মেদিনীপুর লোকাল। পর্ব ১৪ । দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস । লিখছেন আদিত্য ঢালী

যখন স্কুলে পড়তাম সকাল সকাল ওঠার অভ্যেস তখন ছিল। রাত জাগা ছিল না। ফলে খুব সহজেই সকালে উঠে যেতাম। পরীক্ষার আগে আগে মা আবার ভোর চারটের সময় ডেকে দিত পড়ার জন্য। ঘুম চোখে উঠে মশারির মধ্যে বসেই পড়া শুরু করতাম। ঘুম এলেও পড়তে হত। কারণ আগে থেকে কিছুই পড়া থাকত না। ঐ সময় না পড়লে পরীক্ষায় পাশ করা দুস্কর হয়ে যেত। এমনি সাধারণ দিনগুলোতে অত ভোরে উঠতে হত না। সাড়ে ছয়টা সাতটা নাগাদ উঠলেই হয়ে যেত। রোজই প্রায় টিউশনি থাকত। আর না থাকলেও টিউশনির বাহানা করে বেড়িয়ে পড়তাম। তখন আমাদের ভাঙা সাইকেলে নতুন ডানা লাগানো হচ্ছে। উড়বার তাগিদে যখন তখন তো বেড়িয়ে যেতেই হবে। এরকমই এক সকালে আমরা যখন নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ দেখা রনির সাথে। রনি আমাদের সাথে শুধুমাত্র বাংলা পড়তে যায়। বাকি ওর বিষয় আলাদা আমাদের আলাদা। কিন্তু রনি সারা স্কুলে খুব ফেমাস। স্কুলে গেলেই রনিকে সবাই চেনে। তবে ওর এই ফেমাস হয়ে ওঠার একটা কারণ আছে। প্রথম থেকেই ও এত ফেমাস ছিল না। পড়াশুনোতেও যে খুব একটা ভালো তেমন নয়। ক্লাস এইটে ফেল করে আমাদের সাথে প্রথমবার এক ক্লাসে এসে বসেছিল। রনির বোধহয় ছোট থেকেই তবলা বা ঢোল কিছু একটা বাজানোর খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু কালের কালবিলম্বে সেসব হয়ে ওঠেনি। ক্লাসের ফাঁকে মাঝে মাঝেই রনি লাস্ট বেঞ্চে বসে বেঞ্চ বাজাত। কিছু একটা ফেমাস গানের তালে তালেই বাজাত। কিন্তু মুশকিল ছিল কেউই সে বাজনা শুনত না। রনির খুব আফসোস ছিল এটা নিয়ে। শুভঙ্কর বলে একটা বিশ্বপাকা ছেলেকে রনি একদিন দুঃখ করে বলেছিল যে ওর কোন দূর সম্পর্কের মামা নাকি খুব বরেণ্য তবলাবাদক। ছোটবেলায় নাকি ঐ মামার বাড়ি গিয়ে মাঝে মাঝেই রনি সকলের অগোচরে তালিম নিত। কিন্তু লেখাপড়ায় উন্নতি না হওয়ায় মামাবাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ও নাকি ভালোই বেঞ্চ বাজায় এবং সবার ওর বাজনা শোনা উচিত। শুভঙ্কর নাকি ওকে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে একদিন ওর বেঞ্চ বাজানো সবাই শুনবে। আর সেই দিন খুব শীঘ্রই আসবে। একটা ফাঁকা পিরিয়ডে রনি আপন মনে তালে তাল মিলিয়ে বেঞ্চ বাজাচ্ছিল। শুভঙ্কর ছিল তালে। সোজা হেড স্যারের কাছে গিয়ে বলে এসেছিল রনি বেঞ্চ বাজাচ্ছে। হেড স্যার পিছন দরজা দিয়ে ঢুকে দেখে যে একদম এক কোনায় বসে রনি বেঞ্চ বাজাচ্ছে আর মাথা মাথা নেড়ে নেড়ে তাল দিচ্ছে। আমাদের স্কুলে এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে ঠোঙা বানাতে হত। বেঞ্চ বাজানোটাও যে একটা মিউজিকের ফর্ম হতে পারে ওসব মাস্টারমশাইরা বুঝত না। পিছন থেকে হেড স্যার রনির ঝুলপি ধরে তুলে পিছনে সপাটে একটা বেতের বাড়ি মেরে বলেছিল “ডোম ডোম করে এটা বাজনা বাজানোর জায়গা বুঝি?” সেই থেকে রনির নাম হয়ে গেল ডোম। বাজনার কথা সবাই ভুলে গেল। রনি এখন সারা স্কুলে ডোম নামেই পরিচিত। নিরীহ শান্ত রনিকে যে পারে সে এসেই ডোম বলে ডেকে খচিয়ে যায়। কালবিলম্বে নামেরও অভিযোজন হয়। রনিকে এখন পিছন থেকে দেখলেই কেউ একজন ডেকে ওঠে “এই ডোম”। রনি পিছন ঘুরে তাকালেই পাশ থেকে আরেকজন বলে ওঠে “কৌন ডোম” (পড়ুন কন্ডোম)। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রনির উপর এই অত্যাচারে রনি একেবারেই তিতিবিরক্ত। রনির বাড়ি একেবারে নদীর ধারে। আমরা সাইকেল নিয়ে সেদিন যাওয়ার সময় রনিকে দেখেই ডোম বলে হাঁক দিলাম। রনি তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা নদীতে নেমে গেল। আমরা পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে গলা অবধি জলে দাঁড়িয়ে কীসব মন্ত্র মনে মনে উচ্চারণ করে বারবার নদীতে ডুব দিয়ে রনি উঠে এল। আমাদের মধ্যে থেকেই একজন ও উঠে আসার সাথে সাথে ওকে বলল “কীরে কিসের মন্ত্র পড়লি এত?” রনি ভ্রু কুঁচকে বলল “তোদের মত বিষধর সাপের থেকে বাঁচার মন্ত্র”। বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল। এই নিয়ে স্কুলে আলোচনা শুরু হতে সবাই রনির এই মন্ত্র উচ্চারণের রহস্য সমাধানে লেগে গেল। বেশ কিছুদিন পরে সেই শুভঙ্করই খবর নিয়ে এল যে রনি নাকি কোন সাধুবাবার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে রোজ সকালে সূর্য ওঠার আগে গলা জলে ডুবে সাধুবাবার দেওয়া মন্ত্র উচ্চারণ করে এর ফলে নাকি ওকে কেউ আর কোনোদিন ডোম বলে ডাকবে না। যদিও সাধুবাবার মন্ত্র কাজ করেনি। এই ঘটনার পর ওকে রাগানোর প্রবণতা ছেলেদের মধ্যে আরও বেড়ে গিয়েছিল।

ভোর হতেই উঠে পড়লাম। আমার আগেই সবাই উঠে পড়েছিল। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম স্কুলের জল খাওয়ার কলে সবাই বালতি বসিয়ে জল ভরছে আর স্নান করছে। রাতের অন্ধকারে যিনি এসেছিলেন তাকে ভালো করে তখন দেখা হয়নি। এবারে দেখলাম। রোগাটে গড়ন। উচ্চতা খুব বেশি নয়। ঘাড়টা সবসময় ডান দিকে একটু বেঁকে আছে। প্রিসাইডিং-এর দিকে চোখ পড়তেই উনি বুঝে গিয়েছিলেন যে আমি ওই ভদ্রলোককেই দেখেছিলাম। আমার উদ্দেশ্যে প্রসাইডিং বলল “উত্তরপাড়া কল্লোলিনী হাই স্কুলের ভুগোলের টিচার”। আমি মাথা নাড়লাম। মাথা নাড়ার সাথে সাথে ভদ্রলোককে ভালো করে দেখেই মনে হল আরে ভদ্রলোক তো আমার গামছা পরে আছে। কাল রাতে বেঞ্চির উপর রেখেছিলম। সাথে সাথে রুমে ঢুকে দেখি হ্যাঁ ঠিক তাই। গামছা নেই ওখানে। ভদ্রলোকের কাছে যেতেই বুঝলাম ভদ্রলোক এক মগ করে জল ঢালছে আর ঘুরে ঘুরে মন্ত্র পড়ছে। ওনার মন্ত্র পড়া শেষ হলে ওনাকে বললাম-

— এই গামছাটা কি আপনার?

— না না আমার না। ওই রুমে ছিল তো।

— আপনি নিয়ে এলেন না জিজ্ঞেস করে?

— আরে আমি তো গামছা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। এদিকে আজ পুজো দিতে হত তো। কিছু মনে করো না ভাই।

— এখন আর মনে করেও কি কিছু লাভ হবে?

— আরে না না। আর কোন চিন্তা নেই। পুজো দিয়ে দিয়েছি এবারে আজ আর কোনো গন্ডগোল হবে না। বাবাজির মন্ত্র খুব কাজে দেয়।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। ওনার বাবাজির মন্ত্র শোনার ইচ্ছে নেই। গামছাটা নিয়ে এসে ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে দাঁত মেজে স্নান করে একদম রেডি হয়ে গেলাম। পার্টির এজেন্টরা চলে এসেছে। তাদের সামনে সবকিছু খোলা হল এবং সব কিছু দেখিয়ে দেওয়া হল। এবারে মিনিট পনেরোর বিরতি। বাইরে গিয়ে চায়ের দোকান থেকে চা বিস্কুট খেয়ে বসে পড়লাম। আমার কাজ ভোটার কার্ড দেখে লিস্ট মিলিয়ে নাম ধরে ডাকা ও তাদের সই নেওয়া। আমি নাম ধরে ডাকলে পার্টির এজেন্টরা নিজেদের লিস্ট মিলিয়ে নেবে। ভোট শুরু হল। শুরুর দিকে ধীরে ধীরে ভালোই চলতে লাগল। বেলা যত বাড়তে লাগল বেলার সাথে তাল মিলিয়ে গরম তত বাড়তে লাগল, আর গরম যত বাড়তে লাগল ভিড় যেন তত বাড়তে লাগল। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘটল প্রথম অঘটন। তবে একে অঘটন বলা যায় কিনা আমার জানা নেই।

এক বয়স্ক লোক এসে তার ভোটার কার্ড দিতে লিস্টে যেই তার নাম মেলাতে যাব এবং ডাকতে যাব তখনই দেখলাম নামের উপরে টিক দেওয়া তার মানে আগে এর ভোট আগে হয়ে গেছে। কেউ এসে ভোট দিয়ে চলে গেছে। এই সময় যদি এর নাম ধরে ডাকি তবে এজেন্টরা বুঝে যাবে এবং বুঝে গেলে গোলমাল হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে। এদিকে কাকে বলব তাও বুঝে উঠতে পারছি না। মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। নাম না ডেকে ভদ্রলোককে ভোট দিতে পাঠিয়ে সাথে সাথে পরের লোকের কার্ড নিয়ে ওনার নাম ধরে ডাকলাম। সকলে লিস্ট মেলালো। পরেরজন অপেক্ষা করতে লাগল আগেরজনের ভোটের। নিরাপদে দুজনের ভোটই হয়ে গেল। এরম ঘটনা আরও বেশ কয়েকটা ঘটল। সবই ওই তাৎক্ষনিক বুদ্ধি খাটিয়ে নাম ডেকে পাঠিয়ে দিলাম। এজেন্টরা বুঝতে পারল না। মনে মনে প্রলাপ গুনতে থাকলাম। এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে খিদেও পেতে লাগল প্রচন্ড। কিন্তু  সাথে খাবার কিছু নেই। জল এনে দেওয়ার একজন স্থানীয় ছেলে আছে। সে সকালে এসে এক বোতল করে জল দিয়ে সেই যে গেছে আর আসেনি। বাধ্য হয়ে প্রিসাইডিং ছেলেটাকে ফোন করল। ফোন করার সাথে সাথেই সে এসে গেল। বোতলে করে যে জলটা দিয়ে গেল সেই জল মুখে দিতেই মুখ যেন পুড়ে গেল। এত গরম জল। পিপাসা মিটল না এদিকে ভোট চলতে লাগল।

দুপুরে একজন একজন করে খেতে গেল। আমি গেলাম সবার শেষে। মনে মনে আশা করে আছি দেশি মুরগির ঝোল দিয়ে কষিয়ে ভাত খাব। খিদেও পেয়েছে। ওমা গিয়ে দেখি পাতে উচ্ছে ভাজা, শুক্তো, ডাল আর আলু পটলের তরকারি। মাংস নেই। অম্লান বদনে জিজ্ঞেস করাতে গ্রুপের মহিলারা বলল “ঐ হোঁদড়ের কথায় কেউ বিশ্বাস করে। আমি তো তখনই ভেবেছিলাম। ও নাকি আবার মুরগি জোগাড় করে দেবে! আপনারাও বিশ্বাস করে নিলেন। এক নম্বরের জালিয়াত ও। এরটা ওরটা ভাঙিয়ে খেয়ে ওর দিন চলে”। মোদ্দা কথা যা বুঝলাম গতকাল রাতে যে নেতা এসে বলে গেলে আমাদের মাংসের ব্যবস্থা সে করবে আজ সকাল থেকে তার কোনো পাত্তা আর নেই। অগত্যা নিরামিষ। তাই খেতে হল। খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে সবে রুমে ঢুকে বসব ঠিক তখনি বয়স্ক এক ভদ্রলোক গায়ে গামছা দিয়ে সদ্য ভোট দিয়ে বেড়িয়ে মাথা চাপরাচ্ছে আর বলছে “হায় একি করলাম আমি! হায় একি করলাম!” খুব বড় কিছু হয়ে গেছে ভেবে আমরা সকলে ভোট বন্ধ করে ওনার কাছে যেতেই সস্তার দেশি মদের টাটকা গন্ধ নাকে এল। ওনাকে বললাম-

— কী হয়েছে? শরীর ঠিক আছে?

— হায় আমি একি করলাম!

— কী হয়েছে বলুন? কী করেছেন?

— ওরা আমাকে ছাড়বে না। একশো টাকা দিয়েছিল। ওরা আমাকে ছাড়বে না।

— কে টাকা দিয়েছিল? কী হয়েছে?

— আমি বাবু মুর্খ মানুষ। বুঝি না অতশত। ভুল করে ফেলেছি।

— কী ভুল করেছেন?

— বড় ফুলে ছাপ দিতে গিয়ে আমি ছোটো ফুলে ছাপ দিয়ে দিয়েছি। ওরা আমাকে ছাড়বে না।

আমরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম। ওনাকে তখন বিদায় করার জন্য বললাম- “আপনি এখন বাড়ি যান কিছু হবে না। কেউ কিছু করবে না”। উনি তাও মাথা চাপরে কাঁদতে লাগলেন। স্থানীয় কিছু লোক এসে অনেক কষ্টে ওনাকে ওখান থেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে গেল। আবার ভোট শুরু হল। বিকেল পাঁচটায় চেক করে যতজন লাইনে আছে সেই কজনের বাইরে আর কারোর ভোট নেওয়ার কথা নয়। সেই মত আমরা লাইন দেখে নম্বর দিয়ে ভোট নিতে গেলে নতুন করে কিছু ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে গেলে স্থানীয় পার্টির নেতাদের সাথে ঝামেলা লেগে গেল। একদলের দাবী তারা ভোট দেবে আরেকদলের দাবী তারা ভোট দিতে পারবে না। বহুকষ্টে এরিয়া অফিসারকে ডেকে প্রিসাইডিং তখনকার মত ঝামেলা মেটালো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার ভোট নেওয়া শেষ হল। ভোট বাক্স, সমস্ত কাগজপত্র এজেন্টদের সামনে গালা সিল করে রেখে দেওয়া হল। এবারে বাস আসবে আমরা সব নিয়ে ডিসিআরসিতে যাব। কিন্তু বাস আসার নাম নেই। দু ঘণ্টা পার হয়ে গেল। জানা গেল অন্য একটি বুথ, যাদের আমাদের সাথেই এক বাসে করে ডিসিআরসিতে যাওয়ার কথা তারা এখনও ভোট শেষ করতে পারেনি। অগত্যা বসে থাকতে হবে। রাত প্রায় দশটা নাগাদ বাস এল। ডিসিআরসি পৌঁছে সব কিছু জমা দিয়ে রিলিজ লেটার যখন হাতে পেলাম তখন রাত বারোটা বেজে গেছে। খড়গপুর ষ্টেশন থেকে রাত দেড়টা নাগাদ একটা ট্রেন আছে হাওড়া আসার। মনে মনে হিসেব করলাম সেই ট্রেনটা যদি পাই তাহলে ঘুমাবার জায়গা পাব। কারণ ওটা এক্সপ্রেস ট্রেন। শুতে না পারি অন্তর হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসতে পারব। ভোর চারটেতে হাওড়া নামার কথা। কয়েক ঘণ্টা অন্তত ঘুম হবে। কিন্তু ডিসিআরসি থেকে বেড়িয়ে বাস আর পাওয়া গেল না। অনেক পরে যাও একটা বাস পাওয়া গেল এই বাস ছাড়ল যখন রাত একটা বেজে গেছে। খড়গপুর ষ্টেশনে যখন পৌছালাম ট্রেন চলে গেছে। প্ল্যাটফর্মে মশার কামড় খেতে খেতে অপেক্ষা করে ভোর সাড়ে তিনটের খড়গপুর লোকাল ধরলাম। ভোরের ট্রেনেও যে এত ভিড় হয় না দেখলে সেদিন বুঝতাম না। ট্রেন থেকে নেমে, অটো ধরে, নদী পেড়িয়ে আবার ট্রেন ধরে নেমে, রিক্সা করে অবশেষে যখন বাড়ি পৌছালাম তখন বেলা আটটা বেজে গেছে। শরীর আর দিচ্ছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ। চোখ মেলে তাকাতে পারছি না এত জ্বালা করছে।

ঘরে ঢুকে স্নান সেরে, দুটো বিস্কুট চা খেয়ে যখন নিজের বিছানায় শুলাম মনে হল এটাই বোধহয় স্বর্গ, এতক্ষণ নরকে কাটিয়ে এলাম। ঘুম হল না সেরম। মনের মধ্যে চাপা টেনশন ঘুরতে লাগল। এই ঘুমাবো আবার রাত পোহালেই সূর্য ওঠার আগে বেড়িয়ে পরতে হবে। বনলতা সেন এলেও বোধহয় দুদন্ড শান্তি দিতে পারবে না আর জীবনে।

(ক্রমশ)

আদিত্য ঢালী
লেখক | + posts

আদিত্য চলচ্চিত্র-বিদ্যার ছাত্র। নেশায় পাহাড়। মানুষকে দেখা, বোঝা ও আঁকার স্ব-ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যাবে তাঁর এই কলামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *