ইতিহাসের পথে পথে: একটি ক্রিকেট আলেখ্য। পঞ্চম পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়।

0

(গত পর্বের পর)

ষাটের দশকের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। একাধিক ব্যক্তিগত সফর বা বেসরকারি সফরের সূত্রপাত হয় শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা মারফত। ১৯৬৪-৬৫ সালে এম সি সি সরকারি সফরেই গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরের মরশুমে অর্থাৎ ১৯৬৫-৬৬ সালে এম সি সির স্কুল দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে। রোডেসিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়েকটি স্কুল টেস্ট ও খেলে দলটি।

কিন্তু উইলফ্রেড আইজ্যাক একাদশ ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায়। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট খেলতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঠিক সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার দলটি খেলতে যায় ইংল্যান্ডে। ২১টি ম্যাচ খেলেন তাঁরা। যদিও সেই সফরে কোনও প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ ছিল না। বেশ কিছু টেস্ট ক্রিকেটার এই দলে ছিলেন। সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলছেন বা পরে টেস্ট খেলেছেন এমন অন্তত: চার জন ক্রিকেটার দলে ছিলেন। প্রায় সকলেই ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। এঁদের মধ্যে রয় ম্যাকলিন ও ব্যারি রিচার্ডস ছিলেন।

একই বছর আরও দুটো বেসরকারি দল ইংল্যান্ডে খেলতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। একটি হলো VRA – যাঁরা ফেলসেট স্কুলের বিরুদ্ধে খেলেন। কারা দলে ছিলেন বা ফলাফল কি হয়েছিল কিছুই আপাতত জানা যায় নি। অপর দলটি ছিল স্টিল গোইং স্ট্রং ক্রিকেট ক্লাব। এঁদের বিষয়েও তেমন কিছুই জানা যায় না।

১৯৬৬-৬৭ মরশুমে অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে যায়। এরপরেই ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকা স্কুল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দল ইংল্যান্ড সফর করে। বিশ্ববিদ্যালয় দলটির সদস্য ছিলেন জন ট্রাইকোস। এঁকে অনেকেই ভোলেননি। ইনি জন্মসূত্রে গ্রীক বংশোদ্ভূত। আবার এঁর জন্ম হলো মিশরে। রোডেসিয়া স্কুল ও নাটাল বিশ্ববিদ্যালয় দলের ক্রিকেটার ট্রাইকোস ১৯৬৯-৭০ এ দক্ষিণ অফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলেন। এরপরে ১৯৮৩-১৯৯২ জিম্বাবুয়ের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন।  ১৯৯২-৯৩ মরশুমে ভারতের বিরুদ্ধে জিম্বাবুয়ের টেস্ট অভিষেক ঘটলে, ২৩ বছর বাদে টেস্ট ক্রিকেটে পুনঃ প্রবর্তন ঘটে জন ট্রাইকোসের।

যাই হোক, ১৯৬৭-৬৮ সালের অস্ট্রেলিয়ার স্কুল বয়েজ দল আসে খেলতে। এই দলটিও রোডেসিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়েকটি স্কুল টেস্ট ও খেলে। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্টিল গ্রোয়িং স্ট্রং দল খেলতে যায়। গ্রাসহপার নামে একটি দল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে খেলতে যায়। এই নামে একটি ইংল্যান্ডের দলও ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধেও খেলা হয়। ১৯৬৮-৬৯ সালে নেদারল্যান্ডের মহিলা দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে। তিনটি মহিলাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হয়। উল্লেখ করা প্রায় সব ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার দলগুলোতে ডাচ বংশোদ্ভূত মহিলা ক্রিকেটাররা ছিলেন।

১৯৬৯ সালে আবার উইলফ্রেড আইজ্যাক একাদশ খেলতে যায় ইংল্যান্ডে। সেবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলো। বিষয়টি একেবারেই কাকতালীয় বলে মনে হয়না। যাই হোক, ১৯৬৯-৭০ এ দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে যায়। যা শেষ টেস্ট ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে আগামী ২৩ বছরের জন্য।

১৯৭০ এ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ও রাগবি দলের ইংল্যান্ড সফর খারিজ হয় ব্যাপক আন্দোলনের জন্য (স্টপ দ্য সেভেন্টি ট্যুর)। কিন্তু ১৯৭১ সালে ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাকাবি একাদশ সফর করে।

বোঝাই যাচ্ছে, এই বিদেশে বেসরকারি সফর ও দেশে সরকারি জুনিয়র ও সিনিয়র দলের সফর গুলি আগামি দিনে বহিষ্কার হলেও কি করে দেশের ক্রিকেট কাঠামো বজায় রাখা যায়, তা লাগাতার পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ষাটের দশক থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটে একটা নতুন ধারা দেখা যাচ্ছিল। আর তা হলো টেস্ট খেলেনা এমন দেশে ক্রিকেটের প্রসার। ১৯৫০-৫১ অবধি ১৫টি দেশে ক্রিকেট খেলা হতো। যার মধ্যে ৬টি টেস্ট খেলিয়ে দেশ ছিলো। এরমধ্যে ১০টি ছিল ইউরোপের দেশ।

১৯৫২-৫৫ এর মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে হয় ২০টি। এরমধ্যে ৭টি টেস্ট খেলিয়ে দেশ ছিল। ১৯৫৫-৫৬ মরশুম থেকে ১৯৬১-৬২ অবধি এই সংখ্যাই বেড়ে গিয়ে হয় ২৪। টেস্ট খেলিয়ে দেশের সংখ্যা বাড়েনি।

১৯৬৩-৬৪ থেকে সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ২৬টি দেশ হয়। ১৯৬৯-৭০ নাগাদ এই সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়ে ৩৬ এ দাঁড়ায়। তখন আবার টেস্ট খেলে এমন দেশের সংখ্যা ৬ নেমে যায়। যদিও ষাটের দশকে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশের সংখ্যা বাড়ে। এখানে বলে রাখা ভালো, দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন ব্যাপক হারে বেসরকারি দল পাঠিয়েছে ইংল্যান্ডে তেমনই ভারত ও পাকিস্তান থেকে পূর্ব আফ্রিকায় দল গেছে। কিন্তু সেগুলো সরকারি দল, সরকারি সফর, যদিও টেস্ট না খেলা দেশে সফর হয়েছিল বলে একেবারেই গুরুত্ব পায় না।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিশ্ব জোড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা বা সংকট যখনই বেড়েছে তখনই টেস্ট না খেলা দেশে ক্রিকেটের প্রসার বেড়েছে। আসলে ধ্বসে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তখনই ক্রিকেট কে ব্যবহার করা শুরু হয়।

সত্তরের দশক বিষয়টিকে বদলে দেয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা সমস্ত রকম খেলা থেকে নির্বাসিত হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে যে নিউজিল্যান্ডের মহিলা দল ১৯৭১-৭২ এ টেস্ট খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৯৯১-৯২ সালে ইডেনে খেলতে নামার আগে এটিই ছিল ক্রিকেটে শেষ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সফর। এছাড়াও, রোডেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী একটি দেশ যেটিও শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অধীনে ছিল, ইংল্যান্ডের তারকা ব্রায়ান ক্লোজের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক ওয়ান্ডারার্স দলকে আমন্ত্রণ করেছিল এবং এতে নয়জন টেস্ট খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন বেসিল ডি’অলিভেরা। তারা মাত্র দুটি খেলা খেলেছে: ২৩-২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, যেটি  ড্র হয় এবং ২৯ সেপ্টেম্বর-২ অক্টোবর ১৯৭২ তারিখে একটি ৪ দিনের ম্যাচ, যেটি রোডেশিয়া সহজেই ৪১১ রানে জিতেছিল। যদিও এঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাইক প্রক্টর রোডেশিয়ার হয়ে খেলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাসনের পরে প্রথম “আন্তর্জাতিক”  ম্যাচ খেলা হয় ডেরিক রবিনসের উদ্যোগে। তিনি একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী এবং কভেন্ট্রি সিটি ফুটবল ক্লাবের চেয়ারম্যান, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ব্যবস্থা করে যে সফর ১লা জানুয়ারি থেকে ৬ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালের মধ্যে হয়েছিল। তার একাদশে ইংল্যান্ডের অনেক টেস্ট খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত ছিল। রবিন্সের লক্ষ্য ছিল তার একাদশ এত ভালো খেলে যাতে   আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার খেলোয়াড়রাও সচেতন ছিল যে ইংল্যান্ডের টেস্ট নির্বাচকরা লক্ষ্য করবেন তারা কেমন পারফর্ম করেছে।

বর্ণবিদ্বেষী দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার তার সিদ্ধান্তের যখন সমালোচনা করা হয়,  রবিনস এই বলে উড়িয়ে দেন যে “আমি রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না, তবে আমি  বলব: আমরা একটি ব্যক্তিগত সফরে আসা ইংলিশ ক্রিকেটারদের একটি দল, এখানে আমাদের স্বাগতিকরা আমাদের বিপক্ষে খেলতে চায়”। কিন্তু, ইংল্যান্ডে বিরোধীদের একত্রিত করে  একটি আন্দোলনের প্রচেষ্টা শীঘ্রই ব্যর্থ হয়।

সফরে  একটি প্রতিনিধিত্বমূলক দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিরুদ্ধে একটি ৪ দিনের খেলা ছিল অর্থাৎ বেসরকারি টেস্ট। সম্ভাব্য দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের থেকে একটি টেস্ট স্কোয়াড বেছে নেওয়া হয়।  এই খেলাটি  সফরকারী দল অত্যন্ত  গুরুত্ব সহকারে খেলে, প্রদর্শনী ক্রিকেট হিসাবে নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সমস্ত নেতৃস্থানীয় ক্রিকেটার খেলেন, যার মধ্যে অনেকেই  দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ক্রিকেট  থেকে বহিষ্কারের আগে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন।

এই খেলায় ডিএইচ রবিন্স একাদশ টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয়: এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কারণ ব্যারি রিচার্ডসের ১০০ ও  আন্দ্রে ব্রুইন্সের ৯৭ রানের সৌজন্যে তারা ৩৮৭ রান করে। এরপর একটি শক্তিশালী  বোলিং দ্বারা  ডিএইচ রবিনস একাদশকে ১৬০-এর কমে দু’বার আউট করে, তাঁদের কোনো খেলোয়াড় ৩২-এর বেশি রান করতে পারেনি এবং ম্যাচটি ৩ দিনের মধ্যে শেষ হয়। চতুর্থ দিনে ৫০ ওভারের একটি লিস্ট এ ম্যাচ  খেলা হয়। সেই টানটান ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকানরা এক উইকেটে হেরে যায়।

ডিএইচ রবিনস একাদশ দলের স্কোয়াডে ছিলেন : টনি ব্রাউন; ডেভিড ব্রাউন; ফ্রাঙ্ক হেইস; জ্যাকি হ্যাম্পশায়ার; রবিন হবস; ডেভিড হিউজ; রবিন জ্যাকম্যান; রজার নাইট; জন লিভার; পিটার লিউইংটন; আর্নল্ড লং; জন মারে; ক্লাইভ রেডলি; মাইক স্মিথ; ডেভিড টার্নার; পিটার উইলি; বব উইলিস; দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক একাদশ (কার্যকরভাবে একটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি দল) গঠিত: আলী বাচার (অধিনায়ক); এডি বারলো; আন্দ্রে ব্রুইন্স; জ্যাকি ডু প্রিজ; লি আরভিন; ডোনাল্ড ম্যাকে-কগিল; কেন ম্যাকইওয়ান; মাইক প্রক্টর; ব্যারি রিচার্ডস; পিটার সোয়ার্ট। উপরন্তু, ভিনসেন্ট ভ্যান ডার বিজল একদিনের ম্যাচে খেলেছে, কিন্তু ৪ দিনের ম্যাচ নয়; রুপার্ট হ্যানলি ৪ দিনের ম্যাচ খেলেছেন, তবে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৭ ও রবিন্সের দলের হয়ে ৯ জন টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৭৫/৭৬ মরসুমে ইন্টারন্যশনাল ওয়ান্ডারার্স একটি সফর করে।  তারা দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রনী একাদশের বিপক্ষে ৩ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ (বেসরকারি টেস্ট) এবং ১ ওয়ানডে ম্যাচে খেলে। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি দুর্বল বোর্ডের সভাপতির একাদশের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির খেলাও খেলেছিল। নির্বাসনের পর থেকে এটি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সবচেয়ে শক্তিশালী দল এবং ৪ টি দেশের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত। এই দলটির ম্যানেজার ছিলেন রিচি বেনো এবং চারটি প্রধান প্রতিনিধিত্ব মূলক খেলায় অস্ট্রেলিয়ান গ্রেগ চ্যাপেল  অধিনায়ক ছিলেন। ইংলিশ মাইক ডেননেস এবং বব টেলর এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জন শেফার্ডও চারটি খেলা খেলেছিলেন। অন্যান্য খেলোয়াড়,  ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল (অস্ট্রেলিয়া),  ফিল এডমন্ডস (জাম্বিয়ান বংশোদ্ভূত ইংলিশ), গ্যারি গিলমোর (অস্ট্রেলিয়া),  অ্যালান হার্স্ট (অস্ট্রেলিয়া), মার্টিন কেন্ট (অস্ট্রেলিয়া),  ডেনিস লিলি (অস্ট্রেলিয়া), অ্যাশলে ম্যাললেট (অস্ট্রেলিয়া),  জন মরিসন (নিউজিল্যান্ড), গ্লেন টার্নার (নিউজিল্যান্ড) , ডেরেক আন্ডারউড (ইংল্যান্ড) ও ম্যাক্স ওয়াকার (অস্ট্রেলিয়া)।

ক্লাইভ রাইস এবং ভিন্টেনেন্ট ভ্যান ডের বিজলের মতো খেলোয়াড় চারটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় খেলেছেন। এডি বার্লো আবার দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রনী একাদশের অধিনায়ক ছিলেন। আমন্ত্রণনী একাদশের জন্য বেশ কয়েকটি কালার্ড অর্থাৎ অ-শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিল। তারা হ’ল আবদুল্লাটিফ বার্নেস, উইনস্টন ক্যারেলস, ইসমাইল ইব্রাহিম, দেবদাস গোবিন্দজি, ডি জ্যাকবস ও ফারুক টিমল।

দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নির্বাচিত অন্যান্য খেলোয়াড়রা হলেন হিল্টন অ্যাকারম্যান ওডি; হাওয়ার্ড বার্গিন্স, হেনরি ফাদারিংহাম, জ্যাক হেরন, ডেনিস হবসন, লি ইরভিন ওড, পিটার কার্স্টেন, ডগলাস নীলসন ওডি, গ্যাভিন পুফল গ্রেম পোলক, অ্যান্টনি স্মিথ, ব্যারি রিচার্ডস ওড, লরি উইলমোট।

১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে মাঝামাঝি সময়ে সরকারের বিরোধিতা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন ক্রিকেট সংস্থা শ্বেতাঙ্গ, কালার্ড এবং কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্ব করে বহুজাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

জুন ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। গৃহযুদ্ধের প্রধান ঘটনা ছিল সোয়েটো বিদ্রোহ। সোয়েটোকে কেন্দ্র করে, জোহানেসবার্গের সাথে সংযুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ জনপদে এই অভ্যুত্থান হয়। ঐ বছর ১৬ জুন, হাজার হাজার স্কুলছাত্র শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। শতাধিক নিহত হয় এই অভ্যুত্থানে। মার্কিন সংবাদপত্র নিউজডে অনুমান করে যে সোয়েটোতে ৩৩২ এবং সারা দেশে ৪৩৫  জন মারা গেছে। বহু ব্যক্তি নির্বাসনে চলে যান।

১৭জুলাই ১৯৭৬ -এ মন্ট্রিল অলিম্পিক বয়কট করে ২৫টি আফ্রিকান দেশ। পরে আরও 4 টি দেশ যোগ দেয়।  এরা মূলত নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ক্রীড়া সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে অলিম্পিক বয়কট করেছিল। নিউজিল্যান্ড রাগবি ইউনিয়ন দলটি সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছিল।

এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে, নতুন পরিবর্তনগুলি প্রস্তাব করা হয়, যার মধ্যে যাবতীয় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশ সফর স্থগিত করা হোক, এমন দাবীও ছিল। ফলে ১৯৮২  সালের  দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্রোহী সফরের প্রথম পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক সফর হয়নি।

কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ব ওলোট পালোট হয়ে। বিষয় সেই অতি-বেসরকারিকরণ। এবার অস্ট্রেলিয়া।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *