পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ১০। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

আদৌ ‘পরিবেশ-বান্ধব’ কোস্টারিকা? – জাইরো মোরা স্যান্ডোভাল ও অন্যান্য পরিবেশকর্মী হত্যার সালতামামি

মানুষ থেকে লেদারব্যাক কচ্ছপ। যে গল্প বলা হয় না, যে গল্পের মাঝে ঢুকে আছে তরুণ, সাধারণ চোখমুখ, বৃহত্তর পৃথিবীর কাছে ইকো-ফ্রেন্ডলি কোস্টারিকার ধূধূ ক্যারিবিয়ান সমুদ্রসৈকত, জীববৈচিত্র এবং তাকে বাঁচাতে কিছু অসম্ভব আত্মত্যাগ। কোস্টারিকার গল্পে প্রোটাগনিস্ট ২৬ ছোঁওয়া তরুণ জাইরো মোরা স্যান্ডোভাল। পরিবেশচেতনা ইতিহাসে, রক্তে।

উত্তর কোস্টারিকার প্লায়া মইন বা মইন সমুদ্রসৈকত। ১৮ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ, তাল, নিকটবর্তী বসতি বলতে লিমন টাউনশিপ। এই লিমন এবং মইন হটবেড অফ এগ-পোচার, স্থানীয় ভাষায় ‘হুয়েভেরোস’। কিসের ডিম? মইন বিচ যে হটবেড অফ লেদারব্যাক টার্টল! গ্রহের বৃহত্তম সরীসৃপ। আইইউসিএন-এর রেড লিস্ট তালিকায় লেদারব্যাক আছে ভালনারেবল অবস্থানে। এছাড়াও পৃথিবীর সাতটি সি টার্টল প্রজাতির পাঁচটির হটস্পট খোদ কোস্টারিকা। এই পাঁচটির অন্যতম লেদারব্যাক কচ্ছপ, পৃথিবীর বৃহত্তম সি টার্টল। মার্চ থেকে জুলাই এক একটি ২০০০ পাউন্ডের (৬ ফুট) স্ত্রী লেদারব্যাক মইনের সমুদ্রসৈকতে ডিম পাড়তে আসে, যে ঘটনা স্থানীয়ভাবে পরিচিত স্পেনীয় পরিভাষায় ‘আরিবদা’ নামে, যার বাংলা অর্থ ‘আগমন’। এক একটি কচ্ছপ থেকে অর্থাৎ নেস্ট পিছু গড়ে পাওয়া যায় ৮০টি নিষিক্ত ডিম, বাদবাকি গোটা তিরিশেক ইয়োকলেস এগ। পোচার, সংরক্ষণকর্মী সবার নজর ওই নিষিক্ত ডিম। এই মুহূর্তের হিসেবে গোটা পৃথিবীতে আছে মোট ৩৪,০০০ স্ত্রী লেদারব্যাক। ডিম কোনওভাবে বাঁচানো গেলেও সেই সদ্যোজাত থেকে ৩০ বছর ধরে পূর্ণবয়স্ক কচ্ছপ হতে পারার সম্ভাবনা ১০০০-১০,০০০-এর ১ ভাগ। সমুদ্রের অ্যাসিডিটি এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, হ্যাবিটাট ডেস্ট্রাকশক, প্রিডেশন, সমুদ্রের উষ্ণতাবৃদ্ধির জন্য স্ত্রী কচ্ছপ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রজননের সম্ভাবনা হ্রাস এবং সর্বোপরি যেকোনও বিপন্ন প্রজাতির ভয়ঙ্করতম শত্রু অর্থাৎ মানুষের উপস্থিতি – বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শত্রুসংখ্যা কমলেও মানুষের উপস্থিতি কিন্তু একইরকম থাকে। কচ্ছপকে বাড়াতে ওই এক একবারের নেস্ট পিছু আশিটা ডিম কমে গেলে চলবে না। অথচ, ভয়ঙ্কর কোস্টারিকার পরিবেশহননের ওটাই নির্যাস। পরিবেশসচেতন মা-বাবার থেকে পাওয়া বোধ ক্রমে জাইরো মোরার ভেতর। স্থানীয় বেসরকারি পরিবেশ সংস্থা ওয়াইডার ক্যারিবিয়ান সি টার্টল কনজারভেশন নেটওয়ার্ক ওরফে ওয়াইডকাস্ট-এর হয়ে ১৫ বছর (২০০৯) বয়স থেকে কাজ করে এসেছিলেন জাইরো। ওয়াইডকাস্টের কর্মীরা লেদারব্যাকের ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি সংগ্রহ করে স্থানীয় হ্যাচারিতে নিয়ে প্রতিপালন করতেন। ২০১১-র ৩ শতাংশ টার্টল নেস্ট সংরক্ষণ করার স্ট্রাইক রেট ২০১২-য় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। কাজে একটু দেরি, গাফিলতি করলেই পোচার আক্রমণ। কোস্টারিকা সরকার আইন করে লেদারব্যাকের ডিম বিক্রি নিষিদ্ধ করলেও অসম্ভব দরিদ্র আদিবাসী কোস্টারিকার কালোবাজারে এক একটি ডিম এক একটি মার্কিন ডলারের সমান। লেদারব্যাকের ডিম যৌন উদ্দীপক, এই মিথ অতিমারির মতো ছড়িয়ে আছে দেশে। জাইরোরা জানতেন। জানতেন আরেক এনজিও কোস্টারিকা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির প্রতিষ্ঠাতা ভেনেসা লিজানো। লিজানো মেন্টর, বন্ধু হয়ে জাইরোর ভেতর ঢুকিয়েছিলেন কচ্ছপ সংরক্ষণের ভূত। লিজানো এবং জাইরোর নেতৃত্বে রাতবিরেতে মইন বিচ টহল দিতেন, লেদারব্যাক ডিম পাড়ছে দেখলেই ওঁত পেতে থাকতেন। প্রথমদিকে কাচ ভেঙে লেদারব্যাকের তিরিশটি মতো ইয়োকলেস ডিম ফাটিয়ে কাচের সঙ্গে মিশিয়ে সেসব ছড়িয়ে দিতেন বিচে, যাতে পোচারদের সহজ যাতায়াত ক্ষুণ্ণ হয়। পরে সরাসরি এই হিংস্র পথ বিপদ ডেকে আনতে পারে দেখে পথ বদলালেন। স্থানীয় চেনা পোচারদের সঙ্গে ক্রমশ সমঝোতার রাস্তায় হাঁটলেন জাইরোরা। এক একটি অভিযানে মোট সংগৃহীত ডিমগুলি হুয়েভেরোসদের সঙ্গেই রফা করে তাদের কিছুটা দিয়ে নিজেরা বাকিটা নিয়ে ফেরা, এবং একসময় সংস্থায় কাজ করতে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া বেতন থেকে কেটে পোচারদের দিয়ে তাদের অনেককেই কচ্ছপ সংরক্ষণে আনার মতো অবিশ্বাস্য কাজ করেছিলেন দুজন। এবং এখানেই হয়তো অন্ধকারের শুরু। পোচারদের মধ্যে দূরত্ব। ২০১২ থেকে স্থানীয় চেনা পোচারের মুখ ক্রমশ পাল্টে গিয়ে এসে পড়ল কিছু একটা হিংস্র গ্যাং। ২০১২-র এপ্রিলে জাইরো লিজানোদের স্যাংচুয়ারিতে একটি ভয়ঙ্কর পোচার আক্রমণে চুরি হয়ে গেল এতদিনকার সংরক্ষিত ১৫০০টি ডিম, ধর্ষণ ও হত্যার শাসানি পেয়ে গুটিয়ে গেলেন বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী। ২০০৯ পর্যন্ত লিমনে একসঙ্গে কাজ করতেন লিজানো-জাইরো, পরে পুত্রসন্তানের দিকে পোচারদের নজর, শাসানি চলে আসায় লিমন থেকে বেরিয়ে গেছিলেন লিজানো, যদিও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল স্যাংচুয়ারির কাজে। অবশ্য তারপর থেকে বিচে যেতে হত জাইরোকে একাই।


ইন বিচে লেদারব্যাক পরিচর্যায় জাইরো মোরা স্যান্ডোভাল (ছবিসূত্র – আউটসাইড)

২০১৩। পুলিশ প্রোটেকশন নিয়মমাফিক কখনও দেওয়া হয়, কখনও উঠে যায়। রাত হলেই সংরক্ষণকর্মীদের টর্চের লাল আলো নকল করে ডিমের পর ডিম ছিনিয়ে এনে মইন লোপাট করে দিচ্ছে শিকারীরা। তবু এর ভেতর জাইরো। যে যে রাতে ডিম সংগ্রহে বেরচ্ছেন, মা ফার্নান্ডাকে ফোন করে আশীর্বাদ চাইছেন। ’১৩-র ৩০ মে রাতে স্পেনীয় বান্ধবীর একটি গাড়িতে আরও তিন মহিলা সেচ্ছাসেবীর সঙ্গে বেরলেন সেই অভিশপ্ত অভিযানে। বিচে নামলেন। স্থানীয় চেনা এক পোচারের দলের সামনে শুয়ে থাকা এক বিশাল ‘বাউলা’ বা লেদারব্যাক। রফা করে সেই লেদারব্যাক থেকে পাওয়া ডিমের বেশ অনেকটাই নিয়ে গাড়িতে উঠলেন। পুলিশি টহলদারি পোস্ট পেরিয়ে বেশ কিছুটা দূরে পোচারদের বনফায়ার। দূর থেকে আলো জ্বলল গাড়ির ভেতর। চমকে উঠলেন জাইরোরা। হিংস্র সেসব মুখ চেনা। আরও কিছুটা এগোলে সামনে তাল গাছের গুঁড়ি দিয়ে রাস্তা আটকানো। পুলিশি অভিযান আটকাতে পোচারদের তৈরি এইসব চেনা ফাঁদে পা পড়ল জাইরোদের। গাড়ি থেকে জাইরো নামতেই পাঁচজন মুখোশধারী। মেয়েদের পাওয়া বলতে ‘স্বাভাবিক’ যৌন হেনস্থা। বছর ছাব্বিশের জাইরোর মুখ-হাত বাঁধা সাফোকেটেট নগ্ন শরীর পরেরদিন সকালে মইন বিচে পাওয়া গেছিল। তরুণের মুখের ভেতর, নাকের ভেতর, ফুসফুসের ভেতর বালি। মৃত্যুর কারণ অ্যাসফিক্সিয়া।


সদ্যোজাত লেদারব্যাক কচ্ছপ ও দূরে জাইরো মোরা স্যান্ডোভাল (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

মইন বিচ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাড়ির দেওয়ালে স্টেনসিল স্কেচে আঁকা জাইরোর মুখ, নিচে লেখাটির ইংরিজি অর্থ ‘জাইরো লিভস’ (ছবিসূত্র – দ্য টিকো টাইমস)

দিয়েগো আর্মান্দো সাবোরিও গঞ্জালেস। জাইরো-হত্যার পরের বছর। আইনের ছাত্র দিয়েগো আটাশ ছুঁয়েছিলেন। সান কার্লোসে নিজের ১৫০ একর ফার্মের ভেতর হরিণ এবং স্থানীয় রেয়ার রডেন্ট অ্যাগাউটি শিকারে পোচারদের একাধিক আক্রমণে সোচ্চার হয়েছিলেন। ২০১৪-র ১২ অক্টোবর বুকে ফেটাল গানশট। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল দিয়েগোর বাড়ি, গুলিবিদ্ধ শরীরের বাকিটা সেই আগুনেই। বীভৎসতার এই ট্র্যাডিশনের সঙ্গে পরিসংখ্যান। দিয়েগো হত্যার বছর দেশের ‘ফেডারেশন ফর দ্য কনজারভেশন অফ দ্য এনভায়রনমেন্ট’ বা ‘ফেকন’ সংস্থার রিপোর্টে ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৬৬টি ছোটবড় আক্রমণ সংগঠিত হয়েছে পরিবেশ-আন্দোলন জড়িত কারণে। গ্লোবাল উইটনেসের বিখ্যাত ‘ডিকেড অফ ডিফায়েন্স’-এর হিসেব ধরলে ২০১২ থেকে ২০২১ অবধি কোস্টারিকায় অন্তত চারটি হত্যার পেছনে রয়েছে পরিবেশগত দিক। ১৯৮৯ সাল থেকে হিসেব করলে ১০টি হত্যার কোনও কিনারা হয়নি। একাধিক ডেথ-থ্রেট পাওয়া পরিবেশকর্মী-আইনজীবী আলভারো সাগোটের কথায় – ‘আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে, কোস্টারিকায় যাঁরা পরিবেশকে বাঁচাচ্ছেন, তাঁদের কে বাঁচাচ্ছে?। আমার উত্তর হল, কেউ না।’


পূর্ণবয়ক্স স্ত্রী লেদারব্যাক কচ্ছপ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা (ছবিসূত্র – সি টার্টল ডট অর্গ ওয়েবসাইট)

পোচিং ও দিয়েগো সাবারিওর হত্যা প্রসঙ্গে একটাসময় অবধি কোস্টারিকা বৃক্ষচ্ছেদনের হিসেব। গত শতকের ছয় থেকে আটের দশকের ভেতর দেশ হারিয়েছে মোট ৫ মিলিয়ন অরণ্য। একাধিক সমীক্ষায় চারের দশকে দেশের ৭৫ শতাংশ বনভূমি ৪০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে আটের দশকে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে ঘাঁটলে, গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০০২ থেকে ২০২২-এ দেশ হারিয়েছে ২৮.৪ কিলোহেক্টর হিউমিড প্রাইমারি ফরেস্ট, যা এইসময় মোট ট্রি কভার-লসের (২৭০ কিলোহেক্টর) ১১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুন্টারেনাস (৭১.৯ কিলোহেক্টর)। জাইরো মোরা-র মইন বিচ সংলগ্ন লিমন শহর হারিয়েছে ৫১.৪ কিলোহেক্টর অরণ্য।

বৃক্ষচ্ছেদনের টুইস্ট নিয়ে বাকিটায় আসার আগে আরও বেশ কিছু হত্যার দিক, এবং তা গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকেই। ১৯৮৯ সালে উজারাস ইন্ডিজেনাস রিজার্ভের অবৈধ শিকার নিয়ে কথা বলার পর রহস্যজনকভাবে চলে যান আদিবাসী পরিবেশকর্মী অ্যান্টোনিও জুনিগা। সারাপিকুই অঞ্চলের বৃক্ষচ্ছেদন নিয়ে ভোকাল থাকা কর্মী অস্কার কুইরোজ গুলিবিদ্ধ হন ১৯৯২-এ। ‘কোস্টারিকান ইকোলজি অ্যাসোসিয়েশন’ সংস্থার তিন নেতা অস্কার ফাল্লাস, জেইমে বুস্তামেন্তে ও মারিয়া ডেল মার কোর্ডেরো মার্কিন স্টোন কনটেইনারের সাবসিডিয়ারি স্টোন ফরেস্টাল কোম্পানির প্রোজেক্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৯৪-এর ৭ ডিসেম্বর একটি রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে জীবন্ত দগ্ধ হন তিনজনই। ওই একই সংস্থার অন্যতম নেতৃত্ব, কবি ডেভিড মারাদিয়াগা কানাডীয় মাইনিং কোম্পানি প্লেসার ডোম-এর বিরুদ্ধে কণ্ঠে, কলমে সোচ্চার ছিলেন। তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ থাকার পর ১৯৯৫-এর ৪ আগস্ট শহরের এক মর্গে শরীর উদ্ধার হয় কবির। হত্যা থেকে হত্যার চেষ্টা, হেনস্থা। কর্ডেল ডি মোরা অঞ্চলে ল্যান্ডফিল ডাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দুই কর্মী জিওলজিস্ট উইলফ্রেডো রোজাস ও এলিজাবেথ গঞ্জালেসের বাড়ি আলাদা আলাদা ঘটনায় রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়। দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান সমুদ্রউপকূল অঞ্চলের পুয়ের্তো ভিয়েজোর ডাচ বাসিন্দা ফেলিপ্পে ভ্যানগয়েডসেনহোভেন জাইরো মোরো/গান্ডোকা ম্যাঞ্জানিল্লো ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজের ভেতর একাধিক পরিবেশ-পরিপন্থী প্রোজেক্টের বিরোধিতা ও লাগাতার পিটিশন এনেছেন। ট্যালামাঙ্কা মিউনিসিপালিটি থেকে ফেলিপ্পে এবং সহকর্মী মার্কিন নাগরিক ক্যারল মিডসকে ‘পারসোনা নন গ্র্যাটা’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ঠিক পরেই পরিবেশের সমর্থনে কথা বলার জন্য কোনও বিদেশি নাগরিককে ‘পারসোনা নন-গ্র্যাটা’ বলার অধিকার কর্তৃপক্ষের থাকতে পারে না বলে ক্যারল-ফেলিপ্পে এবং পরিবেশের পাশে থেকেছে স্থানীয় হাইকোর্ট। ১৯৯৯ সালে ওসা পেনিনসুলার বৃক্ষচ্ছেদনে নিষেধাজ্ঞা বসানোর দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে এসেছে চোরাগোপ্তা লাঠি ও গ্রেপ্তারি। নতুন শতাব্দীর শুরু থেকেই দেশের অন্যতম কিংবদন্তি পরিবেশকর্মী আলসিডেস পারাজেলেস ওসা পেনিনসুলার অবৈধ বৃক্ষচ্ছেদন ও বেআইনি কিছু প্রেজেক্টের বিরুদ্ধে কথা বলে একাধিক ডেথ-থ্রেট পেয়েছেন, শাসানি-গানপয়েন্ট পেয়ে এসেছেন পরিবারের সদস্যরাও।


সত্তর পেরিয়েও নির্ভীক এবং সক্রিয় পরিবেশকর্মী আলসিডেস পারাজেলেস (ছবিসূত্র – গ্রো জাঙ্গলস)

আফ্রিকার বেশ কিছু কেস-স্টাডি কোস্টারিকাতেও। কর্কোভাদো ন্যাশনাল পার্কের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম কোস্টারিকার ওসা পেনিনসুলা অঞ্চলে একটি ব্যক্তিগত কোকো ফার্মে ১৮ বছর ধরে থাকতেন কানাডীয় পরিবেশকর্মী কিমবার্লি ব্ল্যাকওয়েল। কিমবার্লির ফার্মকে গোপন টানেল হিসেবে ব্যবহার করে কর্কোভাদোর রেয়ার জাগুয়ার, রোডেন্ট শিকারে, বুশমিট খুঁজতে যেত পোচাররা। নিজের কোকো ফার্মে চকলেট তৈরি করে স্থানীয় অঞ্চলে গরিব পোচারদের দিয়ে বিক্রি করাতেন কিমবার্লি, ঘন্টায় আড়াই মার্কিন ডলার বেতনে। বোঝাতেন, যদি ওরা কোনওভাবে পোচিং থেকে সরে আসে। ক্রমশ একাধিক অভিযোগ, এবং সরাসরি তীব্র পোচিং-বিরোধিতায় নেমে পড়েন। পোচিং আটকাতে আসা ওয়ার্ডেনদের কাছে কিমবার্লির ফার্ম তো অরণ্য এক, সঙ্গে কফি স্ন্যাক্স, স্মৃতিকাহিনী ভাগ করে নেওয়া। তেমনই এক ওয়ার্ডেন মরিসিও জিমেনেজ ২০১১-র ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ৫৩ বছরের কিমবার্লির রক্তাক্ত শরীর খুঁজে পেয়েছিলেন। এই ওসা পেনিনসুলার অন্য এক গল্পের প্রেক্ষিত। ১৯৫৫ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি থাকার স্বপ্নে স্ক্যান্ডিনেভীয় দম্পতি নিকোলাস (ওলফ) ও ক্যারেন ওয়েইসবার্গ কোস্টারিকার নিকোয়া পেনিনসুলার কাছে মোন্টেজুমায় ঘর বাঁধেন। দম্পতির দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও লাগাতার পিটিশনে মদ্য আমেরিকার প্রথম সংরক্ষিত এলাকা ক্যাবো ব্ল্যাঙ্কো অ্যাবসোলিউট নেচার রিজার্ভ তৈরি হয় ১৯৬৩-র অক্টোবরে। ক্যাবো থেকে ওসা পেনিনসুলার কাছে কর্কোভাদো পাহাড়। ১৯৭৫-এর জুলাইতে ওসা যাবেন বলে ক্যারেনকে বিদায় জানান অলফ। ৪ আগস্ট জন্মদিনের আগেই চলে আসার কথা। জন্মদিন পেরোলেও কোথায় স্বামী? ক্যারেন তীব্র আশঙ্কায় কর্কোভাদো পৌঁছলেন। অরণ্যের ভেতর কম্পাস ও ব্যাগপ্যাক দেখে চিনতে হয়েছিল কাছেই হিংস্র পশুদের দিয়ে খাওয়ানো নিকোলাস ওয়েইসবার্গের শরীর। স্থানীয় কিছু পোচারদের সঙ্গে আঁতাতে নিজের গাইডের বিশ্বাসহন্তায় চলে যেতে হয়েছিল ছাপ্পান্ন বছরের পরিবেশকর্মীকে। হত্যার সরকারি নথিভুক্ত তারিখ অর্থাৎ ২৩ জুলাইয়ের তিন মাস পর ২৪ অক্টোবর কর্কোভাদো অরণ্য সরকারিভাবে ন্যাশনাল পার্কের তকমা পায়। জীবন থেকে ওপারে, পূর্ণতা পান নিকোলাস।


ছবিতে নিকোলাস ও ক্যারেন ওয়েসবার্গ (ছবিসূত্র – লা নাসিওন সংবাদপত্র)

ভিসিয়াস সার্কেল। খুব স্বাভাবিক, এসবের প্রকোপ পড়ছে দেশের অনবদ্য প্রাকৃতিক শোভায় টেনে আসা ইকো-ট্যুরিজম এবং ‘পরিবেশ-বান্ধব’ ভাবমূর্তির উপর। পর্যটক ও পরিবেশ-গত কাজে স্বেচ্ছাসেবী কমছে, কমছে আয়, ক্রমশ আর্থ-সামাজিক দিকে আরও বিপন্ন হচ্ছে কোস্টারিকা। বাড়ছে চোরাগোপ্তা এগ-পোচিং। জাইরো মোরার ওয়াইডকাস্ট বলছে, জাইরোহত্যার পর সংস্থায় কাজ করতে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমে গেছে, এবং তা মূলত পোচারদের হাতে প্রাণসংশয় থেকেই। আর এখানেই কোস্টারিকার গল্পের তিক্ত-মধুর প্লট-টুইস্ট এবং আশা-নিরাশার এক দোলনার অবিরত ছায়া-দোলন। ১৯৭৭ সালে আদিবাসী আইনে দেশের জমিসম্পদের আদিবাসীদের একচ্ছত্র অধিকার থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবে কায়েম করার ব্যাপারে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট। ২০১৯ থেকে আদিবাসী ব্রিবরি কমিউনিটির একাধিক নেতৃত্ব জমি অধিকার অভিযানে নিহত হয়েছেন। ‘ফেকন’ সংস্থার রিপোর্টে ২০০০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দেশের মোট ৫৫৬০ হেক্টর বৃক্ষচ্ছেদন হয়েছে কোস্টারিকার অতিরিক্ত আলোচনায় আসা আনারস মনোকালচার থেকে, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৭,০০০ হেক্টরে। ইকুয়াল টাইমসের একটি রিপোর্ট বলছে, দেশে হেক্টর প্রতি আনারস উৎপাদন ২.৯ টন, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ। এবং এই বৃক্ষচ্ছেদনের পাশাপাশি ইউরোপের সমস্ত দেশে বহুদিন নিষিদ্ধ হওয়া ব্রোমাসিল, অ্যামেট্রিন এবং ফ্রান্সে নিষিদ্ধ হওয়া ডাই-ইউরন কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে আনারস উৎপাদন প্রক্রিয়ায়, যা ডেকে আনছে ভয়ঙ্কর শারীরিক ক্ষতি। আনারস, কলা বা পাম অয়েল মনোকালচারের জন্য অতিরিক্ত কীটনাশকের নিকটতর সংস্পর্শে থাকা প্রাণিদের ওপর প্রভাব পড়ছে সাংঘাতিক। ‘ম্যামালিয়ান বায়োলজি’ পত্রিকার একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ম্যান্টলড হাউলার মাঙ্কি প্রজাতির কালো থেকে ক্রমশ হলুদ হয়ে যাওয়া চামড়া, ইউমেলানিনের কম তৈরি হয়ে সালফারজাত পেস্টিসাইড শরীরে ঢুকে ক্রমশ বাড়ছে ফিওমেলানিন, হলুদ হয়ে যাওয়া গাছের পাতার সঙ্গে না বুঝেই বিষাক্ত হচ্ছে মনুষ্যেতররা। পরিবেশকর্মী এবং সি টার্টল সংক্রান্ত অন্ধকারের পাশাপাশি এইসব দিকগুলিও কোস্টারিকান পরিবেশ ল্যান্ডস্কেপে নেগেটিভ চিত্রনাট্যের জন্ম দিচ্ছে।

ক্রমশ হলুদ ছোপ পড়ছে ম্যান্টলড হাউলার মাঙ্কির শরীরে (ছবিসূত্র – ইন্ডিয়ানা পাবলিক মিডিয়া)

আবার একইসঙ্গে বৃক্ষচ্ছেদনের সামগ্রিক লেগ্যাসি অনেকটা পাল্টে গিয়ে আটের দশকের কুড়ি শতাংশ ফরেস্ট কভার বেড়ে নয়ের দশকে পঞ্চাশ শতাংশ হয়ে এসেছে মূলত প্রেসিডেন্ট রাফায়েল ক্যালডেরনের সময় গ্রহের প্রথম রাষ্ট্রভিত্তিক বৃক্ষনিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্তস্বরূপ পেমেন্টস ফর এনভায়রনমেন্টাল সার্ভিসেস (পিইএস) প্রোগ্রামের প্রবর্তনের মধ্যে দিয়ে। দিকপাল এই পদক্ষেপে অরণ্য-জমিসম্পদের মালিকানা থাকা ব্যক্তিরা মূলত চারটি পরিবেশগত বিষয়ে অর্থাৎ কার্বন সিকুয়েস্ট্রেশন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, জলসম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং নান্দনিক সৌন্দর্যে উৎকর্ষতা দেখাতে পারলে রাষ্ট্র থেকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত হবেন, যার নজরদারি ও তহবিলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ফোনাফিফো ডিপার্টমেন্ট। দেখা গেছে ১৯৯৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ১৮,০০০ পরিবার এবং লাখখানেক আদিবাসীর উপকারে এসেছে এই ৫২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পিইএস ফান্ড। দেশের ট্যুরিজম বোর্ডের হিসেব বলছে বছরে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসেন কোস্টারিকায়, যাঁদের ৬০ শতাংশই দেশের পরিবেশগত সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে আসছেন। ২০২০-র একটি হিসেবে দেশের রাজস্বের মোট ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এসেছে পর্যটন শিল্প থেকে, যা দেশের জিডিপি-র ৮ শতাংশ, মোট ২ লক্ষ কোস্টারিকাবাসীর কর্মসংস্থানের উৎস। পরিবেশকর্মী ও লেদারব্যাক-অলিভরিডলের ওপর আক্রমণে অনিশ্চিত দেশের পর্যটন শিল্প তথা আর্থ-সামাজিক কোস্টারিকান ভিত্তির লেখ বাড়াকমার ছবিতে জাইরো মোরার রাস্তায় হাঁটছেন প্লায়া মইন থেকে কোস্টারিকার আরও অজস্র সমুদ্রসৈকতের ক্রুসেডররা। জাইরো-মামলায় ২০১৫ সালে প্রথমে বেকসুর মুক্তি পেলেও আপিলের পর পরবর্তী রায়ে ২০১৬ সালের মার্চে চার মূল অভিযুক্ত হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশ্বাস দিয়েছে পরবর্তী জাইরোদের, চোখের জল মুছেছেন বাবা-মা রাফায়েল-ফার্নান্দা। পাকুয়েরা রিজার্ভ অঞ্চলে ইকোলজি প্রোজেক্ট ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কাজ করছেন ক্লদিও কেসাডা-রডরিগেজ ও তাঁর তেরো বছরের মেয়ে সারা, ঝুঁকি নিয়েও সৈকত থেকে জায়ান্ট সি টাটল এগ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হ্যাচারিতে। জাইরোদের সঙ্গে সরাসরি সংগ্রামরত পোচারদের অনেকেই অন্ধকার বিদ্যুৎহীন ঘরে ডলারপ্রতি ডিমের লোভে বেআইনি ডিম শিকারে বাধ্য হচ্ছেন। এই প্যারাডক্সের কথা ভেবে উত্তরপশ্চিম কোস্টারিকার ওস্টিওনাল বিচ অঞ্চল পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে আটের দশক থেকে টার্টল ডিম হারভেস্ট করা আইনত সিদ্ধ। তাহলে ডিমের আইনি বাজার আসলে কি কালোবাজারি ডেকে আনছে? হয়তো ঠিক এর বিপরীতটাই। ওস্টিওনালের স্থিতিশীল এগ-হারভেস্ট অলিভ-রিডলে সংরক্ষণে সাহায্য করছে স্থানীয় সংগ্রাহকদের, যে কাজে রাতের পর রাত সৈকতে অপেক্ষা করছেন মিগুয়েল টোরেসের মতো পরিবেশকর্মী। দ্য গার্জিয়ান পত্রিকার একটি কলামে গাইয়া ভিনস বলেছেন, বন্যপ্রাণী বাঁচাতে গেলে কোস্টারিকাকে মানব সম্পদ বাঁচাতে হবে আগে। স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হলে পোচিং নিশ্চিত কমবে অনেক। জাইরো মোরা চলে যাওয়ার পরেই ফেকন ও অন্যান্য সংস্থার যৌথ লড়াইয়ে দেশের পরিবেশকর্মীদের উপর হত্যা ও অত্যাচারের স্বরূপ নির্ধারণের জন্য এনভায়রনমেন্টাল ট্রুথ কমিশন তৈরির লাগাতার প্রচেষ্টা চলছে, যা ফলপ্রসূ হলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে আরেক।

শুধু জাইরো মোরা স্যান্ডোভালকে পাওয়া যাবে না মইন বিচে। জাইরোর শোকযাত্রায় সহকর্মী, মেন্টর ভেনেসা লিজানো কাঁদতে কাঁদতে জাইরোর মা ফার্নান্দার কাছে প্রয়াত তরুণকে সমুদ্রে নিয়ে যেতে প্রণোদিত করার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। ফার্নান্দা কন্যাসম ভেনেসাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন – ‘তোমার কোনও দোষ নেই ডিয়ার। ইট ওয়াজ হিজ প্লেস। সমুদ্র ওর জায়গা ছিল।’

উপরের ছবিতে বাঁদিকে কচ্ছপ সংরক্ষণে ব্যস্ত ক্লদিও কেসাডা-রডরিগেজ ও নীচে তাঁর মেয়ে সারা (ছবিসূত্র – ডব্লুবিইউআর)

কোস্টারিকার রাস্তায় প্রয়াত জাইরো মোরা’র সমর্থনে পোস্টার, যেন জাইরোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে খোদ লেদারব্যাক টার্টল (ছবিসূত্র – দ্য টিকো টাইমস)

ঋণস্বীকার

১. Alvarado, Laura. Who was Nicolas Wessberg and why is a natural reserve in Costa Rica named after him? November 20, 2016. The Costa Rica Star.
২. Arias, L. Costa Rica included in list of most dangerous countries for environmentalists. April 20, 2015. The Tico Times.
৩. Coren, Michael J. These baby turtle eggs were going to be ‘bar snacks’. Watch the hatchlings return to the sea. November 21, 2023. The Washington Post.
৪. Dasgupta, Shreya. Four get maximum sentence for murder of Costa Rican sea turtle conservationist. April 1, 2016. Mongabay.
৫. Davis, Anthony A & Kohler, Nicholas. Death in Costa Rica’s rainforest. August 17, 2011. Maclean’s.
৬. Fendt, Lindsay. Conservationist murders threaten Costa Rica’s eco-friendly reputation. March 19, 2015. The Guardian.
৭. Fendt, Lindsay. Violence plagues Costa Rican conservationists. April 12, 2014. Al Jazeera.
৮. Fernandes, Deepa & Welch, Catherie. Save the sea turtles: this father-daughter conservation duo fights poaching in Costa Rica. January 4, 2023. WBUR.
৯. Galvan, Ismael; Jorge, Alberto; Sanchez-Murillo, Francisco & Gutierrez-Espeleta, Gustavo. A recent shift in the pigmentation phenotype of a wild Neotropical primate. January, 2019. Mammalian Biology.
১০. Guevara, Miguel. Costa Rica’s legendary environmentalist: Alcides Parajeles. February 23, 2022. Grow Jungles.
১১. Hance, Jeremy. Costa Rican environmentalist pays ultimate price for his dedication to sea turtles. June 10, 2013. Mongabay.
১২. Hines, Ali. Decade of defiance: Ten years of reporting land and environmental actisvism worldwide. September 29, 2022. Global Witness.
১৩. Konyn, Carol. How Costa Rica reversed deforestaion and became an enviroemntal model. October 19, 2021. Earth.org.
১৪. Lopez, Jaime. Major court victory for expat activists in Costa Rica. March 5, 2024. The Costa Rica Star.
১৫. Lucas, Arturo Silva. Costa Rica: criminalization of the environmental movement and tourism conflict. February 8, 2021. Alba Sud.
১৬. Marot, Christille. Costa Rica’s green paradox. November 4, 2019. Equal Times.
১৭. Pearce, Fred. Lauded as Green Model, Costa Rica faces unrest in its forests. March 21, 2023. Yale Environment 360.
১৮. Power, Matthew. Blood in the sand: Killing a turtle advocate. January 2, 2014. Outside.
১৯. Why Jairo died. September 3, 2013. The Tico Times.
২০. Villegas, Alexander. The pandemic poaching pandemic. July 21, 2021. Hakai Magazine.
২১. Vince Gaia. Rescue of the olive ridley sea turtle. October 7, 2017. The Guardian.
২২. Zuniga, Alejandro. ‘A tragic day for the Bribri people’ as leader Sergio Rojas is killed. March 19, 2019. The Tico Times.

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *