উড়নচণ্ডীর পাঁচালি। পর্ব ১২। লিখছেন সমরেন্দ্র মণ্ডল
সাকলাত প্লেস থেকে বিশপ লেফ্রয় রোড
তখন কলকাতায় থাকতে শুরু করেছি। কাজের প্রয়োজনে রাত হয়ে যেতো বলে মাঝে মধ্যেই শিয়ালদহ স্টেশনের বিশ্রামঘরে রাত কাটাতাম। তখন থাকা যেতো। কিন্তু এভাবে কি থাকা যায়! ছোটবেলার এক বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে কোলেবাজার অঞ্চলে একটা ঠেক জুটে যায়। মালিকবিহীন বাড়ি। বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে সেঁধিয়ে গেলাম একদিন। এ বাড়ি নিয়ে পরে না হয় দু-কথা বলা যাবে। এখন একটু অন্য কথা হোক।
সারাদিন পত্রিকা অফিসে কাটানোর পর মাঝে মধ্যে সন্ধেবেলা ফাঁকা লাগত। রোজ অজন্তার আড্ডাও যেন ভাল লাগছিল না। উড়নচণ্ডী মনটা অন্য কিছু খুঁজছিল। পত্রিকা দপ্তরের শিল্পবিভাগের অরুণ চট্টোপাধ্যায় একদিন জিজ্ঞাসা করল, সন্ধেবেলা কি করিস?
উত্তর দিলাম, এই একটু আড্ডা দিই।
অরুণদা বলল, আমাদের একটা নাটকের দল আছে। ওখানে যেতে পারিস। তুই তো নাটক করতিস।
হ্যাঁ, কৃষ্ণনগরে থাকার সময় নিয়মিত নাটক করতাম বটে, তবে এখন অন্যের নাটক দেখে ভাল-মন্দ লিখতে হয়। অরুণদা নিজেও নাটক করে। তবে নিয়মিত নয়। অফিসে রিক্রিয়েশন ক্লাব তৈরি করে নাটক করেছে। অরুণদা প্রধান ভূমিকায়, আবার পরিচালকও বটে। তখন পত্রিকা দপ্তরে যোগ দিইনি, তবে ছবি দেখেছি।
বললাম, কিন্তু নাটক করা মনে হয় হবে না। সন্ধেবেলায় তো অ্যাসাইনমেন্ট থাকে।
–আয় না। ভাল লাগবে।
এক সন্ধ্যায় বউবাজারে মহলা কক্ষে নিয়ে গেল। পরিচয় করিয়ে দিল পরিচালক বরুণ কাবাসির সঙ্গে। দলের নাম ওয়ার্কাস থিয়েটার। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত। বরুণদা সি পি আই (এম) র সদস্য। ছবি পরিচালনাও করেছেন। তার ‘ছুটির ঘন্টা’ আর ‘অরুণ বরুণ কিরণ মালা’ সিনেমা দুটো বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। কিছুদিন ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে ছিলেন বলেও তিনি জানিয়ে ছিলেন। আর হ্যাঁ, তার দাদা অরুণ কাবাসি অভিনয় করতেন। ছিলেন চিত্রপরিবেশক। ওদের একটা চিত্র পরিবেশনার অফিস ছিল সাকলাত প্লেসে। কমলিনী পিকচার্স। আমার কর্মস্থল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে।
নাটকের মহড়ায় খুবই কম যাওয়া হতো। অবশ্য যখন ওই দলের সঙ্গে যুক্ত হই, তখন বরুণ কাবাসির লেখা একটা নাটক পড়া হচ্ছিল। সপ্তায় তিন দিন বোধহয় মহড়া হতো। অন্য দিন সাকলাত প্লেসে আসতেন অনেকেই। চলত গল্প পর্ব। আসতেন গীতিকার মিল্টু ঘোষ। তিনি ছিলেন নাট্যদলের সভাপতি। থাকতেন সম্ভবত বেলেঘাটায়। অনেকদিনই ওঁর বাড়িতে যেতে বলেছিলেন, যাওয়া হয়নি। ওই সাকলাত প্লেসে সমীরণও যেতে শুরু করল। ক্রমশ আমরা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম কাবাসি ভাইদের সঙ্গে।
কিছুদিনের মধ্যে ‘যাদুযুদ্ধ’ নামে একটি নাটকের মহড়া শুরু হল। রবীন্দ্র ভবনে নাটক মঞ্চস্থ হবে। অনিয়মিত হাজির হতাম মহড়া কক্ষে। মিল্টুদাও আসতেন। নাটকে দুটি গান ছিল। প্রতিবাদী গান। লিখেছিলেন মিল্টুদা। সুর করেছিলেন কল্যাণ সেন বরাট। কল্যাণদা তার কয়্যার গ্রুপ নিয়ে ব্যস্ত। তা সত্ত্বেও সুর করে দিলেন। ক্রমে কল্যাণ সেন বরাটের সঙ্গেও একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠল।
নাটকের মঞ্চ করা হবে। ত্রিমাত্রিক মঞ্চ। বরুণদা আমাকে বললেন, মঞ্চটা তুই করে দে।
আমি একটা নক্সা এঁকে বরুণদাকে দেখালাম। বরুণদা সেটা অরুণ চট্টোপাধ্যায়কে দেখালো। অরুণদা সেটা পকেটে রেখে দিল। পরে মঞ্চে গিয়ে দেখি, আমার নক্সাটা একটু অদলবদল করে অরুণদার নক্সা অনুযায়ী মঞ্চ তৈরি হয়েছে। নাটক হল। একেবারেই ভাল লাগল না আমার। পরে আর দলে যেতাম না। তবে সাকলাত প্লেসের অফিসে যাওয়া ছিল নিরন্তর। আকর্ষণ ছিল মিল্টু ঘোষের সঙ্গে আড্ডা।
ওখানে গিয়েই জানতে পারলাম অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের একটা বিজ্ঞাপন সংস্থা আছে। সান পাবলিসিটি। মূলত সিনেমা আর নাটকের বিজ্ঞাপনের কাজ করে। অরুণদার সঙ্গে ছিল তরুণ চৌধুরী নামে এক যুবক। সে সদ্য আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়েছে। অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিনেমার পোস্টার আর বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকে। এক সন্ধ্যায় আমি আর সমীরণ গিয়ে দেখি অরুণদার সঙ্গে তরুণের বিস্তর ঝগড়া চলছে। প্রায় হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়। তরুণ রাগ করে বেরিয়ে গেল। পরে তরুণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। ততদিনে আমরা সান পাবলিসিটির সঙ্গে জুড়ে গেছি। একদিন বরুণ কাবাসি বললেন, তুই আর সমীরণ সান পাবলিসিটির সঙ্গে থাক। দু পয়সা বাড়তি ইনকাম হবে।
এমনিতেই সিনেমা পাড়ায় আমাদের যাতায়াত ছিল। সমীরণ ‘আজকাল’ কাগজে সিনেমার পাতায় খবর লেখে। ‘নেপথ্যের মুখ’ শিরোনামে একটা কলমও লিখছিল। আমিও মাঝে মাঝে যাই খবর জোগাড় করতে।
কাজ করতাম ‘নবম দশম’ পত্রিকায়। কিন্তু সিনেমা পাড়ার খবর লিখতাম অন্য কাগজে বেনামে। মাঝে মধ্যে ‘পরিবর্তন’-এও লিখতাম। তাছাড়া সিনেমা পাড়ায় যাতায়াত ছিল অনেকদিন ধরেই। ফলে একটা টান ছিলই। অফিস ছুটির পর প্রায়ই চলে যেতাম সিনেমা পাড়ায়। কোনদিন সমীরণ থাকত, না হলে আমি আর অরুণদা। কখনও একাই চলে যেতাম। আর স্টুডিওতে ঢোকা এত কড়াকড়ি ছিল না। ইচ্ছে মতো যাতায়াত করা যেতো। অনেকের সঙ্গেই চেনা-জানা হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুত্ব হয়েছিল কারো কারো সঙ্গে। তারা ছিলেন সিনেমার নেপথ্যের কারিগর। দু চারজন পরিচালক আর শিল্পীর সঙ্গেও বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কৃষ্ণনগর থেকে অমল শূরের সঙ্গে আলাপ। পরে ঘনিষ্ঠতা। অমলদা যখন ‘রসময়ীর রসিকতা’ করেছিলেন, তখন দু চারদিন শুটিংয়েও ছিলাম। সম্পাদনার কাজ যখন চলছিল, তখন সেখানে কাজ দেখার জন্য থাকতে দিয়েছিলেন। অনেক কারিগরী বিষয় শিখেছিলাম তার কাছ থেকে। অমলদা বলতেন, সিনেমার খুটিনাটি না জানলে ভালো সমালোচক হওয়া যায় না।
তা সেই সান পাবলিসিটির দৌলতে একদিন রায়বাবুর বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায় হাতেখড়ি দিলেন ‘ফটিক চাঁদ’ ছবি করে। ছেলের পরিচালনায় প্রথম ছবি। বাবা সত্যজিৎ পিছন থেকে মদত দিয়ে যাচ্ছেন। চিত্রনাট্য তিনি লিখেছিলেন। গল্পও তাঁর। সঙ্গীত পরিচালনাও তিনি করছেন। সত্যজিৎ টিম কাজ করছে ‘ফটিকচাঁদ’ ছবিতে। প্রচার পরিকল্পনাও করেছিলেন রায়বাবু নিজে। একই সময়ে সত্যজিৎ রায় ফরাসি টিভির জন্য ‘পিকু’ নামে ছোট ছবি করেছিলেন। প্রাপ্তমনস্ক ছবি। ছেলের প্রথম ছবি, খুব বড় ছবি ছিল না। সত্যজিৎ রায় বোধহয় ঠিক ভরসা করতে পারছিলেন না। তিনি স্থির করলেন ‘ফটিকচাঁদ’-এর সঙ্গে ‘পিকু’ মুক্তি পাবে। পোষ্টারের নক্সাও তিনি করছেন।
এসব খবর জানা গেল তাঁর বাড়িতে গিয়েই। একদিন দুপুরে শিল্প বিভাগে বসে কাজ করছি। অরুণদা খুব নিচুস্বরে বলল, সন্ধেবেলায় সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি যাবো। তৈরি থাকিস।
ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত হয়ে উঠলাম। কতদিনের বাসনা তাঁর সামনে বসার।
আমাদের অফিস ছুটির একটু আগেই সমীরণ এলো। অফিস ছুটির একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল ঠিকই। কিন্তু পত্রিকার অফিস। সম্পাদনার কাজ থাকলে দেরি তো হতোই। আবার বাইরের কোন্য কাজের নির্দেশ থাকলে, যেতে হতো। সেটা তো কাজের মধ্যেই পড়ত। কাগজের অফিসে সবই তো নিয়ম মতো চলে না। তবুও ছুটির একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল। সমীরণ আসতেই তাকে বললাম রায় বাবুর বাড়িতে যাওয়ার কথা। সে তো এক পায়ে খাঁড়া। সে বলল, বাড়ির ভিতরটা কেমন একটু দেখব।
কাজের তল্পিতল্পা গুটিয়ে বের হলাম। অরুণদার সঙ্গে সোজা বিশপ লেফ্রয় রোডে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। আর বুকের মধ্যে হাপড় টানছে। অবশেষে বন্ধ দরজার সামনে আমরা। অরুণদা ঘন্টি বাজালেন। দরজা খুললেন সন্দীপ। ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন, অরুণদা এসেছেন।
অবশ্য ততক্ষণে তিনি দরজা থেকে সরে গেছেন। ভিতর থেকে মেঘমন্ত্র স্বর ভেসে এলো, ভিতরে এসো।
অরুণদার পিছন পিছন আমরা। বিশাল ঘর। ভিতরের ঘরে যাওয়ার দরজার কাছাকাছি একটা ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে পেটের ওপর বেশ বড় একটা ক্লিপবোর্ডে আঁকিবুকি করছেন। বললেন, বসো।
নিজের মনে কাজ করতে করতেই বললেন।
অরুণদা বলল, বস।
ঘরে কোনও আসবাব পত্র নেই। একদিকে দুটো সোফা আছে। প্রশস্থ মেঝেয় কার্পেট পাতা। ছড়িয়ে আছে বিদেশী রেকর্ড। নানা বই। আগোছালো ঘর। এমন ঘর তো শিল্পীকেই মানায়। বসলাম কার্পেটের উপর। অরুণদাও বসল। সে তখন ঝোলা থেকে কাজের কিছু সরঞ্জাম বের করেছে। আমার ওদিকে নজর নেই। রেকর্ডগুলো দেখছি, পড়ার চেষ্টা করছি কার সঙ্গীত। বুঝতে পারছি ফটিকচাঁদ-য়ের সংগীত রচনার জন্য তিনি এইসব বিদেশী রেকর্ড বের করেছেন। এমন সময় ঘরের মধ্যে মেঘ ডাকল, অরুণ।
অরুণদা উঠে তাঁর সামনে গেল। কিছু ডিজাইন বুঝিয়ে দিলেন। অরুণদা আমাদের দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি ‘কিশোর মন’ পত্রিকায় আছি জেনে তাকালেন। বললেন, অদ্রীশ-
ছোট জবাব, হ্যাঁ।
অদ্রীশ মানে অদ্রীশ বর্ধন। রহস্য-রোমাঞ্চ-গোয়েন্দা উপন্যাস লেখক। সত্যজিত রায়ের ঘনিষ্ঠ। আকাশবাণী কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায় আর অদ্রীশ বর্ধন তিনজনে একত্রে একটি গল্প লিখেছিলেন ‘সবুজ মানুষ’ নামে।
তিনি আবার মগ্ন হলেন কাজে।
অরুণদা ছবি আঁকা ড্রইং পেপার নিয়ে এলো। ওপরে ছবি আঁকা। সিনেমার নামও দেওয়া আছে। অরুণদা একটা ফটোস্ট্রিপ বের করল। বলল, এখানে সাঁটিয়ে দে তো।
দিলাম। সেটা নিয়ে অরুণদা আবার রায়বাবুর কাছে গেলেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে স্ট্রিপটা তুলে ফেললেন। একটু বাঁকা করে বসিয়ে দিলেন। দেখলাম একটা সুন্দর ডাইমেনশন তৈরি হল।
ততক্ষণে সন্দীপ রায় একটা বড় কাচের প্লেটে তিন রকমের সন্দেশ আর জল রেখে গেছেন। সন্দেশ দেখেই লীলা মজুমদারের পারলৌকিক কর্মের দিনটার কথা মনে পড়ল। সমীরণকে বললাম, সন্দেশ।
সমীরণ আলতো করে বলল, ব্রাহ্ম।
অরুণদা বসে বসে পোস্টার ডিজাইন করছে। কিছুটা করে আবার উঠে যায়। তিনি কিছু পরামর্শ দেন। এভাবে কাজ করতে ঘন্টা দুয়েক পার হল। তিনি বললেন, মাদ্রাজে কে যাবে?
অরুণদা আমাকে দেখিয়ে বলল, এ যাবে।
তিনি আমার হাতে ছোট খাতার মাপে একটা নক্সা দিলেন। একটা খামে ভরে। বললে, এটা দিয়ে দেবে। আমার নাম করবে। তিনি প্রেসের ঠিকানাও লিখে দিলেন।
আমি সাহস করে বললাম, এতো ছোট মাপ থেকে বড় পোস্টার করতে পারবে?
উনি মৃদু হেসে বললেন, আমি এভাবেই করে দিই। ওরা ডাইগোনালি বড় করে নেবে। ওরা জানে।
ফটিকচাঁদ ছবির কিছু প্রচারের দায়িত্ব সান পাবলিসিটি পেয়েছিল। দু’একদিন পর মাদ্রাজ মানে চেন্নাই যাওয়া স্থির হল। কারণ আমাকে অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে। টিকিট কাটতে হবে। ছবি মুক্তি পেতে তখনও নাম মাস দেড়েক বাকি। ততদিনে প্রচারের কাজ চলবে। রায়বাবু সেসব নিয়ে আলোচনায় বসবেন। সম্ভবত উত্তর কলকাতার ‘উত্তরা’ প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তি পেয়েছিল। হল সাজানোর কোনও দায়িত্ব ছিল না। উনি বললেন, ওসব ওরা করে নেবে। মানে ছবির পরিবেশক সংস্থা।
চেন্নাই থেকে ঘুরে আসার দিন সাতেক পর জানা গেল পোস্টার চলে এসেছে। চেন্নাইয়ের ‘মাদ্রাজ প্রেস’ পাঠিয়ে দিয়েছে। রায়বাবুর ডাকে আবার যাওয়া হল বিশপ লেফ্রয় রোডে। সেদিনের আলোচনার সময় সন্দীপ রায়কে ডেকে নিলেন। ছবি শুরুর আগে সন্দীপ রায় নিজে থাকবেন অতিথি বরণের জন্য। সান পাবলিসিটির তরফে আমি আর সমীরণ থাকব। অরুণদা বলল, এরা দুজন একটু আগে হলে চলে যাবে।
সেদিন কিছু বলিনি। পরে সমীরণের সঙ্গে আলোচনা করলাম কিভাবে ডুব দেওয়া যায়। ছোটদের ছবি ‘ফটিকচাঁদ’-এর সঙ্গে প্রাপ্তমনস্ক ছবি ‘পিকু’ জুড়ে দেওয়াটা ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। ছেলের ছবিকে প্রমোট করার জন্য রায়বাবুর এই কাজটিকে অনেকেই সমর্থন করেনি। একটা চাপা গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সত্যজিৎ রায় ছিলেন অবিচল। ছবি মুক্তির দিন দুয়েক আগে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাইরে চলে গেলাম। সমীরণও যায়নি। পত্রিকার কাজে বাইরে যাচ্ছি, অরুণদারও কিছু বলার ছিল না।
এর পরে সান পাবলিসিটি আর কোনও কাজ পায়নি রায়বাবুর কাছ থেকে। আমাদেরও আর যাওয়া হয়নি। উড়নচণ্ডী এই ছোট্ট স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে সিনেমা পাড়ায় অন্য শিল্পীদের সান্নিধ্যে চলে গেলেন। সে সব অবশ্য কাগজে কাজ করার সৌজন্যেই।
(ক্রমশ)