অকূলের কাল। পর্ব ১। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

‘হাফ প্যাডেলের কাল’-এর পরবর্তী পর্ব ‘অকূলের কাল’। এই পর্বের সব চরিত্রই বাস্তব। তাঁদের কেউ কেউ স্বনামে থাকলেও, সংগত কারণেই কেউ কেউ আছেন ভিন্ন নামে। আর হ্যাঁ, হাফ প্যাডেলের বালক আপাতত ক্ষিতি নামে অবস্থান করলেও সময়ের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে বিভিন্ন নামে বিবর্তিত হতে পারে।
কলকাতা–দর্শন
কলকাতা পৌঁছতে ক্ষিতির এক বছর দেরি হয়ে গেল। লোকে তাকে যতোই দুষুক, সে তো জানে সবই কপালের গেরো। হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই অ্যাডমিট কার্ডটা হারিয়ে গেল। রেজাল্ট বেরনোর পর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ভর্তির ফর্ম আনতে যাওয়ার আগে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে যাবে বলে একদিন বাড়ি থেকে বেরোবে, মার্কস শিটটা খুঁজে পেল না। পেল না তো পেলই না। একদিন গেল, দুদিন গেল, খুঁজতে খুঁজতে হপ্তা পেরিয়ে গেল। মার্কস শিটের হারিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হল। কী করা যায় তবে? বোর্ডের অফিসে ডুপ্লিকেট অ্যাডমিট কার্ড, মার্কস শিট পাওয়ার জন্যে দরখাস্ত পাঠাতে হবে। পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। কম করে ছ’মাস। ততদিনে সব কলেজের দরজাই বন্ধ হয়ে যাবে। আবার পরের বছর দরজা খুললে তবে ভর্তির জন্যে ছোটাছুটি। এই একটা বছর তাহলে কি সে ঘরে বসে থাকবে? কে যেন বললেন, ঘরে বসে থাকলে পড়াশুনার অভ্যেসটা নষ্ট হয়ে যাবে। আরও বললেন, গড়বেতা কলেজে ভর্তি নেয় কি-না দেখা যেতে পারে। ক্ষিতি তো গড়বেতা স্কুল থেকেই পাশ করেছে। স্ট্যান্ড করত বরাবর। ভালো ছাত্র বলে সারা গড়বেতা জানে। হেডমাস্টার মশায়ের কাছে বলতে তিনি একটি সার্টিফিকেট লিখে দিলেন যে ক্ষিতি ১৯৬৮ সালের হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাঁরই স্কুল থেকে। তার পাশ করার, এমনকি পরীক্ষা দেওয়ার অন্য কোনো মান্য প্রমাণপত্র না থাকা সত্ত্বেও ‘ডুপ্লিকেট পাইলেই সেইসব প্রমাণপত্র কলেজে জমা দিব বলিয়া অঙ্গীকার করিতেছি’ মর্মে ক্ষিতির ঘোষণাপত্র নিয়ে কলেজ তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়ে গেল। কলেজে মাত্র দুটো বিষয়ে অনার্স পড়ানোর ব্যবস্থা। বিজ্ঞান বিভাগে অঙ্ক, কলা বিভাগে ইতিহাস। ক্ষিতি ভর্তি হয়ে গেল অঙ্কে অনার্স নিয়ে।
ক্যালকুলাস ভালোই লাগছিল, বাদ সাধল অ্যাস্ট্রোনমি। তার অনিঃশেষ রহস্যজালে ঢোকার চেষ্টা করতেই মনে হল, বেকার এতো কষ্ট করে কী-লাভ, পরের বছর অঙ্ক ছেড়ে মেডিক্যালেই যখন ভর্তি হতে হবে! অতএব ক্ষিতি গল্প লেখায় মন দিল। ‘ভবেনের অস্ত্রশস্ত্র’ নামে একটা উপন্যাস লিখতে শুরু করল।
এই করে ৬৮-৬৯ জলাঞ্জলি। ৬৯-৭০-এ, অবশেষে ক্ষিতির কলকাতা-দর্শন। জীবনে প্রথম বার।
ক্ষিতির খুড়তুতো দাদা, তার কাকার সেজ ছেলে অমরশঙ্কর স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপক। স্কটিশের অনেক হস্টেল। তার মধ্যে একটার নাম অগিলভি। সেই হস্টেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেনডেন্ট হয়ে তিনি সেখানেই থাকেন, হস্টেলের মধ্যেই কোয়ার্টার। তাঁরই তত্ত্বাবধানে ক্ষিতির কলকাতায় আসা। স্কটিশের আর একটা হস্টেল, হরি ঘোষ স্ট্রিট যেখানে গ্রে স্ট্রিটের সঙ্গে এসে মিশেছে, নাম ‘দ্য রেসিডেন্স’। এই হস্টেলটা স্কটিশ অন্য কলেজদেরকে খয়রাত করে দিয়েছে। পাঁচমিশালি কলেজের ছেলে, এমনকি চাকরি-করা লোকও এখানে জায়গা পেয়ে যায়। অমরশঙ্কর এখানেই ক্ষিতির থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
প্রথমে অগিলভিতে, অমরশঙ্করের কোয়ার্টারে এসেই উঠেছিল ক্ষিতি। প্রায় ঝাড়া হাতপা হয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। পরনে একটা মাখনজিনের প্যান্ট আর হাওয়াই শার্ট, একটা ছোটো ব্যাগে বোর্ড থেকে পাওয়া ডুপ্লিকেট অ্যাডমিট-মার্কস শিট, একটা পাজামা, বাড়িতে দু-ভাঁজ করে লুঙির মতো করে পরার জন্যে দুটো ধুতি, গোটা দুয়েক গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া, কয়েকটা গল্প-কবিতা-উপন্যাস ইত্যাদি লেখা খাতা আর পকেটে তিনশো টাকা। প্যান্টের কোমরের বোতাম নেই, সেটা নেমে গিয়ে কোমরের চওড়া হাড়ে আটকে থাকে। অমরশঙ্কর কথা কম বলেন, ভাইয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলেন, তারপর বললেন, –দুদিন এখানেই থাক, রবিবার তোর হস্টেলে নিয়ে যাব।
সেই দুদিন অমরশঙ্করের নির্দেশমতো আর জি কর, মেডিক্যাল কলেজ আর রফি আহমেদ ডেন্টাল কলেজে গিয়ে ভর্তির ফর্ম নিয়ে এল ক্ষিতি। অমরশঙ্কর তাকে বাসের নম্বর-টম্বর কীসব বলছিলেন, ক্ষিতির মাথায় ঢোকেনি। নম্বরওলা বাস এই প্রথম দেখছে সে, নম্বর বললেই বুঝে নিতে হয় কোন নম্বর কোন রাস্তা দিয়ে কোথা থেকে কোথায় যাবে। সেই ঝামেলায় না গিয়ে হেঁটেই কাজ সেরেছে সে। রাস্তাটা খানিক জেনে নিয়েছিল দাদার থেকে, বাকিটা রাস্তার লোককে জিজ্ঞেস করে খুঁজে নিয়েছে। অগিলভি থেকে বেরিয়ে বিডন স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিট ধরে বাঁদিকে কিছুটা গেলেই বিধান সরণি, বিধান সরণির পুরনো নাম কর্নওয়ালিস স্ট্রিট। বাস তো চলছেই, ছোটো সাইজের ট্রেনের মতো ট্রামও চলছে ঘড়ঘড় করে। ট্রামের পিঠ থেকে একটা হুকওলা ডাণ্ডা উপর দিকে উঠেছে, হুকের মাথায় ছোটো চাকা রাস্তার উপরের ইলেকট্রিক তারের তলায় গিয়ে ঠেকেছে। নীচে চলে ট্রামের চাকা উপরে চলে হুকের চাকা। এই প্রথম দেখল ক্ষিতি। দেখার মতোই জিনিস।
প্রথমে গেল আর জি কর। সেই কলেজে প্রি মেডিক্যাল পড়ছে শ্যামল। ক্ষিতির প্রিয়তম বন্ধু, গড়বেতায় বাড়ি। গড়বেতা স্কুলে তার এক বছরের সিনিয়ার। স্কুলে পড়ার শেষের দিকে বোর্ডিংয়ে থেকে শ্যামলদের বাড়িতেই দু-বেলা খাওয়াদাওয়া করত ক্ষিতি। মাসখানেকের মতো ছিলও তাদের বাড়িতে। সে-বাড়ির সকলেই ক্ষিতিকে ভালবাসে। বলতে গেলে সেটাও তার আর একটা বাড়ি, এখনও। শ্যামলের সঙ্গে তার নিয়মিত চিঠি চালাচালি হয়। এখানে চান্স পেলে সে সবচেয়ে খুশি হবে, শ্যামলের সঙ্গে একই হস্টেলে থাকতে পারবে। শ্যামল জানত সে আসছে। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে ফর্ম তুলল, তার হস্টেলে নিয়ে গিয়ে দুজনে বসে ফর্ম ভর্তি করে জমা দিল। বাসে ওঠা নিয়ে ক্ষিতির মনোভাব শুনে শ্যামল হাসল খুব। তারপর বলল, –প্রথম প্রথম সকলেরই এরকম লাগে, দাঁড়াও কদিন যেতে দাও। তারপর যেদিনই সময় পাব, বিকেলের দিকে তোমায় বাসে করে এদিক ওদিক নিয়ে যাব। দেখবে সব সহজ হয়ে গেছে।
সেদিন আর অন্য দুটো কলেজে যাওয়া হল না। শ্যামলই বলল, –এখনও বেশ কিছুদিন সময় আছে। কাল একসাথেই দুটো কলেজ থেকে ফর্ম তুলতে পারবে। মেডিক্যাল সোজা রাস্তা, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট ধরে সোজা চলে যাবে। আর সেখান থেকে রফি আহমেদ কলেজ বেশি দূরে নয়। তবে অন্য রাস্তায়, লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে।
পরের দিন তাই করল ক্ষিতি। খুব একটা অসুবিধা হল না। সকাল এগারটায় বেরিয়েছিল, দুটোর মধ্যেই ফিরে এল। একটু একটু করে কলকাতা-দর্শন বেশ হচ্ছে তার। সবচেয়ে যেটা অবাক লাগছে তার, সারা শহরটা, রাস্তাঘাট, মানুষ চলার জন্যে ফুটপাথ – সবই সিমেন্ট দিয়ে মোড়া। মাটি দেখতে চাইলে জায়গায় জায়গায় পার্ক আছে, সেখানে ঢুকতে হবে। সেখানে গেলে কিছু সবুজেরও দেখা পাওয়া যাবে। ফুটপাথেও কোথাও কোথাও গাছ আছে কিন্তু তার গোড়াতেও মাটির দেখা মেলে না, সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। সেসব গাছ বড়ো মলিন, ধুলোয় ঢাকা তাদের বিবর্ণ পাতা।
রবিবার সকাল সকাল ভাত খেয়ে ক্ষিতিকে সঙ্গে নিয়ে হাতিবাগান বাজারে বেরলেন অমরশঙ্কর। ফুটপাথ নাকি পায়ে হাঁটার পথ, কিন্তু সেই পথে হরেকরকমবা দোকান, পা ফেলারই জায়গা নেই। তারই ফাঁকফোকর দিয়ে পাকা দোকান খুঁজে নিয়ে ক্ষিতির জন্যে দুটো প্যান্ট আর দুটো জামা কিনলেন অমরশঙ্কর। রেডিমেড, ছিট কিনে সেলাই করার মতো সময় কোথায়! টেরিকটের জামাপ্যান্ট, এখন এগুলোই সবাই পরছে নাকি। পরে দেখল ক্ষিতি। একটু ঢলঢলে। তা হোক, অমরশঙ্কর বললেন, মাপ ঠিকই আছে। এরপর অনেকটা শ্যামবাজারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা বিছানাপত্রের দোকান থেকে তোষক, চাদর আর বালিশ কেনা হল। সেসব বগলে নিয়ে ক্ষিতি দাদার পিছু পিছু ‘দ্য রেসিডেন্স’ –এ ঢুকে পড়ল। অমরশঙ্কর তাকে হস্টেলে দাখিল করে দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় বলে গেলেন এই হস্টেলের সুপার সচ্চিদানন্দ ঘোষ তাঁর মাস্টারমশায়, স্কটিশের ইকনমিক্স বিভাগের হেড। সে যেন অন্য সব দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে না মেশে। অগিলভির সুপার তরুণ সান্যালও যে স্কটিশের অর্থনীতির অধ্যাপক, সেটা আগেই জেনেছে ক্ষিতি। তিনি একজন কবি, তাঁর নাম আগে থেকেই জানত সে।
একটা পুরনো তিনতলা চকমিলানো বাড়িতে এই হস্টেল। চকমিলানো বাড়ি গল্প-উপন্যাসে পড়েছে ক্ষিতি। দেখল এই প্রথম। একটা ছাদহীন ফাঁকা বর্গক্ষেত্রকে ঘিরে চারদিকে চারটি বাহুর মতো দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। ফাঁকা জায়গাটি উঠোন। নীচতলা আর দোতলায় সামনের দিকে টানা বারান্দা। তিনতলার পশ্চিম দিকের বাহুতে একটি মাত্র ঘর রেখে বাকিটা খোলা ছাদ। সেই ঘরে থাকেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, বিমল পানিগ্রাহী। এই তলায় সামনে বারান্দা ছাড়াও পিছনের দক্ষিণ দিকে একটা চওড়া বারান্দা আছে। একতলায় ছাত্রদের থাকার জন্য দক্ষিণ দিকে দুটি মাত্র বড়ো ঘর। উত্তর দিকের পুরো বাহু জুড়ে কলতলা আর পায়খানা। পূর্ব দিকে বিশাল দুটি ঘর। একটি রান্নাঘর, অন্যটিতে উঁচুনিচু বেঞ্চি পাতা, খাওয়ার ঘর। পশ্চিম দিকে ভাঁড়ার আর ঠাকুর-দারোয়ানদের থাকার ঘর। একতলার উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে তিনতলা পর্যন্ত। তিনতলায় উত্তর দিকের বাহুতে দুটি ছোট ছোট ঘর, একটি সামনের দিকে, সিঁড়ির পাশেই, অন্যটি পিছন দিকে কাঠের তক্তা বসানো মেঝে পেরিয়ে সিঁড়ির মাথায়। বাকি পুব দিকের বাহু আর দক্ষিণ দিকের বাহুতে দুটি দুটি করে চারটি বড়ো ঘর। দক্ষিণ দিকের বাহুতে ছাদের সঙ্গে লাগানো বড় ঘরটি ১৯ নম্বর ঘর। ক্ষিতির জায়গা হয়েছে সেই ঘরটিতে।
কলেজগুলোতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়নি এখনও। ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। হস্টেল অনেকটাই ফাঁকা। বড় ঘরগুলোতে চারটে করে সিট। উনিশ নম্বরেও তাই। কিন্তু ক্ষিতি বাদে আর একজন মাত্র ছেলে সেই ঘরে এসেছে। দীনবন্ধু ঘোষ। ক্ষিতির মতোই গেঁয়ো ছেলে। বর্ধমানের মেমারি থানায় এক অজ গাঁয়ে বাড়ি। কালো, রোগা, ক্ষিতির থেকে ইঞ্চি খানেক লম্বা। নিজেই এগিয়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলল। বেশ আন্তরিক হাবভাব, ভালো লেগে গেল তাকে। জয়পুরিয়া কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্সে চান্স পেয়েছে। বলল, ভর্তি এখনও শুরু হয়নি, হলেই গিয়ে ভর্তি হয়ে যাব।
এই সপ্তাহের শেষের দিকে মেডিক্যাল কলেজগুলো লিস্ট বের করবে। দীনবন্ধু বলল, যেদিন দেখতে যাবে আমাকে বলবে। আমিও তোমার সঙ্গে যাব। দীনবন্ধু দিন তিনেক পরেই দিনু হয়ে গেল। তাকে সঙ্গে নিয়েই আর জি কর, মেডিক্যাল ঘুরে এল ক্ষিতি কিন্তু ডাক্তার হওয়া কপালে নেই তার, লিস্টে নাম নেই। পরের দিন রফি আহমেদ কলেজে গিয়ে দেখল, লিস্টের প্রথম দিকেই তার নাম। যাক, কানা মামাই সই, দাঁতের হলেও তো ডাক্তারই বলবে লোকে। অমরশঙ্করকে জানিয়ে সেখানে ভর্তি হতে গেল ক্ষিতি। কিন্তু সেখানেও গেরো। কলেজের অফিস কাউন্টারের লোকটি বলল, কলেজে এখন এম ডি এস কোর্স খোলার দাবিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছাত্র ধর্মঘট চলছে। সেসব মিটলে তবে ভর্তি শুরু হবে। নিয়মিত এসে খবর নিয়ে যাবে। কলেজ খুললেই ভর্তি করে নেব।
বসে থাকাই কপাল ক্ষিতির। অমরশঙ্কর বললেন, এক কাজ কর। সাধারণ কলেজগুলোতে এখনও ভর্তি চলছে। সুরেন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, বঙ্গবাসী – এগুলোর কোনো একটাতে যদি কেমিস্ট্রি অনার্স খালি থাকে তবে ভর্তি হয়ে যা। ডেন্টাল কলেজ খুললে ছেড়ে দিয়ে সেখানে ভর্তি হবি। সামান্য কিছু টাকা লোকসান হবে মাত্র।
সেই করতে গিয়ে প্রথমে বিদ্যাসাগরে গেল ক্ষিতি। তার মার্কস শিট দেখে ভর্তির দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক বললেন, কেমিস্ট্রি খালি নেই, তবে চাইলে ইংরাজি নিয়ে ভর্তি হয়ে যেতে পারো।
তাই চাইল ক্ষিতি, সে তো দাঁতের ডাক্তারিই পড়বে শেষ পর্যন্ত – এ-কদিনে যাহা কেমিস্ট্রি তাহাই ইংরাজি। অতএব বিদ্যাসাগরে ইংরাজি নিয়ে ভর্তি হয়ে গেল।
তারপর দিন গেল, মাস গেল, হরি ঘোষ স্ট্রিটের হস্টেল থেকে বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত লম্বা ফুটপাথের সঙ্গে, কখনও একটু এগিয়ে বীণা সিনেমা, বাটা আর কলেজ স্ট্রিট, কখনও পিছিয়ে এসে শ্যামবাজারের মোড় পেরিয়ে আর জি করে শ্যামলের হস্টেল পর্যন্ত, অন্তরঙ্গতা জমাট হলো ক্ষিতির। কলেজের ক্লাস করা, নোট নেওয়া আর হস্টেলে এসে উপন্যাসের খাতায় কলম চালানোর চক্করে রফি আহমেদ কলেজের কথা ভুলেই গেল সে।
(ক্রমশ)