ধূসর চিলেকোঠা । পর্ব ৪ । লিখছেন শেখর সরকার

0

গত পর্বের পর…

দিন-রাত কী? প্রেম-ঘৃণা কী? বিদ্রোহ-স্থবিরতা কী? গ্রাম-শহর কী? সমাজ-ব্যাক্তি কী? বর্তমান-ঘটমান বর্তমান কী? সবই হা-হুতাশ করে ইতিহাসের পাতায়। ব্যাক্তি মানুষের কাছে ইতিহাস ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যেমন ঘুম ক্লান্ত মানুষের ইতিহাসের পাতা ধরে ধরে আজন্ম হাঁটার পথে দুঃস্বপ্নের ধোঁয়া এসে জমাট বাঁধে, কালো মেঘের সঞ্চার করে। তারপর, হুহু করে বাতাস বয় চণ্ডীপাটের গমখেতের উপর। রাতের সাইকেলকে যেন ঠেলে ফেলে দিচ্ছে রাস্তা থেকে — সদানন্দ এগিয়ে চলছে। অবিনাশ পিতার ফেলে যাওয়া পদাঙ্কন ধরে ধরে এগিয়ে চলছে। দিব্যেন্দু সাইকেলের পেছনে বসে সদ্য শেখা হিন্দি গান গুনগুন করছে। হঠাৎ করে কিছু দূর এগিয়ে চলার পর মাটির মধ্যে টলমলিয়ে পড়ে গেল সদানন্দ। অবিনাশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল — পেছনে দিব্যেন্দু। সে কি তার বাবাকে কক্ষনও এমন পরিস্থিতে দেখেছে? মানুষের ব্যাক্তিত্ব অনেকটা গাছের নীচে চাঁদোয়ার মত। বাইরে থেকে ঢাকা থাকে, তবে মাঝে মাঝে সূর্যের তেজে ফাঁকফোকর থেকে আলো ঠিকরে আসে এবং তবুও বেশিরভাগ সময়ই অনেকটা পৌষ মাসের সকালের ঘন কুয়াশার মত মনে হয়। গমখেতে আগের দিনের কীটনাশকের গন্ধ নাকে আসছে, অদূরে ডোবাতে ভূতের আলো দেখা যাচ্ছে। নিজের বাবার এই রকম অবস্থা দেখে অবিনাশ আগে কক্ষনও দেখেনি। দিব্যেন্দুকে সাইকেল দিয়ে নিজের কাঁধের মধ্যে তার বাবার এক হাত রেখে এগিয়ে চলছে। সদানন্দের ঠোঁটের কোণ  থেকে গ্যাঁজলা বেরচ্ছে আর তাতে অবিনাশের শার্টের হাতা পুরোটা ভিজে গিয়েছে। সদানন্দ বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছে — আধো আধো, অসন্নিবিষ্ট; আর অবিনাশের কানের পৌঁছানোর আগেই তা বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। গোটা রাস্তাটা গোখরো সাপের মত এঁকে বেঁকে ছড়ানো। রাতের শিশিরে সদানন্দর পরিহিত ধুতি আর অবিনাশের প্যান্টের নীচের অংশে কাদা জমে গেছে। জুতো পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে। শীতের হাওয়া আরও জাকড়ে ধরেছে। অবিনাশ তার গোটা শরীরে চাদর মুড়ি দিয়ে ঢেকে ফেলল। ওই যে কিছু দূরেই দেখা যাচ্ছে তাদের এক তলা কাঠের বাড়ি। সদানন্দ বিড়বিড় করে কী যেন বলছে —

“পুতুল যাইয়োনাগো জামাইয়ের ঘরে, পুতুল যাইয়োনাগো জামাইয়ের ঘরে
তিনদিন ধইরা আইছন জামাই, বইছন কলার তলে
কলার তলে ঝামুর ঝামুর
ফুলের তলা বিয়া …”

অবিনাশ জানে সদানন্দ কি বলছে। এগুলো তাদের বাড়িতে আগের বছরে পাট চাষের সময় ব্যাঙের গানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই গানের আসরে সদানন্দ ঘোরের মধ্যে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছিল সবার সামনে। সুদর্শন তাদের বাড়িতে প্রথমবার এসেছিল এই ব্যাঙের গানের আসরেই। সে তিন-চার বছর থেকেই রোজ এই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজনে আসত। সুদর্শনের উপস্থিতি সবাইকে চমকে দিয়েছিল। বাঁধাকপির মত পরতে পরতে অবগুণ্ঠনরত সময়, সদ্য কুমারী মেয়ের সীমাহীন আচম্বিত বিস্ময়ের সময়, দূরে বিভাজনরত দিকচক্রবাল, সমুচ্ছিত পেয়ালাতে শেষ চুমুতে ঘিরে রাখা দাম্ভিক এই সময়, সুপরিকল্পিত দেশ বিভাজনের বিছানাতে শ্বাপদসঙ্কুল রাস্তায় ক্লেশ- রক্তের মিলনের সময়, সে সময় অবধারিত, ঘুণ পড়ে রয়েছে স্মৃতির চর্যাপদে। অবিনাশ ঘোমটা তুলছে এই সময়তে। সদানন্দ গান গেয়েই চলছে। বিদায় পর্বের গান।

পর দিন সকালে সুদর্শনের ঘুম দুপুরে ভাঙল। অবিনাশ সকাল বেলা উঠে দোকান খুলে বসে পড়ল। দোকানের সামনের মাচায় ভিড় আস্তে আস্তে জমা হতে লাগল। নিত্যদিন কিছু চেনা মুখ ছাড়া আরও কিছু অচেনা মুখ আজ দেখা গেল। রসময় দাস মাচার উপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে অবিনাশকে জিজ্ঞাসা করছে “কী গো ছেঁড়া, তুমার বাপরে দ্যাখতাছিনা আজ?” অবিনাশ বইয়ের থেকে মুখ না তুলে বলল, “দাদু, বাবা বিছনাত শুইয়া আছে। শরীরডা ভালা না উনার।” অবিনাশের থেকে কোনও উৎসাহসূচক উত্তর না পেয়ে রসময় দাস পাশে বসা আলোক সরকারকে বলল, “হুনছ আলোক, কালকা গেরাম পঞ্চাইত অফিসে একজন নতুন অফিসার আইচে?” আলোক সরকার সকাল সকাল এইসব আলোচনা করতে একদমই আগ্রহী নয়। তাই মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে বিড়িতে আগুন ধরিয়ে চাদরের নীচে ধোঁয়া বের করল। তারপর এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “আমডার এইত্তা জাইন্না কিতা হইব? আমি হইলাম আদার বেপারি গো?” রসময় প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে মাচা থেকে নীচে নেমে গটগট করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আলোক সরকারকে দশ কথা শুনিয়ে গেল — “তা তুমি জানবা কেরে? কিছু জানো গ্রামে কী হইতাছে? কিছু খবর রাখ! তুমার ভালার লিজ্ঞাই কইতাছি। এই সদানন্দর পুঁটকির পিছে খুঁটি হইয়া থাইক্কা আর কোনও লাভ নাই। জেডি কইছি মাথাত ঢুকায়া রাখ। নাইলে ভবিষ্যতে বিপদ আছে বুঝলা।” আলোক কিছু বিপদের আন্দাজ করতে পারল না।

পরের বছর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন কিন্তু নিয়ামতপুরে তার অনুরণন এখনই কান পাতলে শোনা যায়। নতুন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসারের আগমনে অনেকেই আচম্বিত। নতুন যিনি এসেছেন তিনি শিলিগুড়ি থেকে, নাম নির্মল মজুমদার। হঠাৎ করে কেন এক অফিসারের আবির্ভাব হল ঠিক ভোটের আগে। অনেকেই ভাবছে দয়াময় চক্রবর্তীর কোন দুরভিসন্ধি নয়ত? আগের নির্বাচনে গ্রাম দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। দয়াময় খুব অল্প ভোটে সদানন্দর কাছে হেরে যায়। কিছুদিন অফিসে পায়চারি করার পর নির্মল মজুমদারকে চণ্ডীপাটে দেখা গেল। সালিশি সভাতে আলোচনা হল চণ্ডীপাটে যে ভূমিসংস্কার হয়েছিল দশবছর আগে তাতে আর্থিক তছরুপের সন্ধান। সবার চক্ষু চড়কগাছ। নির্মল মজুমদারকে বহিরাগত হিসাবে অনেকেই সন্দেহ করা শুরু করল। এমনকি দয়াময় চক্রবর্তীর দালাল হিসাবে ঘোষণা করা হল। কিন্তু দুধের মধ্যে যা চোনা পড়ার কথা তা হয়ে গেল। একটি গ্রাম যা এতো বিপদসংকুল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে এরকম আরও ইতিহাস খোঁজার ধৃষ্টতা কে দেখাতে যাবে? তবে এই ঘটনাতে সদানন্দর মুখ পুড়ল বটে এবং তাও তার সত্য যাচাই করার আগেই। তবে এই যে একটি সন্দেহ — যেন একটি ধামাচাপা দেওয়া ছাই আর তার থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু হল। ঠিক যেমনটা কেশব দাসের ক্ষেত্রে হয়েছিল। মানুষের যে কৃত্রিম অবচেতনার গুণ্ঠন রয়েছে, তাতে সাবলীল চলন-গমন হয় নির্মোঘ বহির্বিশ্বের প্রবৃত্তির, সাময়িক ভাবে চোখের নিমেষে ধুলো দেয় আমাদের বৈচিত্র প্রাকরণ, সীমাহীন তরঙ্গে ভেসে যায় সম্পূর্ণ সত্য, পঙ্গু হয়ে যায় আমাদের বিচার ক্ষমতা। এক গ্রহণ নেমেছে  নিয়ামতপুরে — সত্য, মিথ্যা আর ধূসর-কে বিভাজন করার এবং তাতে সবার আগে যাকে পাড় হতে হবে সে হল ঊর্মিলা চক্রবর্তী।

মাঝখানে ঊর্মিলা শহরে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিল। হঠাৎ করে সে আবার গ্রামে আবির্ভূত হল। ইতিহাসের প্রতি নির্মোহ নিঃস্পৃহ দৃষ্টিভঙ্গি যদি এই গ্রামে কারো থেকে থাকে সে হল ঊর্মিলা। কেউ না কেউ ব্যাক্তিগত, ঐতিহাসিক, সামাজিক কিংবা বদলার প্রেক্ষিতে ইতিহাস পর্যালোচনা করে থাকে। সেদিক থেকে ঊর্মিলা যখন নির্মোহতার টিলা থেকে নিয়ামতপুরকে দেখে সে শুধু দেখতে পায় তার ছিন্নভিন্ন শাড়ী। অনেকেই দশকথা বলছিল যে ঊর্মিলা দিল্লি-বম্বে অথবা কলকাতা চলে গিয়েছে। কিন্তু সব সম্ভাবনাকে খারিজ করে নচিকেতার মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন। রক্তে-মাংসে ঊর্মিলার আবির্ভাব। দয়াময় চক্রবর্তী গ্রামে ফরমান জারি করল — যদি কেউ ঊর্মিলাকে স্থান দেয়, তাকে দশজনের সামনে নাকখত দিয়ে একঘরে করা হবে। সদানন্দর হিম্মত হল না যে ঊর্মিলার হয়ে দশজনের সামনে সহায়তার হাত বাড়াবে। এমনিতেই আর্থিক তছরুপের দায়ে সে মাথা উঁচু করে চলতে পারছে না, তাই সে আর আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিতে চায়নি। অথচ প্রত্যাবর্তনের আগে প্রায় দু’মাস ধরে ঊর্মিলা আর সদানন্দর চিঠি চালাচালি হচ্ছিল এবং সেটার পুরো কথোপকথন অবিনাশ নজরে রেখেছিল। অবিনাশ একদিন নিজে দোকানে বসে যখন পড়াশোনা করছিল। হঠাৎ করে তার নজর পড়ল পুরনো দৈনিকের ভেতরে একটি খামে মোড়া সাদা কাগজ। তার ভেতরে ঊর্মিলাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি —

“ঊর্মিলা, আমি শুনেছি তুমি শহরে চলে গিয়েছ। তা ভালোই করেছ। আগে থেকেই বলে রাখি আমি কোনদিন কাউকে, বিশেষত কোনও মহিলাকে চিঠি লেখিনি। আর তোমার মত এতো সুন্দর কইতে আর লিখতেও পারব না। ফলে, মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। আমার এখনও মনে আছে, তুমি কীভাবে একবার দুর্গাপূজাতে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলে। ঠিক মনে পড়ছে না কোন চরিত্রে। তবে নাটকে তোমার একটা কথা আমার খুব ভালো লেগেছিল, “তোমাকে দেখিয়া মরিবার ইচ্ছা ছিল, সে সাধ পূর্ণ হইল, কিন্তু তোমাকে দেখিলে মরিতে আর ইচ্ছা হয় না।” ও হ্যাঁ! কুন্দ নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলে। সেবারই আমাদের গ্রামে শেষ কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। সবাই আমাকে বলেছিল আমি নাকি তোমাকে উস্কে দিয়ে মঞ্চে উত্থাপন করেছিলাম। তারপর থেকে তোমার আর আমার মধ্যে কোনও কথা হয়নি। মাঝে মাঝে রাস্তায় হরেন বণিকের দোকানে যাওয়ার সময় ওই যা চখাচখি। তোমার সাথে আমার কথা বলার অনেক সাধ ছিল। তুমি হলে গুণী মানুষ। রাজনীতি, দোকানপাট সেরে যতটা সময় পাওয়া যায় ওই গান বাজনাতে কেটে যায়। তোমার সাথে একদিন গান গাওয়ার খুব ইচ্ছে। তোমার স্বামী আমাদের বাড়িতে প্রথম এসেছিল গানের আসরে। খুব ভালো লোক ছিল দশরথ। তুমি আবার ফিরে এসো গ্রামে। আমি জানি তোমার শ্বশুর অনেক ঝামেলা করবে, তবে গ্রামের প্রধান আর তোমার স্বামীর বন্ধু হিসেবে এটুকু তো করতেই পারি। তাই না?”

ইতি,
তোমার ভালো চাওয়ার লোক,
সদানন্দ দাস।

 

দৃশ্যমান স্মৃতি আর আচমকাই মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া পুরোটাই এক ঝলকানি — ফিরে আসে আর ফিরে যায়। এগুলোকে ধরার লোক নেই। অবিনাশ বুঝতে পারে না কেন তার বাবা হঠাৎ করে ঊর্মিলা চক্রবর্তীর সাথে চিঠি চালাচালি করতে গেল। সব কি উপঢৌকন? অবিনাশ আর দিব্যেন্দু — দিব্যেন্দু আর অবিনাশ! অবিনাশের মনে নেই সে শেষ কবে তার মা-র কথা ঘুমনোর সময় ভেবেছিল। ভুপেন ভট্টাচার্য একদিন টিউশনে বলেছে যে মা-র কথা স্মরণ ঘুমলে মা-কে দেখা যাবে। স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্ন কখন যে এক হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। বাস্তব আর কক্ষণও নিগূঢ় থাকেনি। স্বর্গীয় ঊষা দাস আর কক্ষণও আসেনি যখন অবিনাশ তাকে দেখতে চেয়েছিল। স্থান-কাল-পাত্র কখনও কোন সাহিত্যিকের খাজাঞ্চিখানা হয়ে আর থাকে না — যেখানে চরিত্ররা গিয়ে বর্গা কাটে, চরিত্ররা মারা যায় তাদের সুযোগ্য স্থানে। নিমজ্জিত হয় স্থিতধী বিলাপে। শুধু কিছু বিরামহীন ব্যাধি, নাছোড়বান্ধা টান আর আঠালো সম্পর্ক টেনে রাখে বর্তমান আর পুরাঘটিত অতীতকে। মধ্যেখানে তৃষ্ণার্ত হয় শুধু স্মৃতিমেদুরতা — দৈহিক মেদুরতা। ব্যাধি আর মানবিক সম্পর্কের মধ্যে কোনও বিভেদ খুঁজে পায় না অবিনাশ। দুটোই অসতর্কতার ফসল। প্রথমটি না জেনে বুঝে আর পরেরটি বোঝার পরও। সে যাই হোক, ঘর-বাড়ি-স্মৃতি যার-ই প্রতিবিম্ব অবিনাশ দেখুক না কেন তা আজ কিছুটা অচেনা, নড়বড়ে। নিয়ামতপুর হল এমন এক জায়গা যেখানে কেউ ডুকরে-ডুকরে কিংবা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেও  কেউ খবরটিও নিতে আসে না। ফলে অবিনাশ এক দীর্ঘশ্বাস নিলো, তারপর আবার দীর্ঘশ্বাস নিলো — একদম বক্ষপাঁজর থেকে প্রত্যেকটি বায়ু শুষে নিয়ে বাতাসে ছেড়ে দিল, তবুও সদানন্দর থেকে কোনও সদুত্তর মিলল না। সদানন্দ নিজেকে আরও গুটিয়ে নিল এক অতল গহ্বরে — যেখানে সচরাচর কোন মানুষ পদচারণ করে না। নিরাশা যত গভীর হয়, মৃত্যু ততটাই নিরালম্বিত হয়। বাঁচতে চায় সদানন্দ। অবিনাশ তাদের চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ খোঁজার চেষ্টা করে। সে শিকড় খোঁজে। সে মূল ধরতে চায়। ডাল পালাকে আগলে ধরতে চায়। দলিল-দস্তাবেজ খুঁজতে গিয়ে অনেক কিছু সে খুঁজে পায় — তাদের যুক্তফ্রন্টের আমলে দেওয়া জমির দলিল, তার ঠাকুরদার কুষ্ঠী, ময়মনসিংহ গীতিকা আর স্বাধীনতার পূর্ববর্তী জমির একটি পুরনো দলিল, একটি ছাতা ধরা ‘কম্যুনিস্ট ম্যানিফ্যাসট’। মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, যে কোন ভাবে, যে কোনও উপায়ে — শুধু একটু তার কথা বলবার মত লোক প্রয়োজন। তবে অবিনাশ জীবনে বৈপরীত্যর সন্ধান পেয়ে গেছে তার বাবার মাধ্যমে। সবাই তাই নয় কি? অবিনাশ আজ ঘুমতে গেল অনেক জলদি, সচরাচর সে এটা করেনা। তার বিশ্রাম প্রয়োজন।

(ক্রমশ)

পরবর্তী পর্ব…

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *