কাগজের নৌকো। পর্ব ১৬। ধারাবাহিক উপন্যাস। লিখছেন সায়ন্তন ঠাকুর

0

থার্ড ইয়ারে কলেজের পড়াশোনায় মন ছিল না তেমন, তখন মেডিসিনে পেপার ওয়ান আর পেপার টু নিয়ে সমুদ্রের মতো সিলেবাস, তার মধ্যে রিউমাটোলজি আর হিমাটোলজি মেডিসিন পড়তে মোটেও মন বসে না, তাছাড়া এই তৃতীয় বর্ষে ছাত্রেদের নতুন উপসর্গও দেখা দেয়, শুধু মনে হয়, আমার নিজেরই এই রোগ হয়েছে! প্রফেসর ড. বাসু একদিন আমাকে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী অবিনাশ, শরীরে অসুখ বিসুখ হয়নি তো?’

আমিও হাসলাম, ‘না স্যর, কিন্তু ক’দিন স্কিন ডিজিজে খুব ভুগছি! হারপিস কিনা বুঝতে পারছি না!’

তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের অসুখকে তেমন পাত্তা দেন না প্রফেসর বাসু, ভারী চশমার আড়াল থেকে দু-এক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘হুঁ, তা হারপিস মন্দ অসুখ নয়,অনেকের তো শুনি এই সময় ভালভুলার হার্ট ডিজিজও হয়!’

এইসব নিয়েই ছিল আমাদের দিন। তবে আমি প্রায়ই বেরিয়ে পড়তাম, তখন চোখে ঝিলমিল, মনে হত, এত পড়াশোনা করে কী হবে! সেবার চৈত্র মাসে গেছি রাঢ়দেশে, গরমও পড়েছে বেশ,

বাসরাস্তার ধারে একটা ছোট চা-গুমটির ভিতর বসে আছি, কাঁচা বাঁশের জোড়া বেঞ্চ মুখোমুখি পাতা, খর চৈত মাসের রোদ্দুরে ঝলসে যাচ্ছে চারপাশ। সকাল মাত্র এগারোটা বাজে, এরমধ্যেই আকাশের রঙ কেমন ফ্যাকাশে, রাঢ় দেশের ধুলা উড়ছে গরম বাতাসে, দু একটি ভিড় ঠাসা বাস, ময়ুরাক্ষী চরের বালি বোঝাই লরি মাঝে মাঝেই সশব্দে পার হয়ে যাচ্ছে এই ক্ষুদ্র জনপদ। গাঁয়ের নাম কোটাসুর। সেই কোন সকালে বহরমপুর স্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে বসেছিলাম,‘মা তাঁরা সুপার এক্সপেস’, পেল্লায় ভিড় বাসে, মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুর থেকে যে রাস্তাটা গঙ্গা পার হয়ে বাঁদিকে ঢুকে পড়েছে সেটা ধরে খানিকদূর এগোলেই শুরু হয়ে যায় রাঢ়দেশ, পিচ রাস্তার দুপাশে লাল কাঁকড় আর বাবলা গাছের সারি, ছেলে বিয়োনো পোয়াতির মতো রক্তশূন্য মাঠ, এসব জায়গার জমি জল পায় না তেমন, মোটা চাল, আলু, আঁখ, খেসারির ডাল অল্প সর্ষে-ফসল বলতে এই, তা এবার এদিকে খরা, তেতে ফাল হয়ে আছে জমি। শুধু বিবাগী বাতাস কেঁদে মরছে নিজের মনে, কী যেন আছে এই বাতাসের ঝাপটে, মনে হয়,কেউ কোথাও নাই ,কারোর সঙ্গে দেখা হওয়ার ছিল না, শুধু একলা হেঁটে যেতে হবে অনেকটা পথ, সেই পথে দু’পা এগোলেই ভাঙা ইঁট বের করা শিব মন্দির, প্রায় সব গাঁয়ের মুখে লোহার মরচে ধরা ত্রিশূল পোঁতা কালী নাহলে মাটির ছোট ছোট ঘোড়া সাজানো শীতলার থান, ধম্ম ঠাকুরও রয়েছেন।

সেসব পার হয়ে এসে নামলাম কোটাসুরে, আমাকে নামিয়ে দিয়ে রাস্তাটা সোজা চলে গেল সাঁইথিয়া হয়ে সিউড়ির দিকে, আরেকটা রাস্তা ডানদিকে বাঁক নিয়ে বীরচন্দ্রপুর হয়ে তারাপীঠ, বীরচন্দ্রপুর, নিত্যানন্দ প্রভুর পাট। ভারী প্রাচীন জনপদ এই কোটাসুর, সেই মহাভারতের একচক্রা গ্রাম, পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় ভীম নাকি এখানেই বধ করেছিলেন বক রাক্ষসকে, আখের গুড় দিয়ে ফোটানো চায়ের গেলাস হাতে নিয়ে এসব কথাই ভাবছিলাম। কোথায় যাব তেমন ঠিক নাই কিছুই, ইচ্ছে আছে দিনমানে ঘুরে বিকেলে সাঁইথিয়া থেকে কলকাতা ফেরার ট্রেন ধরব নাহলে আরেকটা বাস ধরে মল্লারপুরের দিকে চলে যাব । অনেক বছর আগে এক অবধূতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল,তাঁর ডেরা ওই মল্লারপুরের কাছে এক শ্মশানে, দিন দুয়েক কাটানো যাবে সেখানে। চা দোকানিকে একটা বিস্কুট চাইলাম, ময়লা বয়াম থেকে লাল-হলুদ রঙা একটা বিচিত্র বিস্কুট বের করে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা বাবু যাবিন কুনঠি ?’

–দেখি, মল্লারপুরের বাস পাব এখান থেকে ?

–মল্লারপুর ? বাসটো পাবেন লাই, হুই সাঁইথে থিকা পাবেন!

‘মল্লারপুরে কারঠে যাবি বটে  তু?’, একটা ভারী গলার আওয়াজ শুনে চোখ ফেরালাম। বেঞ্চের একপাশে বসে আছে একজন মাঝবয়সী মানুষ, ধুলামলিন শরীর, মুখে দাড়ি গোঁফের জঙ্গল, মাথার জটা কাঁধ অবধি নেমে এসেছে, পরনের রক্তাম্বর কোনও এককালে টকটকে লাল ছিল বোঝা যায়, এখন ময়লা তেলচিটে, খালি পা, শুধু চোখ দুটো ভারী অদ্ভুত, কেমন যেন প্রাণহীন। সামান্য অবাক হয়েই শুধোলাম, ‘আপনি ?’

লোকটি কিছু বলার আগেই চা দোকানি নিজেই বলে উঠল, ‘উর কুথা ধরবেন লাই বাবু, মাতার ঠিক লাই উয়ার।’

–চোপ! শালো! মুর মাতার ঠিক লাই ? কুন শতেক খোয়ারির ব্যাটা বুলে শুনি!

‘বেইরে যা,ভাগ শালো দুকান থিকে!’, চা দোকানিও গর্জে ওঠে। দু চারটে লোক জুটে যায়। সব চাষাভুষো মানুষ। মাছ ধরার নীল জাল কাঁধে দু একজন জেলেও রয়েছে ভিড়ে, লোকটাও চিৎকার করতে থাকে,’বাঁকুকে তু চিনিস লাই! মুর মাতার ঠিক লাই ? মুর মাতার ঠিক লাই ?’

তারপর হঠাৎ আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করে, ‘কুন অবদুতের ডিরায় যাবিক শুনি ? দীনু মহাআজ ?’

কথাটা শুনেই চমকে উঠলাম। লোকটা জানল কী করে! আশ্চর্য তো! মনের ভিতর কে যেন টিকটিক করে উঠল। বারবার এমন সব আশ্চর্য মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমার, ঘরে ফেরার রাস্তা আর সোজা থাকে না তখন, উদাসী বাতাসের মতোই এলোমেলো হয়ে যায় ঘর সাকিন, তারপর একসময় পকেটে টান ধরে, এক চাকরি থেকে বেরিয়ে আরেক চাকরি খুঁজতে হয়, ধারদেনা আর অভাবের সমুদ্র স্রোতে উথালপাতাল হয় দিন এবং রাত্রি, তবুও ছাড়তে পারি না এইসব নেশা, কে যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, কানে কানে বলে যায়, কী বিচিত্র এই জীবন,দেখবে না তুমি ? দেখবে না ?

তাড়াতাড়ি চায়ের দোকানে দাম মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দোকানি তখনও তারস্বরে চিৎকার করে চলেছে, দোকানে ততক্ষণে ছোটখাটো ভিড় জমে উঠেছে , গাঁ গঞ্জে এই ঝগড়া একপ্রকারের আমোদ,  নিস্তরঙ্গ ঘটনাহীন জীবনে ক্ষণিকের উত্তেজনা!

একটা মনিহারী দোকান, পান সিগারেটের গুমটি, মুদিখানার দোকান, মোবাইল ফোনশপ ছাড়িয়ে বাঁকু নিজের মনে হেঁটে যেতে থাকে, হা হা বাতাসে পাক খেয়ে উড়ছে শুকনো পাতা, দুপাশে ধূ ধূ মাঠ, রৌদ্র তেজে দিকচক্রবালরেখার উপর লি লি করে কাঁপছে দূরের গাছপালা, সেই ছেলেবেলার গল্পে পড়া ডাইনী বুড়ি সমস্ত সবুজ রঙ যেন শুষে নিয়েছে, পাটের আঁশের মতো তার বিবর্ণ কেশরাজির মায়ায় আচ্ছন্ন চরাচর।

পা চালিয়ে দ্রুত এলাম বাঁকুর কাছে, পিছন থেকেই গলা তুলে ডাকলাম, ‘শুনছ ?’

কোনও উত্তর না দিয়েই হেঁটেই চলেছে সে, আবার একবার ডাকলাম, ‘ও ভাই,শুনছ ?’

ঘুরে তাকাল বাঁকু, চোখদুটো ঘোলাটে যেন কিছুই দেখছে না, ধুলামলিন ক্লান্ত দেহ, বেলা প্রায় দ্বিপ্রহর, ওর নিজেরই ছায়া ফুটিফাটা নগ্ন পায়ের নিচে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে, পিছনে চালচিত্রের মতো এক আকাশ কঠিন চৈত্র মাস। একপলক দেখে আমার কেন জানি না হঠাৎ মনে হল এক প্রাচীন নটসম্রাটের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি, যে নট আমাদের সংসার খেলার মধ্যে কোন অলৌকিক উপায়ে ভেসে আছে কিন্তু আমাদের সবার মতো ডুবে যাচ্ছে না।

‘কী বুলছিস তু ? মুর পোঁদে পোঁদে আসছিস কেনে ?’, রুক্ষ্ম কঠিন গলায় আমাকে হেঁকে ওঠে বাঁকু।

–আজ্ঞে,একটু কথা ছিল!

–কী,কী কুথা ? দীনু মহাআজের নাম বুললাম ক্যামনে ?

আবার চমকে উঠলাম নিজের মনেই। মুখে বললাম, ‘হ্যাঁ,মানে,তুমি…’

কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে ওঠে বাঁকু, ‘চল্‌ মুর সনে!’

–কোথায় ?

–এত যদি ভয় তুর মাগীর আঁচলের তলে শুগা না ক্যানে! পতে নামিছে! হঃ!

হাঁটতে থাকি দুজনে। রোদ্দুরে গায়ে জ্বালা ধরে, চামড়া খসখস করতে থাকে, কারোর মুখেই কোনও কথা নাই, দুপাশে ঝিমধরা মাঠ, মাঝে মাঝে গাছ গাছালি ঘেরা দু চারঘর খোড়ো চালের মেটে বাড়ি, তারাও যেন এই ঠা ঠা রোদ্দুরে ধুঁকছে। একটা বুড়ো বট গাছ মাঠের মাঝখানে পুরনো দিনের একান্নবর্তী পরিবারের মতো ঝুড়ি নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একাকী, জায়গাটি সজল ছায়াময়, সরু ক্যানেলের উপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে এলাম আমরা। ঘোলা কাদামাখা জলে হাত জাল দিয়ে মাছ ধরছে একজন লোক, বাঁকু হেঁকে বলে ওঠে, ‘ও হারান, চাট্টি মাছ দিবিনে ? অতিথ আইছে যি!’

লোকটি মুখ তুলে হেসে শুধোয়, ‘কে এলি গ তুমার ঘরে বাবা ?’

–পতের অতিথ রি!

সারা গায়ে কাদাজল মেখে ওপরে উঠে আসে হারান, আমাকে দেখে দুহাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বলে, ‘পেন্নাম বাবু!’

আমিও হাত তুলে প্রতি নমস্কার করি। বাঁকুর দিকে তাকিয়ে হারান জিজ্ঞেস করে, ‘তা মাচ লেবা কীসে ?’

ধুতির গেঁজ থেকে একটা দোমড়ানো প্লাস্টিকের প্যাকেট বের করে বলে, ‘ইতে ভরি দ্যা’

হারান নীচে নেমে একটা ছোট হাঁড়ি থেকে কিছু পাঁচমেশালি কুচো মাছ প্লাস্টিকে ভরে একটু হেসে প্যাকেটটা হাতে দিতেই বাঁকু বলে ওঠে, ‘ঘরে পুরান কালা তেঁতুল আছে,টক রাঁধব!’

হারানের সঙ্গে একটু কথা বলে আবার এগিয়ে চলি আমরা, সিগারেট বের করে ধরিয়ে বাঁকুর দিকে এগিয়ে দিই একটা, আড়চোখে আমার দিকে চেয়ে গেঁজ থেকে দেশলাই বের করে হাঁটা না থামিয়ে অদ্ভুত কায়দায় সিগারেট ধরিয়ে একটা লম্বা ধোঁয়া ছেড়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুর ঘর ইদিকে তো লয়! কুথা ? কলকেতায় ?’

–হু

–দীনু মহাআজকে চিনলি ক্যামনে ?

–ওই একদিন তোমার মতোই আলাপ হয়ে গেছিল!

–ইসব ভালা পত লয়। যার তার লেগে ঘুইরে মরিস ক্যান ?

একটু থেকে সটান আমার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, ‘কীসের লিগে এত তনছিট তুর ? ঘরে তো সবাই আছেক তুর! কার লিগা চোখে ওমন ছায়া ?’

কী বলি আর! এসব কথার কোনও উত্তর হয় না। চুপ করে থাকি। ফের বলে ওঠে বাঁকু, ‘ঘর যা! কিছুই মিলবে না তুর! হয়রান সার হবেক!’

পায়ে পায়ে বাঁকুর ঘরে এসে যখন পৌঁছাই তখন ভন্যি দুপুর, গাঁ গঞ্জ লোকালয় ছাড়িয়ে একটেরে মেটে ঘর, চালের খড় পচে গেছে এখানে সেখানে, সামনে উদোম মাঠ, অদূরে একখানি টলটলে পুকুর, ভরা চৈতেও বেশ জল, ত্রিসীমানায় জনমনিষ্যি নাই, দাওয়ার পাশেই এক প্রকাণ্ড মহানিম গাছ, ঝিরিঝিরি বাতাস আর ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে যায়, সারা উঠান ঘেঁটু ফুলে ভরা, উঠানের মাঝে একটি মাটির থান, হাত দুয়েক উঁচু হবে, উপরে একখানি ত্রিশূল পোঁতা, জিজ্ঞেস করি, ‘এই তোমার সাধন পীঠ ?’

মাটির আখা সাজাতে সাজাতে বাঁকু হেসে বলে, ‘ওই বিটিকে লিয়েই দিন রাতটো কাটে রে মুর!’

দুপুরে বাঁকু রান্নাবান্না করল, মোটা চালের ভাত,কী একটা বুনো ফল সেদ্ধ, টকটক স্বাদ, লবণ দিয়ে মেখে গরম ভাতের সঙ্গে বেশ লাগে আর চোখা তেঁতুল দিয়ে সেই পাঁচমেশালি কুচো মাছের চটচটি টক। খাওয়ার আগে পুকুরের জলে নেয়ে এলাম, আহ! কী ঠাণ্ডা জল! বাঁকু শুকনো শালপাতায় ভাত,মাছ সাজিয়ে উঠানের থানে রেখে একটা সস্তার ধূপ জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নিবেদন করল, অদ্ভুত দৃশ্য, খালি গা, লাল ধুতি কোমরে জড়ানো,টপটপ করে সারা গা থেকে জল ঝরে পড়ছে,বাবু হয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে বাঁকু। দামাল বাতাসে নিমপাতা খসে পড়ছে সারা শরীরে, বেলা প্রায় শেষ, কুহকিনী মধুমাসে আচ্ছন্ন চরাচর, কোন্‌ সুদূর ঊর্ধলোক হতে মাঠে প্রান্তরে কী এক অপূর্ব আলো এসে পড়েছে, অবাক হয়ে ভাবি চৈত্র দিনান্তে জনশূন্য প্রান্তরে এক ক্ষ্যাপাটে মানুষ তার ইষ্টদেবীকে কোন্‌ এক প্রাণের তাগিদে অন্নভোগ সাজিয়ে দিয়েছে, এই আত্মনিবেদনই কি তবে পূজা?

সে রাতটা বাঁকুর ঘরেই কাটে, কত কথা সারারাত, সব কাজ সাঙ্গ করে সেই চিরচঞ্চলা বালিকা তখন তাঁর স্নেহের হাতটি বুলিয়ে দিচ্ছেন সমগ্র চরাচরে যেন মায়া নিদ্রায় ভুলিয়ে রাখছেন হা-ক্লান্ত জগতকে, তাঁরই ইশারায় বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ মলয় বাতাস! বাঁকুকে জিজ্ঞেস করি, ‘এই যে লোকে তোমাকে মাথা খারাপ বলে, গাল দেয়, সত্যি করে বলো তো,কী পেয়েছো তুমি ? পেয়েছো সেই তাঁকে ?’

কিছুই বলে না বাঁকু, মুচকি মুচকি হাসে, গাঁজার ছিলিম হাত বদল হয় আমাদের। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে, ‘কী পাবু বুল দ্যাখি! এই মাঠ ঘাট হুই মহানিম গাছটো হুই মুর বিটির থান, কত পাখ পাখালি আসেক, সাঁঝ লাগার আইগে একঝাঁক বক নামে পুকুরটোতে,কী সাদা পেখনা উয়াদের, আলো পইড়ে ঝকমক করে, বাবার ফুল ঘেঁটু আলা করে থাইকে মুর উঠান…কী চাইবি বল ক্যানে!’

চুপ করে বসে থাকি আমি, দু-এক মুহূর্ত পর নিজের মনেই বিড়বিড় করে বাঁকু, ‘কিচ্ছুটো চাই লাই! যেন বারবারেক ইখানটোতেই ফিইরে আসতে পারিক! ফিইরে আসতে পারিক!’

পরদিন ভোরে রওনা দিই আমি, পিছনে পড়ে থাকে বাঁকু,ঘর দুয়ার,গাছ গাছালি, টলটলে পুকুর, কালীর থান, নিমপাতা ছাওয়া তার মায়ার সংসার! সেখানে আমার ঠাঁই নাই, বাঁকুর মতো ফিরে আসার কোনও সুতোও নাই, আমার পথ এগিয়ে চলেছে সামনে, সবার থেকে দূরে,অনেক দূরে।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *