ধূসর চিলেকোঠা । পর্ব ৩ । লিখছেন শেখর সরকার

0

গত পর্বের পর…

শীতের পড়ন্ত রোদে চণ্ডীপাটের পাশে অনেক সাপ খোলস ত্যাগ করে, অন্য খোলস ধারণ করে। তারপর সেই খোলসগুলো খোলা জমিতে পড়ে থাকে। কেউ দেখে অল্প ভয় পায়, কেউ আবার বা হাত দিয়ে ধরে নিজেদের ঘরে নিয়ে গিয়ে রেখে দেয়। ঊর্মিলা চক্রবর্তী এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিয়ামতপুরের জনতার যে হৃদয় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিল, তাতে এক দীর্ঘ ছেদ পড়ল। নিয়ামতপুরের জনতা শুধু আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চার হতে দেখে, ক্ষয়জাত পর্বতের ইতিহাস তারা খুঁজতে যায় না। কেশব দাস দশরথ চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর থেকেই গ্রামে ঈদের চাঁদের  মত উধাও হয়ে যায়। বামুনের ঘরের বউয়ের ইজ্জত ধ্বংসের অপবাদ গিয়ে পড়ে তার ওপর। কেশব দাসের দূর সম্পর্কের ভাগ্নে সমর দাস গ্রাম পঞ্চায়েত সভাতে ফলাও করে ঘোষণা করল যে তার মামাই খুন করেছে। প্রমোদ সমাদ্দারকে আবার দেখা গেল গ্রামে। একটি পুরুষ হত্যার থেকেও বড় ঘটনা একটি মহিলার বিধবা জীবন স্খলন। অনেকেই বলল কেশব কেরালা চলে গিয়েছে – কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে।

ঊর্মিলার চিঠির কথা কেউ জানতে পারল না — অবিনাশ তার বুক পকেটে পুরে রেখে দিল। পরদিন সকাল বেলা আবার নিয়ম মেনে ভোর কীর্তনে বেরিয়ে পড়ল পুরো গ্রাম – আজ অবশ্য গানের শেষ পালা হবে অবিনাশদের বাড়ি। সদানন্দ তাড়না দিয়েও অবিনাশকে প্রভাত ফেরীতে যাওয়ার জন্য মানাতে পারল না। সে কম্বলের নীচে শুয়েই “উঠো উঠো গোরাচাঁদ, নিশি পোহাইল” শুনছে। এক চোখে সে জেগে আছে, আরেক চোখে সে দিব্যেন্দুর সাথে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কের কথা ভাবছে। রাতে ঘুমনোর সময়ও ঊর্মিলার চিঠি সে বুক পকেটে নিয়ে ঘুমোল। এ নারী যে সে নারী নয়। অর্ধনগ্ন ব্লাউজ পরিহিত যার যৌবন চণ্ডীপাটের জলের স্পর্শে কিসমিসের মত ফুলে উঠেছে। একটি দেহের সাথে লুকোচুরি খেলা। একটি চিঠি তো! আর কীইবা আছে এই চিঠিতে। সে মাধ্যমিকে ভাবার্থ শিখেছে। কিন্তু ঊর্মিলা কীভাবে তার সারাজীবনের গোপন কথা শুধু একটি চিঠিতে প্রকাশ করতে পারবে! সে তার বন্ধু দিব্যেন্দুর কথা ভাবছে। নিজেকে সে এক অনভ্যাগত অতিথির মত মনে হয়েছে। তবুও সে চিঠিটি খুলে ফেলল। বিছানার নীচে রাখা হ্যারিকেনটিকে জ্বালিয়ে পড়া শুরু করল —

 

“আমি নিজে জানিনা আমি কেন তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। অবশ্য বিয়েতে বাবা আমার সায় নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। যেদিন বাবা তোমাকে দুর্গা পূজার মণ্ডপে আরতি করতে দেখেছিল, সেদিন আমিও বাবার পিছু পিছু এসেছিলাম। মুখে নিজের পরা শাড়ির আঁচলের এক কোণকে চিবিয়ে চিবিয়ে পুরো রং বের করে দিয়েছিলাম। আমরা দু’জন সেই আরতি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে দেখছিলাম। তুমি দু’হাতে চারটি আর ঠোঁটে একটি ধুনুচি নিয়ে পাগলের মত নেচে যাচ্ছিলে, সবাই ভয় পেয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল আত্মা ভর করেছে। সে ছিল তোমার – আমার পাগলামির দিন। বাবা হঠাৎ করে আমার কান চিমটি দিয়ে জাগিয়ে তুলে বলেছিল, ‘বিয়া করবা এই চেংরাডারে?’ সেদিনের ঠাট্টার কথাটা যে একদিন বাস্তবে পরিণত হবে আমি কোনদিন ভাবিনি। গ্রামে তোমার কথা সবাই সম্মানের সাথেই বলতো, তারা সবাই বলতো যে দশরথ সবার সাথে মিশতে জানে। কিন্তু তোমার মানসিক – শারীরিক সমস্যার কথা অনেকেই জানত না। আমার শ্বশুর মশাই মানে তোমার বাবার ইতিহাস পুরো নিয়ামতপুর জানে।

আমি আজ অভিযোগ নিয়ে আসিনি। আমি ক্ষত পূরণ করতে এসেছি। প্রত্যেকটি মৃত্যু একটি ফরমান, এক অজানা সময়কে এবং এক অজানা ব্যাক্তিকে। আমিও এই কথাতে বিশ্বাস করি। আমি কোনদিন তোমার প্রকৃত স্ত্রী হতে পারিনি — সবসময়ই আমি এক দূরত্ব অনুভব করেছি। এক ঘাত প্রতিঘাতের যুগে এক হতাশা বিলাসী প্রেম চেয়েছিলাম। তুমি যখন রাত দুপুরে ঘরে ফিরতে যাত্রাপালা-কবিগান-ত্রিনাথের গান সাঙ্গ করে, আমি দুয়ার খুলে রাত জেগে শুধু তোমার জন্য ভাত গরম করতাম। আমি কোনদিন তোমাকে ছাড়া ভাত খাইনি। কোনদিন তোমার অপছন্দের রঙের শাড়ি পরিনি। যখন এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও আমার গর্ভবতী হওয়ার খবর পুরো গ্রাম পাচ্ছে না — আমাকে কী অপবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেটাও আমি জানি। লোকে বলতো আমি কোনদিন মা হতে পারব না। কিন্তু আসল কথা তো আমি জানতাম। কিন্তু কোনদিন আমি কাউকে বলিনি — এমনকি আমার মা বাবাকেও না। ধীরে ধীরে আমাদের বিবাহ একটি পুরো সমাজের মান রাখার কর্তব্যের মধ্যে চলে আসল। আমাদের বিয়ের ছোট্ট ঘরে হাজারো চোখ উঁকি মারল। বাবা আমাকে আগ্রার দরবেশের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেবছর তুমি একটি গানের সম্প্রদায়ের দল খুলে পুরো রাজ্য ভ্রমণ করছিলে। যদিও আমি ঘর ছেড়ে কোথাও যাইনি। আমি জানতাম যে আমার কোনও খামতি ছিল না। তারপর একবছর বাদে দিব্যেন্দুর জন্ম হল। সবকিছু বদলে গেল। তুমি যখন কেঁদুলির মেলা থেকে এসে, দিব্যেন্দুকে প্রথমবার দেখলে — তুমি তাকে কোলে না নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলে বিছানার নীচে। আমার সেদিন খুব খুব খারাপ লেগেছিল। আমি দিব্যকে নিয়ে বেরিয়ে পরেছিলাম মাঝরাতে। সেদিন আমার সাথে কেউ ছিল না।

এই চিঠিটা কেন লিখছি? আমি নিজেও জানি না। আমার কারো কাছে কোনও দাবি নেই। আমি দাবিহীন, দ্বিধাহীন, দ্বেষহীন একজন মানুষ হতে চাই। আমি এই পৃথিবীর সবথেকে একাকী মানুষ — আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই। তবে আমি আবার বাঁচতে চাই, দিব্যেন্দুকে নিয়ে। রাত পোহালে আবার দেখা হবে তোমার সাথে একদিন।”

 

হঠাৎ করে যেন এক অজানা ইতিহাস, গোপন সত্য-মিথ্যের ধাঁধাতে জড়িয়ে পড়ল অবিনাশ। একটি মহিলার মনের ভেতরে যে এতো পরতে পরতে ইতিহাস লুকোনো থাকবে সে কক্ষণও অনুমান করতে পারে নি। পেঁয়াজের খোসার আস্তরণ খুলেই চলছে। নিয়ামতপুর আর দেশের ইতিহাস সমান্তরাল ভাবেই চলছে – তীব্র গতিতে। এই গোপন সত্য জানার পর – অবিনাশ আর ঘরে থাকতে পারল না। সে সোজা একটি মাঠের আল বরাবর দৌড় দিল – সে অতিক্রম করছে তাদের বাড়ির পেছনের বাঁশবাগান, সে কোমরের মাপের সমান গম খেত পাড়ি দিচ্ছে। তার সারা শরীর জুড়ে গমের শিষের ঘর্ষণের দাগ – এই সব দাগ সে পেয়েছে নিয়ামতপুর থেকে। সে অতর্কিতে হাজির হল দিব্যেন্দুর বাড়ি। বাড়িতে দিব্যেন্দু ছাড়া আছে শুধু তার দাদু দয়াময় চক্রবর্তী। ঊর্মিলা চক্রবর্তীকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দিব্যেন্দুর পায়ের চোট এখনও সেরে ওঠেনি। সকাল সকাল দয়াময় বারান্দায় বসে হুঁকো গটগট করে টানছে। বাড়িতে কাজের লোক বলতে একজনই আছে — সুরমা মণ্ডল। সে সকালবেলা এসেই গোবর জল দিয়ে পুরো বাড়িতে ছেটানো শুরু করেছে। শিশিরের গন্ধ আর গোবরের জলের গন্ধ মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছে। অবিনাশ দেওয়াল টপকে দিব্যেন্দুর ঘরে ঢুকে পড়ল। গতকালই সুকুমার বৈদ্য তার পায়ে মালিশ করে গেছে এবং সাথে কিছু সবুজ রঙের পট্টীও লাগানো হয়ে গেছে। তাতে সারারাত জল না দেওয়ার জন্য, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। সকালের হাল্কা রোদ জানালার ফাঁক ফোকর থেকে ঠিকরে এসে দিব্যেন্দুর মুখে এসে পড়েছে। অবিনাশকে দেখা মাত্রই দিব্যেন্দুর গালে  এক চিলতে হাসি দেখা গেল। অবিনাশ সকাল সকাল মুখ না ধুয়ে আসাতে তার মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। মুখে হাত দিয়ে দিব্যেন্দুর কানের সামনে গিয়ে বলল — “দিব্য, আজ তোকে আমার সাথে যেতে হবে একটি জায়গায়। তুই যাবি তো?” দিব্যেন্দু চোখের ইশারা দিয়ে তার দাদুকে দেখিয়ে বলল যে “ওই যে দাদু বসে আছে। ঘরে দেখতে না পেলেই ভাববে আমি মামা বাড়ি পালিয়েছি।” অবিনাশ আকাশ পাতাল ভাবছে।  হয়তোবা চিন্তা পচনধরা বাকলের অঙ্গ, যেখানে এককালে ডালপালা জন্মাত; হয়তোবা সেটা মহীরুহ ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে। হতেও পারে এটা ভবিষ্যতে একটি অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হবে কিন্তু বর্তমানে সেটা ঘুমন্ত পর্বত। একটি নীরস বর্তমান যার ভবিষ্যৎ একটি দেওয়ালের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।

দুটো রেললাইন  সমান্তরাল ভাবে চলে , কিন্তু লাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে দূরে তাকালে মনে হয় – শেষ অব্দি মিলিত হয়। দুপুর বেলা দিব্যেন্দু আর অবিনাশ সবার অলক্ষ্যে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। দিব্যেন্দুকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে অবিনাশ ছুটে চলছে। অবিনাশ বাতাস পার হচ্ছে, অবিনাশ ঘাস মাড়িয়ে চলছে। নিয়ামতপুরকে তারা ছাড়িয়ে গেল। অনেক কিছু থাকে এই ছোটো ছোটো গ্রামগুলোতে, প্রেম ছাড়া। এখানে প্রেম পাওয়া দুষ্কর – শুধু কান পাতার আওয়াজ। গ্রামের কিছু কিছু জায়গাতে আড়ি পাতলে শোনা যায় – ধীরে ধীরে শহর গমনের শব্দ। কেশব দাস — গ্রামের চোখে একমাত্র শত্রু, সে আস্তানা পেতেছে শহরে। এক গ্রামের ঘৃণা শহরের প্রতি কতটা তা সদানন্দ দাসের দোকানের সামনে মাচায় বসলে টের পাওয়া যায়। দিব্যেন্দু-অবিনাশ সেই গ্রামের সীমানা ছেড়ে শহরের দিকে যে নতুন পিচের রাস্তা হচ্ছে সেদিকে যাবে। সেখানে কোনও ইতিহাস লুকিয়ে নেই। কোনও অতীত বর্তমানের সাথে ঘর্ষণ খায় না। সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলছে অবিনাশ। সাইকেলের পেছনে বসে দিব্যেন্দুর দুপুর চলে গেল। গ্রামের শেষ প্রান্তে,  একটি পিঠে-পুলির মেলার আয়োজন বসেছে। অবিনাশ সাইকেল ঘোরালো মেলার তাঁবু দেখে। মেলাতে দশ-বারোর বেশি দোকান মনে হয় না হবে। সব দোকানে একই ধরণের পিঠে সাজানো – সরা পিঠে, পাটিসাপটা আর পুলি পিঠা। দিব্যেন্দু তার দাদুর ট্যাঁক থেকে এক টাকা চুরি করে নিয়েছিল গতকাল। সেটা দিয়েই অবিনাশ আজ দুপুরের খাবার সেরে ফেলল। মেলাতে পুতুলনাচ, যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার মাঠের একদম দক্ষিণ কোণে চটুল নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে অবিনাশ তাদের স্কুলের অনেক বন্ধুকে দেখতে পাচ্ছে মুখ ঢেকে বেরিয়ে আসছে। অবিনাশ কিছুটা কৌতূহলভরে বলল — “ওই যে ওটা স্যামুয়েল না? সাথে আরও কয়েকজনকে দেখতে পাচ্ছি।” জর্দা ছাড়া মিষ্টি পানটা মুখে দিয়ে দিব্যেন্দু বলল “স্যামুয়েলের সাথে আমার কথা হয় না, আমাকে দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কেন জানি না! তবে আজ প্রচুর পিঠে খেয়ে ফেলেছি আমি। পেটটা কেমন যেন গোলাচ্ছে। এতো কিছু খাওয়া উচিত হয়নি। জলদি বাড়ি চল। তোর বাবা আবার এসে পড়বে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে।” অবিনাশ জীবনে কোনদিন চটুল নৃত্য দেখেনি। সে মনে মনে ভাবছে, একবার নাচ দেখে আসলে ক্ষতিই বা কি? অবিনাশ বলল, “বাবা আজ দেরিতে আসবে বলেছে, পাশের গ্রামে গিয়েছে ঝগড়া মেটাতে। চলনা গিয়ে দেখে আসি ভেতরে কি হচ্ছে?” কিছুটা ভেবে চিন্তে দিব্যেন্দু বলল, “এখানে আজ চেনা পরিচিত অনেক লোকের দেখা মিলবে, আমার মনে হয় ভেতরে না যাওয়াই ভালো।” দিব্যেন্দুর কথা না মেনে অবিনাশ দ্রুত গতিতে পা বাড়িয়ে এগিয়ে চলল। একটি বিশাল বড় মঞ্চ আয়োজন করা হয়েছে। চারিদিক থেকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়েছে এবং মাঝে মাঝে শুধু মাঝখানের পর্দাটুকু খুলে দেওয়া হয় দর্শক আকর্ষণের জন্য। পড়ে আবার তা বন্ধে করে দেওয়া হয়। অবিনাশ টিকেট কেটে দিব্যেন্দুকে নিয়ে জোরজবরদস্তি ঢুকে পড়ল। ভেতরে গাঁজা আর দেশি মদের আসর বসেছে। একটি মেয়ে শাড়ি পরে মঞ্চের মধ্যে নেচে চলছে। পুরো নিয়ামতপুরের চাপা পুরুষত্ব সেই নৃত্যরত মহিলা আকর্ষণ করছে। পুরো জায়গা জুড়ে শত সহস্র সাপ এক সাথে হিসহিস করছে। বেশিরভাগ পুরুষরাই মুখে চাদর বেঁধে খড়ের মেঝেতে বসে নাচ দেখছে। হঠাৎ করে দিব্যেন্দুর নজর মঞ্চের দক্ষিণদিকে পড়ল। মুখটা চেনা চেনা মনে হল। অবিনাশকে কনুই দিয়ে ঠুকে দিব্যেন্দু বলল, “দেখ তো ওই লোকটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে?” দিব্যেন্দুর অনুমান খারাপ নয়। অবিনাশ সামনে এগিয়ে গেল। সে তার বাবার কাঁধের বয়ান চেনে। সদানন্দ বসে চাদর মুড়ি দিয়ে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে মঞ্চের দিকে।

অবিনাশ আর দিব্যেন্দু বেরিয়ে পড়ল তাঁবু থেকে। অবিনাশ পাকা রাস্তা ত্যাগ করে কাঁচা রাস্তা ধরল। কিছু বুঝতে পারছে না সে — যে জিনিসটা তার দেখা উচিত ছিল না, সে সেসব দৃশ্যের সাক্ষী কেন হয়ে থাকে? প্রেম নয়, দুরূহ শ্লোক নয়, চাপা অন্ধকার নয় — সব চোখের সামনে অসহ্য বাস্তব। রাতের বেলা রাস্তার ধারে গাছের নিচে অবিনাশ আর দিব্যেন্দু দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখা যায় সদানন্দ এগিয়ে আসছে – সাইকেল নিয়ে। সদানন্দ নেশার ঘোরে এগিয়ে যাচ্ছে — পিছু পিছু অবিনাশ আর দিব্যেন্দু। আজ অবিনাশ তার মা’র কথা মনে করছে। একটি মানুষ আরেকটি মানুষকে জড়িয়ে ধরে শূন্যতায়, হাহাকারে, ধ্বংসের খাদে – অবিনাশ আর দিব্যেন্দুর মধ্যে কি তাই ঘটছে?  দুর্বিষহ অতীত আর ঘুমন্ত বর্তমান একটি পথে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চলছে। আধো আধো চাঁদের আলোয় মাঝে মাঝে ছায়াগুলি রাস্তায় জীবন্ত হয়ে উঠছে।

 

(ক্রমশ)

পরবর্তী পর্ব…

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *