ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। পঞ্চদশ পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

0

(গত পর্বের পর)

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ছিল অ্যাসোসিয়েট দলগুলির ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিল একটা বিষয়ে। তা হলো প্রথমবার খেলতে এসেই দুটো ম্যাচ জিতে যাওয়া। ১৯৭৫ সালে শ্রীলঙ্কা বা পূর্ব আফ্রিকা কোনও ম্যাচ জেতেনি। ১৯৭৯ সালে কানাডা কোনও ম্যাচ না জিতলেও শ্রীলঙ্কা ভারতকে হারায়। ১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। ১৯৮৭ সালে জিম্বাবুয়ে একটা ম্যাচে ৩ রানে হেরে যায় নিউজিল্যান্ডের কাছে। ১৯৯১-৯২ সালে জিম্বাবুয়ে ইংল্যান্ড কে ৯ রানে হারিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালে কেনিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে আর আরব আমীর শাহী হল্যান্ড কে হারিয়ে দেয়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে এইটুকু অন্তত আশা ছিল যে বাংলাদেশ অবশ্যই হারিয়ে দেবে স্কটল্যান্ড কে।

৮ ই মে, ১৯৯৯; প্রথম ওয়ার্ম আপ ম্যাচে চেমসফোর্ডের মাঠে এসেক্স (১৯৯/৮) কে ডাকওয়র্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৫ রানে বাংলাদেশ (২৬৩/৭)। সুজন ৯১ বলে ১০৮ ও আক্রম খান ৯৯ বলে ৫৮ করেন। রফিক ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন।

১০ই মে, সাউথগেটের ম্যাচে মিডলসেক্সের (২২৩/৮; ৪৩ ওভারে) বিরুদ্ধে ডাকওয়র্থ-লুইস পদ্ধতিতে ১২ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ (২০৩/২)। আক্রম খান ৯১ বলে ৮০ অপরাজিত এবং শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ৮০ বলে ৫২ করেন। মিডলসেক্সের মার্ক রাম প্রকাশ (অপরাজিত) ৪৮ বলে ৫৩ ও উইকস ৮৮ বলে ৬৩ করেন।

১২ তারিখ কিন্তু তৃতীয় ওয়ার্ম আপ ম্যাচে নর্দাম্পটনের (২৭৯/৫) বিরূদ্ধে ৪৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ (২৩৫)। স্যাম কারেন এর পিতা কেভিন (১৯৮৩ সালের ঐতিহাসিক ভারত জিম্বাবুয়ে ম্যাচের পাল্টা লড়াই করেছিলেন) ৩৯ বলে ৫৭ (অপরাজিত) করেন। সেলস ৫০ ও লোয়ে ৬২ করেন। বাংলাদেশের পাইলট অপরাজিত ৪০ ও সুজন ২১ বলে ৪০ করেন।

১৭ তারিখ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লারসেন (৩/১৯), কেয়ার্নস (৩/১৯) ও অ্যালোটের বলে (৩/৩০) বাংলাদেশ ১১৬ রানে ধ্বসে যায়। নিউজিল্যান্ড কোনও সমস্যায় পড়েনি। ৩৩ ওভারে রান তুলে নেয়। যদিও ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল।

২১ তারিখ আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মেহরাব হোসেন অপি (৬৪) আর দূর্জয় (৪৫) পঞ্চম উইকেটে ৮৫ না যোগ করলে ১৮২ হতই না। ওয়ালস ২৫ রানে ৪ উইকেট ও কিং ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৬.৩ ওভারে ১৮৩ রান ৩ উইকেট খুইয়ে তুলে নেন। রিডলে জ্যাকবস ৮২ বলে ৫১ করেন। জিমি অ্যাডামস ৮২ বলে ৫৩ (অপরাজিত) করেন।

২৪ তারিখ এডিনবার্গে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৫ করে। একসময় মাত্র ২৬ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায়। নান্নু ও দূর্জয় (৩৬) ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ রান যোগ করেন। সুজন নেমেই আউট (০) হলেও নান্নু ও মনি (১৯)  ৩৭ রান যোগ করেন অষ্টম উইকেটে। নান্নু শেষ দুজনকে বাঁচিয়ে খেলে ১৮৫ অবধি টানেন। উনি করেন ১১৬ বলে অপরাজিত ৬৮। ব্লেন ৩৭ রানে ৪ উইকেট পান।

স্কটল্যান্ড ১৭.৪ ওভারের মধ্যে ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারায়। এরপর অধিনায়ক স্যালমন্ড (১৯) ও হ্যামিল্টন (৬৩) টেনে নিয়ে যান ৮৩ অবধি। ডেভিস (৩২) কে নিয়ে টেনে নিয়ে যান ১৩৮ অবধি। তখন দরকার ৪৫ বলে ৪৮ রান। হাতে তিন উইকেট। কিন্তু মাত্র ২৯ বলে ২৫ রান যোগ করতেই বাকি তিন উইকেট পড়ে যায়। ১৬৩ রানে স্কটল্যান্ড শেষ। যদিও স্বাভাবিক জয় কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে নেমেই জয়। ফলে বাংলাদেশ উৎসবে ভেসে গেলো। ক্রিকেটের বাজার আরও পাকা পোক্ত হলো।

২৭ তারিখে চেস্টার লী স্ট্রিটের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নান্নু আবার অপরাজিত ৫৩ করেন ৯৯ বলে। অপি করেন ৪২। টম মুডি ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন। বাংলাদেশ ১৭৮/৭ করে ৫০ ওভারে। অস্ট্রেলিয়া বিধ্বংসী ব্যাটিং করে ১৯.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮১ রান তুলে নেয়। গিলক্রিস্ট ৩৯ বলে ৬৩ আর মুডি ২৯ বলে ৫৬ (অপরাজিত) করেন।

৩১ শে, নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ধীরে সুস্থে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২২৩ তোলে। আক্রম ৪২, বিদ্যুৎ ৩৯ ও সুজন ২৭ করেন। সাকলাইন মুস্তাক ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন।

প্রথম ওভারেই আফ্রিদি ২ করে অপির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সুজনের বলে (৫/১)। পরের ওভারের শেষ বলে ইজাজ আমেদ (০) বোল্ড হন শফীউদ্দিন বাবুর বলে (৭/২)। সঈদ আনোয়ার (৯) ও ইনজামাম উল হক (৭) ২৬ অবধি টানলেও যথারীতি হকের ভুলে আনোয়ার রান আউট (২৬/৩)। বাংলাদেশ জেঁকে বসছে। এরপরেই হক লেগ বিফোর হলেন সুজনের বলে (২৯/৪)। পাকিস্তান অভূতপূর্ব সংকটে। অঘটনের আশায় গোটা বাংলাদেশ উত্তেজনায় ফুটছে।

সেলিম মালিক (৫) যখন একই রকম ভাবে লেগ বিফোর হলেন সুজনের বলে তখন ১২.৩ ওভারে ৪২/৫। অর্ধেক পাকিস্তান ভ্যানিশ। পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম ও আজহার মামুদ দলকে টানা শুরু করলেন। ষষ্ঠ উইকেটে ৯১ বলে ৫৫ রান যোগ করার পরে যখন দরকার আর ১২৭ রান, হাতে আছে ৫ উইকেট ও ১২৭ বল, তখনই আজহার মামুদ রান আউট হলেন ৬১ বলে ২৯ করে (৯৭/৬)। এর আট বল পরে আউট হলেন অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম (৫২ বল ২৯)। দল তখন ১০২/৭। জয় তখন প্রায় দরজায় উপস্থিত বাংলাদেশের। উইকেট কিপার মঈন খান (১৭ বলে ১৮) নেমে চালিয়ে খেলতে গিয়ে দূর্জয়ের বলে অপির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন (১২৪/৮)। তখনও বাকি ১০০ রান। বল বাকি ৮৪। বোঝাই গেলো জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।

নবম উইকেটে সাকলাইন ও ওয়াকার ইউনিস ৫১ বলে ৩৬ যোগ করলেন। ইউনিস রফিকের বলে আউট হলেন ১১ করে(২০ বলে)। ১৬০ রানে ৯ উইকেট। সাকলাইন মুস্তাক ৫১ বলে ২১ করে যখন আউট হলেন তখন ১৬১। ৪৪.৩ ওভার হয়েছে। সুজনের দারুন বোলিং (৩/৩১) ও বাবু, রফিক, রাহুল, নান্নু ও দূর্জয়ের আঁটোসাঁটো বোলিং পাকিস্তান কে উড়িয়ে দিলো। বাংলাদেশ জিতলো ৬৩ রানে।

ব্যাপক উৎসব শুরু হলো বাংলাদেশে। শুধু অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সব ম্যাচেই লড়েছে তারা। জিতেছে দুটো ম্যাচে। তার মধ্যে একটা পাকিস্তানের বিরূদ্ধে। আবেগে উত্তাল তারা।

ঠিক তেমনই রাস্তা পুরো খুলে গেলো ক্রিকেট বাজারের।

এরপরে টেস্ট খেলার আগে অবধি বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওডিআই খেলেছে, এশিয়া কাপ খেলেছে, ভারতে মঈন উদ দৌলা ট্রফি খেলেছে, এমসিসি বাংলাদেশে সফর করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড এ দলের বিরূদ্ধে বেসরকারী টেস্ট খেলেছে।

তারপর টেস্ট খেলেছে ভারতের সঙ্গে। তবে এরই সঙ্গে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট তুলনামূলক ভাবে একটা পরিকাঠামো পেয়েছে।

১৯৯৮/৯৯ সালে পাক্কা ৩০ বছর পরে টেস্ট ম্যাচের আসর বসে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান মুখোমুখি হয়। তাছাড়া বিশপের ওয়েস্ট ইন্ডিজের, যেটা প্রায় ২৮ বছর পড়ে ঘটেছিল।

টেস্টে অভিষেকের পরেই বাংলাদেশে জাতীয় ক্রিকেট লীগ চালু হয়ে যায়। টানা ৩১ বছর বাদে আবার বাংলার পূর্ব অংশে চালু হলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ২২ শে নভেম্বর, সাওয়ারের বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রশিক্ষণ গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ বিমান বনাম চট্টগ্রাম ডিভিশন এর মধ্যে ম্যাচটাই নতুন যুগের সূচনা করলো। প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের হয়ে খেলতে নেমে ইমরান ফারহাত (ইনি পাকিস্তানের) ২১৬ করে ইতিহাস তৈরি করলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে এটাই প্রথম ডবল সেঞ্চুরী।

বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেট নয়া উদারীকরণের রাস্তা খুলে গেলেও রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কেনিয়া। সেই ঘটনার বিবরণ এবার শুরু করবো।

কেনিয়ায় ইউরোপীয় যোগাযোগ ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের সাথে শুরু হয়েছিল এবং কেনিয়ার কার্যকর উপনিবেশ উনিশ শতকে ইউরোপীয় অভ্যন্তর অনুসন্ধানের সময় শুরু হয়েছিল। আধুনিক কেনিয়া ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রটেক্টরেট এবং পরবর্তীকালের কেনিয়া উপনিবেশ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা ১৯২০ সালে শুরু হয়েছিল।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং উপনিবেশের মধ্যে  বিরোধের ফলে মাউ মাউ বিপ্লব শুরু হয়েছিল (বিমল কুমার পড়ুন, হেমেন্দ্র কুমার রায়ের) , যা ১৯৫২  সালে শুরু হয়ে এবং অবশেষ স্বাধীনতা  ঘোষণা  করে ১৯৬৩ সালে। স্বাধীনতার পর, কেনিয়া কমনওয়েলথ অফ নেশনস এর সদস্য হয়।

কেনিয়া ছিল পূর্ব আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অংশ। পূর্ব আফ্রিকা ক্রিকেট দল কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া এবং পরে জাম্বিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল ছিল। তাদের প্রথম খেলা ছিল ১৯৫১ সালে রোডেশিয়ার বিরুদ্ধে। পূর্ব আফ্রিকা ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ এবং ১৯৭৯, ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফি খেলেছিল। এর মধ্যে শেষ দুটিতে কেনিয়া আলাদা ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে, যাতে পূর্ব আফ্রিকা কার্যত উগান্ডা, তানজানিয়ান এবং জাম্বিয়ান দল ছিল।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ব্রিটিশ উপনিবেশের পর এই এলাকায় ক্রিকেট শুরু হয়। বেশিরভাগ খেলাই প্রাথমিকভাবে অফিসার্স বনাম সেটলার্স’ ম্যাচ ছিল, কোনো আন্তঃ-আঞ্চলিক খেলা হয়নি। এই অঞ্চলের রেল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আফ্রিকায় ভারতীয় শ্রমিকদের আগমনের পর ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রসারিত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ নাগাদ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি খেলাধূলা হয়।

ফলস্বরূপ, ইস্ট আফ্রিকা ক্রিকেট কনফারেন্স ১৯৫১ সালে এই অঞ্চলে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কেনিয়া, উগান্ডা, টাঙ্গানিকার প্রাথমিক তিনটি সদস্য দেশের মধ্যে আন্তঃঔপনিবেশিক ম্যাচ পরিচালনা করত। সেই বছরের শেষের দিকে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির একটি সম্মিলিত দল রোডেশিয়ান ক্রিকেট দলের একটি সফরের আয়োজন করে।

পূর্ব আফ্রিকা এরপর ১৯৫৬ সালে সফররত পাকিস্তানী একাদশের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে। ডেনিস ডসনের (দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট খেলোয়াড় ওসি ডসনের ভাই) নেতৃত্বে পূর্ব আফ্রিকানরা ৩ দিনের ম্যাচে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়। পরের বছর সফরকারী সুন্দর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে এক ম্যাচে পূর্ব আফ্রিকানরা ৯ উইকেটে পরাজিত হয়। ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অ-ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের একটি দল এই অঞ্চলে সফর করে এবং নাইরোবিতে পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ খেলে। এইবার ইস্টার্ন প্রদেশের প্রাক্তন প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড় ম্যালকম রোনাল্ডসনের নেতৃত্বে, পূর্ব আফ্রিকা তিন দিনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার অ-ইউরোপীয়দের কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত হয়।

১৯৬০-এর দশকে পূর্ব আফ্রিকা বেশ কয়েকটি সফরকারী দল খেলেছে। ১৯৬২ সালে তারা কমনওয়েলথ একাদশ ক্রিকেট দলের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছিল। নাইরোবিতে প্রথমটিতে (১০-১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২) পূর্ব আফ্রিকানরা ২০ রানে পরাজিত হয়। কমনওয়েলথ দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাসিল ডি’অলিভিয়েরার একটি দ্রুতগতির অপরাজিত সেঞ্চুরি ছিল ম্যাচটির সবচেয়ে  স্মরণীয় ঘটনা। অক্টোবরের দ্বিতীয় ম্যাচে, নাইরোবিতেও, কমনওয়েলথ দল পূর্ব আফ্রিকাকে ১১৮ রানে পরাজিত করে।

মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ১৯৬৩-৬৪ সালে উগান্ডায় তিনটি, টাঙ্গানিকায় একটি এবং কেনিয়াতে সাতটি খেলা খেলেছিল। একটি খেলা ছিল কাম্পালায় পূর্ব আফ্রিকান দলের বিপক্ষে যেখানে এমসিসি একটি ইনিংস এবং ৭১ রানে জয়লাভ করে। আগস্ট ১৯৬৭ সালে ভারত সফর করে এবং একটি ৩ দিনের প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলে। ভারত ৮ উইকেটে জয়ী হয়। ১৯৬৮ সালে ইংলিশ প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়দের একটি আন্তর্জাতিক একাদশ পরিদর্শন করেছিল এবং নাইরোবিতে পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩ দিনের ম্যাচ খেলেছিল। ম্যাচটি ড্র হয়।

পূর্ব আফ্রিকা ১৯৭২ সালের জুন এবং জুলাই মাসে ইংল্যান্ড সফর করে, ঘরোয়া দলের বিরুদ্ধে ১৮টি ম্যাচ খেলে, যার মধ্যে উত্তর ওয়েলসের বিরুদ্ধে ছয় উইকেটের জয় ছিল। কোনো ম্যাচেই প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদা ছিল না। এমসিসি আবার ১৯৭৩/৭৪ সালে পূর্ব আফ্রিকা সফর করে। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে তারা জাম্বিয়াতে দুটি এবং তানজানিয়াতে আরও দুটি এবং কেনিয়াতে চারটি ম্যাচ খেলে। প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদা প্রাপ্ত পূর্ণ পূর্ব আফ্রিকান দলের বিরুদ্ধে তাদের একটি ম্যাচে এমসিসি ২৩৭ রানে জয়লাভ করে।

১৯৭৫ সালে উদ্বোধনী ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য পূর্ব আফ্রিকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশ ও আইরিশ লায়ন্স রাগবি দলের বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রতিবাদে তানজানিয়া খেলোয়াড়দের ইংল্যান্ড সফর থেকে বিরত রাখার হুমকি দেওয়ার পর দলগুলোর অংশগ্রহণ যথেষ্ট সন্দেহজনক পরিস্থিতি তৈরী করে।

পূর্ব আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি বিশ্বকাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখা হয়েছিল কারণ আফ্রিকার একটি দলকে সত্যিকার অর্থে বিশ্বব্যাপী টুর্নামেন্টকে বোঝাতে প্রয়োজনীয় হিসাবে দেখা হয়েছিল। আফ্রিকার দুটি শক্তিশালী ক্রিকেট দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রোডেশিয়া, বর্ণের ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের নির্বাচিত করে এবং একটি ক্রীড়া বয়কটের অংশ হিসাবে বাদ পড়ে;  যার ফলে পূর্ব আফ্রিকা মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। দলটি লড়াই করে এবং তিনটি ম্যাচই হেরেছে।

১৯৭৮ সালে মাইনর কাউন্টি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কেনিয়া সফর করে সেখানে সাতটি ম্যাচ খেলে, যার মধ্যে দুটি ছিল পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রথমটি ছিল ৬০ ওভারের ম্যাচ যেখানে মাইনর কাউন্টিরা ৮ উইকেটে জিতেছিল। একটি নির্ধারিত ৩ দিনের ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

কেনিয়া ১৯৮১ সালে পূর্ব আফ্রিকা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আইসিসিতে সহযোগী সদস্য হিসেবে যোগ দেয়।

১৯৮০/৮১ সালে জিম্বাবুয়ে সফর হয় এর ঠিক পরপরই। ওই সফরে তারা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি তিনদিনের ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছিল। কেনিয়া ১৯৮২, ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালে আইসিসি ট্রফিতে নিজেদের নামে খেলে, এছাড়াও সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সালে পাকিস্তান বি-এর বিরুদ্ধে তাদের প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলে।

১৯৯৪ আইসিসি ট্রফি নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং কেনিয়া সংযুক্ত আরব আমীর শাহীর বিরুদ্ধে হেরে রানার্স হয়ে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

কেনিয়া তারপর ১৯৯৫ সালের আগস্টে ভারত এ দলের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলে এবং বিশ্বকাপে খেলার আগে সে বছর সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়, যেটি কেনিয়ার ক্রিকেটকে আরও বিস্তৃত করার জন্য ছিল। বিশেষ করে দর্শক, এবং নিজেদেরকে পরিচয়ের পরিধিতে আনার জন্য।

কেনিয়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের মতো একই গ্রুপে ছিল। তারা তাদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে ভারতের বিপক্ষে।

 

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *