পরিবেশকর্মী হত্যা : একটি আলেখ্য। পর্ব ১৭। লিখছেন অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য

0

(গত পর্বের পর)

‘আই উইল নট ড্যান্স টু ইওর বিট’: কেন সারো-উইওয়া, ওগোনিল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার তেল-দৈত্য

মানচিত্রে নাইজার ডেল্টার ৯টি রাজ্যের অন্যতম রিভার্স স্টেট এবং ওগোনিল্যান্ড (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

দক্ষিণ নাইজেরিয়ার পোর্ট হারকোর্ট জেল থেকে রুটির ঝুড়ি চাপা দিয়ে কোনওক্রমে বাইরে বেরনো তিরিশটি চিঠির ভেতর অন্যতম শেষ একটি চিঠিতে আইরিশ মিশনারি সিস্টার মাজেল্লা ম্যাকারোনকে লেখক-পরিবেশকর্মী কেন সারো-উইওয়া লিখেছিলেন – ‘একটা সময় পর পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমার চিন্তাভাবনা সফল হবেই এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই আমার। তবে, তার জন্য, আমাকে এই মুহূর্তের যন্ত্রণাগুলো নিতেই হবে … আই উইল হ্যাভ টু বিয়ার দ্য পেইন অফ দ্য মোমেন্ট …’। মুহূর্তের যন্ত্রণা, সে মুহূর্তের সময়সীমা হয়তো দশকের পর দশক। নাইজার-ডেল্টা এবং ওগোনিল্যান্ড। ব্রিটিশ-ডাচ কোম্পানি রয়্যাল ডাচ শেল এবং সাবসিডিয়ারি শেল পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (এসপিডিসি)-র সঙ্গে রাষ্ট্রের আঁতাত এবং পরিবেশহত্যা। অর্ধশতাব্দী ধরে লাগাতার তেল-সন্ত্রাস। ১৯৫৬-য় নাইজার নদী-বদ্বীপে তেলের সন্ধান এবং ১৯৫৮-য় রয়্যাল ডাচ শেল কোম্পানির কাজ শুরু। বলা ভালো, অয়েল-স্পিলেজের ইতিহাস ওখানেই। প্রথম নথিভুক্ত অয়েল-স্পিলেজ হয় ১৯৬৯ সালে দেশের গৃহযুদ্ধের সময় গোকানা অঞ্চলের কে-ডেরে কমিউনিটিতে অয়েল-ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের সময়। তারপর থেকে ‘সেই ট্র্যাডিশন’ এবং আরও বীভৎসতা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ওগোনিল্যান্ড থেকে তোলা হয়েছে ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ঠিক এই সময়সীমায় ঘটা ছোটবড় অয়েল-স্পিলেজের সংখ্যা ২,৯৭৬। দেশের ‘ন্যাশনাল অয়েল স্পিল ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স এজেন্সি’-র হিসেবে ২০২০ ও ২০২১-এ মোট ৮২২টি স্পিলেজে ছড়িয়েছে ২৮,০০৩ ব্যারেল তেল। ২০২২ পর্যন্ত বিগত এক দশকের হিসেব ধরলে স্পিলেজের সংখ্যা ৯,৮২৮। ১৯৯৩-এ কেন সারো’র নেতৃত্বে তুমুল প্রতিরোধের পর শেল ওগোনিল্যান্ড থেকে তেল উৎপাদন বন্ধ করে দিলেও তেলের পাইপলাইনগুলি উঠিয়ে নেয়নি। পুরোনো পাইপলাইনগুলি থেকে শেলের তরফে দায়সারা মনোভাবে একাধিক ফল্ট-লিকেজ লেগেই ছিল। এর পাশাপাশি চলে এসেছে পাইপলাইন থেকে অনৈতিক উপায়ে তেল চুরি বা ‘অয়েল-বাঙ্কারিং’। ১৯৫৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত নাইজার-ডেল্টায় মোট স্পিলেজ হয়েছে ৯-১৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল। বায়েলসা স্টেট অয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল কমিশন বলছে, গ্রহের ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর এক্সন ভালদেজ অয়েল স্পিলেজের সঙ্গে নাইজার ডেল্টাকে তুলনা করলে দেখা যাবে গত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রতি বছর একবার করে এক্সন ভালদেজের সমান তেল স্পিলেজ হচ্ছে এখানে। শেল-শেভরন-এনি-টোটাল-এক্সনমোবিল – মূলত এই বৃত্তের দায়িত্বে নাইজার-ডেল্টার ৯০ শতাংশ স্পিলেজ ও পরিবেশ-ধ্বংসের বাকি ইতিহাসে আসার আগে পরিবেশকর্মী নিধনের টাইমলাইন, লেখক কর্মী কেন সারো-উইওয়ার লেগ্যাসি।

কেন সারো-উইওয়া’র স্মরণে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে একটি পোস্টার (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

উপন্যাস ‘সোজাবয়, আ নভেল ইন রটেন ইংলিশ’ (১৯৮৫), বা ননফিকশন ‘জেনোসাইড ইন নাইজেরিয়া’ (১৯৯২) – কেনের লেখকসত্তায় একাধিকবার উঠে এসেছে দেশের গৃহযুদ্ধ, দুর্নীতির প্রসঙ্গ। নিজের প্রযোজনায় টিভি কমেডি ‘বাসি অ্যান্ড কোম্পানি’ পেয়েছিল ৩০ মিলিয়ন দর্শক। কেরিয়ারের একাধিক সময়ে সরাসরি রাজনীতিতে আসা, ব্যবসা – এবং এসমস্ত পেরিয়ে ’৯০ থেকেই সরাসরি ওগোনিদের হয়ে পরিবেশ এবং অধিকার রক্ষা আন্দোলনে নামেন কেনুলে বিসন সারো-উইওয়া, সংক্ষেপে কেন সারো-উইওয়া। ‘মুভমেন্ট ফর দ্য সারভাইভাল অফ দ্য ওগোনি পিপল’ সংক্ষেপে ‘মোসোপ’ – ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া ওগোনিল্যান্ড এবং নাইজার ডেল্টায় শেল-বিরোধী পরিবেশ-আন্দোলন এবং ওগোনিদের অধিকার রক্ষার প্ল্যাটফর্ম – যার প্রথম প্রেসিডেন্ট ডক্টর গ্যারিক বি. লেটন এবং মুখপাত্র লেখক-পরিবেশকর্মী কেন সারো-উইওয়া। ‘আ মান্থ অ্যান্ড আ ডে: আ ডিটেনশন ডায়েরি’-তে কেন সারো ‘ওগোনিল্যান্ড’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। বলেছেন, তাঁর কাছে ওগোনি ও তাঁদের সংস্কৃতি, ভাষা বৈচিত্র ও ইতিহাসের সঙ্গে তাঁদের জমি, ল্যান্ড সমার্থক। পাশাপাশি এসে যায় পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে দেশের মানচিত্রে ৯টি রাজ্য ছুঁয়ে যাওয়া নাইজার বদ্বীপের আদিবসীদের আর্থিকভাবে শেষ করে দেওয়ার অন্ধকারের গল্প। এই ৯টি রাজ্যের অন্যতম রিভার্স স্টেটের অংশ ১,০৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ওগোনিল্যান্ড। ’৯৩-এ কেন সারো-হত্যা পর্যন্ত দেশের মোট ১৪০ মিলিয়ন জনসংখ্যার ভেতর এথনিক মাইক্রো-মাইনরিটি ওগোনিদের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ, শতকরা হিসেবে যা ০.৪ ভাগ। ১৯৬০-এ দেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিতর্কিত সীমানানির্ধারণের পর প্রায় ৩০০টি এথনিক গোষ্ঠীকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় নাইজেরিয়ার ভেতর। অথচ এই ৩০০টি গোষ্ঠীর ভেতর সর্বোচ্চ রাজনীতিতে আসা এবং আর্থিক সুবিধা পাওয়া – সবকিছুর দখল মূলত তিনটি কমিউনিটির। আশ্চর্য রক্তাল্পতায় বাকিরা – কেনের কথায় যা ‘ইন্ডিজেনাস কলোনিয়ালিজম’ বা রাষ্ট্র-কর্পোরেটের ‘রিকলোনিয়ালিজম’। ১৯৬০-এর সাংবিধানিক অধিকার আইনে বলা হয়েছে, মাইনিং, ড্রিলিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের ৫০ শতাংশ রেভেন্যু দিতে বাধ্য রাষ্ট্র, অথচ ওগোনি বা অন্যান্য অত্যাচারিত ‘হাতির পায়ের তলায় পড়ে থাকা ঘাসের মতো’ আদিবাসীদের ক্ষেত্রে যা দেড় শতাংশেরও কম। এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আর্থিক দেউলিয়া হওয়ার পাশাপাশি তুলনাহীন পরিবেশ-হত্যার সাক্ষী ওগোনিল্যান্ড।

শুরুর দিকে কেনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রচেষ্টা থাকলেও গ্রিনপিস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ ইন্টারন্যাশনাল বা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলিকে ওগোনিদের লড়াইয়ে পাশে পাওয়া যায়নি। অ্যামনেস্টি থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশের সেনাবাহিনী থেকে ট্রায়াল ছাড়াই গ্রেপ্তারি বা হত্যার ইতিহাস না থাকলে তাঁরা আগ্রহী হবেন না। এবং ঠিক এখানেই নাছোড় ছিলেন কেন সারো, কারণ তখনও পর্যন্ত নাইজেরীয় সেনা থেকে প্রত্যক্ষ বর্বরতার ইতিহাস শুরু হয়নি, যদিও পরিবেশ-হত্যার নিরিখে তা যথেষ্টই ভয়ঙ্কর, কেন নিজেই বলছেন, ‘দ্য ওগোনি পিপল ওয়্যার বিয়িং কিল্ড অল রাইট, বাট ইন অ্যান আনকনভেনশনাল ওয়ে’। আনকনভেনশনাল ওয়ে অর্থাৎ পরিবেশ-হত্যা। সিস্টার মাজেল্লা ম্যাকারনকে লেখা অন্যতম একটি চিঠিতে কেন লিখেছিলেন – ‘এনভায়রনমেন্ট ইজ ম্যান’স ফার্স্ট রাইট’। ডিটেনশন ডায়েরিতে লিখছেন, ‘পরিবেশগত বিপর্যয় আদিবাসী ওগোনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শাসকের মারণ-অস্ত্র’। এবং ঠিক এখানেই আজীবন স্ট্র্যাটেজিস্ট কেন সারো দেখার মোড় বদলালেন। ওগোনিদের সমস্যাকে বাকি পৃথিবীর আপামর আদিবাসী সমস্যার সঙ্গে লীন করে দিলেন। ‘আনরিপ্রেজেন্টেড নেশনস অ্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশনস’ (ইউএনপিও)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইন্ডিজেনাস পপুলেশনস’ বা ডব্লুজিআইপি-এর হয়ে ১৯৯২-এ জেনেভায় ওগোনিদের যন্ত্রণার কথা বলে এলেন, লিখলেন – ‘ইন ভার্চুয়ালি এভরি নেশন-স্টেট, দেয়ার আর সেভারেল ওগোনিজ’। এভাবেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি এবং পরিবেশ-সংগঠনগুলির সঙ্গে হৃদ্যতা।

প্রতিবাদ আন্দোলনে কেন সারো-উইওয়া (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

তাঁর সেমিনাল বই ‘স্লো ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টালিজম অফ দ্য পুওর’-এ রব নিক্সন লিখছেন, ‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে কেন সারো ও ওগোনিদের লড়াই পরিবেশ আন্দোলনের স্টিরিওটাইপ ভেঙে দিয়েছিল, যে স্টিরিওটাইপে পরিবেশকর্মী মানে সাদা চামড়ার মধ্যবিত্ত তরুণ ইউরোপীয় বা মার্কিনরা, যাঁরা সহজেই গাছ জড়িয়ে ধরে পরিবেশ আন্দোলন করতে পারেন, কারণ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বৃহত্তর কোনও সমস্যার বিরুদ্ধে লড়তে হয় না’। এই বৃহত্তর সমস্যায় তেল-দৈত্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রের নেক্সাস, বিপরীতে আদিবাসী নাইজেরিয়া। ১৯৯০ সালের আগস্টে ‘মোসোপ’-এর পক্ষ থেকে সই হয়ে আসে ‘ওগোনি বিল অফ রাইটস’। ওগোনি মানচিত্রের ভেতর পড়া সমস্ত ক্ষেত্রেই সবার আগে ওগোনিদের রাজনৈতিক ও আর্থিক অধিকারের পাশাপাশি পরিবেশরক্ষার দাবি, স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেল নাইজেরিয়া যা শুনেও শোনেনি। ১৯৯৩-এর ৪ জানুয়ারি প্রথম ওগোনি দিবসে কেনের নেতৃত্বে রাস্তায় বেরোয় তিন লক্ষ ওগোনি, অর্থাৎ মোট ওগোনি জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ। শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং তাঁর প্রতিশোধে সরকারের মোবাইল পোলিশের পক্ষ থেকে ম্যাসাকার – প্রায় ২৭টি গ্রাম তছনছ করে অসংখ্য হত্যা, ঘরছাড়া অন্তত ৮০,০০০। ১৯৯৪-এর ২১ মে। টিম শেল-রাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে থাকা চার ওগোনি নেতার আকস্মিক হত্যা। রাষ্ট্রকর্তৃক প্রায় ষাটটি ওগোনি গ্রামে চালানো হয় চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচার। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সানি আবাচার সঙ্গে শেল নাইজেরিয়ার অধিকর্তার মিটিং এবং আশ্চর্য সমাপতনে ২১ জুন পোর্ট হারকোর্ট থেকে সারো-উইওয়া সহ মোট ১৫ জন ওগোনি কর্মী-নেতার গ্রেপ্তারি, অথচ হত্যার সময়ে এলাকার ধারেকাছেও ছিলেন না কেন। এই পনেরোজনের হাস্যকর ট্রায়াল এবং কনভিকশন হয় ’৯৫-এর অক্টোবরে। একাধিক সাক্ষীকে ঘুষ দিয়ে কেন-বিরোধী কথা বলতে বাধ্য করার একাধিক অভিযোগ আগে শেলের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তীব্র বাধা আসে। সবকিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে কনভিকশনের দশ দিনের ভেতর ১৯৯৫-এর ১০ নভেম্বর পোর্ট হারকোর্টের জেলে ফাঁসি হয় ‘ওগোনি-নাইন’ খ্যাত ন’জনের। স্বাধীনতার পরে মৃত্যুদণ্ডের কোনও প্রাক-ইতিহাস না থাকা পোর্ট হারকোর্টের জেলে ফাঁসির সরঞ্জাম জোগাড় করাতেই যা সময় লাগে, বাদবাকিটুকু চূড়ান্ত তাড়াহুড়ো, কারণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে দ্রুততম একজিকিউশনের দৃষ্টান্ত এটিই। শোনা গেছিল, মৃত্যুদণ্ডের জন্য ওগোনি নাইনের শুরুতেই থাকা বছর চুয়ান্ন’র কেন সারো-উইওয়া’কে পাঁচবারের চেষ্টায় ঝোলানো সম্ভব হয়। কেন সারো ছাড়া কারা ছিলেন ওই ‘ওগোনি নাইন’-এ? ডক্টর বারিনেম কিওবেল, স্যাটারডে ডোবি, নোর্দু ইয়াও, ড্যানিয়েল জিবোকু, পল লেভুরা, ফেলিক্স নোয়াটে, বারিবোর বেরা এবং জন পুনিয়েন। আশ্চর্যের কথা, ডক্টর বারিনেম কিওবেল ‘মোসোপ’-এর সদস্য ছিলেন না। এক সরকারি অধিকর্তা হিসেবে ডক্টর বারিনেমের অপরাধ ছিল রাষ্ট্র-শেল আঁতাতের পক্ষে না যাওয়া। ওগোনি-নাইন হত্যার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিণতি বলতে, কমনওয়েলথ থেকে নাইজেরিয়াকে অপসারণ। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কেন সারো পেয়ে গেছেন গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ, রাইট লাইভলিহুডের মতো পুরস্কার। তাতেও দেশের ক্যাঙ্গারু কোর্ট ও হত্যার ট্র্যাডিশন আটকানো যায়নি। অবিশ্বাস্য সত্যি ‘আ মান্থ অ্যান্ড আ ডে’র শেষ লাইনে কেন সারো’র কথাগুলো – ‘ওগোনিতে জেনোসাইড এক অন্য মাত্রায় চলে গেছে। পরের বইতে সেই দিকগুলো তুলে ধরব আমি, অবশ্য ততদিন যদি সেইসব কথা বলার জন্য আমি বেঁচে থাকি’ – ‘ইফ আই লিভ টু টেল দ্য টেল …’

কেন সারো-উইওয়ার পোস্টার হাতে প্রতিবাদী ওগোনিরা (ছবিসূত্র – এএফপি)

কেন ও ওগোনি-নাইন হত্যা ছাড়াও শেল-রাষ্ট্র আঁতাতের ব্লাডশেডের দৃষ্টান্ত আরও একাধিক। সারো-উইওয়া’র নিজের ভাষায় যা ‘অর্গানাইজড ব্রাইগ্যান্ডেজ’ বা ‘সংগঠিত রাহাজানি’ কিংবা ‘নাইজেরিয়া অ্যান্ড শেল: পার্টনারস ইন প্রোগ্রেস’। রাষ্ট্র এবং শেল কোনওপক্ষ থেকেই স্বীকার না করা হলেও পাওয়া যাচ্ছে একাধিক দৃষ্টান্ত ও অসঙ্গতি। ১৯৯৪-এর ৫ ডিসেম্বর কোনওভাবে লিকেজ হয়ে যাওয়া সরকারের একটি মেমো-তে ওগোনিল্যান্ডের প্রতিরোধ প্রসঙ্গে পরিষ্কার লেখা ছিল – ‘শেল অপারেশনস স্টিল ইমপসিবল আনলেস রুথলেস মিলিটারি অপারেশনস আর আন্ডারটেকন ফর স্মুথ ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটিজ টু কমেন্স’। অ্যামনেস্টির রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০-এর ২৯ অক্টোবর শেল থেকে নাইজার ডেল্টার এচে অঞ্চলের উমুয়েকেম কমিউনিটিদের গ্রামে ইন্সটলেশনের জন্য দেশের প্যারামিলিটারি গ্রুপ ‘মোবাইল পোলিশ’-এর সাহায্য চাওয়া হয় – পরিণতিতে নিরস্ত্র প্রতিবাদীদের ওপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণে প্রায় আশির ওপর হত্যা, ৪৯৫ ঘর ভস্মীভূত। ১৯৯৩-এ শেলের তথাকথিত এলাকাছাড়া হবার পরেও হয়ে গেছে একাধিক নতুন পাইপলাইন ইন্সটলেশন এবং সেইসমস্ত কাজে শেলের পক্ষ থেকে চাওয়া সেনা-নিরাপত্তা – পরিণতিতে ৩০ এপ্রিল বায়ারা গ্রামে পুলিশি গুলিতে ১১জন আহত এবং ৪ মে নোনওয়া গ্রামে একজন প্রতিবাদীর বুকে ফেটাল গানশট। এবং এই সমস্ত মিলিয়েই আশ্চর্য প্রাসঙ্গিক আত্মজীবনী ‘ইউ মাস্ট সেট ফোর্থ অ্যাট ডন’-এর ‘রিকুয়েম ফর অ্যান ইকো-ওয়ারিয়র’ অধ্যায় থেকে লেখক ওলে সোয়িঙ্কার সেই উচ্চারণ – ‘স্বৈরাচারী শাসকের মাথায় ক্ষমতা জাঁকিয়ে বসেছে, যে ক্ষমতা রক্ত দিয়ে তার পর্যায়ক্রমিক পুষ্টি অর্জন করে’।

বিতর্কিত ট্রায়ালের এক মুহূর্তে ওগোনি নাইন, ছবির মাঝে কেন সারো-উইওয়া (ছবিসূত্র – কোড রুড ওয়েবসাইট)

নাইজার ডেল্টায় তেল-সন্ত্রাসের বাকি ক্রনোলজিতে আসা যাক। ২০০৮-এর ২৮ আগস্ট ও ৭ ডিসেম্বর বোরো কমিউনিটিতে শেলের ট্রান্স-নাইজার পাইপলাইনের ফল্ট থেকে বীভৎস দুটি স্পিলেজ হয়, যদিও শেল থেকে তাৎক্ষনিকভাবে প্রাকৃতিক সমস্যা থেকে ফল্ট এবং সেখান থেকে তেল ছড়ানোর মতো জোড়াতালি দেওয়া হয়। ২০০৯-র ৩০ নভেম্বর নাইজেরিয়া সরকার থেকে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামকে ওগোনিল্যান্ডের সামগ্রিক অয়েল-স্পিলেজের ওপর একটি ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট করতে বলা হয়, ইউএনইপি-র সেই ঐতিহাসিক রিপোর্ট বের হয় ২০১১-র আগস্টে। ১৪ মাস জুড়ে ২০০-র ওপর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে ১২২ কিলোমিটার বিস্তৃত পাইপলাইন পরীক্ষা করে, ৪,০০০-এর ওপর মাটি ও জলের নমুনা এবং ৫,০০০-এর ওপর মেডিকেল রেকর্ড নিয়ে এই ২৭৫ পাতার রিপোর্ট তৈরি করতে কাজে লাগানো হয় ২৩,০০০ স্থানীয় নাইজেরীয়কে। রিপোর্টে অবস্থার ভয়ঙ্করতার ছবিটা কিরকম? বলা হয় প্রথম পাঁচ বছরের তেল পরিষ্কারের কাজ করতে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন, এবং পুরো ওগোনিল্যান্ডের পরিবেশকে শেল-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে অন্তত ৩০ বছর। ইউএনইপি রিপোর্টে ‘ওগোনিল্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রেস্টোরেশন অথরিটি’ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। অধিকাংশ সাইটে মাত্রাতিরিক্ত কারসিনোজেনের প্রমাণ মেলে রিপোর্টের একাধিক বিশ্লেষণে। নিসিসিয়োকেন ওগেল অঞ্চলের নাইজেরিয়ান ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পাইপলাইনের একটি কুয়ো থেকে পাওয়া নমুনায় কারসিনোজেন বেঞ্জিনের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বেঞ্জিনের স্বাভাবিক মাত্রার ৯০০ গুণ বেশি, এবং এই কুয়ো থেকেই স্থানীয় কমিউনিটির দিবারাত্র পানীয় জলের জোগান চলছে বহু বছর ধরেই। পাশাপাশি একাধিক ভয়ঙ্কর স্পিলেজ সাইট এই রিপোর্টে আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত। ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪ – বেশ কয়েকটি স্পিলেজে ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত কে-ডেরে কমিউনিটির কিডারো ক্রিকের মতো জায়গা অনুল্লিখিত ইউএনইপি রিপোর্টে। এই অবস্থায়, রিপোর্ট প্রকাশের এক বছরের মধ্যেই তৈরি হওয়া স্বল্পমেয়াদী ওগোনি ক্লিন-আপ স্কিম ‘হাইড্রোকার্বন পলিউশন রেস্টোরেশন প্রোজেক্ট’ পরে ২০১৬-য় তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে শুরু হওয়া দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে থাকা সংস্থা ‘হাইড্রোকার্বন পলিউশন রিমেডিয়েশন প্রোজেক্ট’-এ রূপ নেয়। ক্লিন-আপের কাজ শুরু হয় ২০১৮-য়। প্রোজেক্টের হিসেব বলছে, এক একটি সাধারণ কন্টামিনেশন সাইটকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন ৫০০-৬০০ মিলিয়ন নাইজেরিয়ান নাইরা (৩-৪ লক্ষ মার্কিন ডলার), অন্যদিকে স্পিলেজ বেশিমাত্রায় হলে সেই খরচা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ বিলিয়ন নাইজেরিয়ান নাইরায় (৭ লক্ষ মার্কিন ডলার)। এবং এই ক্লিনআপের প্রোগ্রেস? ২০২০ সালে অ্যামনেস্টি, এবং ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ-এর ইউরোপ, নাইজেরিয়া ও ডাচ শাখা থেকে যৌথভাবে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে চিহ্নিত ১১ শতাংশ এবং পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট করা আরও ৫ শতাংশ অঞ্চলে সবেমাত্র ক্লিনআপ শুরু হয়েছে, যার কোনও কাজই তখনও পর্যন্ত কোনও পরিণতি পায়নি। ২০২২ থেকে রয়্যাল ডাচ শেল তার সাবসিডিয়ারি এসপিডিসি বিক্রি করার চিন্তাভাবনা শুরু করে। সেবছরেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত থেকে শেলের বিরুদ্ধে অয়েল-স্পিলেজে ক্ষতিগ্রস্ত রিভার্স স্টেটের এগবালোর এবাবু কমিউনিটির পক্ষ থেকে করা লসুটে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন নাইজেরিয়ান নাইরা (১.৮ বিলিয়ন ডলার) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের রূপায়ন না হওয়া পর্যন্ত সাবসিডিয়ারি বিক্রির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় – এবং আশ্চর্য প্লট-টুইস্টে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সেই সিদ্ধান্তের ওপর পাল্টা রায়ে বলে দেওয়া হয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে সাবসিডিয়ারিকে রেনেসাঁ নামের পাঁচ নাইজেরীয় কোম্পানির মিলিত কনসোর্টিয়ামকে বিক্রি করার ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ডিল এখনও পর্যন্ত দেশের সরকারের থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে, পাশাপাশি একাধিক পরিবেশকর্মী, আইনজীবীর লাগাতার আন্দোলন চলছে এই ‘পরিকল্পিত’ বিক্রির বিরুদ্ধে, যার কারণ সুস্পষ্ট – সাবসিডিয়ারি বেচে পাপ ধুয়ে মুছে দূষণের যাবতীয় দায়ভার থেকে মুক্তির পাওয়ার শেল-মাস্টারস্ট্রোক, যা আগেও একাধিক বহুজাতিক করে এসেছে এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত সফল। প্রসঙ্গত, দেশের অধিকাংশ বিপজ্জনক গ্যাস ফ্লেয়ারিংয়ের হোতা ইতালীয় জায়ান্ট এনি ঠিক আগের বছরই তার অনসোর প্রোডাকশন সাবসিডিয়ারি নাইজেরিয়ান এগিপ অয়েল কোম্পানির স্বত্ব ওয়ান্ডো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বিক্রির চুক্তিতে সই করেছে, রেখে গেছে গ্যাস ফ্লেয়ারিংয়ের দীর্ঘ বায়ুদূষণের ইতিহাসের দায় অস্বীকারের সম্ভাব্য লেগ্যাসি। এই এনি এবং শেলের অয়েল স্পিলেজের ইতিহাস উঠে এসেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৭-১৮-র একটি মাইলস্টোন রিপোর্টে। দেখা গেছে শতকরা হারে এনি’র অয়েল-ড্রিলিং অপারেশন শেলের তুলনায় অনেকটাই কম হলেও স্পিলেজের হার শেলের থেকে এনি’র তুলনামূলকভাবে বেশি। নাইজেরিয়ান আইন অনুযায়ী, স্পিলেজের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে কমিউনিটি প্রতিনিধি ও সরকারি অফিসারদের সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন ভিজিট’ বা জেআইভি রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০১১ থেকে শেল এবং ২০১৪ থেকে এনি’র পক্ষ থেকে এই জেআইভি রিপোর্ট দেওয়া শুরু হয়েছে। অ্যামনেস্টির রিপোর্ট বলছে, এনি ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে একদিনের ভেতর জেআইভি জমা দিয়েছে, স্পিলেজের পর রিপোর্ট জমা দেওয়ার গড় সময় দুদিন। শেলের দিকে এই হিসেব আশ্চর্য বিলম্বিত। অয়েল স্পিলেজের পর রিপোর্ট জমা দিতে শেল গড়ে সময় নিয়েছে সাত দিন করে, ২৪ ঘন্টার জেআইভি দেওয়ার শতকরা হার মাত্র ২৪ শতাংশ।

ওগোনিল্যান্ডের ওকুলু নদীতে অয়েল-স্পিলেজ (ছবিসূত্র – আল জাজিরা)

কে-ডেরে কমিউনিটির কিডারো ক্রিকের বিধবংসী স্পিলেজ (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

প্রবাদে তেল জলে না মিশলেও নাইজার ডেল্টায় বেঞ্জিন-মাখা কারসিনোজেনিক তেল ও পানীয় জল মিলেমিশে এক হয়ে গেছে বহু দশক ধরেই। এর পাশাপাশি গ্যাস ফ্লেয়ারিং-এর ইতিহাস। তেল উৎপাদন ও রপ্তানি একটা দেশের কতটা গুরুত্বপূর্ণ? নাইজেরিয়ার মোট রপ্তানির ৯৬ শতাংশ এবং দেশের মোট আয়ের ৮০ শতাংশ আসছে তেল থেকেই। ২০২১-এর হিসেবে দেশের জিডিপির ৭.২৪ শতাংশের মালিক তেল। ২০৬ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভের মালিক নাইজেরিয়া বিশ্বের মোট ক্রুড অয়েলের দশম বৃহত্তম রিজার্ভ, যার পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ব্যারেল। এবং এখানেই নাইজার ডেল্টার অবস্থান ও বৈষম্য। ৩০ মিলিয়ন মানুষ, ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা, ৯টি রাজ্য, অগুনতি জীববৈচিত্র এবং চুনাপাথর, সোনা, তেলের মতো অগাধ রিজার্ভের এক আশ্চর্য প্যারাডক্স এই নাইজার-ডেল্টা। ‘স্লো ভায়োলেন্স’-এর লেখক রব নিক্সনের কথায়, রুল অফ থাম্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্র যত বেশি করে একটি বিশেষ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হবে, ততই সে দেশে আর্থিক বৈষম্য, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, সামরিক অত্যাচার, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ, পরিবেশ-ধংস ইত্যাদি বেড়ে যাবে। খুব প্রাসঙ্গিক ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্টের একটি রিপোর্ট – ১৯৬০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দেশ থেকে তেল-চুরি এবং তেল-অপচয়ে নষ্ট হয়েছে মোট ৪০০ বিলিয়ন ডলার তেল-রাজস্ব। এবং এর পাশাপাশি চলছে বীভৎস গ্যাস ফ্লেয়ারিং। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের একটি ১৯৯৫-এর রিপোর্ট বলছে, দেশের পেট্রোলিয়াম উৎপাদন থেকে আসা প্রাকৃতিক গ্যাসের ৭৬ শতাংশ ফ্লেয়ারিং হচ্ছে নাইজেরিয়ায়, যে ফ্লেয়ারিংয়ের শতকরা হিসেব ব্রিটেনে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ৪.৩ ও ০.৬ শতাংশ। ‘স্লো ভায়োলেন্স’-এর লেখক রব নিক্সনের কথায়, যে সমস্ত শিশুদের স্মৃতিতে বিদ্যুৎ বা শিক্ষা নেই, তারা সেভাবে রাত্রি দেখার স্মৃতিও পাচ্ছে না, কারণ নিরন্তর ১৪,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ফ্লেয়ার এবং সেখান থেকে আসা কৃত্রিম সূর্যের মতো আলোয় নাইজার-ডেল্টায় ২৪ ঘন্টা জুড়েই চলছে এক বিষাক্ত সকাল। স্মৃতিতে আসছে জেরার্ড ম্যানলি হপকিন্সের কবিতা – ‘আই ওয়েক অ্যান্ড ফিল দ্য ফেল অফ ডার্ক, নট ডে’। নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের একটি হিসেবে, নাইজেরিয়ার অয়েল-ফিল্ড থেকে হওয়া বছরে ১২ মিলিয়ন টন মিথেন এবং ৩৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডয়ের নিঃসরণ গ্রহের তৎকালীন মোট গ্রিন-হাউস গ্যাসের নিরিখে সর্বোচ্চ কন্ট্রিবিউটর। পরিণতি? শুধু নাইজার-ডেল্টায় বাসিন্দাদের গড় আয়ু ৪১ বছর, বাকি দেশের থেকে দশ বছর কম। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ উইমেন’স হেলথ-এ প্রকাশিত ২০১৭-এর একটি সমীক্ষা বলছে, নাইজার ডেল্টার রিভার্স স্টেটের রাজধানী শহর পোর্ট হারকোর্টে সদ্যোজাত শিশুদের জন্মগত অসঙ্গতি প্রতি ১০০০-এ ২০.৭৩, যে সংখ্যাটি দেশের দক্ষিন-পূর্বে ৪.১৫ ও উত্তর-পূর্বে ৫.৫১। স্বাভাবিকের থেকে চারগুণ বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার পাওয়া গেছে পোর্ট হারকোর্টের বেশ কিছু এলাকায়। এবং গোটা দেশ জুড়ে থাকা এইসব গ্যাস ফ্লেয়ারিং সাইটের বিপজ্জনক ২ কিলোমিটারের ভেতর থাকছেন অন্তত ২,৩০,০০০ মানুষ। অস্বাভাবিক গরম এবং টক্সিক আলোহাওয়ায়, ফ্লেয়ারের তাপে মহিলার রোদে শুকোচ্ছেন ক্যাসাভার বীজ। পুরো দেশে বছরে ১২.৭ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের এনার্জি-লস চলছে এইসব গ্যাস ফ্লেয়ারিং থেকে। ফ্লেয়ারিং করলে সরকার থেকে নির্ধারিত আর্থিক জরিমানা ২০১৮-র নিরিখে ১২.৫ মিলিয়ন ডলার ২০১৯-এ বেড়ে ২৪৭ মিলিয়ন ডলার হলেও প্রোগ্রেস রিপোর্ট সামান্যই। ২০১৮ থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি গ্যাস ফ্লেয়ারিং সাইটের মালিক ইতালীয় কোম্পানি এনি পোর্ট হারকোর্ট শহরে সবচেয়ে বেশি গ্যাস ফ্লেয়ারিং করেছে। প্রতিবাদীদের পক্ষ থেকে একাধিক আন্দোলনে থাকা অন্যতম কর্মী কমরেড কলিন্স ট্রুম্যান ওপুমি লাগাতার লড়াই করছেন। পরিণতি কী? এনি’র সাবসিডিয়ারি নাইরেজিয়ান এগিপ অয়েল কোম্পানি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টেট সিকুইরিটি সার্ভিসের গোপন বোঝাপড়ায় ২০১৬-র আগস্টে ওপুমির হঠাৎ গ্রেপ্তারি, স্থানীয় কবরখানায় নিয়ে গিয়ে প্রায় প্রাণঘাতী আক্রমণ, আবুজায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাষ্ট্রকর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ মিলে মোট দুবছরের জন্য বিনা বিচারে জেল। এই আশ্চর্য ডিটেনশন থেকে বেরিয়ে এসে স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিস ও এগিপ-এর বিরুদ্ধে নাইজেরিয়ান ৯ বিলিয়ন ডলারের কোর্ট কেস করেন ওপুমি। ২০২৪-এর মে-তে বায়েলসা রাজ্য আদালত থেকে ওপুমিদের পক্ষে যায় ঐতিহাসিক রায়।

ক্যাসাভা শুকোচ্ছেন গ্রামের মহিলারা, সামান্য দূরেই চলছে গ্যাস ফ্লেয়ারিং (ছবিসূত্র – দ্য টেলিগ্রাফ)

গ্যাসফ্লেয়ার বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন (ছবিসূত্র – কোড রুড ওয়েবসাইট)

নাইজার ডেল্টার ম্যানগ্রোভ অরণ্য। মহাদেশের বৃহত্তম এবং গ্রহের তৃতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যে তেল-সন্ত্রাস। ক্রমাগত তেলের প্রকোপে প্রধানত শ্বাসমূল ও শ্বাসরন্ধ্রগুলি তেল-মাখা জলে ঢেকে গিয়ে শ্বাসবায়ুর অভাবে মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক ম্যানগ্রোভের। ঠিক এইভাবে বিপন্ন ম্যানগ্রোভগুলির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে আগ্রাসী নাইপা পাম (নাইপা ফ্রুটিক্যান) গাছ। নয়ের দশকে দেশে কৃত্রিমভাবে শুরু করা হয় নাইপা’র চাষ। অত্যন্ত দৃঢ় শেকড়ের জন্য সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সাময়িক ভুমিক্ষয় রোধ, ফল, ফুল, পাতার একাধিক অংশকে খাদ্যসামগ্রী হিসেবে ব্যবহারের সঙ্গে অন্যান্য দিকেও জোগান – সব মিলিয়ে নাইপা’র প্রাথমিক আলোর দিক ক্রমশ ছেয়ে গেছে এর তীব্র বংশবিস্তারে – ‘রিমোট সেন্সিং’ পত্রিকার রিপোর্টে ২০০৭ থেকে ২০১৭-র মধ্যে ১২ শতাংশ কমা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নাইজার-ডেল্টায় নাইপা পাম বেড়েছে ভয়ঙ্কর ৬৯৪ শতাংশ। দূষিত মাটিতে আদর্শ নাইপা গাছের কাছাকাছি এলাকায় ধূসর-হলুদ হয়ে যাওয়া রুগ্ণ ম্যানগ্রোভের পাশাপাশি থাকতে পারছে না অধিকাংশ মাছ ও মোলাস্কা – এবং এভাবে চললে আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে পুরো নাইজার-ডেল্টায় আর কোনও ম্যানগ্রোভ থাকবে না। এবং এর সঙ্গে চলেছে দামী কাঠের জন্য অবৈধ লগিং। গ্লোবাল ম্যানগ্রোভ ওয়াচ-এর হিসেবে ১৯৯৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দেশের ম্যানগ্রোভ অরণ্য কমেছে ১৬১.৯ বর্গ কিলোমিটার।

২০১৬-র রিপোর্টে নাইজেরিয়ার মানচিত্রে দেশের সমুদ্র-উপকূল এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

নাইজার ডেল্টায় ক্রমশ বাড়তে থাকা ইনভেসিভ নাইপা পাম গাছ (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

শেল-এনি’র সঙ্গে শেভরন। ১৯৯৮-এর মে’র শুরুতে নাইজার ডেল্টার ইলাজে কমিউনিটির পক্ষ থেকে শেভরনের একাধিক অয়েল-ড্রিলিংয়ের পরিবেশগত বিপর্যয় এবং ইলাজে কমিউনিটির কোনওরকম কর্মসংস্থান না হওয়ার দাবি জানিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করে কোম্পানি অফিসিয়ালদের কাছে, খুব স্বাভাবিক ওগোনি বিল অফ রাইটসের মতো সে রিপোর্টও সম্ভবত পড়েও দেখেনি বহুজাতিক। ২৮ মে শতাধিক বিক্ষুব্ধ নিরস্ত্র ইলাজেরা নাইজার-ডেল্টার প্যারাবে অফসোর প্ল্যাটফর্মে শেভরনের একাধিক সদস্যকে হোস্টেজে নেয়। দেশের সেনা-পুলিশ আশ্চর্যজনকভাবে কোম্পানির নিজস্ব হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল বলে প্রতিবাদীদের সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিল। পরিণতিতে সেনার ফেটাল গানশটে নিহত হন দুই প্রতিবাদী কর্মী জোলা ওগুংবেজে ও আরোলেকে ইরোয়ানিনু। আহত এবং অত্যাচারিত অন্যতম প্রতিবাদী ইলাজে নেতা ল্যারি বোয়োটো’র করা দৃষ্টান্তমূলক ল’সুটের রায় ২০০৮ সালে সান ফ্রান্সিসকো’র ফেডারেল কোর্টে আশ্চর্যজনকভাবে শেভরনের পক্ষে যায়। অবশ্য কয়েনের উল্টো দিকে আইনি আশার খবরও একাধিক। ১৯৯৬ সালে সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, আর্থ রাইটস ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্যদের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশ-বিপর্যয়ের দায়ে শেল-বিরোধী ঐতিহাসিক মামলা করা হয় নিউ ইয়র্ক কোর্টে। ২০০৮-এর জুনে আউট অফ কোর্ট সেটলমেন্টে ওগোনি নাইনের নিহতদের পরিবারকে ১৫.৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় শেল, যদিও সমস্ত অভিযোগ স্বীকারের লিখিত দায়ভার এখনও অধরা। ২০০৪ থেকে ২০০৭-এর মধ্যে নাইজেরিয়ার ওরুমা, গোই ও ইকোট আডা উডো গ্রামের একাধিক অয়েল-স্পিলেজের ঘটনায় শেলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডের হেগ কোর্টে মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত চারজন চাষি, পাশে আসে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ নেদারল্যান্ড। ২০০৮-এর সেই কোর্ট কেসের রায় তেরো বছর পর ২০২১-এ হেগের কোর্ট অফ অ্যাপিল থেকে বেরোয় – ডেভিড বনাম গোলিয়াথ লড়াইয়ে রয়্যাল ডাচ শেল এবং এসপিডিসির বিরুদ্ধে রায় দেয় হেগের কোর্ট, ১৫.৯ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় কোম্পানি, যদিও ততদিনে চার কৃষকের দুজন প্রয়াত। ২০১৫-য় ব্রিটিশ কোর্টে এসপিডিসি-র বিরুদ্ধে বোড়ো কমিউনিটিতে ২০০৮-এর দু’দুটি কুখ্যাত অয়েল স্পিলেজের ঘটনায় ১৫,০০০ মাছচাষির করা যৌথ লসুটে আশাপ্রদ ৮৪ মিলিয়ন ডলারের মামলায় রায় যায় চাষিদের দিকেই। পাশপাশি এস্থাররা এখনও লড়ছেন। এস্থার বলতে এস্থার কিওবেল, সঙ্গে ভিক্টোরিয়া বেরা, ব্লেসিং ইয়াও ও চ্যারিটি লেভুলা মিলে ওগোনি নাইনের নিহত কর্মীদের বিধবা স্ত্রীসহ মোট বারোজন ওগোনি বনাম শেল গোষ্ঠী। ২০০২ সালে শেল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই বহু-আলোচিত মামলায় নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ও নেদারল্যান্ডের হেগের কোর্ট থেকে কোনওরকম আলো না পেলেও এখনও অবিচল এস্থার। বলছেন, ‘আই উইল ফাইট টিল মাই লাস্ট ব্রেথ …’। যদিও এস্থার জানেন, কোম্পানি বনাম ব্যক্তির অনন্ত লড়াইয়ে কোম্পানি অনন্তকাল লড়তে পারে, সিইও আসে যায়, সিইও বদলায়। মানুষ পারে এই অনন্ত লড়াইয়ে? তাই হয়তো ‘টিল মাই লাস্ট ব্রেথ …’

ওগোনি-নাইনের অন্যতম ডক্টর বারিনেম কিওবেলের ছবি হাতে স্ত্রী এস্থার কিওবেল (ছবিসূত্র – দ্য গার্জিয়ান)

শেষমেশ পড়ে কী কী থাকে? কার কোন প্যান্ডোরা? যেমন চোরাগোপ্তা লগিং, মারণ-তেলের মাঝে নাইজার-ডেল্টায় তৈরি হওয়া ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর একাধিক দৃষ্টান্ত। রিভার্স স্টেটের বছর পঞ্চাশের পরিবেশকর্মী ‘মোসোপ’ সদস্য মার্থা আগবানি ‘লোকিয়াকা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ সংস্থার হয়ে তেল-মাখা জলা মাটি, লগারের শাসানি, আর্থিক অনটন নিয়েও ২৫০-এর ওপর মেয়েদের নিয়ে লাগিয়েছেন ১.৩ মিলিয়ন ম্যানগ্রোভ চারা। পরিবেশকর্মী অধ্যাপক ডক্টর নেনিবারিনি জ্যাবে’র নেতৃত্বে তাঁর সংস্থা ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ ১৯৯৯ থেকেই ম্যানগ্রোভ রেস্টোরেশন করছে। ডেল্টার আকোয়া ইবোম রাজ্যের ‘ট্রপিকাল রিসার্চ কনজারভেশন সেন্টার’ (টিআরসিসি) বছরে ১ মিলিয়ন চারা লাগানোর সংকল্পে কাজ করছে রাতদিন। কাঠের ক্যানোয় করে আনা শয়ে শয়ে ম্যানগ্রোভ চারা মাটি খুঁজে পাচ্ছে। মোঙ্গাবে পত্রিকার একটি রিপোর্টে সংস্থার পক্ষ থেকে ইকপোন্টে এনকান্টে বা গর্ডন জর্জরা বলছেন – ‘আমরা আমাদের সন্তানকে দেখাতে চাই, দেশের ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুস্থ আছে, যেভাবে আমাদের পূর্বসূরীরা এদের সংরক্ষণ করেছিলেন, ঠিক সেই পথেই’। অথবা ২০১০-এর রাইট লাইভলিহুড জয়ী ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ নাইজেরিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা পরিবেশকর্মী, কবি, স্থপতি নিম্মো বেসি রাষ্ট্র-কর্পোরেট নেক্সাসকে উদ্দেশ্য লিখছেন – ‘আপনারা প্ল্যান্টেশনকে ফরেস্ট বললে আমি আপনাদের সুরে গলা মেলাবো না, আপনারা আমাদের জলকে বেসরকারি হাতে তুলে দিলে আমরা হাত মুঠো করব … আই উইল নট ড্যান্স টু ইওর বিট’।

অনুরণন, এখানেই এক আশ্চর্য অনুরণন হয় রাষ্ট্রীয় হত্যার ঠিক আগেই কেন সারো-উইওয়া শেষ উচ্চারণ – ‘লর্ড, টেক মাই সোল, বাট দ্য স্ট্রাগল কন্টিনিউজ …’

টিআরসিসি-র সংস্থার হয়ে কমিউনিটি সদস্যদের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ (ছবিসূত্র – মোঙ্গাবে)

মার্থা আগবানি ও লোকিয়াকা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ (ছবিসূত্র – নিউ ইয়র্ক টাইমস)

 

পরিবেশকর্মী, লেখক নিম্মো বেসি’র কবিতায় বারবার উঠে এসেছে দেশের পরিবেশ-সমস্যা (ছবিসূত্র – ফ্লিকার)

ঋণস্বীকার

১. 1995 Goldman Prize winner Ken Saro-Wiwa. goldmanprize.org.

২. A journey through the oil spills of Ogoniland. May 17, 2019. Friends of the Earth International.

৩. Aigbogun, Frank. It tooks five times to hang Saro-Wiwa. November 13, 1995. Independent.

৪. Ajala, Samuel. Shell accused of trying to wash hands of Nigerian oil spill mess. February 13, 2024. Climate Home News.

৫. Andressen, Maggie. Nigerians could see justice over Shell oil spills after six decades. September 29, 2021. The Guardian.

৬. Bagnetto, Laura Angela. Noo Saro-Wiwa: on a journey. April 12, 2024. The Africa Report.

৭. Bousso, Ron & Sithole-Matarose, Emilia. Timeline – Shell in Nigeria. January 16, 2024. Reuters.

৮. Brown, Tom & Last, Christina. Gas flares could help resolve Europe’s energy-crisis – instead it’s fuelling a health emergency. June 7, 2023. The Telegraph.

৯. Chea, Terence. Activists blast Chevron on human rights, environment. May 28. Amazon Watch.

১০. Cleaning up Nigerian oil pollution could take 30 years, cost billions – UN. August 4, 2011. United Nations.

১১. Craig, Jess & Twist, Olivia. The village that stood up to big oil – and won. June 1, 2022. The Guardian.

১২. Doron, Roy & Falola, Toyin. Ken Saro-Wiwa (Ohio short histories of Africa). May 19, 2016. Ohio University Press.

১৩. Doron, Roy, Falola, Toyin & Seay, Laura. The complex life and death of Ken Saro-Wiwa. July 29, 2016. The Washington Post.

১৪. Ekpali, Saint. The Niger Delta community devastated by yet another Shell oil spill. December 12, 2023. Open Democracy.

১৫. Ekpali, Saint. Timeline: half a century of oil spills in Nigeria’s Ogoniland. December 21, 2022. Al Jazeera.

১৬. Ette, Mercy & Agbani, Martha. Nigeria: ‘Water was the source of life; it is now the cause of death’ – the ongoing oil pollution crisis among Ogoni people in the Niger Delta. June 20, 2023. Minority Rights Group.

১৭. Franon, Fratz. Wretched of the earth. December 6, 2001. Penguin.

১৮. Investigate Shell for complicity in murder, rape and torture. November 28, 2017. Amnesty.

১৯. Mojeed, Abdulkareem. Stop playing politics with climate change: Q&A with Nigeria’s Nnimmo Bassey. October 17, 2023. Mongabay.

২০. Negligence in the Niger Delta: decoding Shell and Eni’s poor record on oil spills. 2018. Amnesty International.

২১. Nigeria: Shell complicit in the arbitrary executions of Ogoni Nine as writ served in Dutch court. June 29, 2017. Amnesty International.

২২. Nigeria: Shell still failing to clean up pollution in Niger Delta. June 17, 2020. Amnesty International.

২৩. Nixon, Rob. Slow violence and the environmentalism of the poor. March 11, 2013. Harvard University Press.

২৪. Okonta, Ike & Douglas, Oronto. Where vultures feast: Shell, human rights and oil. October 17, 2003. Verso Books.

২৫. Pilkington, Ed. 14 years after Ken Saro-Wiwa’s death, family points finger at Shell in court. May 27, 2009. The Guardian.

২৬. Roelofs, Portia. The Nigerian activist whose death shames Shell. November 11, 2019. Jacobin.

২৭. Saro-Wiwa, Ken. A month and a day: a detention diary. May 25, 2004. Penguin Books.

২৮. Shell pipeline spill fouls farms, river in Nigeria’s Niger Delta. June 26, 2023. Al Jazeera.

২৯. Soyinka, Wole. You must set forth at dawn: a memoir. March 13, 2007. Random House.

৩০. Summers, Hannah. Amnesty seeks criminal inquiry into Shell over alleged complicity in murder and torture in Nigeria. November 28, 2017. The Guardian.

৩১. Sunday, Orji. Niger Delta mangroves in ‘grave danger’ from oil spills, poverty, invasive species. August 22, 2022. Mongabay.

৩২. The story of the Ogoni. November 10, 2020. Code Rood.

৩৩. Vidal, John. Oil-polluted Ogoniland could become environmental model. August 9, 2011. The Guardian.

৩৪. Vidal, John. Shell oil spills in the Niger delta: ‘Nowhere and no one has escaped’. August 3, 2011. The Guardian.

৩৫. Walton, Adele. Remembering Nigeria’s Ogoni 9, murdered for their organizing against Shell. November 13, 2021. Jacobin.

৩৬. Was Shell complicit in murder? November 28, 2017. Amnesty International.

৩৭. Wiwa, Ken. Finally it seems as if Ken Saro-Wiwa, my father, may not have died in vain. November 10, 2015. The Guardian.

৩৮. Wiwa, Ken. In the shadow of a saint: a son’s journey to understand his father’s legacy. November 2, 2000. Doubleday.

৩৯. Zenda, Cyril, Koigi, Bob, Talabi, Kolawale, Gallarate, Sofia, Reich, Josef, Odenthal, Frank. Eco-crimes: Shell and the Niger Delta. Fair Planet.

 

(শেষ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *