মেদিনীপুর লোকাল। পর্ব ১। লাল সেলাম কমরেড । লিখছেন আদিত্য ঢালী
“ও দাদা কোথায় যাবেন? ভাড়াটা করবেন তো।”
হেঁড়ে গলায় কন্ডাক্টর কটর হাঁক দিতেই ঘুমটা ভেঙে গেল । ঘুম জড়ানো গলায় বললাম ‘মালিগ্রাম’। কী শুনল জানি না।
“ও। কোথা থেকে যেন?”
“মেদিনীপুর।”
“ত্রিশ টাকা।”
পকেট থেকে টাকাটা বের করে দিয়ে বললাম, “একবার ডেকে দেবেন কেমন।” কন্ডাক্টর মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। পাশে একটা হোঁতকা মতো লোক অনেকক্ষণ ধরেই তেড়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। ওনার নাক ডাকার শব্দে ঠিকঠাক ঘুমও হচ্ছিল না আমার। কন্ট্রাকটরের ডাকে বোধহয় ওনার ঘুমটাও ভেঙে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে মুখের থুতুটা গিলে বলল “মালিগ্রাম?” আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। “ও অনেক দেরি আছে। ঘুমোন।”— বলে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন আবার। আমি গত পুজোয় রাধাবাজার থেকে কেনা সস্তার হাত ঘড়িতে দেখলাম আটটা বাজতে এখনও দশ মিনিট বাকি। সাড়ে আটটার মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা। গতকাল রাতে সেরকমই বলেছিল।
ও হ্যাঁ, পরিচয় দেওয়া হয়নি। আমি একজন সদ্য নিযুক্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী। সঠিক ভাবে বললে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মচারী। আমার মতো আপনারাও যাঁরা শহুরে বা আধা শহুরে, যাঁদের কাছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক বিষয়টা কী ঠিক বোঝার বাইরে তাঁদের জন্য এবং নিজের জন্য খুব সহজে বলি — দেখতে একদম অন্যান্য ব্যাঙ্কের মতোই, শুধু ‘লুকসে’ পার্থক্য আছে বিস্তর। কাজও করে সব অন্যান্য ব্যাঙ্কের মতোই। শুধু গ্রামীণ উদ্যোগের জন্য নির্মিত হয়েছিল বলে এখনও সো-কল্ড ঐ ‘গ্রামীণ’ তকমাটা যায়নি। আজ আমি মালিগ্রাম যাচ্ছি প্রথমবার, আজ আমার অফিসের প্রথম দিন। মেদিনীপুর থেকে আসছি মানে এটা ভেবে বসবেন না যে আমি মেদিনীপুর নিবাসী। শহর কলকাতা না হলেও কলকাতা শহরতলির আদি বাসিন্দা। চাকরিটা যে পেয়েছি সেটা জেনেছিলাম মাস দুয়েক আগেই। প্রথম চাকরি একটা আলাদা উন্মাদনা থাকারই কথা, কিন্তু আমার ছিল না। কেন ছিল না সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু কিছু না করে বসে থাকার চেয়ে অর্থনৈতিক ভাবে নিজের উপর নির্ভরশীল হওয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা যে বয়সে বুঝেছিলাম, সেই বয়স পার করে এসে চাকরি পাওয়ার পর আর দ্বিতীয় কোনো চিন্তা মাথায় আসে না। বুঝেছিলাম বাড়ি, বন্ধুবান্ধব, শহর সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। কবে ফিরব তাও জানি না, কষ্ট হবে কিন্তু যেতেও হবে কারণ শুধু লিখে জীবিকা নির্বাহ করার চিন্তা এই শহরে পাগলের প্রলাপ শোনার সমতুল্য। বাড়িতে যখন চিঠিটা এল তখন আমি বালিগঞ্জের বুক চিরে সদ্য শেষ হওয়া বসন্তের হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বাড়ি থেকে ফোন করে শুধু বলল, “পশ্চিম মেদিনীপুর”। শুনেই যে কথাটা প্রথম মাথায় স্ট্রাইক করল সেটা ছিল ‘জঙ্গলমহল’। পশ্চিমের মুক্তিসূর্য। এক বন্ধুকে এসএমএস করলাম, “পশ্চিম মেদিনীপুর। লাল সেলাম কমরেড।”
কোথায় যাচ্ছি, কোথায় থাকব, কীভাবে থাকব কোন ধারণাই ছিল না। জানানোও হয়নি। শুধু বলা ছিল মে-ডের পরের দিন মেদিনীপুরে হাজির হতে। দু’দিন পর যখন হাতে মালিগ্রামের নামটা পেলাম, গুগল করে দেখলাম বাড়ি থেকে প্রায় ১৫০ কিমি। বিকেল চারটেয় মালিগ্রামে পোস্টিং-এর চিঠিটা হাতে পাওয়ার পর বলা হল পরেরদিনই জয়েন করতে হবে। লজের স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে রাতটা পার করে ভোরের বাস ধরলাম।
“ও দাদা মালিগ্রাম এসে গেছে, নামুন নামুন”। কন্ট্রাকটর প্রায় ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দিল। হাই উঠল প্রকাণ্ড একটা কিন্তু মুখ বন্ধ হওয়ার আগেই নামিয়ে দিল ঠেলেঠুলে। যেখানে নামলাম সেটা একটা বাজার এলাকা। বেশ কিছু দোকানপাট আছে। হাতঘড়ি বলছে সবে সাড়ে আটটা। এদিক ওদিক খুঁজে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। খিদেও পেয়েছে। খাবার কী আছে জিজ্ঞেস করতে বলল মুড়ি ঘুগনি। মুড়ি এবং ঘুগনি এই দুটো খাবার খাওয়ারই আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। তবে একত্রে খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না তাই আর রিস্ক নিলাম না। দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দোকানদার পিছন থেকে হাঁক দিল “কি, দেব নাকি”? আমি মাথা নেড়ে না বললাম। সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল “আর কিছু পাবেনও না”। পাশের দোকান থেকে একটা দু’দিন পুরোনো প্রায় নেতিয়ে যাওয়া পিছন পোড়া গাবদা পাউরুটি নিয়ে এসে ঘুগনির ঝোলে চুবিয়ে খেতে লাগলাম। খাবার শেষ করে জগ নিয়ে জল খেতে গিয়েই দেখলাম দোকানের পিছনে একটা কল আছে আর সেই জলেই বাসন মাজা হচ্ছে, সেই জলেই খাবার বানানো হচ্ছে, আবার সেই জলই খাওয়া হচ্ছে। প্রথম দিন তাই আর রিস্ক নিলাম না। তেষ্টা বুকে নিয়েই বেরিয়ে আসতে হল। বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পর এক বোতল জল কিনতে পারলাম। ঘুগনির ঝাল কিছুটা জুড়ল। ব্যাঙ্কের সামনে দিয়ে দু’বার ঘুরেও যখন ব্যাঙ্ক খুঁজে পেলাম না বাধ্য হয়ে ব্যাঙ্কের উল্টোদিকের একটা দোকানে জিজ্ঞেস করতে মুখে কিছু না বলে আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে দিল সামনের দিকে। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক করতে করতেই ব্যাঙ্কের হোর্ডিংটা নজরে এল। বাঁদিক থেকে কাত হয়ে ঝুলে যাওয়ার জন্য অর্ধেকটা পড়া যাচ্ছে না। সবুজ রংটা রোদে পুড়ে ফ্যাকাসে তো হয়েই গেছে সঙ্গে টিনের ওপর থেকে রঙের চটা উঠতেও শুরু করেছে। সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখলাম তালা ঝুলছে। অগত্যা অপেক্ষা। পৌনে দশটা নাগাদ তালা খুলতে এক ভদ্রলোক এলেন। বুঝলাম ব্যাঙ্ক কর্মী। কিছুক্ষণ বাদে ম্যানেজার এলেন। হাত মিলিয়ে বললেন, “অনেকক্ষণ এসে গেছো নাকি? আমায় যে বলল লেট হবে আসতে তোমার!” আমি হেসে বললাম, “না না বেশিক্ষণ না।” শাটার উঠল, আমরা প্রবেশ করলাম। আমার গায়ে সদ্য কেনা খাদির ধবধবে সাদা জামা আর ঠিক আমার মাথার উপরে সারি সারি ঝুল, আর একটু হলেই আমার সাদা জামা… যাক! এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। দু’দিকের টেবিলে ফাইলের পাহাড়। শুধু ফাইল বললে ভুল হবে দীর্ঘ বছরের পুরোনো ফাইল। আর তার উপর ধুলোর আস্তরণ। বোঝা যায় এই চত্বরে বহুদিন মানুষের হাত পড়েনি। কোনো রকমে ঠেলেঠুলে সাইড করে নিজের ব্যাগটাকে রাখলাম। ইতিমধ্যে লোকজন আসতে শুরু করেছেন। ম্যানেজার সোজা কাউন্টারে ঢুকে গেলেন। আর একজন এলেন কোনোরকমে নিজের শরীরটা ঠেলে ঠুলে। এসে যে চেয়ারে বসলেন সারাদিনে আর উঠতে দেখলাম না। আমি চুপচাপ পাশে গিয়ে বসলাম। হেসে বললেন, “দেখো দেখো। দেখে সব শিখে নাও। আমরাও এইভাবেই শিখেছি।” আমি বললাম, “আর কেউ নেই?” বললেন, “আর কে থাকবে? এই তো আমরা দুজন আর একজন পিওন আছে। সে এসে যাবে এখনই। ধান তোলা হচ্ছে তো তাই একটু দেরি করছে।” আমি সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের দু’জনের সামনে তখন প্রায় বাইশ জনের লম্বা লাইন। কম্পিউটারে কী হচ্ছে সেদিকে আমার নজর নেই। ক্রমাগত ভিড় যে বাড়ছে সেদিকে আমার নজর। আর মাথা হিসেব করছে আমি কাজ শুরু করলে কাজের মাত্র তিনজন। আর আমার বাড়ির সামনের ব্যাঙ্কে ক্যাশ কাউন্টারই চারটে।
বৈশাখের চড়া রোদ মাথার উপরে প্রখর। ম্যানেজার যখন ভিড় সামলাতে আর ঘাম মুছতে মুছতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা। চলে তো এলাম থাকব কোথায়? নাকি ফিরে যাব? পারব তো? সেই সময়ই ম্যানেজার কানের কাছে মাথা নিয়ে এসে বললেন, “যাও ঘর দেখে এসো”। বলে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে হাত নেড়ে ডাকলেন। এখানে কোনো গানম্যান নেই। বদলে লোকাল থানা থেকে মাঝে মাঝে সিভিক দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। গেটের কাছে একটা টেবিল ফ্যান সেট করে সে বাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে মোবাইলে হেড ফোন লাগিয়ে ধামাকা সিনেমা দেখতে ব্যস্ত তখন। ম্যানেজারের হাঁক তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। অগত্যা আমি উঠে গিয়ে ডাক দিয়ে বললাম ম্যানেজার ডাকছে।
বাইকে করে যে বাড়িটায় প্রথম এলাম ব্যাঙ্ক থেকে সেটায় হেঁটে যেতে প্রায় পনেরো মিনিট সময় লাগবে। বাড়ির মালিক খুব গদগদে হয়ে বলল, “আসুন আসুন, আমি তো সেই কখন থেকে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি। ম্যানেজারবাবু বলেছিলেন সকাল সকালই চলে আসবেন। চা দিই একটু?” “না না, এখন চা খাব না। আগে ঘরটা দেখে নিই”— আমি বললাম। বাড়ির পিছন দিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় এলাম। দু’টো ঘর পাশাপাশি। তার মধ্যে একটায় দেখালাম কাঠের একটা চৌকি রাখা আছে। বুঝলাম এটাই বুঝি আমার জন্য রাখা হয়েছে। বাথরুমের কথা জিজ্ঞেস করতে বলল, “আজ্ঞে, বাথরুম তো নীচে। তবে এমারজেন্সির জন্য এখানে একটা ল্যাট্রিন করেছি। কিন্তু জলের ব্যবস্থা করা হয়নি এখনও। নীচের থেকে জল এনে এখানে রেখে দিয়ে আপাতত ক’দিন চালিয়ে নিন। কোনো অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করে দেবেন আমি এসে যাব।” “এসে যাব মানে? আপনি এখানে থাকেন না?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম। “না না। ওই দক্ষিণ দিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে দেখলেন আসার আগে ওখান দিয়ে ওই দু’ কিলোমিটারের মতো গেলে আমার বাড়ি। এখানে তো আমার গোডাউন। আর উপরে এই ঘর।” আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে এখানে আর কে থাকে?” তিনি উত্তর দিলেন, “আগের আরডিও স্যার থাকতেন। তিনি চলে যাওয়াতে ফাঁকাই পড়ে আছে। এই এবার থেকে আপনি থাকবেন।” আমার কথা প্রায় আটকে গেছে। বাড়িতে যেদিন ভূতের সিনেমা দেখতাম সেদিন রাতে মায়ের সঙ্গে শুতাম। সেই আমাকে এই গোটা বাড়িতে একা থাকতে হবে ভেবেই আমার বুক দুরুদুরু করতে লাগল। সিভিক ছেলেটিকে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করলাম, “এখানে আর কোনো বাড়ি নেই? এখানে তো কেউ থাকে না।” কান থেকে হেডফোনটা নামিয়ে বলল — “বাড়ি আছে, তবে আপনার পছন্দ হবে না। সব মাটির বাড়ি। পাকা বাড়ি কেউ ভাড়া দেবে না।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ব্যাঙ্কের আগের লোকেরা কোথায় থাকত তাহলে?”। “ব্যাঙ্কই থাকত”, উত্তর দিল সিভিক ছেলেটি। আমি অবাক হলাম। “ব্যাঙ্কে থাকত! কোথায় শুত? খেত কোথায়?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম। “কেন ঐ যে টেবিল আছে ব্যাঙ্কে, ওখানেই শুয়ে পড়ত। দিনের বেলা হোটেলে খেয়ে নিত আর রাতে ওই মুড়ি খেয়ে নিত।” আমি কী বলব বুঝলাম না। বাইকে উঠে ব্যাঙ্কে ফিরে এলাম। ম্যানেজারের পাশের চেয়ারে বসলাম। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অর্ধেক ভিড়টা এক যায়গায় দলা পাকিয়ে আছে। আর সবাই দেখি একই কথা বলছে। ভালো করে কান খাড়া করে শুনলাম, “ও নারানদা আমারটা লিখে দাও। আমারটা লিখে দাও।” আর একজন কালো করে ভদ্রলোক বসে বসে সবারটা লিখে যাচ্ছেন। কাছে গিয়ে দেখলাম টাকা জমা-তোলার ফর্ম লিখে যাচ্ছেন উনি। মুখে কোনো ক্লান্তি নেই। সবারটা খুব যত্ন সহকারে শুনে লিখে দিচ্ছেন। আমার দিকে মুখ তুলে বললেন, “আরে এসে গেছেন আপনি, আমি তো এসে থেকে আপনাকেই খুঁজে যাচ্ছি। ঘর পছন্দ হয়েছে তো? শাসমলদের ঘরটা ভালোই। পাকা বাড়ি একদম। পায়খানা বাথরুমও পাকা। কোনো অসুবিধা হবে না আপনার।”
দুপুরে টিফিন টাইমে সামনের হোটেল থেকে উচ্ছে ভাজা দিয়ে ডাল আর কুমরোর ঘ্যাঁট থেকে গোটা দুই আলুর টুকরো দিয়ে লাল লাল লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে মাছের ঝোল সহকারে ভাত খেয়ে ব্যাঙ্কে ফিরে ম্যানেজারকে বললাম, “আর কোনও বাড়ি হবে না?” ম্যানেজার জলে ভেজানো মুড়ি, চারটে অঙ্কুরিত ছোলা দিয়ে হাতে তুলে মুখে পুরলেন। বললেন, “কেন পছন্দ হয়নি? এই তল্লাটে ওটাই তো একমাত্র ছিল।” আমি বললাম, “না আসলে আর কেউ থাকে না। আর পায়খানা বাথরুমও নীচে, একটু অসুবিধে হবে।” “ঠিক আছে দেখছি। আর কিছু পাওয়া যায় কিনা! দুটো দিন সময় দাও”, ম্যানেজার বলে আবার মুড়ি খেতে লাগলেন। নারানদা যাওয়ার সময় টেবিল থেকে ফাইলগুলো নামিয়ে রেখে গেছেন। বিকেলের বাসে সবাই যখন চলে গেল আমি নারানদা’কে পরিষ্কার করতে বলে নিচের দোকান থেকে রাতের খাওয়ার জন্য বিস্কুট কেক নিয়ে এলাম। নারানদা যাওয়ার সময় বলে গেলেন, গেটে আপনি ভিতর দিয়ে তালা দিয়ে দিন। আমি কাল সকালে আগে আগে চলে আসব। আর কোনো অসুবিধা হলে আমার ফোন তো আছেই। নিচের দোকান আটটা পর্যন্ত খোলা আছে। কিছু লাগলে নিয়ে আসবেন।
তালা দিয়ে ফিরে এলাম। ক্লান্ত শরীরটাকে চেয়ারে এলিয়ে দিলাম। মনে পড়ল ঠিক দু’দিন আগে মন্দারমণির বিচে এই সন্ধ্যেবেলা কী মজাটাই না করেছিলাম। আর আজ কোথায় পড়ে আছি! বন্ধুরা এখানে আসার আগে ফেয়ারওয়েল ট্রিট দিয়েছিল। কত হইহুল্লোড় করেছিলাম। আর আজ এখন সম্পূর্ণ একা। কথা বলার মতোও কেউ নেই। ফিরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই আর। টিং করে শব্দ হয়ে মেসেজ আসার ইঙ্গিত দিল। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলাম বন্ধুর মেসেজ। ‘ওয়েলকাম টু রুরাল ইন্ডিয়া, দ্য রিয়েল ইন্ডিয়া। লাল সেলাম কমরেড’।
মেসেজটা পড়া শেষ করলাম আর তখনই লোডশেডিং হয়ে গেল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক যক্ষপুরীর মধ্যে সম্পূর্ণ একা আমি বসে আছি। কীসের অপেক্ষায় নিজেও জানি না।
(ক্রমশ)