ইতিহাসের পথে পথে: একটি ক্রিকেট আলেখ্য। অষ্টম পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়।

0

(গত পর্বের পর)

আরেকবার দেখা যাক  দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৪ সালে অলিম্পিক থেকে সরে যাওয়া এবং ১৯৬৮ সালে ডি’অলিভেরা ঘটনা পর্যন্ত, শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ ক্রীড়াবিদদের আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা ১৯৪৮ সাল থেকে গৃহীত দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী নীতির প্রতিফলন।

১৯৭১ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বয়কট শুরু হয় যাতে তাদের ক্রীড়াবিদদের সর্বস্তরে নির্বাচন নীতি এবং সাধারণভাবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অস্বীকৃতি জানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা পরবর্তীকালে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অলিম্পিক, ফিফা বিশ্বকাপ, টেস্ট ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলার আয়োজন থেকে বাদ পড়ে।

এই বয়কট খেলাধুলা সংক্রান্ত নির্বাচন – এবং বিশেষ করে ক্রিকেটের নীতি ও মতামতের গুরুত্বপূর্ন পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে। ১৯৭৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইউনিয়ন (SACU) তৈরী হয় একটি বহু-জাতিগত, মেধাতান্ত্রিক ভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রে খেলা পরিচালনা করার জন্য যার লক্ষ্য তথাকথিত “স্বাভাবিক” ক্রিকেটের আয়োজন। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ন ভাবে লোক দেখানো ব্যাপার। যাইহোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার পুনঃপ্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য এটি একদমই কার্যকরী হয় নি। প্রজাতন্ত্রের অভ্যন্তরে, অনেক অ-শ্বেতাঙ্গরা এই “স্বাভাবিক” ক্রিকেটে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল, যাকে বর্ণবাদের অধীনে জীবনের ব্যাপক প্রেক্ষাপটে একটি দুর্বল নীতি হিসাবে দেখা হয়েছিল।  আইসিসির ছয় পূর্ণ সদস্যের মধ্যে তিনজন – ভারত, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ – বর্ণবৈষম্যের বিলুপ্তি না হওয়া পর্যন্ত পুনঃভর্তি করতে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছিল।

এক দশকের বিচ্ছিন্নতার পর, দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট দুর্বল ছিল; খেলার মান, দর্শকদের উপস্থিতি এবং শিশুদের অংশগ্রহণ সবই কমে যাচ্ছিল। বিদেশে, খেলাটি বিশ্বকাপ এবং ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের দ্বারা বিপ্লব ঘটিয়েছিল, কিন্তু বিচ্ছিন্নতা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এই বাণিজ্যিক এবং প্রতিযোগিতামূলক খেলা থেকে বঞ্চিত করেছিল।

১৯৭৯ সালে, আইসিসির একজন ইংরেজ প্রতিনিধি ডগ ইনসোল দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইউনিয়ন-এর আলী ব্যাখ্যারকে বলেছিলেন: “যতক্ষণ না বর্ণবৈষম্য চলে যায়, আপনি বিশ্ব ক্রিকেটে ফিরে আসার কথা ভুলে যেতে পারেন।”

ব্যাখ্যার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইউনিয়ন “দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে” কাজ করতে বাধ্য হন । যেহেতু বিদেশি খেলোয়াড়রা বয়কট ভেঙে তাদের কেরিয়ার বিপন্ন করছিল, তাই SACU কে তাদের টার্গেট করা খেলোয়াড়কে প্রলুব্ধ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়েছিল। এই বিদ্রোহীরা স্প্রিংবক দলের বিরুদ্ধে “অনুষ্ঠানিক” আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন যারা নিজেদেরকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটের যেকোনো দলের মতো শক্তিশালী বলে মনে করত। ব্যারি রিচার্ডস, গ্রায়েম পোলক, ক্লাইভ রাইস এবং গার্থ লে রু এই দলের সদস্য। ১৯৯০ সালে তাদের শেষ পর্যায়ে, তাদের মধ্যে অনেকেই অবসর গ্রহণ করেছিলেন এবং হ্যান্সি ক্রোনিয়ে এবং অ্যালান ডোনাল্ডের মতো তাদের স্থলাভিষিক্ত হন।

অন্য দিকে বয়কট আন্দোলন এই ধরনের যেকোনো সফরের বিরোধিতা করেছিল; তারা মনে করেছিল যে এই বিদ্রোহী খেলোয়াড়েরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।  কিন্তু SACU জোর দিয়েছিল যে সমস্ত তহবিল সরাসরি বাণিজ্যিক স্পনসরশিপ থেকে এসেছে এবং ট্যুরগুলি সরকার থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে, অন্তত, বিদেশী বিরোধীরা তাঁদের বিরোধীতা প্রমাণ করতে পারেনি, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরে, অ-শ্বেতাঙ্গ বিরোধিতা, বর্ণবাদী নীতির জন্য, সংবাদপত্র, বক্তৃতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধের কারণে খুব কমই খবর পাওয়া গিয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্রোহী সফরগুলি ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাতটি ক্রিকেট সফরের একটি লম্বা কূটনৈতিক চাপ তৈরীর পথ। এগুলিকে বিদ্রোহী সফর বা রেবেল ট্যুর হিসাবে ধরা হয় কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাগুলি বর্ণবাদের কারণে এই সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিল।

বিভিন্ন জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্মেলন এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির স্পষ্ট অস্বীকৃতি সত্ত্বেও এই সফরগুলি সংগঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। ট্যুরগুলি ছিল ব্যাপক পরিমাণে সমসাময়িক বিতর্কের বিষয় এবং ক্রিকেট খেলার জগতে  আজও অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের প্রচুর চেষ্টা করেন  খেলায় অংশগ্রহণকে স্বাভাবিক করার, যার মধ্যে ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইউনিয়ন (SACU) গঠন করাও ছিল।

শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং কালার্ডের জন্য ক্রিকেট, কিন্তু আইসিসির একটি শক্তিশালী ব্লক, অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ বর্ণবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পুনঃভর্তি বিবেচনা করতে অস্বীকার করে।

ফলস্বরূপ, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে, দেশের ক্রিকেট এক দশকের বিচ্ছিন্নতার কারণে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, খেলার মান নেমে যায়, উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণ উভয়ই হ্রাস পায়, এমন একটি সময়ে যখন আন্তর্জাতিকভাবে খেলাটি চূড়ান্ত নতুন মাত্রা লাভ করেছিল। ১৯৭৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সূত্রপাত হয়, ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট খেলাটির টিভি প্রচার বেড়ে যায়।

ফলস্বরূপ, যেহেতু SACU-এর একজন সিনিয়র প্রশাসক আলী ব্যাখার কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবৈষম্য বলবৎ থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না, তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনকে ঘুর পথ দেখায়; মূলত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আফ্রিকা অন্য উপায়ে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের আলাদা সফরে প্ররোচিত করে।

যেহেতু খেলোয়াড়রা সম্ভাব্য সফর দ্বারা তাদের কেরিয়ার বিপন্ন করবে, তাই প্রত্যেককে  যথেষ্ট বেশি অর্থ দেওয়া হয়। এই ধরনের প্রথম সফরটি হয়েছিল,  ১৯৮১-৮২ আন্তর্জাতিক মরসুমে এবং এতে ইংরেজ খেলোয়াড়দের একটি দল খেলতে আসে।

১৯৮০৮১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় ইংল্যান্ড দলের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সম্ভাবনা প্রথম আলোচনা হয়, যখন ডেভিড গাওয়ার, ইয়ান বোথাম, জন এমবুরি, জিওফ্রে বয়কট এবং গ্রাহাম গুচ সহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এই ব্যাপারে কথা বার্তা শুরু করেছিলেন অত্যন্ত গোপনে।

এই ধরনের একটি ট্রিপ করার একটি আগ্রহ যে তৈরী হচ্ছে তা ১৯৮১  মরশুমের শেষের দিকে, টেস্ট অ্যান্ড কাউন্টি ক্রিকেট বোর্ড (টিসিসিবি) জানতে পেরে যায় ইংল্যান্ডের নির্বাচকদের মধ্যে একজন নির্বাচক মারফত যে জন এডরিচ একটি ছোট পরিসরে সফরের পরিকল্পনা করছেন, যেটি বাতিল করা হয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে এবং সতর্কতা জারি করা হয়েছিল যে কেউ এই ধরনের উদ্যোগ নেবে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।

১৯৮১-৮২ সালের ভারত সফরের সময় একটা টার্নিং পয়েন্ট আসে যেহেতু সফরটি একটি দীর্ঘ, ছয়টি টেস্ট ম্যাচের সিরিজ ছিল যা অনেক খেলোয়াড়কে ক্লান্তিকর বলে মনে হয়েছিল। যদিও কিছু খেলোয়াড়, বিশেষ করে বোথাম এবং গাওয়ার, এই প্রস্তাবিত সফর থেকে প্রত্যাহার করেন নিজেদের মূলত কেরিয়ারের কথা বিবেচনা করে, অন্যরা, যেমন গুচ, যাওয়ার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

গুচ বলেছিলেন যে ভারত সফরের সময় তিনি বিরক্ত বোধ করছিলেন এবং তার খেলাকে আরও শক্তিশালী করার উপায় হিসাবে লাভজনক ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে দেখেছিলেন।

সফরটি মূলত হলিডে ইনস দ্বারা স্পন্সর করা হয়, যারা বোথামকে সফরকারী দলে রাখতেই হবে এই  শর্তযুক্ত করেছিল। যখন তিনি দেখলেন বোথাম নেই,  তখন খরচের জন্য  সাউথ আফ্রিকান ব্রিউয়ারিজকে ছেড়ে দেওয়া হয়, যার ফলে সফরকারী দলটিকে “সাউথ আফ্রিকান ব্রিউয়ারিজ ইংল্যান্ড ইলেভেন” হিসাবে নামকরণ করা হয়।

ইংল্যান্ড দল ১৯৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে ফিরে আসে এবং পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সফরের জন্য খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সফরের খবর অবশেষে প্রকাশ্যে আসে যখন সাতজন খেলোয়াড় ১ মার্চ জোহানেসবার্গে উড়ে যায়।

১৯৮২ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা, এক দশকের বেশি বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও, বিশ্বের সেরাদের মধ্যে বিবেচিত খেলোয়াড়দের একটি সেরা প্রজন্ম ছিল। ইংলিশ একাদশের বিপক্ষে পরিকল্পিত এই সিরিজে খেলার জন্য এই খেলোয়াড়দের অনেককেই SACU নির্বাচিত করেছিল।

অন্যদিকে, সফরকারী দলের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়রা, কার্যত পূর্ণ শক্তির ইংল্যান্ড দল (শুধুমাত্র ইয়ান বোথাম অনুপস্থিত ছিলেন)। যদিও গ্রাহাম গুচ এবং জন এমবুরি বাদে, বেশিরভাগ বাছাই খেলোয়াড়  তাদের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে উপস্থিত। তিনজন ইংলিশ খেলোয়াড়, লেস টেলর, আর্নল্ড সাইডবটম এবং জিওফ হাম্পেজ, সেই সময়ে কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেননি।

তেসরা মার্চ, ১৯৮২ দক্ষিণ আফ্রিকা কোল্টস এর বিরূদ্ধে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে ইংরেজ দল। ৬৬.২ ওভারে ১৫২/৭ তুলে ইনিংস ঘোষনা করে। আদ্রিয়ান কুইপার ৩৩ রানে ৫ উইকেট পান। গুচ ৩৩ করেন। অবশ্য প্রথম দিন বৃষ্টির জন্য প্রায় খেলা হয়নি। ইংলিশ একাদশের রান ছিল এক উইকেটে ৫১। যাই হোক, জবাবে কোল্টস ৬৬.৪ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭০ তোলে। ব্র্যায়ান হোয়াইটফিল্ড করেন ৩৭।

৬ তারিখ পোর্ট এলিজাবেথে ইংলিশ দল একদিনের ম্যাচে টসে হেরে ৫০ ওভারে ২৪০/৫ তোলে। গুচ ওপেন করতে নেমে ১৩২ বলে ১১৪ করেন। ইংল্যাণ্ডের টেস্ট ক্রিকেটার ডেনিস অ্যামিস অপরাজিত ৭১ করেন। জবাব জিমি কুক (৮২), ব্যারি রিচার্ডস (৬২) ও গ্রেম পোলক (৪৪ বলে অপরাজিত ৫৭) বেধড়ক পিটিয়ে ৪৭.২ ওভারে ৩ উইকেটে ২৪৪ করে ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে নেয়। প্রমাণ করে তাঁরা অতীব শক্তিশালী দল, দশ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও।

৮-১০ ই মার্চ ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের সঙ্গে ম্যাচ ড্র হয়। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের হয়ে কুইপার ৯০ করেন প্রথম ইনিংসে। দল তোলে ২৬৩/৮। এমবুরি ৮৮ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন। জবাবে ইংলিশ দল ২১৮ তোলে। অ্যামিস ৫২ ও গুচ ৫৮ করেন। হবসন ৫৭ রানে ৪ উইকেট পান। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৪/৭ তোলে। পিটার কার্স্টেন অপরাজিত ৬৭ করে। ২৫৯ তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড একাদশ ২২৫/৮ তোলে। বয়কট ৯৫ করেন।

১২-১৫ ই মার্চ, জোহানেসবার্গের প্রথম বেসরকারি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী হয় ৮ উইকেটে। জিমি কুক (১১৪), ব্যারি রিচার্ডস (৬৬), পিটার কার্স্টেন (৮৮) ও গ্রেম পোলক (অপরাজিত ৬৪) দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪০০/৭ পৌঁছে দেয়। তারপর ভ্যান দের ভিজল (৫/২৫) ইংলিশ দলকে ১৫০ রানে ফেলে দেয়। অ্যামিস কেবল অপরাজিত ৬৬ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে গুচ ১০৯ করলে ইংলিশ দল ২৮৩ তোলে। ভ্যান দের ভিজল আবার ৭৯ রানে ৫ উইকেট নেন আর গাই লে রু ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন। জেতার জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা (৩৭/২)।

১৭ই মার্চ ডারবানে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই ৭৯ রানে জিতে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা (২৩১/৬) দাঁড়াতেই দেয় ইংল্যান্ডের দলকে (১৫২)। ভ্যান দের ভিজল আবার বিধ্বংসী (৩/১৯)।

কেপটাউনে দ্বিতীয় বেসরকারি টেস্ট (১৯-২২ মার্চ) ড্র হয়। ইংলিশ দল করে ২২৩ (গুচ ৮৩, ভিজল ৩/৬১, জেফেরিজ ৩/৫৬, কুরি ৪/৫২) ও ২৪৯/৩ (লারকিনস ৯৫, গুচ ৬৮, অ্যামিস অপরাজিত ৭৩)। দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ২৩৫ (কার্স্টেন ১১৪, লিভার ৬/৮৬) ও ৩৮/০।

তৃতীয় একদিনের ম্যাচে জোহানেসবার্গে ২৪ শে মার্চ রান রেটে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা (৫০ ওভারে ২৪৩/৭; গড় ৪.৮৬)। ক্লাইভ রাইস অপরাজিত ৫৮ ও কুইপার ৩৭ বলে ৫৪ করেন। সাইডবটম ৩৫ রানে ৩ উইকেট নেন। জবাবে ইংলিশ দল ২৩ ওভারে ১১১ তুলতে ৭ উইকেট হারায় (গড় ৪.৮২)। তখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র এক রান বেশি করলেই খেলা ঘুরে যেত। ভ্যান দের ভিজল ৩০ রানে ৩ উইকেট পান। গাই লে রু ৩২ রানে ২ উইকেট পান।

ডারবানে কিংসমিডে তৃতীয় টেস্ট ড্র হয় (২৬-২৯ মার্চ)। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮১/৯ ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। কুরি অপরাজিত ৫০ করেন। টেলর ৬১ রানে ৫টি ও হেন্ড্রিক ২৮ রানে ৩ উইকেট পান। জবাবে ইংলিশ দল ৩১১/৮ তোলে মূলত বব উলমারের ১০০ ও অ্যামিসের ৫০ আর জন্য। ভিজল আবার ৯৭ রানে ৫ উইকেট নেন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৩/২ তোলার পরে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে কুক অপরাজিত ৫০, রাইস করেন অপরাজিত ৩৯।

এই সফরে ইংলিশ দলকে প্রচণ্ড সমস্যা ফেলে ভ্যান দের ভিজল। বেসরকারি টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৩২ টি উইকেট নেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল পার্টি  এই সফরটিকে একটি বড় সাফল্য হিসাবে প্রচার করে। বি.জে. ভর্স্টার, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্ণবাদের কট্টর সমর্থক, এটিকে বড় জয় বলে দাবি করেন।

যাইহোক, এই সফরটি ছিল মূলত বাণিজ্যিক এবং ক্রিকেট উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ; কারণ, প্রতি খেলোয়াড় ও অন্যান্য £৪০,০০০ থেকে ৬০,০০০ ইউরো-এর মধ্যে অর্থ প্রদান করা সত্ত্বেও, সফরের জন্য নির্বাচিত ইংলিশ খেলোয়াড়দের মান বেশ খারাপ ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পর, সফরকারী খেলোয়াড়দের প্রত্যেকে TCCB থেকে তিন বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে, কার্যত তাদের বেশ কয়েকজনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। যে পনের জন খেলোয়াড় এই সফরে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র দুজন, গ্রাহাম গুচ এবং জন এমবুরি, ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলতে তাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে এসেছিলেন।

১৯৮০-এর দশকে, এর পরও বিভিন্ন টেস্ট খেলুড়ে দেশের খেলোয়াড়দের দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকায় আরও ছয়টি বিদ্রোহী সফর করা হয়েছিল, যেখানে শেষটি ১৯৮৯-৯০ মরশুমে ইংল্যান্ডের অন্য একটি প্রতিনিধি দলের দ্বারা করা হয়েছিল।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *