লাল রঙের দেশ মারয়ুল । পর্ব ৮। লাদাখে লক্ষ্যভেদ। লিখছেন কৌশিক সর্বাধিকারী

0
দু’বছর আগে, দোসরা নভেম্বরের সকালে লেহ বিমানবন্দরে অবতরণ করার একটু আগে ক্যাপ্টেনের গলা বিমানের লাউডস্পিকারে ভেসে এসেছিল – ‘কুশক বাকুলা রিনপোচে বিমানবন্দরে আপনাদের স্বাগত’। এই অচেনা শব্দগুচ্ছের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়। গত দুবছরে ধীরে ধীরে কুশক বাকুলা রিনপোচে নামটির সঙ্গে আরও পরিচিত হয়েছি। জেনেছি এই আধুনিক মনস্ক দূরদর্শী মানুষটি কী ভাবে গত শতকে লাদাখের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ণয় করে দিয়েছিলেন। এমনকি কিছুদিন আগে প্রাতঃভ্রমণের সময় সংকর গোম্পার ঠিক উলটো দিকে ওঁর বিশাল বাগানওয়ালা  বিরাট প্রাসাদোপম বাড়ি আবিষ্কার করে পুলকিত হয়েছি।
তীরন্দাজের দঙ্গল
কুশক বাকুলা রিনপোচে কোনও ব্যক্তিমানুষের নাম নয়। বুদ্ধের ষোড়শ অর্হৎ-এর মধ্যে একজন হলেন কুশক বাকুলা রিনপোচে। অনুগামীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইনি অমিতাভ বুদ্ধের মানবশরীর এবং একইসঙ্গে ইনি লাদাখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোম্পা স্পিতুকের প্রধান লামা। আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি, নাওয়াং লোবসাং থুপস্তান চোগনর ছিলেন উনিশতম কুশক বাকুলা।
নাওয়াং লোবসাং ১৯১৮ সালে মাথো রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে ইনি রাজবংশের কনিষ্ঠ রাজপুত্র, লাদাখের শেষ রাজা ৎসেপেল তুণ্ডুপ নামগিয়্যালের অধস্তন ষষ্ঠপুরুষ। খুব অল্পবয়সেই ইনি উনিশতম রিনপোচে হিসেবে চিহ্নিত হন এবং লামাচিত শিক্ষালাভ করেন। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের সময় এঁর নেতৃত্বে লাদাখী জনগণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাজে স্বেচ্ছাসেবা দেন। ইনি সেইসময় পেথুব গুম্ফাতে আহত ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর জন্যে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপনও করেন। পরবর্তী কালে ইনি ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন, এবং তারপর কিছু সময়ের জন্যে মঙ্গোলিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে ইনি পদ্মভূষণ উপাধি পান এবং ২০০৩ সালে, পঁচাশি বছর বয়সে, দিল্লীতে প্রয়াত হন।
ঈগলের পালক, পেঁচার পালকে সাজানো তীর
কুশক বাকুলা রিনপোচে লেহ শহরের লাগোয়া চারটি গোম্পার প্রধান লামা ছিলেন বলে স্বভাবতই লাদাখের জনসাধারণের মধ্যে তাঁর প্রচুর অনুরাগী ও অনুগামী ছিল। প্রধান লামা হিসেবে উনি তাঁর অনুগামীদের বিভিন্ন রকম সমাজসেবামূলক কাজে অনুপ্রাণিত করতেন। বিভিন্ন রকমের ক্রীড়ানৈপুণ্যেও তিনি যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন, খেলাধুলো ও তীরন্দাজিকে খুবই উৎসাহ দিতেন।
লাদাখের মানুষজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও শিকার ও পশুপালন তাঁদের জীবনযাত্রায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল। ইতিহাসের দীর্ঘপথ বেয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী লাদাখের ঊষর পাহাড় ও সবুজ উপত্যকায় এসে নিজের মতো জীবন বেছে নিয়েছে। এই পাহাড়ে মাটিতে ফসল ফলানো কঠিন ছিল বলে খাবারের প্রধান অংশটি ছিল শিকারনির্ভর – এমনিতেও শীতপ্রধান দেশে বলকারক খাদ্য না পেলে বেঁচে থাকা মুশকিল। হাজার বছর আগে লাদাখে বৌদ্ধধর্ম আসবার অনেক আগে থেকেই এখানে প্রাকৃতিক শক্তিগুলির পুজো প্রচলিত ছিল – শিকারের পশুমাংস ছিল সেই পুজোর অচ্ছেদ্য অংশ। নির্বিচার পশুহত্যা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সাতশো বছর আগে লাদাখে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষদের শিকারের উপর প্রথম বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করেন পূজনীয় সোংখাপা, উনি প্রায় একার চেষ্টায় বৌদ্ধধর্মের নতুন গেলুগপা শাখা প্রবর্তন করে তিব্বত ও লাদাখে যথেচ্ছ শিকারের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করেন।
শস্ত্রপূজা
তবে এতদসত্বেও লাদাখের অনধিগম্য ভূপ্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা জনজাতিরা মাঝেমধ্যেই তাঁদের পুরুষানুক্রমিক চিরাচরিত শিকারের প্রথা পালন করতে কসুর করতেন না। এ বাবদে চাংপা আর দর্দদের কথা মনে রাখবার মতো । দর্দদের প্রাচীন পুরুষেরা ছিলেন ওস্তাদ শিকারী, আমাদের প্রাজ্ঞ আবুলের (মেসোমশাইয়ের) ভাষায় ‘শিকার কী শওকীন’। লোককথা অনু্যায়ী তাঁরা যখন আদিভূমি গিলগিট থেকে পালিয়ে আসেন তার আগে আগে ব্রুশাল-গিলগিট অঞ্চলে একটা বড় মেলা হয়েছিল। সেই মেলায় শিকার উৎসব এবং তীরন্দাজির স্মৃতি বহুদিন অবধি লোকগানে বেঁচে ছিল দর্দদের মধ্যে। বিশ শতকের শুরুর দিকে সেই লোকগানের অনুবাদ করেছিলেন জার্মান নৃতত্ত্ববিদ ডা: অগুস্ত হেরম্যান ফ্রাঙ্ক।
শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজের পুরস্কার: ছাং এর কলসী
“Then take the arrow-shafts and heads,
Oh boy that art clever at driving them together ;
Oh boy that art clever at driving them to heaps;
Thou that art clever at singling out the best;
Thou that art clever at shooting them!”
এখনও খালৎসী থেকে গারকোণের রাস্তায়, ডোমখার আচিনাথাং এবং বিয়ামাতে প্রচুর প্রস্তরচিত্রে ধনুর্বাণ কাঁধে আইবেক্স শিকাররত শিকারীর গল্প আঁকা আছে। জনমানসে প্রাচীন এই শস্ত্রবিদ্যাটির স্মৃতি এখনও ততোটা ম্লান হয়নি।
চিরাচরিত লাদাখী ধনুক তৈরি হতো আইবেক্সের শিং বা ট্যামারিস্ক বা উইলো গাছের ডাল থেকে। গত কয়েক দশকে উত্তর ভারত থেকে আনা পাকা বাঁশের ধনুক বহুল প্রচলিত হলেও ইদানীং বছর দশেক হল ইউরোপীয় ভ্রমণার্থীদের প্রভাবে স্টিল এবং কার্বন ফাইবারের বানানো আধুনিক ধনুকও অনেকেই ব্যবহার করছেন এবং গত দু-তিন বছর হলো এইসব আধুনিক ধনুকের ব্যবহার লাদাখি নব্যযুবাদের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে।
তীরন্দাজি প্রতিযোগিতা লাদাখের নতুন কিছু নয় এটা আগেই বলেছি।  এই ধরণের অনুষ্ঠান বহু প্রজন্ম ধরে চলে এলেও পৃথিবীর সর্বত্র যেমন হয়, গত দুতিন বছরে আধুনিক ধনুর্ধারীরা লাদাখী সংস্কৃতির প্রাচীন ধনুর্বিদ্যাকে কোনঠাসা করে করে ফেলেছিল। এ বছর তাই কিছু সমমনস্ক প্রৌঢ় তীরন্দাজ, যাঁরা চিরাচরিত লাদাখী জীবনদর্শন অনুসারেই জীবন কাটান, তাঁরা আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, আধুনিক তীরধনুক বাদ দিয়ে নিজেদের সংস্থা বানিয়েছেন – ট্রাডিশনাল আর্চারি সোসাইটি অফ লাদাখ। নিজেদের শস্ত্রচর্চা, গল্প, খাবার ও গান নিয়ে আজ, অক্টোবরের প্রথম রবিবার ছিল এই সোসাইটির বাৎসরিক উৎসবের দিন। এটি কিছু মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, কোনও সরকারি বা বেসরকারি ট্যুরিজম প্রোমোটিং প্রোগ্রাম নয়। আজ সকালে আমরাও সিন্ধুনদের তীরে পাখি দেখতে দেখতে নিতান্ত আকস্মিক ভাবে উৎসবের তাঁবু দেখে কৌতুহলী হয়ে গিয়ে এঁদের কর্মকান্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম।
সিন্ধুনদের তীরে, উইলো আর পপলার গাছের ছায়ায় তাঁবুর মধ্যে ঢুকতেই মধ্যপ্রাচ্যের কাফেলাগুলোর কথা মনে পড়ে। পায়ের নীচে বুটিদার নরম গালিচা, সামনে কাঠের নীচু টেবিল। সেখানে প্রথামাফিক কাঠের ঢাকনাওয়ালা পাত্রে খুরমানির বাদাম আর শুকনো খুরমানি রাখা। বেলা দশটার মধ্যেই সোসাইটির সদস্যরা একে একে এসে জড়ো হলেন। সারাদিনের প্রোগ্রাম। প্রাথমিক কুশল বিনিয়মের পরে সকলে একত্রে প্রাতরাশ করতে বসলাম। তাঁবুর একপাশে তিনচারজন বয়স্ক লাদাখি মহিলা একটি টেবিলের উপর খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হাতে হাতে দেওয়া হল মোটা মোটা খামির রুটি, বাটিতে অত্যন্ত স্বাদু আলু-পনীরের ঝোল ঝোল তরকারি, সঙ্গে নোনতা মাখন চা অথবা মিষ্টি দুধ-চা, যার যেমন রুচি। পরিবেশনের ব্যবস্থা ছিমছাম রাখার জন্যে প্লেট বা চামচের ব্যবস্থা ছিল না। খামির রুটি ঝোলে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খেয়ে, রুটির টুকরোকেই চামচ হিসেবে ব্যবহার করে আলুপনীর খাওয়া হলো। চা খেয়ে তরকারির বাটি ও চায়ের কাপ নদীর ধারে একটি গামলায় গিয়ে সকলে রেখে এলেন। এঁদের ব্যবস্থাপনায় এটা স্পষ্ট যে তীরন্দাজি, গানবাজনা ও গল্পগুজব ছাড়া অন্য কোনও অদরকারি ব্যাপারে সময় নষ্ট করতে এঁরা আগ্রহী নন।
ধনুর্বাণের মাননির্ণয়
এখন বাঁশ, উইলো এবং ট্যামারিস্ক কাঠের ধনুক ব্যবহার হলেও আইবেক্সের শিং থেকে তৈরী ধনুকের সম্মানই আলাদা। এমনই একটি ধনুক কুশক বাকুলা রিনপোচে র ছবির সামনে রেখে যথাবিহিত শস্ত্রপূজা করে লক্ষ্যভেদ শুরু হলো। প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে নাওয়াং লোবসাং যখন স্পিতুক গুম্ফার রিনপোচে ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন তীরন্দাজীর একজন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক। কথিত আছে কোনও তীরন্দাজ যদি লক্ষ্যভেদ করার সঙ্গে সঙ্গে কাঠের লক্ষ্যবস্তুটিকে তীরের জোরালো অভিঘাতে ভেঙে ফেলতে পারতেন তবে সেই তীরন্দাজকে তিনি তখনকার দিনে দশটাকা পুরস্কার দিতেন। কুশক বাকুলা রিনপোচে’র উৎসাহদানকে লাদাখের চিরাচরিত তীরন্দাজ সমিতি আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁর ছবিতে অর্ঘ্য দিয়েই প্রায় চল্লিশজন তীরন্দাজ চারটি দলে ভাগ হয়ে লক্ষ্যভেদে অংশ নিলেন।
রিনপোচের ছবির সামনে যে ধনুকটি  রাখা ছিল সেটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। ধনুকের দন্ডটি অনেকগুলি পূর্ণবয়স্ক আইবেক্সের শিং আগুনের আঁচে সেঁকে করে পাশাপাশি জুড়ে বানানো। শিংগুলো আইবেক্সের পায়ের টেন্ডন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে, পালিশ করে তৈরী করা হয়েছে এই ধনুক। আগুনের আঁচে সেঁকে বানানোর সময় শিং এবং টেণ্ডনের জিলাটিন গলে গিয়ে একটি সমসত্ত্ব দন্ড তৈরী করে, যা ঠান্ডা হলে পরে আঁটোসাঁটো, ঋজু কিন্তু নমনীয় ধনুর্দণ্ড তৈরি হয়। সঠিক ভাবে রক্ষা করলে এই ধনুক নাকি কয়েক প্রজন্ম চলে যায়। আইবেক্সের সংখ্যাহ্রাস ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ চালু হওয়ায় এইসব ধনুক এখন আর তৈরী হয় না, কিন্তু যে সব পরিবারে এই সব চিরাচরিত ধনুকগুলি বিদ্যমান তাঁরা সহতীরন্দাজদের কাছে খুবই শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র।
এই সমস্ত ধনুকের ছিলা আগে পশুর শুকনো চামড়া, টেন্ডন বা অন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হতো – তবে পুরনো হলে ধনুকের ছিলা ছিঁড়ে যায় বলে এখন দেখলাম সব ধনুকেরই ছিলা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে নাইলনের তৈরী শক্ত প্যারাশুটের দড়ি। তীরন্দাজদের দাঁড়ানোর জায়গা থেকে প্রায় পঞ্চাশ মিটার সামনে একটি মাটির ঢিপি বানিয়ে তার উপরে একটি গোলাকার কালো পশুর চামড়া আটকে টার্গেট স্থির করা হয়েছে। তীর যাতে এদিকে ওদিকে ছিটকে না যায়, তার জন্যে পিছনে অনেকটা জায়গা জুড়ে লাগানো হয়েছে তাঁবুর কাপড়। একপাশে উইলো গাছে একটা দোলনা, বিচারক সেখানে বসেই নিশানার যাথার্থ্য নিরূপণ করবেন।
তীরগুলি নলখাগড়া দিয়ে তৈরী, সামনে তীক্ষ্ণ লোহার ফলা এবং শেষে ভারসাম্য রক্ষার জন্যে রয়েছে চারটে পাখির পালক। হিমালয়ান গোল্ডেন ঈগল, গ্রিফন ভালচার অথবা জায়েন্ট আউলের বড় পালক চিরে আধখানা করে লম্বালম্বি ভাবে তীরের পুচ্ছদেশে লাগানো হয়। তীরন্দাজদের বিশ্বাস, কোনও তীরে ঈগল ও পেঁচার পাখনা একসঙ্গে লাগালে সেই তীরের লক্ষ্যভেদ সবথেকে নিখুঁত হয়, কিন্তু সেই একই সঙ্গে এই তীর বাড়িতে থাকলে গৃহে অশান্তিও হয় চিরস্থায়ী।
বাদ্যকারের দল; লাদাখের যেকোনও উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
এই উৎসবে অংশ নিতে পঞ্চাশ একশ কিলোমিটার দূরের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও প্রতিযোগীরা এসেছিলেন। এঁদেরই একজন ফিয়াং গ্রামের শেরিং ওয়াংচুক আমাদের পুরো অনুষ্ঠানটির সম্বন্ধে সব প্রয়োজনীয় তথ্য জানালেন। বেদীতে রাখা প্রাচীন ধনুকটি উত্তরাধিকারক্রমে এখন তাঁরই সম্পত্তি, আমাদের আগ্রহ দেখে ধনুকটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখারও অনুমতি দিলেন। শেরিংলের নিজস্ব রোজকার ব্যবহারের ধনুকটি আলাদা। মালচাং কাঠের কারুকার্যমন্ডিত হাতলের সঙ্গে পাকা বাঁশের দন্ড জুড়ে প্রস্তুত এই ধনুকটিও খুবই সুদৃশ্য। প্রত্যেক প্রতিযোগীর মত এঁরও নিজস্ব তীর আছে, সেগুলোর প্রান্তভাগে লাকনাক বা গোল্ডেন ঈগলের পালক আঁটা। অত্যন্ত যত্নে রাখা এই তীর ধনুক একবার অনুরোধ করতেই শেরিংলে আমাদের ব্যবহার করতে দিলেন। প্রত্যেক তীরন্দাজের কাছেই তার নিজস্ব ধনুক এবং তীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেঠিক ব্যবহারে ধনুকের ছিলার বাঁধন সরে যেতে পারে অথবা তীরের সামনের ফলা বা প্রান্তভাগের পালক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্বল্প পরিচিত আমাদেরকে তাঁর ধনুক এবং তীর ব্যবহার করে তীরন্দাজির সুযোগ করে দেবার জন্যে শেরিংলে সতত আমার ধন্যবাদার্হ হয়ে থাকবেন।
কথায় কথায় জানতে পারলাম  প্রৌঢ় শেরিংলে তিন বছর আগে সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেবার পরে একাকী ভ্রমণে আন্দামান গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় চেন্নাই হয়ে গিয়ে, ফিরেছিলেন কলকাতা হয়ে। সেই সময় উনি ধর্মতলার একটি হোটেলে দিন পনেরো ছিলেন, জানালেন কলকাতা ওঁর ভাল লেগেছিল খুব। কোলকাতায় কী কী ওঁর ভাল লেগেছিল, সেকথাও আগ্রহভরে জানালেন। একটু আশ্চর্যই হলাম পাহাড়ি মানুষের জনবহুল কলকাতা এত ভাল লেগেছে শুনে। কলকাতার বাইরে বঙ্গদেশের আর কিছুই শেরিংলে দেখেননি, ভাবছি তীরন্দাজীর শওকীন এই প্রৌঢ় লাদাখী মানুষটিকে অযোধ্যা পাহাড়ের বৈশাখী পূর্ণিমার শিকার উৎসবে আমন্ত্রণ জানাবো।
(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *