ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। অষ্টাদশ পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

0

(গত পর্বের পর)

২০১২ সালের অষ্টম ডিভিশনের খেলা হয় সামোয়ায়। ভানুয়াতু ঘানাকে হারিয়ে জয়ী হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বতসোয়ানায় সপ্তম ডিভিশনের খেলা। সেখানে নাইজিরিয়া ভানুয়াতু কে হারিয়ে দেয়। ওই বছরেই জার্সিতে বসে ষষ্ঠ ডিভিশনের খেলার আসর। ১০ পয়েন্ট পেয়ে জার্সি প্রথম ও ৮ পয়েন্ট পেয়ে নাইজিরিয়া দ্বিতীয় হয়। পরের বছর জার্সি মালয়েশিয়া কে হারিয়ে পঞ্চম ডিভিশন জয়ী হয়। খেলা মালয়েশিয়ায় হয়েছিলো। ওই বছর চতুর্থ ডিভিশনের খেলায় সিঙ্গাপুরে সিঙ্গাপুর কে হারিয়ে মলোয়েশিয়া জয়ী হয়। ওই বছরেই তৃতীয় ডিভিশন হয় মলোয়েশিয়ায়। নেপাল উগান্ডা কে হারিয়ে জয়ী হয়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলায় নামিবিয়ায় নেদারল্যান্ড নামিবিয়া কে হারিয়ে জয়ী হয়।

ওই বছর অন্য সাইকেলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রথমে ষষ্ঠ ডিভিশন হয় ইংল্যান্ডে। সুরিনাম Guernsey কে হারিয়ে দেয়। জার্সিতে ২০১৬ সালে পঞ্চম ডিভিশনের খেলা শুরু হলে জার্সি হারিয়ে দেয় ওমান কে। ওই বছরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ ডিভিশনের খেলায় জয়ী হয় আয়োজক দেশ নিজেই। এবারও রানার্স ওমান। কিন্তু তৃতীয় ডিভিশনের খেলা হয় উগান্ডায়। এবার ওমান চ্যাম্পিয়ন হয় কানাডা কে হারিয়ে।

ইতিমধ্যে ২০১৫-১৭ ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় খেলতে আসেনি আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। তারা তখন মূল ওডিআই ranking এ ঢুকে পড়েছে।  তাদের বদলে কেনিয়া আর নেপাল সুযোগ পায়। প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে নেদারল্যান্ড ২০২০-২৩ ওয়ার্ল্ড সুপার লিগে। ২০২২ পর্যন্ত পূর্ণ সদস্য দের সঙ্গে ২৪টি ওডিআই ম্যাচ তারা পেয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালের দশ দলীয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জন্য স্থির হয় প্রথম ৮টি দেশ সরাসরি খেলবে। শেষ চারটি দেশ কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট খেলবে। তাদের সঙ্গে থাকবে নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, হংকং, পাপুয়া নিউ গিনি। আরও দুটি দেশ এই প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাবে সেকেন্ড ডিভিশন থেকে। সেকেন্ড ডিভিশন হবে কেনিয়া, নেপাল, আরব আমির শাহী, নামিবিয়া এবং তৃতীয় ডিভিশনের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স নিয়ে। তাই কানাডা ও ওমান সুযোগ পায়।

এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় আরব আমির শাহী, রানার্স হয় নেপাল। কানাডা আর নামিবিয়া দ্বিতীয় ডিভিশনে থেকে যায়। ওমান পঞ্চম স্থান পেয়ে তৃতীয় ডিভিশনে নেমে যায়। একই অবস্থা হয় কেনিয়ার। তারা এবার ষষ্ঠ হয়।

২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং করার প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা প্রথম ৮টি দেশের তালিকায় এসে যাওয়ায় অন্যত্র করার সিদ্ধান্ত হয়। এর স্বাভাবিক ফল স্বরূপ তিনটি দেশ বিড দেয়। তাদের থেকে জিম্বাবুয়ে সুযোগ পায়।  প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় আফগানিস্তান। রানার্স হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুবারের বিশ্ব জয়ীদের পদস্খলন খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। স্কটল্যান্ড তৃতীয় হয়ে ২০২৩ অবধি ওডিআই স্ট্যাটাস পেলেও দুই লক্ষ পাউন্ড স্পন্সরশিপ হাতছাড়া করে। আরব আমির শাহী আর নেপাল ২০২৩ অবধি ওডিআই স্ট্যাটাস পায়। আয়ারল্যান্ড ততদিনে পূর্ণ সদস্য হয়েই গিয়েছিল। পাপুয়া নিউ গিনি আর হংকং দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে গিয়ে ওডিআই স্ট্যাটাস হারায় যদিও হংকং এশিয়া কাপে ওডিআই খেলেছিল।

 

২০১৭-১৯ চলেছিল আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ। এই প্রতিযোগিতায় পঞ্চম ডিভিশনে জার্সি জয়ী হয় ভানুয়াতু কে হারিয়ে। টুর্নামেন্ট হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় চতুর্থ ডিভিশনের খেলায় উগান্ডা জয়ী হয় আর ডেনমার্ক রানার্স হয়। তৃতীয় ডিভিশনের খেলা হয় ওমানে। ওমান জয়ী হয় আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রানার্স হয়। দ্বিতীয় ডিভিশনে নামিবিয়া নিজের দেশে জয়ী হয় ওমান কে হারিয়ে।

এরপরেই আইসিসি তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ডিভিশন কে মার্জ করে তৈরী করে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালঞ্জ লীগ। আর দ্বিতীয় ও প্রথম ডিভিশন অর্থাৎ প্রথম ৭টি অ্যাসোসিয়েটস দের নিয়ে তৈরী হয় আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালেঞ্জ লীগ ২।

এখান থেকে প্রথম তিনটি দল অর্থাৎ স্কটল্যান্ড, ওমান ও নেপাল ২০২৩ এর বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে সরাসরি সুযোগ পায়। নামিবিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাপুয়া নিউ গিনি ও আরব আমির শাহী চলে যায় বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার প্লে অফে।

এদিকে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালঞ্জ লীগে গ্রুপ এ থেকে কানাডা ও গ্রুপ বি থেকে জার্সি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার প্লে অফে সুযোগ পায়। আর দুই গ্রুপের শেষ মালয়েশিয়া, ভানুয়াতু, ইতালি ও বারমুডা ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালঞ্জ লীগ প্লে অফে চলে যায়। কেনিয়া চতুর্থ হয়ে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালঞ্জ লীগে টিকে যায়।

বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার প্লে অফ মার্চ এপ্রিলে খেলা হয়েছে। তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চ্যাম্পিয়ন ও আরব আমির শাহী রানার্স হয়েছে। এরা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে খেলতে যায় এবং নামিবিয়া ও কানাডার সঙ্গে আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালেঞ্জ লীগ ২ এ রয়ে যায়। জার্সি ও পাপুয়া নিউ গিনি নেমে যায় ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যালঞ্জ লীগে। জার্সি এই ফাঁকে  ওডিআই খেলে ফেলে।

এদিকে ২০২৩ এর বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হয়, নেদারল্যান্ড রানার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুযোগ ই পেলো না। জিম্বাবুয়ে আবার বাদ পড়লো বিশ্বকাপ থেকে। বাকিরা ওডিআই স্ট্যাটাস নিয়ে রয়ে যায়।

এই পুরো বিষয়টি দেখালো কেনিয়ার পতন, আফগানিস্তান, নেপাল, ওমান, আরব আমির শাহী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাপুয়া নিউ গিনি এবং নামিবিয়ার উত্থান। কেনিয়ার পতন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন। এই দেশগুলি নিয়ে আলোচনা করার আগে একবার দেখবো ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ টুর্নামেন্ট কে।

আইসিসি দাবী করেছিলো অ্যাসোসিয়েটস সদস্যদের টেস্ট খেলার ‘স্কিল’ তৈরী করার লক্ষ্যেই নাকি আন্ত: মহাদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। চার দিনের প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট ছিল এই টুর্নামেন্ট।

প্রথম শ্রেণির এই টুর্নামেন্টের সূত্রপাত হয় ২০০৪ সালে। ২৫ শে মার্চ ২০০৪ থেকে ২৩ শে নভেম্বর ২০০৪, ১২ দলীয় এই প্রতিযোগিতার মূল পর্ব হয়েছিল শারজাহ ও আবুধাবি শহরে। জিতলে ১৪ পয়েন্ট, টাই হলে ৭, ড্র বা হারে শূন্য পয়েন্ট ঘোষণা হয়। তবে প্রথম ৯০ ওভারে প্রতি ২৫ রানে ০.৫ পয়েন্টের কথা ঘোষণা হয়, সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট পাওয়া যেত। আর প্রতি ইনিংসে প্রতি উইকেটে ০.৫ পয়েন্ট দেওয়া হতো।

আফ্রিকা গ্রুপে কেনিয়া ৪৫ পয়েন্ট পেয়ে নামিবিয়া (৪১) ও উগান্ডা (৩২) কে হারিয়ে জয়ী হয়। তবে উগান্ডা যে নামিবিয়া কে হারাবে এটা কেউ ভাবেনি।

আমেরিকা গ্রুপে কানাডা (৫০) জয়ী হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৪৭) বারমুডাকে (২৯) হারিয়ে দেবে এটা সত্যিই ভাবা যায়নি। এশিয়া গ্রুপে আরব আমির শাহী (৫০.৫) জয়ী হয় নেপাল (৪২) ও মালয়েশিয়া (২৩) কে পিছনে ফেলে। ইউরোপ গ্রুপে স্কটল্যান্ড (৪৮.৫) আয়ারল্যান্ড (৪৩) ও নেদারল্যান্ড (২৭) কে পিছনে ফেলে দেয়।

প্রথম সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ড (৩০০/৫ ও ৪০১/৭) কেনিয়ার (৯৫ ও ১৬৩/৪) সঙ্গে ড্র করেও ফাইনালে যায় প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কানাডা (৩৩৭/৬ ও ২৫৩/৮) প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল আরব আমিরশাহী কে (২৫৪/৮ ও ১৯৭/৯); ড্র করলেও কানাডা ফাইনালে।

ফাইনালে কানাডাকে (১১০ ও ৯৩) সহজেই স্কটল্যান্ড (২৮৭/৮) উড়িয়ে দেয়। ইংল্যান্ডের প্রাক্তণ টেস্ট ক্রিকেটার গেভিন হ্যামিল্টন স্কটল্যান্ডের হয়ে যিনি ওডিআই ও টি টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি ফাইনালে সেঞ্চুরী (১১৫) করেন।

পরের বছর (২০০৫) এই প্রতিযোগিতা হয় ১২ দলের এবং তিনদিনের ম্যাচের। নিয়মের সামান্য পরিবর্তন হয়। যেমন প্রথম ইনিংস হবে ৯০ ওভারের। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং পয়েন্ট অসীম (যতটা হয়), কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ পয়েন্ট সর্বোচ্চ। বাকি সব আগের মতো।

আফ্রিকা গ্রুপে যথারীতি কেনিয়া জয়ী (৪৯), নামিবিয়া এবারে স্বাভাবিক ভাবে দ্বিতীয় (৪৬.৫) আর উগান্ডা তৃতীয় (৩২)। এশিয়া গ্রুপে আবার আরব আমির শাহী (৪১) জয়ী কিন্তু নেপাল (৪০.৫) এর থেকে হাফ পয়েন্ট বেশি পেয়ে। হংকং (১৮) তৃতীয় হয়। নেপাল আরব কে হারালেও হংকং এর বিরুদ্ধে বৃষ্টির জন্য সমস্যায় পড়ে সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। ইউরোপ গ্রুপে এইবার আয়ারল্যান্ড (৪১) ক্লিন সুইপ মারে। স্কটল্যান্ড (২১) ও নেদারল্যান্ড (১১.৫) দাঁড়াতেই পারেনি। আমেরিকা গ্রুপে এবার বারমুডা (৬২) জয়ী হয়। কানাডা (৫১) ও Cayman আইল্যান্ড (২৩) পারেনি।

নামিবিয়ায় নক আউট পর্যায়ের খেলা হয়। প্রথম সেমিফাইনালে কেনিয়া (৪০৩/৬ ও ২৮২/৪) প্রথম ইনিংসে বারমুডার (৩৪৬/৯) এগিয়ে ফাইনালে ওঠে। স্টিভ টিকোলো ডবল সেঞ্চুরি (২২০) করেন।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আয়ারল্যান্ড (৩৫০/৭ ও ৪৪৪/৪) আরব আমির শাহী (১৮৯ ও ২২৮/৭) কে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে দিয়ে ফাইনালে ওঠে। পরবর্তী কালে ইংল্যান্ডের টি টোয়েন্টি ও ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান প্রথম ইনিংসে ১৫১ বলে ১৫০ করেন। উনি সমস্ত জুনিয়র আইরিশ টিমের হয়ে খেলেন, বিশ্বকাপ খেলেন, আয়ারল্যান্ডের হয়ে টি টোয়েন্টি, ওডিআই, ওডিআই বিশ্বকাপ সব খেলে তারপর ইংল্যান্ডে যান।

ফাইনালে স্টিভ টিকোলোর অপরাজিত ১৭৭  কেনিয়াকে ৫ উইকেটে ৪০১ অবধি টেনে দেয়। জবাবে নীল ও’ ব্র্যায়েনের অপরাজিত ১০৬ আয়ারল্যান্ড কে ৩১৩/৪ অবধি নিয়ে যায়। কাইল ম্যাককালান ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আটকে দেয় কেনিয়া কে ১৫৬ রানে। জয়ের প্রয়োজনীয় ২৪৫ রান আয়ারল্যান্ড ৬৬.৫ ওভারে ৪ উইকেটে তুলে নেয়।

আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয় পরের বার ৮ দলীয় টুর্নামেন্ট হবে। যে ছয়টি দেশ ২০০৭ এর বিশ্বকাপ খেলেছিল তাঁরা সরাসরি সুযোগ পায়, সঙ্গে আরব আমির শাহী। অষ্টম দেশ হিসেবে প্লে অফ হয় গতবারের এশিয়া রানার্স নেপাল ও আফ্রিকা রানার্স নামিবিয়ার মধ্যে। নেপাল হারলে নামিবিয়া সুযোগ পায়।

চারদিনের ম্যাচ, জিতলে ১৪, টাই ৭, প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকলে ৬, দুই দলের প্রথম ইনিংস সমান হলে ৩, বৃষ্টির জন্য ৮ ঘণ্টার বেশী নষ্ট হলে ড্র ম্যাচে ৩ পয়েন্ট, সাধারণ ড্র-য় ০, ম্যাচ খেলা না হলে ১০ পয়েন্ট দুই দল পাবে। ঘণ্টায় ১৬ ওভার, দিনে ৯৬ ওভার খেলা হবে।

গ্রুপ এর খেলায় আয়ারল্যান্ড ৪৩ পয়েন্ট পায়, স্কটল্যান্ড ৩৫ পয়েন্ট, নামিবিয়া ২০ পয়েন্ট পায়। আরব আমির শাহী শূন্য পায়।

গ্রুপ বির খেলায় ৪০ পয়েন্ট পায় কানাডা। নেদারল্যান্ড ২৬, কেনিয়া ও বারমুডা ৯ পয়েন্ট পায়। গতবারের রানার আপ কেনিয়ার এই পতন টাই ছিল তাদের টার্নিং পয়েন্ট। এর আগেই চারটি ওডিআই বাংলাদেশের কাছে হেরে তাঁরা ৫ জন খেলোয়াড়কে বাদ দেয় যাদের মধ্যে কেনেডি ওটিয়েনোর মতো অভিজ্ঞ (২৯টি প্রথম শ্রেণি ও ৭১টি ওডিআই খেলা) খেলোয়াড় ও ছিল। এরপর কেরিয়ারে মাত্র চারটি প্রথম শ্রেণির ও ১১টি ওডিআই খেলেন তিনি। অথচ স্টিভ টিকোলো এবারও ২১২ অপরাজিত করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে।

ফাইনালে আয়ারল্যান্ড (৩৫২) সহজেই কানাডা (৯২ ও ১৫৪) কে হারায়।

চতুর্থ আন্ত: মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা খেলা হয়েছিল রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতিতে। আগের বারের ৮টি দলই খেলে। এবারে কেনিয়া দারুন ভাবে ফিরে আসে। তৃতীয় হয়। লীগে প্রথম হয় নামিবিয়া ১০৮ পয়েন্ট পেয়ে। দ্বিতীয় আয়ারল্যান্ড (১০৬ পয়েন্ট)। দুই দলের জয় লাভ করা ম্যাচের পার্থক্য ছিল একটি মাত্র জয়ের পার্থক্যে।

ফাইনালে নামিবিয়া (২৫০) প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে (১৯৫) আটকে দেয়। কিন্তু বি রাঙ্কিং (৩৯/৪) নামিবিয়া কে ১৪৫ রানে ফেলে দেয়। এরপর নিল ও’ ব্রায়েনের অপরাজিত ১১৯ আয়ারল্যান্ড কে মাত্র ৫৮ ওভারে ১ উইকেটে ২০১ রানে পৌঁছিয়ে দেয়।

পরের বার আইসিসি আবার নিয়ম পরিবর্তন করে। ২০০৯ এর আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারের ভিত্তিতে প্রথম ছয়টি দল ও সেই সময় কিছুদিনের জন্য টেস্ট না খেলা জিম্বাবুয়ে, জিম্বাবুয়ে একাদশ নামে খেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। অথচ গতবারের রানার্স নামিবিয়া ও বারমুডা, উগান্ডা, আরব আমিরশাহী ইন্টার-কন্টিনেন্টাল শিল্ডে খেলতে যায়। এদিকে ওয়ানডে টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা আফগানিস্তান সরাসরি কাপে খেলার সুযোগ পায়। আফগানিস্তান (৯৭) প্রথম, স্কটল্যান্ড (৮৯) দ্বিতীয়, জিম্বাবুয়ে একাদশ (৭২) তৃতীয় হয়। জিম্বাবুয়ের পতনও এখানেই শুরু। যার মূলে ছিল রবার্ট মুগাবে। যাই হোক কেনিয়া (৪৩) পঞ্চম হয়।

ফাইনালে আফগানিস্তান (১৭১ ও ১২৪/৩) স্কটল্যান্ডকে (২১২ ও ৮২) ৭ উইকেটে হারিয়ে দেয়।

শিল্ডে নামিবিয়া ৪৬ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম হয় লীগে। আরব আমির শাহী ৩৭ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়। ফাইনালে আরব আমীর শাহী ৭৯ করে প্রথমে আউট হয়, কোলা বার্গার ৩৮ রানে ৭ উইকেট নেয়। জবাবে নামিবিয়া ৩২০ করে। ফলে আরব দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৭ তুললেও ক্রেগ উইলিয়ামসের অপরাজিত ১১৭ চার উইকেট হারিয়ে নামিবিয়াকে ১৮৭/৪ এ পৌঁছিয়ে দেয়।

পরের বার (২০১১-১৩) আবার নিয়ম পরিবর্তিত। আবার একটাই ডিভিশন। ২০১০ এর আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ ডিভিশন ওয়ান এর ছয়টি দল ও দ্বিতীয় ডিভিশনের প্রথম দুটি দল নিয়ে টুর্নামেন্ট হলো। এবার আয়ারল্যান্ড লীগে প্রথম (১১৬), সমসংখ্যক ৫টি ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান (১০৪) দ্বিতীয়। স্কটল্যান্ড তৃতীয়। কেনিয়ার সমস্যা প্রকট। তাঁরা সপ্তম।

ফাইনালে জয়ী আয়ারল্যান্ড (১৮৭ ও ৩৪১)। আফগানিস্তান (১৮২ ও ২২৪) প্রথম ইনিংসে লড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসে দাঁড়াতে পারেনি।

পরের বারও রাউন্ড রবিন লীগ হয়। ২০১১-১৩ আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১৪ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার ও ২০১৫ সালের ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ দ্বিতীয় ডিভিশনের ভিত্তিতে কেনিয়া বাদ যায়। এবারে খেলে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড, আরব আমির শাহী, হংকং, পাপুয়া নিউ গিনি, নেদারল্যান্ড ও নামিবিয়া।

এবারে আফগানিস্তান লীগে প্রথম, আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয়, নেদারল্যান্ড তৃতীয়, হংকং চতুর্থ হয়। কোনও ফাইনাল হয়নি।

সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবারের জয়ী দল দশম স্থানের টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরূদ্ধে চারটি পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলবে। যদি তাতে এগিয়ে যায় অ্যাসোসিয়েট দেশটি, তাহলে তারাই হবে একাদশ টেস্ট খেলিয়ে দেশ।

কিন্তু পরে আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তানের উত্থান ও আয়ারল্যান্ডের নিয়মিত সাফল্য কোনোটাই হেলাফেলার নয়। তাই এই দুটি দেশ টেস্ট স্বীকৃতি পায়।

এর সঙ্গে এই টুর্নামেন্ট বন্ধ। লাগাতার পরীক্ষা- নিরীক্ষা ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতি করে একাধিক দেশের। নয়া উদারবাদী ক্রিকেট আস্তে আস্তে খোল নলচে পাল্টিয়ে দিচ্ছিল।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *