ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। সপ্তদশ পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
আইসিসির পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বললেই আগে দেখতে হবে আইসিসির ইতিহাস। সেটা জানলে তবে এর একটা রূপরেখা ধরা পড়বে। এখানে বলে রাখি আইসিসি কিন্তু তার সদস্যদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, সফর ও ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ করে না। এমনকি ক্রিকেটের আইন কানুন ও বানায় না। এই দ্বিতীয় ব্যাপারটা একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করে এমসিসি ; সেই ১৭৮৮ সাল থেকেই।
আজ থেকে ১১৪ বছর আগে সেই ১৯০৯ সালে লন্ডনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে এই আইসিসি তৈরী করে। তখন এর নাম ছিল ইম্পিরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স। ১৯২৬ সালে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সদস্য হয়। ১৯৪৭ এ কমনওয়েলথ তৈরী হলে সিদ্ধান্ত হয় কেবলমাত্র কমনওয়েলথ সদস্যরাই এর সদস্য হতে পারবে (পূর্নাঙ্গ)। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান এর সদস্য হয় (মূলত ভারতের চাপে)। ১৯৬১ সালে কমনওয়েলথ থেকে সরে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা সদস্যপদ হারায়। ১৯৬৫ সালে এর নাম দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স।
তার আগে ১৯৬৪ সালে সিংহল, ফিজি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে এর সহযোগী সদস্য করা হয়। ১৯৬৮ সালে ডেনমার্ক, বারমুডা, নেদারল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা এর সদস্য হয়। এই অবধি প্রতিটি সদস্য দেশের ক্রিকেটের ইতিহাস ছিল সুপ্রাচীন; সে তারা টেস্ট খেলুক চাই নাই খেলুক।
এরপর ১৯৭১ থেকেই বিশ্বকাপের আলোচনা শুরু হয়, ১৯৭৩ এ সিদ্ধান্ত হয় যে ১৯৭৫ এ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হবে। তারপরেই ১৯৭৪ সালে ইজরায়েল ও সিঙ্গাপুর, ১৯৭৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকা, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ, ১৯৭৮ এ পাপুয়া নিউ গিনি সহযোগী সদস্য হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ফেরৎ আসার আবেদন খারিজ হয়। ১৯৮১ সালে শ্রীলঙ্কা পূর্ণ সদস্য হয়।
এরপর অ্যাফিলিয়েট সদস্য নেওয়া শুরু হয় ১৯৮৪ থেকে। প্রথম সদস্য হয় ইতালী, তারপর ১৯৮৫ সালে সুইজারল্যান্ড, ১৯৮৭ সালে বাহামা ও ফ্রান্স এবং ১৯৮৮ সালে নেপাল সদস্য পায়।
এই সমস্ত অ্যাফিলিয়েট ও অ্যাসোসিয়েট সদস্য দেশের ক্রিকেট ডেভলপমেন্টের জন্য আইসিসি প্রাথমিক ভাবে আইসিসি ট্রফি চালু করে।
১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম আইসিসি ট্রফির আসর বসে। মোট ১৫টি দেশ অংশগ্রহণ করে। আর্জেন্টিনা, বারমুডা, বাংলাদেশ, কানাডা, ডেনমার্ক, পূর্ব আফ্রিকা, ফিজি, ইজরায়েল, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলস। শেষ চারে ওঠে শ্রীলঙ্কা, ডেনমার্ক, বারমুডা ও কানাডা। ফাইনালে শ্রীলঙ্কা (৩২৪/৮) কানাডাকে (২৬৪/৫) ৬০ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই দুই দল ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে খেলতে যায়।
ইংল্যান্ডেই দ্বিতীয়বার ১৯৮২ সালে ষোলটি দেশকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে খেলানো হয়। এ গ্রুপে কানাডা, জিব্রাল্টার, ইসরায়েল, হংকং, কেনিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জিম্বাবুয়ে ছিল। বি গ্রুপে বাংলাদেশ, বারমুডা, পূর্ব আফ্রিকা, ফিজি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও পশ্চিম আফ্রিকা।
সেমি ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা ও পাপুয়া নিউ গিনি। ফাইনালে বারমুডা (২৩১/৮) কে জিম্বাবুয়ে (২৩২/৫) পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দেয়। জিম্বাবুয়ে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে খেলতে আসে।
১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডে তৃতীয়বার প্রতিযোগিতার আসর বসে। এবারও ষোলো দল।গ্রুপ এ: আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ডেনমার্ক, পূর্ব আফ্রিকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, জিম্বাবুয়ে, গ্রুপ বি: বারমুডা, কানাডা, ফিজি, জিব্রাল্টার, হংকং, ইস্রায়েল, নেদারল্যান্ডস, পাপুয়া নিউ গিনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সেমি ফাইনালে ওঠে বারমুডা, জিম্বাবুয়ে , ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড। ফাইনালে জিম্বাবুয়ে ২৪৩/৯ তোলে। নেদারল্যান্ডস ১০৯/১ থেকে ১৩৯/৬ হয়ে যায়। এরপর একসময় ২০৬/৫ তোলে। কিন্তু ২১৮ রানেই শেষ হয়ে যায় তাঁরা। জিম্বাবুয়ে আবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় ১৯৮৭ সালে।
১৯৯০ সালে চতুর্থবার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রথম ইংল্যান্ডের বাইরে নেদারল্যান্ডে আয়োজিত হয় এই প্রতিযোগিতা। ১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। এরা হলো আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বারমুডা, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিজি, জিব্রাল্টার, পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, হংকং, ইজরায়েল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, পাপুয়া নিউ গিনি, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, জিম্বাবুয়ে।
সেমিফাইনালে ওঠে কেনিয়া, নেদারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ। ফাইনালে আবার জিম্বাবুয়ে (১৯৮/৪) নেদারল্যান্ড (১৯৭) কে ৬ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয় বার টানা বিজয়ী হয় ও বিশ্বকাপ খেলতে আসে ১৯৯১-৯২ সালে।
১৯৯৪ সালের টুর্নামেন্ট কেনিয়ায় আয়োজন করা হয়। এবারে খেলতে আসে ২০টি দল। দলগুলি হলো আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বারমুডা, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিজি, জিব্রাল্টার, পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস, পাপুয়া নিউ গিনি, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমির শাহী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম আফ্রিকা।
সেমিফাইনালে কেনিয়া, বারমুডা, নেদারল্যান্ড ও আরব আমির শাহী ওঠে। ফাইনালে আরব আমির শাহী (২৮২/৮) কেনিয়াকে (২৮১/৬) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। দুই ফাইনালিস্ট ও তৃতীয় স্থান পাওয়া নেদারল্যান্ড ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ পায়।
১৯৯৭ সালের প্রতিযোগিতা নিয়ে যেহেতু অনেক লেখা হয়েছে এই ধারাবাহিকে তাই এই প্রতিযোগিতা নিয়ে আর কিছু বলছি না।
২০০১ সালে কানাডায় শুরু হয় সপ্তম আইসিসি ট্রফি। এবারে ২৪টি দল খেলতে আসে। এই দলগুলি হলো :- আর্জেন্টিনা, বারমুডা, কানাডা, ডেনমার্ক, পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, জিব্রাল্টার, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইজরায়েল, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, পাপুয়া নিউ গিনি, স্কটল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমির শাহী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইতালি ও পশ্চিম আফ্রিকা দল তুলে নেয়।
নেদারল্যান্ড (১৯৬/৮) দু উইকেটে নামিবিয়াকে (১৯৫/৯) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই দুই দল ছাড়াও কানাডা ২০০৩ এর বিশ্বকাপে খেলতে যায়।
২০০৫ সালে আয়ারল্যান্ডে বসে প্রতিযোগিতার আসর। তাতে ১২টি দল খেলতে আসে। এই দল গুলির মধ্যে ৮টি দল এসেছিল এই প্রতিযোগিতার কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট খেলে। আসলে ১৯৯২ এর রঙ্গিন পোশাক, ১৯৯৬ এর বাণিজ্যিকীকরণ, ১৯৯৯ ও ২০০৩ এর অ্যাসোসিয়েটস দের সাফল্য আইসিসিকে বাধ্য করেছিলো নয়া উদারবাদী ধাঁচের প্রসার ঘটাতে। এই কারণে ইউরোপিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফি থেকে নরওয়ে, আফ্রিকার কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট গুলি থেকে বৎসোয়ানা, আমেরিকা থেকে বাহামা, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে ইতালি, এশিয়া থেকে আরব আমির শাহী, ওমান, নেপাল, কুয়েত ও কাতার, আফ্রিকার ছয় দলীয় টুর্নামেন্ট থেকে নামিবিয়া, উগান্ডা ও জাম্বিয়া পরের রাউন্ডে যায়। এরপর আবার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্ক, আমেরিকা থেকে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বারমুডা সুযোগ পায়। ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক থেকে ফিজি সুযোগ পায়। এরপরে আবার ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার সেকেন্ড ডিভিশন হয়। সেখান থেকে পাপুয়া নিউ গিনি, ফিজি ফাইনাল খেলে।
অবশেষে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্ক সরাসরি আইসিসি ট্রফিতে খেলতে আসে। বাকি গুলো থেকে কোয়ালিফাই করে বারমুডা, কানাডা, নামিবিয়া, ওমান, পাপুয়া নিউ গিনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উগান্ডা ও আরব আমীর শাহী।
সিদ্ধান্ত হয় প্রতিযোগিতা হবে রঙ্গিন পোশাকে, সাদা বলে, কালো সাইট স্ক্রিনে। প্রতিটি ম্যাচ লিস্ট এ হবে। আগের প্রতিযোগিতায় ম্যাচ গুলো মাইনর ম্যাচ ছিল। তাছাড়া পাঁচটি দল বিশ্বকাপে যাবে।
ফাইনালে স্কটল্যান্ড (৩২৪/৮) আয়ারল্যান্ড (২৭৭/৯) কে হারিয়ে জয়ী হয়। এরা ছাড়াও বিশ্বকাপে খেলতে যায় কানাডা, বারমুডা ও আয়ারল্যান্ড। এদের ২০০৯ অবধি ওডিআই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। বাকি দলগুলিকে ২০০৭ এর প্রথম ডিভিশনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
কেনিয়া সেবার ওডিআই স্ট্যাটাস থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপে গেলেও এই নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে অচিরেই সেটা প্রতিভাত হবে।
২০০৭ সাল থেকে আইসিসি চালু করে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ। মনে রাখতে হবে তখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ধ্বস নামতে চলেছে। এমন সময় এই প্রতিযোগিতা চালানোর একটাই অর্থ। বিনিয়োগের নতুন বাজার খুঁজে বের করা। মোট ৯৩টি দেশ এই লীগে অংশ নেয়।
প্রথমে এতে পাঁচটি ডিভিশন ছিল। পরে আটটি ডিভিশন করা হয়। আবার তারপর পাঁচটি ডিভিশনে নামানো হয়। বিগত বিশ্ব রাঙ্কিং ব্যবস্থা দ্বারা পাঁচটি গ্লোবাল ডিভিশনের মোট ৭টি প্রতিযোগিতা হয়। প্রথম চক্রে প্রতিযোগিতা গুলোয় ৬ থেকে ১২টি দল খেলতো।
২০০৭ এর প্রথম ডিভিশন কেনিয়া আয়োজন করে ও জয়ী হয়। স্কটল্যান্ড রানার্স। দ্বিতীয় ডিসিশন ওমানে হয়। আরব আমির শাহী চ্যাম্পিয়ন ও ওমান রানার্স। তৃতীয় ডিভিশন অস্ট্রেলিয়ায় হয়। উগান্ডা চ্যাম্পিয়ন ও আর্জেন্টিনা রানার্স। ২০০৮ এ পঞ্চম ডিভিশন হয় জার্সিতে। আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয় ও জার্সি রানার্স। ফলে ওই বছরেই চতুর্থ ডিভিশন খেলতে আফগানিস্তান যায় তানজানিয়ায়। চ্যাম্পিয়ন হয় এবং হারায় হংকং কে। এরফলে তৃতীয় ডিভিশন খেলতে আফগানিস্তান যায় আর্জেন্টিনায়। সেখানে উগান্ডা কে হারিয়ে জয়ী হয়।
২০০৯ এ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের টুর্নামেন্ট। তাতে ছয়টি ওডিআই অস্থায়ী স্ট্যাটাস পাওয়া দেশ সরাসরি খেলে। এরা হলো বারমুডা, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, কানাডা, কেনিয়া ও স্কটল্যান্ড। দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে সুযোগ পায় আরব আমির শাহী, নামিবিয়া, ওমান ও ডেনমার্ক। তৃতীয় ডিভিশন থেকে আসে চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান ও উগান্ডা।
চারটে দল এখান থেকে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে খেলতে যায়। আয়ারল্যান্ড (১৮৮/১) হারিয়ে দেয় কানাডা (১৮৫) কে ও চ্যাম্পিয়ন হয়। নেদারল্যান্ড (১৮৩/৪) জয়ী হয়ে তৃতীয় ও কেনিয়া (১৭৯) হেরে গিয়ে চতুর্থ হয়ে বিশ্বকাপে যায়। কেনিয়ার পতন শুরু হলো। পঞ্চম স্থানের জন্য আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড খেলে। আফগানিস্তান (২৯৫/৮) জয়ী হয় ও ওডিআই স্ট্যাটাস পায়। স্কটল্যান্ড (২০৬) ষষ্ঠ হয়ে ওডিআই স্ট্যাটাস ধরে রাখে। বারমুডা ওডিআই স্ট্যাটাস হারিয়ে ফেলে। তারা নবম স্থান পায়। এই শুরু হলো আফগানিস্তানের উত্থান।
২০০৯-১৪ সালের মধ্যে আয়োজিত হয়েছিল ৮টি ডিভিশনের ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ। Guernsey তে সপ্তম ডিভিশনের খেলা শুরু হয়। বাহরিন আয়োজক দেশ কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ষষ্ঠ ডিভিশন হয় সিঙ্গাপুরে। তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। বাহরিন কে হারিয়ে। নেপালে হয় পঞ্চম ডিভিশন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে নেপাল জয়ী হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রানার্স হয়ে চতুর্থ ডিভিশনে উঠে ইতালি গিয়ে ফাইনালে ইতালি কে হারিয়ে জয়ী হয়।
এরপর অষ্টম ডিভিশনের খেলা হয় কুয়েতে। জার্মানিকে হারিয়ে তারা জয়ী হয়। ততদিনে প্রথম ডিভিশন হয়ে গেছে। নেদারল্যান্ডের এই প্রতিযোগিতায় আয়ারল্যান্ড স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।
তৃতীয় ডিভিশনের খেলায় হংকং পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেকেন্ড ডিভিশনের খেলা হয় ২০১১ সালে। আরব আমির শাহী তাদের দেশে নামিবিয়াকে হারিয়ে দেয়।
এরপর আবার সপ্তম ডিভিশনের খেলা শুরু হয় ২০১১ সালে। বৎসোয়ানায় টুর্নামেন্ট হয়। কুয়েত নাইজিরিয়া কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই বছর ষষ্ঠ ডিভিশন হয় মালয়েশিয়ায়। Guernsey জয়ী হয় মালয়েশিয়াকে হারিয়ে। হেরে গেলেও মালয়েশিয়া পঞ্চম ডিভিশন খেলে, সিঙ্গাপুরে গিয়ে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরে যায়।
২০১২ সালে আবার চতুর্থ ডিভিশন হয় মালয়েশিয়ায়। নেপাল এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে হারিয়ে দেয়। ২০১৩ সালে তৃতীয় ডিভিশন হয় বারমুডায়। নেপাল আবার জয়ী। রানার্স উগান্ডার।
এসবের ভিত্তিতে আয়োজিত হয় ২০১১-১৩ ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ। ৮ দলের লীগ ভিত্তিক খেলায় আয়ারল্যান্ড প্রথম ও আফগানিস্তান দ্বিতীয় হয়। তৃতীয় হয় আরব আমির শাহী, চতুর্থ নেদারল্যান্ড, পঞ্চম স্কটল্যান্ড, ষষ্ঠ কেনিয়া, সপ্তম নামিবিয়া ও অষ্টম কানাডা। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপ সেমি ফাইনাল খেলা কেনিয়া অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে ষষ্ঠ। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান ২০১৫ বিশ্বকাপে সুযোগ পায়। কেনিয়ার সামনে সুযোগ ছিল বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে যাওয়ার। আসলে এই প্রতিযোগিতা টি ছিল প্রথম ডিভিশন। নাম এইবারে বদল হয়ে গেলো।
২০১৪ সালে বসে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার। দশ দলীয় প্রতিযোগিতাটি হয় নিউজিল্যান্ডে। ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আরব আমির শাহী, চতুর্থ নেদারল্যান্ড, পঞ্চম স্কটল্যান্ড, ষষ্ঠ কেনিয়া, সপ্তম নামিবিয়া, অষ্টম কানাডা, দ্বিতীয় ডিভিশন চ্যাম্পিয়ন নেপাল, দ্বিতীয় উগান্ডা, তৃতীয় পাপুয়া নিউ গিনি ও চতুর্থ হংকং খেলতে আসে। জয়ী হয় স্কটল্যান্ড (২৮৫/৫)। রানার্স আরব আমির শাহী (২৪৪/৯)। হংকং ও পাপুয়া নিউ গিনি তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়ায় ২০১৮ অবধি ওডিআই স্ট্যাটাস পায় এই চারটি দল। কেনিয়া, নেদারল্যান্ড, নামিবিয়া ও কানাডা ওডিআই স্ট্যাটাস ২০১৮ অবধি হারিয়ে ফেলে।
এই সামগ্রিক আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, আর সেটা হলো ২০০৩ অবধি আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশ গুলিকে বিশ্বকাপে ফাঁক পূরণের দল ছাড়া কিছুই ভাবেনি। ফলে ঐ দলগুলির মধ্যে যাঁদের ক্রিকেট ঐতিহ্য সুপ্রাচীন যেমন – শ্রীলঙ্কা (পরে টেস্ট স্ট্যাটাস পায়), জিম্বাবুয়ে (পরে টেস্ট স্ট্যাটাস পায়), বাংলাদেশ (পরে টেস্ট স্ট্যাটাস পায়), আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, ডেনমার্ক প্রভৃতি দলগুলির আধিপত্য ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল দেশ গুলি যেমন আরব আমির শাহী, প্রতিযোগিতা আয়োজন করার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর। তাছাড়া খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি ক্রিকেট কিন্তু নিয়মিত একটা গোষ্ঠী খেলে যাচ্ছে, ফলে দীর্ঘদিন একই দল ধরে রাখতে পারে যেমন কেনিয়া – এরা উঠে এসেছিল।
কিন্তু ২০০৫ থেকে অবশ্যম্ভাবি বিশ্ব জোড়া অর্থনৈতিক ধ্বস একদিকে এই সহযোগী সদস্য দেশের জন্য ভাবতে বাধ্য করে আইসিসিকে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের ধারা এই পথ দেখায় যে ক্রিকেট বিশ্ব অর্থনীতিতে সমান্তরাল রাস্তা দেখাবে নয়া উদারবাদ কে। ফলে ২০০৫ এ শুরু হয় তৎকালীন বিশ্বের বৃহৎ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের, ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগ – ৯৩টি দেশের প্রতিযোগিতা।
এরফলে উন্নত পরিকাঠামোর দেশগুলি ও পরিকাঠামো উন্নতির সম্ভাবনা থাকা দেশের ক্রিকেট উন্নত হয়। সুপ্রাচীন কিন্তু সহযোগী সদস্যদের সবার পরিকাঠামো ভালো ছিল বাকিদের তুলনায়। তারা ক্রমশঃ উন্নতি করে। আর্থিক দিক থেকে সঙ্গতি সম্পন্ন দেশ গুলি উন্নতি করে। পরিকাঠামো উন্নত করার সম্ভাবনা আছে এমন দেশ যেমন আফগানিস্তান প্রভূত উন্নতি করে। ধ্বসে যায় কেনিয়া, পরিকাঠামো উন্নত ছিল না।
যাই হোক এবার ২০১৪ পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষা, সমান্তরাল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও আফগানিস্তানের উন্নতি নিয়ে আলোচনা হবে।
(ক্রমশ)