পুনর্ভবাপুত্র। নবম পর্ব। লিখছেন আহমেদ খান হীরক

0
নাকের নিচে পেন্সিলে আঁকা দুর্বাঘাসের মতো গোঁফ নিয়ে তখন বেহদ চিন্তায় আছি। এই গোঁফ লইয়া আমি কী করিব? গোঁফ ক্রমশই ঘন হচ্ছে এবং আমার রক্তহীন ফ্যাকাশে ফরসা মুখে তা অত্যন্ত বাজেভাবে কটকটে হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই লুকিয়ে লুকিয়ে আয়না দেখি। আমি চাই না আমার নাকের নিচের এই জায়গাটা এরকম অসম্ভব বাজে দেখাক।
তাই সমাধান কেচি।
ফলে সেজো ভাইয়ের পাতা কাটা কেচি দিয়ে একটা চেষ্টা করি আমি। জিরিজিরি করে কাটার চেষ্টা করতে গিয়ে অপক্ক হাতে দুর্বাঘাস কাটলাম খাবলা খাবলা করে। কোথাও আছে কোথাও নাই। নিজের দিকে তাকিয়ে শোকে আমার পাথর তো পাথর আমার একেবারে বরফ হওয়ার দশা!
আরো কিছুক্ষণ কেচি চালিয়ে সেগুলো সাইজ করার চেষ্টা করলেও ফল হলো উল্টো–গোঁফগুলো আরো বেসাইজ হয়ে পড়ল। কেচি ছেড়ে হাত অটোমেটিকালি চলে গেল নাকের নিচে। দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য কোনো একটা স্যালোন।
পুনর্ভবার পাড়ে আমাদের রহনপুর। নদী থেকে উঁকি দিলে রহনপুর দেখা যায় না; কিন্তু রহনপুর থেকে উঁকি দিলেই পুনর্ভবা। ঢালের এমন কেরামতি। তো সেই ঢালে আমাদের বড় বাজারে। বাজারে হাতে গোণা কয়েকটা স্যালোন।
 এতদিন স্যালোনগুলোর দৈন্যদশাই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বাদশা ভাইয়ের কিছু একটা হয়ে যায়; আর তিনি তার ভাঙাচোরা চেয়ার-আয়না সরিয়ে, বলতে গেলে, পলক ফেলার নিমিষে, প্রায় সব পাল্টে দেন। ঝা চকচকে কাঁচ, ঘূর্ণি চেয়ার, ফোম, বৈদ্যুতিক বিজবিজ রেজর দিয়ে এমন একটা চেহারা দিয়ে ফেলেন স্যালোনটার যে ভেতরে ঢুকতে আমাদের ভয়ই হয়। মনে হয় এ স্যালোন নহে নহে আমাদের তরে গো!
কিন্তু বাজারে পৌঁছালে দেখি দেখি সেই আমাদের তরে না হওয়া বাদশা স্যালোনই শুধ খোলা। অন্যগুলো বন্ধ। অগত্যা গোঁফে হাত দিয়ে আমাকে সেদিকেই পা চালাতে হয়। কেননা যত দ্রুত সম্ভব আমার গোঁফ সাইজে নিয়ে আসতে হবে। না হলে এ মুখ আমি সোমাকে দেখাবো কী করে!
এর মধ্যে বলে নিই সোমার সাথে স্কুলগোয়িং চোখাচোখি তখন কেবলই শুরু হয়েছে। ফলে এই ছ্যাড়াব্যাড়া গোঁফ, সকালবেলা ব্রিজের পাশে দাঁড়ানো, সোমার বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং সবই আসলে একটা সুরেই বাঁধা। তাই যে করেই হোক আগের চেহারায়, পারলে একটু ঝকমকে খোমায়, নিজেকে ফিরিয়ে আনতেই হবে!
কিন্তু স্যালনে ঢুকতেই বিপত্তি। ঘূর্ণি চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে দেখি বসে আছেন সামু। আমাদের পুনর্ভবার ওয়ান এন্ড অনলি সামু পাগলা।
সামুর মাথাভর্তি ময়লা-ধূলা-ঝাঁকড়া চুল। আর গালভর্তি এলোমেলো গোঁফদাড়ি। সামু রহনপুরের বিখ্যাত পাগল। কথা বলে না। মাঝে মাঝে ‘ইটাকিটা কি…ইটা’ এ ধরনের শব্দ করে। তাতে কী বোঝাতে চায় তার চেষ্টা রহনপুরবাসী কবেই পুনর্ভবায় জলাঞ্জলি দিয়েছে। তবে কথা দিলেও লোকটাকে দেয় নি। সামু পাগল হলেও, এ এলাকায়, সম্ভ্রান্ত। তার চল আছে সবখানেই।
রহনপুরে কিন্তু নানান কিসিমের পাগলেরই আনোগোনা আছে। থাকার জায়গা হিশেবে রহনপুরকেই কেন তারা বেছে নেয় তার গবেষণা কেউ কোনো দিন করে নি। কিন্তু পরে আমার মনে হয়েছিল এটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আসলে রহনপুর রেলস্টেশন।
রহনপুর রেলস্টেশনটা বাংলাদেশের এক প্রান্তের শেষ স্টেশন। অর্থাৎ এখানে এসে ট্রেন একেবারেই থামত। এরপর কয়েক মাইল গেলেই তো ইন্ডিয়া! ফলে রেলবাবাজির আর কোথাও যাবার জায়গা তো ছিল না। এখান থেকে ট্রেন আবার আমনুরা, রাজশাহী, ঈশ্বরদি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে বের হতো ঠিকই কিন্তু তার জন্য বেশ দীর্ঘ সময় লাগত। হয়ত পাঁচ ঘণ্টা, চার ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা! এবার ট্রেনে চড়ে বসা পাগলেরাও অপেক্ষা করতে করতে শেষে গিয়ে এই স্টেশনে নামত। ধারণা করি কেউ কেউ হয়ত ট্রেনে আবার উঠত, কিন্তু বেশিরভাগ পাগলই না উঠে বরং ছড়িয়ে পড়ত স্টেশন বাজার, কলেজমোড় বা নতুন বাজারের দিকে। ফলে রহনপুরের পাগলেরা বেশিরভাগই ছিল রেলবাহিত!
এ ছিল পাগলদের পদার্পণের কারণ। কিন্তু পাগলেরা রহনপুরে থেকে যেত কেন? ফিরত না কেন?
কারণ বোধহয় এই যে রহনপুর বরেন্দ্র এলাকার হলেও এখানকার মানুষেরা আমুদে, বোকাসোকা, ভোজনপ্রিয়, হাস্যমুখী ও রহমদিল ছিলেন; পারস্পরিক স্নেহের চল ছিল মারাত্মক রকমের।
আর এই বাজারের মধ্যে, পারস্পরিক স্নেহের ভেতরেই, আমাদের বেড়ে ওঠা। সকালে হেলতে-দুলতে এসে দোকানিরা বাজারের দোকান খুলত। তারপর চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেয়ে, ধূমপায়ীরা সিগারেট টেনে, আবার দোকানে ফিরত। দোকানে বেশি ভিড় হয়ে গেলে এমনকি বিরক্তও হত। দোকানি দোকানি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকলেও কখনো তা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে যেত না। বরং আকাশে একটু মেঘ উঠলে দোকান বন্ধ করে দোকানিরা অসময়ে হয় বাড়িতে ছুটতেন না হয় চার-পাঁচটা দোকানি মিলে পিকনিকের আয়োজন করত। তাতে গরুর মাংস, তাতে খাসির মাংস, তাতে মুরগি, তাতে পোলাও, তাতে খিচুড়ি। এসব আলটপকা বিনোদন ছাড়াও তাদের নিয়মিত বিনোদন ছিল বৈকালিক খেলাধূলা। দুপুরে একটা ভাতঘুম দেয়ার পর, রোদটা পশ্চিমে মিলিয়ে যেতে ধরলে রহনপুরের দোকানিরা আবারো হেলতে-দুলতে এসে দোকান খুলত। কিন্তু এবেলা কর্মস্পৃহা তাদের আরো কম। তাদের মন তখন হয় দাবায় না হয় ক্যারামে। একেকটা দাবার আসরে দুই জন খেলোয়াড় কিন্তু তাদের ঘিরে কমপক্ষে পনের জন মানুষ। তাদের প্রত্যেকে কোনো না কোনো প্লেয়ারকে সাপোর্ট করছে। আমরা বলতাম ‘দালালি’ করছেন। এবং খেলার চাল নিয়ে তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, চিল-চিৎকার খেলোয়াড়দের থেকে সবসময়ই বেশি থাকত। বাঁশের চাইতে যে কঞ্চি দৃঢ় এই প্রবাদ আমাদের স্কুলে শিখতে হয় নি।
আমার মনে হতো খেলোয়াড়েরা বরং বেশ একটা বিপদে পড়ে যেত খেলতে বসে। কেননা কোনো একটা ভুল চাল দিয়ে বসলে সমর্থকরা প্রায় ধমকে উঠত। বলত, এমন একটা চাল ক্যান দিলেন জি ভাই, অ্যা? একবারও ভাবেন নাই নাকি! কী করলেন! কবে থেইকা খেলা শিখছেন মিয়া… আপনার থেইকা তো হামার কাঁইচা ব্যাটাটা ভালী খেলে বাল!
অন্যদিকে ক্যারামে খেলছে চার জন। কিন্তু ওই দালাল ও দর্শক মিলিয়ে প্রায় জনা তিরিশের ভিড়। তারা এমনভাবে ক্যারাম ঘিরে থাকত যে কে প্লেয়ার কে দর্শক বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় থাকত না। ক্যারাম চলছে চা চলছে চপ চলছে… আর চলছে কথার বাহাদুরি!
তো এরকম খাইদাইমুখর আমুদে জায়গায় পাগলেরাও ঠাঁই পাবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেই স্বাভাবিকত্বেই সামু পাগলা বাদশা সেলুনের দামি চেয়ারে পা তুলে আঙুলের ফাঁকে সস্তা সিগারেট ঘুরাতে ঘুরাতে আমার দিকে গম্ভীরভাবে তাকানো। মুখে একটা মিঠে হাসি।
বাদশা ভাই তখনই ঢোকেন।
–কী করবা?
আমি নাকের নিচ থেকে হাত সরাই। বাদশা ভাই যা বোঝার বুঝে ফেলেন। হেসেও দেন। বলেন, ধ্যার পাগলা, হামার কাছে চইল্যা আসতা! হামি ঠিক করে সাইজ করে দিতুন! আচ্ছা তুমি ওইখানে বসো…আগে সামুর চুলগুলা কাইটা দিই!
তা আমিই কিন্তু কাস্টমার। সামুর চুল-দাড়ি মাসান্তে একবার মাগনা কেটে দেন বাদশা ভাই। কিন্তু রহনপুর স্বর্গছেঁড়ার মানুষ বলেই তিনি কাস্টমারকে বসিয়ে কেচি ধরেন সামু পাগলার চুলে। কচকচ করে কেটে চলেন তার চুল।
সামু পাগলার এই এক মজা। কোথায় কখন কী করবে সব আগে থেকেই পাকাপোক্ত। একেবারে বন্দোবস্ত করা।
বাদশা সেলুনের একপাশে কলাপট্টি। এখানে সোমবারের হাটে কলার দোকান বসে। এছাড়া কাপড়েরও বেশ কয়টা দোকান—ফলে এটা কাপড়পট্টিও। আর এসবের পাশেই আমাদের ডিনা আপাদের বাড়ি। এই বাড়িতে সামুর দুপুরের খাবার হয় নিয়মিত। আবার রাতের খাবারটাও আরেকটা বাড়িতে বাঁধা। এছাড়া যখন যে বাড়িতে যায় খাওয়া পাওয়া নিয়ে তার কখনো কোনো ঝামেলাও হয় না। সকালবেলা পোস্ট অফিসের কাছে চলে আসে। রুটির দোকান থেকে কলাইয়ের রুটি নেয় ঝালমরিচের সাথে, কখনোবা বেগুনভর্তা। তারপর বেঞ্চের ওপর বসে পা নাড়াতে নাড়াতে বেশ জমিদারি ভঙ্গিতে রুটি খাওয়া শেষ করে। শেষ করেই কোনো একটা সিগারেটের দোকানে দাঁড়ালে কেউ না কেউ তাকে একটা সস্তার সিগারেট ধরিয়ে দেবেই দেবে। সে তখন সিগারেটটা নিয়ে একটা চায়ের দোকানে বেঞ্চের ওপর বসে চা খেতে খেতে সিগারেট খাবে আরাম করে। এটা প্রতিদিনের এত প্রচল ঘটনা যে আমরা এখন আর এগুলোকে আলাদা করে দেখতেও পারি না। যেন সূর্য ওঠা আর ডোবার মতোই এ এক বিষয় চিরন্তন।
তবে সামুর এমন খাওয়া-দাওয়া আর সিগারেট ঘুরানো দেখাটা ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা। তার ভাব-ভঙ্গীর মধ্যে জমিদারি ভাব ছিল বলেই হয়তো তাকে নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনাও চালু হয়ে গিয়েছিল বাজারে। কেউ কেউ বলত সে আসলে অনেক বড়লোক বাড়ির কেউকেটা টাইপের কেউ একজন ছিল। কিন্তু জায়গা-জমি ইত্যাদি নিয়ে কোনো ঝামেলার কারণে তাকে আকন্দরস খাইয়ে পাগলা করে দিয়েছে।
এসব গল্প শোনার পর আমরা আকন্দ গাছের সামনে যে সভয়ে দাঁড়িয়েছি সে গল্প অন্যত্র। এমনকি আকন্দর বেগুনি সুন্দর ফুলকেও তখন মনে হয়েছে বিপন্নকর রহস্যময়। আকন্দের ফলকে দেখেছি বিভ্রান্তি নিয়ে। সেই ফলে যেন সামুর মুখ। যে মুখে রাজ্যের সরলতা, কিন্তু চোখে এক অধ্যাস।
কেউ কেউ বলে সামু আসলে এ দেশেরই না।
হয়ত ভারত থেকে এসেছে। বর্ডার ক্রস করেছে। এ কারণেই তো তার ভাষা বোঝা যায় না। কিন্তু কী ভাষায় কথা বলে সামু? হিন্দি তো না। ডিডি ন্যাশনালের বদৌলতে আমরা হিন্দিটা বেশ বুঝতে পারে। কেউ কেউ তো বলতেও পারি। তাহলে অন্য কোন ভাষাতে কথা বলে সামু?
নিশ্চয় অন্য ভাষাতেই বলে। ভারতে তো কত রকমের ভাষা। সামু তাহলে ভারতেরই?
কেউ কেউ বলে সামু আসলে পাগলই না। হয়ত সে গোয়েন্দা।
গোয়েন্দা?
হ্যাঁ। গোয়েন্দারা থাকে তো এভাবে।
আমাদের জীবনে গোয়েন্দা বলতে তখন তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা‍ আর শার্লক! ফলে গোয়েন্দা হিশেবে সামুকে খুব আনস্মার্ট লাগে। না, সামু আর যাই হোক, গোয়েন্দা হতে পারে না।
এরমধ্যেই কারা আবার বলে সামু ইন্ডিয়া থেকেই এসেছে আর সে গোয়েন্দা না? মানে ওই শখের গোয়েন্দা না। ও আসলে এজেন্ট। ‘র’এর এজেন্ট।
মানে কী?
মানে মাসুদ রানা। মানে ধ্বংসপাহাড় ভারতনাট্যম। মাসুদ রানা যেমন বিভিন্ন কেস নিয়ে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন দেশে, পদে পদে যেমন তার বিপদের হাতছানি; সামুরও ঠিক তেমনই অবস্থা। সেও নিশ্চয় কোনো গোপন মিশন নিয়ে এসেছে। থাকছে এখানে। কথা বলা হয়তো ওপর থেকে নিষেধ। কোনো দিন হয়ত দেখব সামুর শরীরে কেতাদুরস্ত পোশাক। আর কোনো এক বিশেষ অপরাধীকে ধরে সে নিয়ে চলেছে বর্ডারের দিকে।
এও কি সম্ভব?
আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আবার অবিশ্বাসও করি।
কচকচ করে সামুর চুল কাটা চলে। চুল কমাতে কমাতে তাকে প্রায় ন্যাড়া করে ফেলা হয়। সামু নির্লিপ্ত। এরপর সামুর দাড়িগোঁফ কাটা হয়। একেবারে মাকুন্দ ফেস। ফরসা মুখ। সামু আয়না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। আমার চোখে চোখ পড়তেই সে ভ্রু নাচায়। হঠাৎই তার চোখ দুটোকে আর অসংলগ্ন লাগে না। উন্মাদনায় ভরা মনে হয় না। মনে হয় সুস্থ ও সুস্থির কেউ একজন আমাকে ভ্রু নাচিয়ে ‘কী?’ এরকম বলছে। আমি অবাক হওয়ার তেমন সময় পাই না। বাদশা ভাই আমার গোঁফ সাইজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাইজ আর কী? গোঁফ কেটেই ফেলেন। চেহারার হঠাৎ লোমনাশে নিজেকে দেখতে তখন নির্লোম ছালওঠা কুকুরের মতো লাগে। এই চেহারা নিয়ে আমি তবে সোমার কাছে যাবো?
এরমধ্যেই দেখি সামু পাগলা চলে যাচ্ছে। তার চোখে আবার পুরনো অসংলগ্নতা ফিরে এসেছে। আবার সেই বিভ্রান্তি। হাতে ঘুরছে সস্তা সিগারেট। নখে ময়লা। ঠোঁটের কোণে জিরিজিরি চুল লেগে আছে। তার কোনো খেয়ালই নেই।
আমার মনের ভেতর ওই সময় একটা মুহূর্তের জন্য সামু পাগলার ভ্রু নাচানিটা একটা দৃশ্য হয়ে ভেসে ওঠে।
পরের পরের শীতে সামু পাগলাকে এক ভোরে পাওয়া যায় মাছ বাজারের কাছে। মৃত। চাদর জড়ানো শরীর।
পুরো শীতটায় সেবার সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। রহনপুরবাসী এত উষ্ণতাও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে নি। যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। শেষবারের মতো তার মুখটা দেখতে গিয়ে বাদশার স্যালোনে বসা তার ভ্রু নাচানোটা আরেকবার মনে পড়ে। এখনো, কখনো কখনো, আয়নার দিকে তাকালে মনে হয়, সামু পাগলা আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলছে, কী? কী করছিস জীবনটাকে নিয়ে? কতদিন আর সুস্থ থাকবি? কই তোর পাগলামি? কই?
আমি আমার পাগলামিগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। সামু পাগলার মতো সেগুলোও কোথায় কখন কোন শীতে মরে গেছে। তাদের শেষকৃত্য আমি তো নিজের হাতেই করেছি।
(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *