোচারদের গুলিতে চলে যান রেঞ্জার ফস্টিন বিরিকো জাবাকুরিকিজা। ঠিক ৯ দিন পর অতর্কিত আক্রমণে চলে যান বারোজন রেঞ্জার ও আরও পাঁচজন কর্মী। ২০১৮-য় ২৬ জন মহিলা রেঞ্জারের অন্যতম বছর পঁচিশের তরুণী রেঞ্জার র‍্যাচেল মাসিকা বারাকা সেবছর ১১ মে দুজন ব্রিটিশ পর্যটককে বাঁচাতে এবং পোচিং আটকাতে নিহত হন। ২০২১-এর জানুয়ারিতে অরণ্যের সেন্ট্রাল সেক্টরে একটি নবনির্মিত বৈদ্যুতিক বেড়া পাহারা দেওয়ার সময় আরও একটি আক্রমণে নিহত হন ছ’জন রেঞ্জার। ২০ নভেম্বর এক শনিবার রুয়ান্ডার বুকিমা গ্রামে রাটসুনো টেরিটরি অঞ্চলে পোচারদের গুলিতে চলে যান বছর আটচল্লিশের রেঞ্জার মুটাজিমিজা কানিয়ারুচিনিয়া এটিয়েনে। বাড়িতে স্ত্রী, চার ছেলেমেয়ে। ২০১৪-র ১৫ এপ্রিল গোমা থেকে ভিরুঙ্গার সদরদপ্তর রুমাঙ্গাবো যাওয়ার রাস্তায় গাড়ির ভেতর গানশট পেলেন ভিরুঙ্গার ডিরেক্টর বেলজিয়ান-প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোডে। বেঁচে ফেরেন আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকেও। প্রসঙ্গত, সেইদিনই পাবলিক প্রোসিকিউটরের কাছে সোকো ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ভিরুঙ্গা কর্তৃপক্ষের হয়ে ৪ বছরের রিপোর্ট দিয়েছিলেন ইমানুয়েল।

ভিরুঙ্গা পার্কে ডিরেক্টর ইমানুয়েল ডি মেরোডে (ছবিসূত্র – দ্য ডেইলি বিস্ট)

সোকো ইন্টারন্যাশনাল। লন্ডন-বেসড তেল কোম্পানি, বর্তমানে নাম বদলে হয়েছে ফারোজ এনার্জি। ২০১০ সালে কঙ্গো সরকারের পক্ষ থেকে সোকো-কে ভিরুঙ্গার ব্লক ফাইভ অঞ্চলে তেল উত্তোলনে অগাধ জায়গা ছাড়া হয়। এই ব্লক ফাইভ অঞ্চলের অর্ধেক ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে, যার মধ্যে অন্যতম তেলের মূল উৎস লেক এডওয়ার্ড, যা নীল নদীর অন্যতম হেডওয়াটার। কোম্পানির তেল উত্তোলন পুরোদমে কাজ করলে পশুহত্যা ও বৃক্ষচ্ছেদনের পাশাপাশি হতে পারত অয়েল-স্পিল, যা নীল বেয়ে দূষিত করত ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে। রেঞ্জারদের ঘুষ দেওয়া, অনুমতি ছাড়াই পার্কের মধ্যে প্রবেশ – সোকো’র বিরুদ্ধে অভিযোগ কম ছিল না। সোকো’র ই.আই.এ. রিপোর্টকে ‘ফেক’ এবং ‘সুপারফিশিয়াল’ বলে দাগিয়ে দিয়ে, স্রেফ এরিয়াল সার্ভে ছাড়া সমস্ত ব্যাপারে সোকো’কে বাধা দিয়েছিলেন কঙ্গোর তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী জোসে এন্ডুন্ডো। ২০১২–র মার্চে পরিণতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদ থেকে তাঁর ক্ষমতাচ্যুতি। ২০০৩ সাল থেকে পার্কের রেঞ্জার, সেন্ট্রাল সেক্টরের ওয়ার্ডেন রডরিগো কাটেম্বো ২০১৩-য় পার্কের ভেতর সোকো-র টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্টেনা বসানোয় চেষ্টা বানচাল করেন, পরিণতিতে বিনা বিচারে রডরিগো’র পুলিশি হেনস্থা ও ১৭ দিনের জেল। ২০১৪ সালে সোকো ইন্টারন্যাশনালের কুকীর্তি ফাঁস করা অরল্যান্ডো ভ্যান এন্সেডিয়েল পরিচালিত ব্রিটিশ তথ্যচিত্র ‘ভিরুঙ্গা’র বেশ কিছু ফুটেজ রডরিগো’র লুকোনো ক্যামেরা থেকে নেওয়া। সাময়িক শান্তি হিসেবে ২০১৪-র ১১ জুন ডব্লু.ডব্লু.এফের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতিতে ইস্টার্ন কঙ্গোর ভিরুঙ্গা অঞ্চল থেকে ভবিষ্যতে তেল উত্তোলনের কাজ গুটিয়ে নেওয়ার কথা বললেও সোকো ইন্টারন্যাশনালের মন্তব্যে ‘অশ্বত্থামা হত’ কৌশলে বলে দেওয়া হয় ভিরুঙ্গা পার্কের সীমানা নতুনভাবে বদল করে আবার পরবর্তীকালে তেল উত্তোলনের সম্ভাবনার কথা। এই সীমানা চিহ্নিতকরণের বিবৃতি প্রসঙ্গে গ্লোবাল উইটনেস থেকে রিপোর্টে বলা হয় “ব্রিটিশ অয়েল-কোম্পানি’জ ব্যাক-ট্র্যাকিং অন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট লুকস লাইক আ রিউজ”। রিউজ অর্থাৎ গিমিক। অর্থাৎ লেক এডওয়ার্ডে যথেষ্ট তেলের সম্ভাবনা দেখলে সরকারের পক্ষে লেক এডওয়ার্ডকে বাদ দিয়ে ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের নতুন করে সীমানা নির্ধারণ খুব বিচিত্র না।

ভিটসুম্বি গ্রাম সংলগ্ন লেক এডওয়ার্ড (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

সোকো সাময়িক চলে গেলেও কঙ্গোর সবচেয়ে বেশি বৃক্ষচ্ছেদনে আক্রান্ত শোপো প্রভিন্সের লোটুকু, ইয়ালিগিম্বা ও বোটেকা অঞ্চলের ১ লাখ হেক্টর জমিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কানাডীয় পাম অয়েল কোম্পানি ফেরোনিয়া ও ইউনিলিভারের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পি.এইচ.সি.। ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ স্থানীয় আদিবাসী ও ফেরোনিয়া নিরাপত্তারক্ষীদের ভেতর সংঘর্ষে চলেছিল পাঁচ পাঁচটি বুলেট। সেবছরই ২১ জুলাই স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলন ও মানবাধিকার সংস্থা আর.আই.এ.ও.-আর.ডি.সি.-র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও বোটেকা গ্রামের বোট সার্ভিস অপারেটর জোয়েল ইমবাঙ্গোলা লুনিয়া পাম অয়েল চুরির অভিযোগ দাগিয়ে ফেরোনিয়া-পিএইচসি’র নিরাপত্তারক্ষীর থেকে ফেটাল গানশট পান। কঙ্গোর কুন্দেলুঙ্গু ন্যাশনাল পার্কের দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনস্থ একটি ফার্মের জবরদখল নিয়ে ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় এনজিও জাস্টিসিয়ার একটি রিপোর্ট। মাসচারেকের মধ্যে ২০২২-এর ১২ জানুয়ারি মাঝরাতে ঘুমের ভেতর লুবুমবাসি গ্রামে এনজিও’র অধিকর্তা পরিবেশকর্মী আইনজীবী টিমোথি এনবুয়ার বাড়িতে প্রাণঘাতী হামলা হয়, কোনওক্রমে বেঁচে ফেরেন প্রত্যেকেই। তবে বাঁচতে পারেননি ওবেদি কারাফুরু। বিশুশা অঞ্চলের সিকিয়া কনসেশনের ৩৬,০০০ শ্রমিককে নিয়ে প্রোজেক্টবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ওবেদি’কে ২০২৩-এর ১ আগস্ট অজানা আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চলে যেতে হয়।

ভিরুঙ্গায় মাউন্টেন গোরিলা পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত রেঞ্জার রডরিগো কাটেম্বো (ছবির মাঝে, ছবিসূত্র – গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ)

এসব নিয়েই ইমানুয়েল মেরোডে’রা কাজ করছেন। ২০১৭ সালে গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল পুরস্কার পেয়েছেন রেঞ্জার রডরিগো কাটেম্বো। ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের ওয়েবসাইটের রিপোর্ট বলছে, সেখানে এই মুহূর্তে প্রত্যেকে মাসিক ২৫০ ডলার বেতনে মোট ৭৭০ জন রেঞ্জার কাজ করছেন, যার মধ্যে ৩৪ জন মহিলা। নিহত রেঞ্জারদের স্ত্রী ও পরিবারের জন্য ২০০৭ সালে তৈরি হয়েছে ‘ফলেন রেঞ্জার্স ফান্ড’। রেঞ্জারদের চলে যাওয়ার প্রথম ছ’মাস নিহতদের স্ত্রীদের পুরো বেতন দেওয়া হচ্ছে, বাকি দিনগুলো থাকছে পেনশন, মহিলাদের হাতের কাজ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গোটা পরিবারের জন্য থাকছে বিনামূল্যে মেডিকেল পরামর্শ ও ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুলিং। ২০২৩-এর ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয়ী অলিভিয়ের এনদুলে বাহেমুকে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে ভিরুঙ্গার পশ্চিম অঞ্চলে বেআইনি ফিশিং পারমিটের বিরুদ্ধে লড়ে জিতে ফিরে এখনও বহু পরিবেশ-রক্ষা ও মানবাধিকার আন্দোলনে লেগে আছেন, লড়াই করছেন কঙ্গোর উপেম্বে ন্যাশনাল পার্কে বিতর্কিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির বিরুদ্ধে। ডায়ানের লড়াইয়ে কোথাও সন্দেহ-ভুল পদক্ষেপ এসব মিশে গেলেও গোরিলা-ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস ছিল না কারও। ডায়ানের শেষ কয়েকটা বছর অর্থাৎ আটের দশকের শুরু থেকে একটু হলেও কমতে থাকে গোরিলা পোচিং। ১৯৬৪-তে আফ্রিকার আড়াইশটি গোরিলা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সহস্রাধিক, যার ভেতর ছ’শটি কঙ্গো-রুয়ান্ডার ভিরুঙ্গা অঞ্চলেই, বাকিগুলি পড়শি উগান্ডায়। ডায়ানের সময়কালেই তাঁর নিজের নাম দেওয়া ১৯৭৮-এ জন্মানো আদরের সিলভারব্যাক ‘ক্যান্টসবি’ বেঁচে ছিল ২০১৭ অবধি। ডায়ানের দেখে যাওয়া গোরিলাদের ভেতর শেষ জীবিত গোরিলা ‘পপি’ বছর একচল্লিশ পেরিয়ে এখনও সুস্থ। এবং ডায়ান-হত্যার রাতে চিরকালীন প্রাসঙ্গিক এবং অবিস্মরণীয় তাঁর ডায়েরির শেষ এন্ট্রি –

‘হোয়েন ইউ রিয়েলাইজ দ্য ভ্যালু অফ অল লাইফ, ইউ ডোয়েল লেস অন হোয়াট ইজ পাস্ট অ্যান্ড কনসেন্ট্রেট মোর অন দ্য প্রিজার্ভেশন অফ দ্য ফিউচার …’

পরিবেশকর্মী আইনজীবী অলিভিয়ের এনদুলে বাহেমুকে (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

ভিরুঙ্গা পার্কে পোচারদের হাতে নিহত রেঞ্জারদের স্মরণিকা (ছবিসূত্র – থিন গ্রিন লাইন)

 

 

ঋণস্বীকার

 

ফিচারঃ-

১. Balint-Kurti, Daniel & Dyer, Nathaniel. British oil-company’s back-tracking on World Heritage Site looks like a ruse. June 13, 2014. Global Witness.

২. Brooke, James. Kinigi Journal; Rwanda Gorillas are again king of the mountain. May 22, 1987. The New York Times.

৩. Burke, Jason. Twelve rangers among 16 killed in ambush at DRC Gorilla Park. April 24, 2020. The Guardian.

৪. Earthsight. Environmentalist murdered near disputed DRC palm oil project. July 29, 2019.

৫. Erickson-Davis, Morgan. Deforestation spikes in Virunga National Park. June 18, 2021. Mongabay.

৬. Fletcher, Martin. Battle for Virunga: The fight to save Africa’s oldest national park. September 6, 2014. The Telegraph.

৭. Fossey Dian. Gorillas in the Mist. May 3, 2001. W&N.

৮. Fowler, John. A Forest in the clouds. My year among the mountain gorillas in the remote enclave of Dian Fossey. February 6, 2018. Pegasus Books.

৯. Gettleman, Jeffrey. Oil dispute takes a page from Congo’s bloody past. November 15, 2014. The New York Times.

১০. Global Witness. Drillers in the Mist. September, 2014.

১১. Haddock, Fran. Stories from the frontline: Fossil free Virunga revisited. January 26, 2022. curious.earth.

১২. Hall, Jani. Virunga National Park sees its worst violence in a decade, Director says. June 14, 2018. National Geographic.

১৩. Kishtwari, Soraya. Attack on environmental lawyer’s home alarms DRC rights defenders. January 25. 2022. Mongabay.

১৪. Love, Bret. The science that breaks eco-tourism to Rwanda. December 30, 2015. National Geographic.

১৫. Nunis, Vivienne & Treanor, Sarah. DR Congo’s Virunga National Park: The deadly job of protecting Gorillas. March 3, 2021.

১৬. Salak, Kira. Places of darkness: Africa’s Mountain Gorillas and the war in Congo. 2004. National Geographic Adventure.

১৭. Sawyer, Ida. Kidnappings, killings in DR Congo’s Virunga National Park. May 15, 2018. Human Rights Watch.

১৮. Shoumatoff, Alex. The fatal obsession of Dian Fossey. September, 1986. Vanity Fair.

১৯. Starr, Alexandra. Congolese activists honoured for fighting oil exploration in Virunga National Park. October 30, 2015. National Public Radio.

২০. Stiles, Daniel. Oil, wildlife, and people: Competing visions of development collide in Virunga National Park. July 7, 2014. Mongabay.

২১. Stiles, Daniel. What does SOCO’s withdrawal really mean for the future of Virunga National Park? June 17, 2014. Mongabay.

২২. Toto, Elodie (Trans. by Fahy, Cait). In DRC, Virunga deforestation escalates as fighting sends refugees into park. November 29, 2023. Mongabay.

২৩. Toto, Elodie. ‘We won’t give up’: DRC’s Front Line Defenders award winner Olivier Ndoole Bahemuke. November 17, 2023. Mongabay.

২৪. Wilson Bhattacharyya, Ananya & Mirindi, Pascal. The movement to save Virunga National Park. December 10, 2022. Red Pepper.

 

ওয়েবসাইটঃ-

১. https://www.goldmanprize.org/recipient/rodrigue-katembo/

২. https://virunga.org/alliance/virunga-rangers/

 

 

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *