মেদিনীপুর লোকাল। পর্ব ১৬ । ক্ষমতার আস্ফালন। লিখছেন আদিত্য ঢালী
আমরা যতই অরাজনৈতিক বলে দাবী করি কিন্তু আদতে এই দুনিয়ায় কেউই অরাজনৈতিক নয়। রাজনীতি আমাদের জীবনের পদে পদে জড়িয়ে আছে। বুম্বা বলত এলাকাকে বুঝতে গেলে লোকাল পলিটিক্স বুঝতে হবে। এক একটা এলাকার পলিটিক্স এক এক রকম। শুঁকে শুঁকে নাকি বুঝে নিতে হবে এলাকার পলিটিক্সের গতি। তারপর ময়দানে নামতে হবে। আমার আবার কোনোদিনও বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোথাও সুযোগ হয়নি। ইউনিভার্সিটির দিনগুলোতে রাজনীতির ধার ঘেষতে চেয়েছিলাম। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যে কারোর সাথে কথা বলতে যাওয়ার আগে সাতবার প্র্যাক্টিস করে নেয়। জল চেয়ে খাওয়ার হলেও লাজুক বদনে চারবার চেয়ে থাকতে হয়। বলব কি বলব না এই নিয়ে যার দোলাচল চলে, তাকে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসতে নেই। কারণ এই ত্রিশ বছর জীবন কাটিয়ে বুঝেছি যে যত বেশি ভার্বাল তার রাজনীতিতে সম্ভাবনা তত বেশি। আমার রাজনীতি করার ইচ্ছে আর রইল না। শুধু নিজের রাজনৈতিক বোধ যাতে বাড়ে সেই চেষ্টাতেই লেখাপড়াকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। আরও অনেক পরে মনে হয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত না হলে রাজনীতি হয়না। কিন্তু শত চেষ্টাতেও সেই দুর্নীতিকে বাগে আনতে পারিনি। সামান্য দুটাকা রাস্তা থেকে পেলে চোদ্দবার ভাবতে হয়েছে যে নিজের টাকা না হওয়া সত্ত্বেও কি এই কুড়িয়ে পাওয়া টাকায় আমার অধিকার আছে? উত্তর পাইনি। কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের খাতিরে কোনো মন্দিরের বাক্সে বা কোনো ভিখিরির পাত্রে সেই টাকা রেখে এসেছি। কিন্তু বুম্বা বলত নিজের বাইরেও যত অন্যের জিনিসের প্রতি নিজের অধিকার চাপিয়ে দিতে পারবি তত বুঝবি তুই দুঁদে নেতা হচ্ছিস। আমি পারিনি। বুম্বা পেরেছিল। স্কুলের গণ্ডি পার করেই বুম্বা ছুটত প্রতিটা মিছিল মিটিঙে। কলেজ একবছরের মধ্যেই পেয়ে গিয়েছিল পদ। সবাই বুম্বাদা বুম্বাদা বলে ডাকলে দেখতাম ঠোঁটের কোণে একটা অহংকারের হাসি ফুটে উঠত। বড়রা বলত অহংকারই পতনের কারণ। যখন যে দল ক্ষমতায় বুম্বা তখন সেই দলের কর্মী। চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। কোয়ার্টারের মাঠে একদিন রাম খেতে খেতে বলেছিল “এত শত্রু বানিয়েছি এই কয়েক বছরে মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। শালা যেদিন আমায় বাগে পাবে না কেউ আর আমায় বাঁচাতে পারবে না”। এই বলে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিল। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম “আরে কাঁদিস না। কিছু হবে না”। আমার সান্ত্বনায় বুম্বা বিশ্বাস করেনি আমি বুঝেছিলাম। কারণ এই পৃথিবীর কোনো সান্ত্বনাতেই কেউ কোনোদিন বিশ্বাস করে না। শুধু বিশ্বাস করার ভান করে।
বুম্বা বাঁচেনি। কিছু সময়ের ব্যবধানেই বুম্বা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। পুলিশ রিপোর্টে বলা হয়েছিল রোড অ্যাক্সিডেন্ট। কিন্তু আমরা জানি সব দুর্ঘটনাই শুধুমাত্র দুর্ঘটনা নয়। কিছু দুর্ঘটনা ঠাণ্ডা মাথার খুন। বুম্বার খবর পেয়েছিলাম যখন তখন শহর ছেড়েছি অনেকদিন। অফিস করে করে প্রতিদিন ক্লান্ত হচ্ছি কেবল। কিন্তু বুম্বার সেই আপ্তবাক্য শুরুরদিন থেকে মাথায় ছিল। লোকাল পলিটিক্সকে বুঝতে হবে। সেইমতন চাল। কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলাম। যখন যে দল ক্ষমতায় তখন গোটা গ্রাম তারা চালায়। গ্রামের মানুষের চাহিদা, তারা কী পাবে না পাবে, কী করবে না করবে সমস্তটাই নিয়ন্ত্রণ করে লোকাল নেতারা। নিজেদের দলীয় প্রতিনিধি পঞ্চায়েতে থাকা সত্ত্বেও বকলমে গোটা এলাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটাই চালায় স্থানীয় শাসক দলের নেতারা। তবে এমনটা যে শুধুমাত্র গ্রামে হয় তা নয়। শহরে মিউনিসিপ্যালিটি সিস্টেমেরও হাল একই। তবে সেখানে সমস্ত মানুষ এই সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল নয়। গ্রামের ছবিটা এর উল্টো। সবাই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই সবাই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। এরম একটা পরিবেশে যখন প্রথমবার উপস্থিত হলাম তখন আমার রাজনৈতিক বোধ যতই সিস্টেমের বিরুদ্ধতা করুক না কেন মন কিন্তু সবার প্রথমে আবার সেই বুম্বার আপ্তবাক্য স্মরণ করেছে। এলাকাকে বুঝতে গেলে লোকাল পলিটিক্স বুঝতে হবে। আমি বোঝার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করে বুঝেছি কাউকে ঘাটাতে নেই। আমি এখানকার মেহেমান। কয়েকবছর পর চলে যেতে হবে। এখানে সিস্টেমের বিরুদ্ধতা করা আদতে বোকামো। কারণ সব প্রতিবাদের রাস্তা রোমের দিকে যায় না। সব প্রতিবাদের পথে পাশে কাউকে পাওয়া যাবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। অতএব নিজের ভালো বুঝে চলাই ভালো। মেহেমানসুলভ আচরণ করাই ভালো। তাতে অন্তত নিজের সম্মানটুকু পাওয়া যায়। কারণ গ্রামের মানুষ শহরের মানুষের মত চতুর হয়ে যায়নি এখনও। কিন্তু এক্তিয়ার বহির্ভুত হয়ে অসম্মান পেতে লার ভালো লাগে? আমার অন্তত ভালো লাগেনি।
সেদিন ছিল মাসের প্রায় শেষের দিক। খুব একটা ভিড় নেই। আমার ডেপুটি ম্যানেজার ছুটিতে। দুজন মিলে ব্যাঙ্ক চালাচ্ছি। সিভিক ভলিন্টিয়ার ছেলেটিও সেদিন আসেনি। পাসবুক প্রিন্ট করার লোক নেই। আমাকেই ক্যাশ চালিয়ে উঠে বাইরে গিয়ে বাড়েবাড়ে পাশ বই প্রিন্ট করে দিয়ে আসতে হচ্ছিল। খুব একটা ভিড় না থাকার দরুন তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। মাঝে মাঝে একেবারে ফাঁকাও হয়ে যাচ্ছিল। এদিকে তখন আমার এক বন্ধুর বাবা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। অফিসে বসেই ক্রমাগত খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছিলাম। কখন রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে, কখন হাসপাতাল বদলানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স দরকার ইত্যাদি নানা রকমের কাজের জন্য একে ওকে তাকে ক্রমাগত ফোন করে যাচ্ছি। যত না ফোন করতে হচ্ছিল তার থেকে বেশি ফোন আসছিল। আমার বন্ধুর পাশে তখন কেউ নেই। সে একা একাই সব ব্যবস্থা করে যাচ্ছিল। আমি ছুটি পাইনি। তাই অফিসে বসে ফোনে কথা বলে যতটা মানসিক জোড় ওকে দেওয়া সম্ভব দিয়ে যাচ্ছিলাম। টিফিন টাইমের কিছু আগে কোনো লোক আমার কাছে না থাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে বাথরুমের পাশে গিয়ে ফোনে কথা বলছিলাম। মিনিট তিনেক হয়েছে। নারানদা এসে বলল কাস্টমার এসেছে। আমি হাত দিয়ে ইশারা করে বললাম যাচ্ছি এখনই। আরও মিনিট তিনেক পরে ফোনটা রেখে এলাম। একজন ভদ্রলোক একজন মহিলা ও দুটো বাচ্চা সহ এসেছেন। আমি কাউন্টারে ঢুকতেই বললেন “কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি”। আমি ঘরে দেখে বুঝলাম বড়জোর দশ মিনিটও হবে না আমি উঠে গিয়েছিলাম এবং যখন উঠেছিলাম তখন কেউ ছিল না। আমি কথার উত্তর দিলাম না। ভদ্রলোক রশিদটা দেওয়ার পর দেখলাম তাতে একজন ভদ্রমহিলার নাম লেখা ও তার টিপছা দেওয়া। নাম ধরে ডাকতে ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। আমি শান্ত ভাবে বললাম “আপনি টাকা তুলবেন যখন এরপর থেকে এখানে আপনি স্লিপটা দেবেন”। ভদ্রলোক পাশ থেকে বলল “কেনো আমি দিলে কী হয়েছে? আমি ওর স্বামী। আমি দিলে কী ক্ষতি?” আমি কোন উত্তর দিলাম না। টাকা দিয়ে ওনাদের কাজ মিটিয়ে দিলাম। টাকা নিয়ে পাশবইটা প্রিন্টের জন্য ঢুকিয়ে দিল। আমি উঠে বাইরে বেড়িয়ে পাশবই প্রিন্ট করে দিলাম। প্রিন্ট করতে গিয়েই দেখলাম দুবার কুড়ি টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে। ভালো করে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম ঠিক কাটা হয়নি। দুবার হাজার টাকা করে তুলেছিলেন কিন্তু হাজারের বদলে হাজার কুড়ি অ্যাকাউন্ট থেকে কেটেছে। আমার বুঝতে বাকি রইল না। কারণ এইধরনের কেস এর আগেও দেখেছি। ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম “এই যে হাজার টাকা করে দুবার তুলেছেন কোথায় তুলেছেন?” ভদ্রমহিলা কোনো উত্তর দিলেন না। চুপ করে রইলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম একই প্রশ্ন। উনি এবারে ওনার স্বামীর দিকে তাকালেন। স্বামীটি একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন। ভদ্রমহিলার তাকানোতে কিছু একটা বুঝে সামনে এসে বললেন-
–কী হয়েছে?
–এই যে হাজার টাকা করে দুবার তুলেছেন কোথায় তুলেছেন?
–যেখানেই তুলি না কেন আপনার কী তাতে?
–আমার কিছু না। কিন্তু এই টাকা টা যেখানে তুলেছেন …
–আমার টাকা আমি যেখানে খুশি তুলব আপনি বলার কে?
–আমি কিছু বলছি না। আমি শুধু জিজ্ঞেস করছি যে…
–কেন জিজ্ঞেস করছেন?
–আপনার ভালোর জন্যই জিজ্ঞেস করছি।
–আমার ভালো আমি বেশ বুঝি। আপনি নিজেরটা বুঝুন।
–আমি কিন্তু আপনার কথা ভেবেই জিজ্ঞেস করেছি। ব্যাঙ্ক থেকে তুললে আপনার লস হত না।
–এই এত বকছেন কেন? আমি কোথা থেকে তুলব সেটা আমার ব্যাপার। ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন এত বড় বড় কথা কেন বলছেন। নিজের কাজটা আগে ঠিক ভাবে করুন। মোবাইলে ব্যস্ত না থেকে।
এমনিতেই চিন্তার পারদ ছিল তুঙ্গে তারপর এইসব শুনে মাথা আর শান্ত রাখতে পারিনি। বেশ উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম “কথা বলার আগে ভালো করে ভেবে চিন্তে কথা বলবেন কাকে কী বলছেন। এই চেয়ারে বসতে গেলে না ঘুষ না মগজের দরকার হয়। আর আপনার ভালোর জন্য বলছি আপনি কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন? যেখান থেকে ঐ টাকাটা তুলেছেন না সেখানে আরও কুড়িটাকা বেশি কেটে নিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে তুললে এটা হত না। আর আপনি চিল্লিয়ে যাচ্ছেন। বড় অসভ্য তো”।
আমার কথা না বুঝেই আবার ভুলভাল কথা বলতে শুরু করল ভদ্রলোক। আমিও চুপ করে থাকলাম না। কথার পাল্টা কথা হতে লাগল। ম্যানেজার উঠে এসে হস্তক্ষেপ করে ভদ্রলোককে বুঝিয়ে শুনিয়ে তখনকারের মত পাঠিয়ে দিল। আমায় এসে বলল “তুমি কেন ওকে বলতে গেলে? ও যেখান থেকে পারুক তুলুক না। টাকা কাটছে কাটুক তোমার কি তাতে?” আমি উত্তর দিলাম “আমি তো ওনার ভালোর জন্যই বলতে গেলাম উল্টে আমাকেই কথা শুনিয়ে গেল”।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো। গ্রামে যদি যাওয়া যায় তাহলে হয়ত জনপদ প্রতি একটা এটিএমও পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বেশ কিছু লোক পিওএস মেশিন নিয়ে রাখে কোনো কোম্পনির থেকে। এবারে তারা ব্যাঙ্ক নির্বিশেষে লেফট থাম্ব ইম্প্রেশন অথবা এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা দেয়। তাদের হয়ত কিছু কমিশন থাকে সেই কোম্পানির তরফে। এছাড়াও তারা বাড়তি টাকা কেটে নেয় কাস্টনারের অ্যাকাউন্ট থেকে। বাড়তি টাকাটা বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট কাস্টমারকে দিয়ে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাস্টমার লেখাপড়া না জানা গ্রামের গরীব চাষভুষো মানুষ হয়। তারা বোঝেও না। পাসবই আপডেট করতে এলে তাদের টনক নড়ে। তাও সবাই বোঝে না।
এদিকে এই ঘটনার পর মাথা এমনিতেই গরম তার উপর বন্ধুর বাবার অবস্থা খারাপ। চিন্তার পারদ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খিদেও পেয়েছে এদিকে খেতেও ইচ্ছে করছে না। জোর করে কিছুটা খেয়ে দেয়ে আবার কাজে বসলাম। চারটে বেজে গেছে। অফিস বন্ধ। আমরা গেট লাগিয়ে কিছু কাজ করছি। হঠাৎ একজন এসে গেট ধাক্কাতে লাগল। নারানদা কাছে গিয়ে খুলে দিতেই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল স্থানীয় শাসক দলের এক নেতা। যিনি সারাদিন এই পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই থাকেন। দলের হতে খাটেন। জেলার উচ্চপদাধিকারী। এর বাইরে অন্য কোনো কাজ উনি করেন বলে আমার ধারণার বাইরে। উনি এসেই জিজ্ঞেস করল “ব্রাঞ্চের দায়িত্বে কে আছেন?” আমি বললাম “ম্যানেজার বাবু বাথরুমে গেছেন কী বলবেন বলুন আমায়”। উনি বললেন “না আমি আপনার সাথে কথা বলব না, ম্যানেজারকে ডাকুন”। আমি ডাকার আগেই ম্যানেজার চলে এসেছেন।
–আপনি ম্যানেজার তো?
–হ্যাঁ বলুন
–এটা আপনাদের কী নিয়ম যে বাইরে থেকে টাকা তোলা যাবে না।
–এরম তো কোনো নিয়ম নেই।
–তাহলে আপনারা কেন মানুষকে হ্যারাস করেছেন?
–কাকে হ্যারাস করা হয়েছে।
–করা হয়েছে। সে আমাকে বলতেই আমি ছুটে এসেছি। আপনাদের সমস্ত ভালো খারাপের দেখভাল করা হয় তাও কেন আপনারা হ্যারাস করছেন?
–দেখুন আপনার কোনো ভুল হচ্ছে কাউকে হ্যারাস করা হয়নি। ওনাকে ওনার ভালোর জন্যই বলা হয়েছে।
–আপনারাই কি ওনার ভালো বুঝবেন? ওনার ভালো ওনা কেউ বুঝতে দিন।
–আমাদের ক্যাশিয়ার বাবুর সাথে কথা হয়েছিল তো আপনি ওনার থেকে ডিটেলসটা শুনুন আপনিও বুঝবেন।
আমার দিকে তাকিয়ে ম্যানেজার বলল “তুমি বল তো কি হয়েছিল”। আমি যথারীতি সবটা বললাম। উনি আমার কোনো কথাই গুরুত্ব দিয়ে শুনলেন না। আমার বলা হয়ে যাওয়ার পরেও উনি সেই একই বুলি আওরাতে থাকলেন। ওনার প্রশ্নে আমিও জবাব দিতে লাগলাম। কিন্তু ওনার বলার তেজ প্রক্রিয়া আমার থেকে বেশি হওয়ায় খুব সহজেই উনি আমাকে ছাপিয়ে যেতে পারলেন। আমার বক্তব্য কোনো যায়গা পেল না। আমার সহকর্মীরা এসে ওনাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কথা বলে ব্যাঙ্কের বাইরে নিয়ে গেলেন। আমি স্পষ্ট শুনলাম তারা বলল “আরে বাচ্চা ছেলে ইয়ং ব্ল্যাড ভুল করে ফেলেছে আপনি নেতা মানুষ আপনার মাথা গরম করলে হয়!” উনি বললেন “না না এগুলো আবার কি? আমার নিজের লোক সে টাকা নিতে এসেছে তাকে ভাই তোমরা টাকা দিয়ে দাও সে কোথায় তুলবে না তুলবে সেটা বারণ কেন করবে?” পাস থেকে আমার ব্যাঙ্ককর্মী একজন বললেন “আরে ছাড়ূন। বাদ দিন। আসুন নীচে গিয়ে চা খাই। মাথা ঠান্ডা হবে”। সবাই নীচে চলে গেল। আমি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে নিজের ভুল খুঁজতে লাগলাম। পেলাম না। উপরে উঠে এসে ওরাই আমায় বলল “আপনি এত কিছু বলবেন না। যেখানে খুশি তুলুক না টাকা ওরা। আপনি এসব নিয়ে কিছু বলবেন না। এদের আবার সেন্টিমেন্ট অনেক। দলাদলি আছে এর মধ্যে”। আমি চাইলে এই ঘটনার মধ্যে ধর্মীয় অজুহাত তুলে আনতে পারতাম। আনিনি। সেই প্রসঙ্গে কাউকে কিছু বলিওনি। না বলাটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ আমার অন্তরের ঈশ্বর আমায় প্রতিনিয়ত বলে চলে মানুষের ঈশ্বর একটাই। তার কোনো ধর্ম নেই।
(ক্রমশ)