কেন প্যাথলজিস্ট হলেন বনফুল?

0

বনফুল পাটনা ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক্তারির ফাইনাল পরীক্ষার পর দেশের বাড়ি, মণিহারিতে গিয়ে থাকছিলেন। সেখানেই সরকারের কাছ থেকে নিয়োগপত্র পেলেন। নিয়োগপত্র অবশ্য নয়, ব্যাপারটা এরকম যেঃ সরকার শ্রীবলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়কে সার্জেন হিসেবে নিয়োগ করতে ইচ্ছুক, তিনি যেন অবিলম্বে নিয়মানুযায়ী আবেদন করেন। এই চিঠি পেয়ে বনফুল সরাসরি নিয়োগপত্রসহ দেখা করলেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্টের সঙ্গে।

বনফুলের আবেদনপত্র ও অন্যান্য কাগজ সই করছেন ডেপুটী। সামনের চেয়ারে বসে আছেন বনফুল। হঠাৎ ডেপুটি জিজ্ঞেস করলেন,”By the bye, do you know the rules of the college?” বনফুল জানতেন না। তখন তিনি একখানা টাইপ করা নিয়মাবলী বনফুলের হাতে দিলেন। তাতে প্রথম নিয়ম লেখা ছিল—”Whenever a junior officer or a student meets his superiors he must show him respect by touching his forehead with his palm”। এটুকু পড়েই বনফুল উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার থেকে। ইতিমধ্যে ডেপুটীরও সই-সাবুদ করা শেষ হয়েছে। ডেপুটী সাহেব বললেন, ‘I have almost finished’ । বলেই সামনে তাকিয়ে দেখেন বনফুল চেয়ার থেকে উঠে পড়েছেন।
বনফুল কালবিলম্ব না করে বললেন, ‘না, আপনি কাজ করুন। আমি আপনাদের এই প্রথম রুল পড়ে ঠিক করে ফেললাম যে, এখানে আর কাজ করব না।’
এরকম অপ্রত্যাশিত উত্তরে ডেপুটি হতভম্ব। এরকম নিয়মই চলে এসেছে এতকাল। তিনি নানাভাবে বনফুলকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু বনফুল অনড়।
ডেপুটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বনফুল সোজা স্টেশনে এসে উপস্থিত হলেন। এতক্ষণে মাথাটা কিছু ঠাণ্ডা হয়েছে। এবার শান্তমনে ভেবে দেখলেন, একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। এখানে চাকুরি নিলে লেখালেখির জন্য সময়ই পেতেন না। বরং প্যাথলজিস্ট যদি হতে পারেন, স্বাধীন জীবন হবে, লেখালেখির সময় পাবেন, আবার গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য অর্থোপার্জনও হবে। অতঃপর পাটনা স্টেশন থেকেই বাবাকে চিঠি লিখে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে কলকাতার পুরোনো মেসে চলে এলেন বনফুল।
তখনকার সময়ে প্যাথলজির কাজ শেখা খুব শক্ত ছিল। না ছিল অকাদেমিক কোর্স, না ছিলেন এ বিষয়ে পারদর্শী মানুষ। পরে প্রায় এক বছর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চারুব্রত রায়ের কাছে শিক্ষানবিশী করে প্যাথলজির কাছ শিখেছিলেন বনফুল। সে অন্য গল্প।

ঋণ স্বীকার: পশ্চাৎপট, বনফুল।

 

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *