গ্রন্থালোচনা: বাংলার সরা, দীপঙ্কর পাড়ুই। লিখছেন: রামামৃত সিংহ মহাপাত্র
গ্রন্থ আলোচনা: বাংলার সরা। দীপঙ্কর পাড়ুই । দাম ২৫০ টাকা।
লিখছেন: রামামৃত সিংহ মহাপাত্র
আদিম মানুষ সহজলভ্য মাটিকে ব্যবহার্য করে তুলেছিল সাংসারিক সামগ্রী নির্মানের উপাদান হিসাবে। এইভাবেই লোকজ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে মাটি।মাটির তৈরী বিশেষ ধরনের পাত্র বা ঢাকনা হলো সরা।এই পাত্র মানুষ তৈরী করেছিল সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে এটি উত্তীর্ণ হয় শৈল্পিক পর্যায়ে।
বহু বহু শতক ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে জড়িয়ে থাকা এই সরা শিল্প নিয়েই গত কলকাতা বইমেলায় ‘সুপ্রকাশ ‘ প্রকাশ করেছে তাদের অঞ্চল চর্চার চতুর্থ গ্রন্থমালা “বাংলার সরা”।
বইটির লেখক দীপঙ্কর পাড়ুই চিত্রকলা বিষয়ে আকাদেমির উচ্চশিক্ষিত। লোকজশিল্প আগ্রহের বিষয়। এই আগ্রহের টানে এবং অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন নদীয়া জেলার তাহেরপুরে সরা শিল্পীদের মূল কেন্দ্রস্থলে।তবে তার আগ্রহ ঐ একটি জায়গাতেই আটকে থাকে নি বিস্তৃত হয়েছে এবার এবং ওপার বাংলার সরা শিল্প নিয়ে। তার শৈল্পিক জ্ঞানে তুলে এনেছেন তথ্যনিষ্ঠ উপাদান। যা বইটির মূল উপকরণ।যা থেকে সহজেই আমরা জানতে পারি সরার ইতিহাস, নির্মাণ এবং শিল্প সুষমা সম্পর্কে। সরার শ্রেণী বিভাগ এবং বিন্যাস তুলে ধরা হয়েছে সুন্দর ভাবে। নামকরণের ইতিহাস,যথা-ঢাকাই সরা,সুরেশ্বরী সরা,গণকা সরা প্রমুখ খুঁজে এনেছেন পরিশ্রম করে। আলোচনা করেছেন সরাকেন্দ্রিক পরিভাষা ও লোকভাষা নিয়ে। নিঁখুত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সরা তৈরির, রঙ করার এবং অঙ্কনের পদ্ধতি নিয়ে। সংযোজন করেছেন এপার ও ওপার বাংলার সরা শিল্পীদের তালিকা।উঠে এসেছে শিল্প ও শিল্পীদের দুর্দশার কথা।বইটির সম্পদ বইয়ের শেষে সংযোজিত বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত সরার রঙিন ছবি গুলি।
বইটি প্রকাশের উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে শুরুতেই প্রকাশক বলেছেন,’ আলোকবৃত্তের বিপ্রতীপে থাকা মানুষ ও সমাজের স্বতশ্চল আন্ত:প্রক্রিয়ায় এই যে আমাদের সংস্কৃতির অবয়ব, সেই ইতিহাস ও তার নেপথ্য কারিগরদের কথা বলা। যাদের কথা কোন ইতিহাস বইতে লেখা থাকে না,অথচ যাদের শ্রম,মেধা আর আত্মত্যাগেই ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকে তাদের সংস্কৃতির বৈভব ও গরিমার কথা বলা’। উদ্দেশ্য সার্থক বলা যেতে পারে। যথোপযুক্ত প্রচ্ছদ এঁকেছেন শ্রেয়ান।
লোকজ শিল্পের প্রতি আগ্রহীরা পড়লে সমৃদ্ধ হবেন।সরা সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য পাঠক জানতে পারবেন একথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে।