ইতিহাসের পথে পথে : একটি ক্রিকেট আলেখ্য। ষোড়শ পর্ব। লিখছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়

0

(গত পর্বের পর)

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে কেনিয়া বেশ কিছু ওয়ানডে ইন্টারন্যশনাল ম্যাচ খেলে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে, ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রভৃতি দলের বিরুদ্ধে। জিতেছিল ৬টি ম্যাচ। ৫টি ম্যাচই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, একটা ভারতের বিরূদ্ধে। কিন্তু অজস্র ম্যাচে লড়াইয়ের সাক্ষর রেখে যায়। উল্লেখ্য, একাধিক ত্রিদেশীয় প্রতিযোগীতায় তাঁরা রানার্স হন যা অ্যাসোসিয়েটস দেশের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব। আসলে সেই সময় তাঁরা নিজেরা, বাংলাদেশ ও ভারত এই ধরণের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। সবক্ষেত্রেই তৃতীয় দলটি বাংলাদেশ হওয়ায় তাঁদের সুবিধা হয়েছিল ফাইনালে উঠতে। তখনও অবধি বাংলাদেশের তুলনায় কেনিয়া অসম্ভব উন্নত দল।

১৯৯৯ এর বিশ্বকাপে তাঁরা কোনও ম্যাচ জেতেন নি। কিন্তু একটি বাদে সবকটিতে ভালো ব্যাট করেন। বিশেষ করে উল্লেখ করা যায় সাউদামপ্টনের মাঠে তাঁদের ৫২ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও মরিস ওদুমবে (৯৫ বলে ৮৩) ও অল্পেশ ভাদের (৯৮ বলে ৭৩ অপরাজিত) ১৬১ রান যোগ করে দলকে ২১৩ অবধি টানেন। শ্রীলঙ্কা (২৭৫/৮) অতি সহজেই যে ম্যাচ জিতবে বলে ভাবছিল সেই ম্যাচ তাঁরা ৪৫ রানে জয়ী হয়। কেনিয়া ২৩০/৬ তুলেছিল।

এরপর এল জি কাপের তিনটি ম্যাচেই হারলেও সব ম্যাচে লড়াই করে কেনিয়া। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে চার বল বাকি থাকতে জয় পায়। দশ ওভারে ২০ রান বাকি, হাতে ৭ উইকেট; এই অবস্থা পরের ৮.৩ ওভারে ১৭ রান তুলতে চার উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ২২০ রানে আটকালেও ব্যাটিং দূর্বল থাকায় ৫৮ রানে হেরে যায় কেনিয়া। তৃতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৪ রানে হেরে যান তাঁরা।

আই সি সি নক আউট প্রতিযোগিতার প্রি- কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে চূড়ান্ত পর্যুদস্ত হয় কেনিয়া। তবে ব্যাট করে ২০০ তুলে দিয়েছিল। এরপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারে কেনিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দাঁড়াতেই দেয়নি কেনিয়াকে।

এরপর ২০০০/০১ এ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতায় আবার অঘটন ঘটায় ভারত কে হারিয়ে। ভারত অবশ্য পরের ম্যাচে নির্মম প্রতিশোধ নেয়। তিনটি করে ম্যাচের গ্রুপ লীগের খেলায় ভারতের বিরুদ্ধে খেলা প্রথম ম্যাচে কেনিয়া মাত্র ৯০ করে অল আউট হয়ে ম্যাচ হারে। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪৬/৬ তোলে তাঁরা ও ভারতকে ১৭৬ রানে ফেলে দেয়। শেষ ম্যাচে ভারত ৩৫১/৩ তোলে। কেনিয়া তোলে ৫ উইকেটে ১৬৫।

এরপরে পি এস ও ট্রাই ন্যাশনে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে তারা। কেবল একটাই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৪৯.১ ওভার অবধি ব্যাট করে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বি পাক্ষিক সিরিজেও হারে তাঁরা।

তবে প্রথম শ্রেণির খেলায় অসম্ভব দূর্বল ছিল তাঁরা। ২০০৪ সালের ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ শুরু হওয়ার আগে ২১টি প্রথম শ্রেণির খেলায় কেনিয়া ১টি জেতে, ১০টি হারে ও দশটি ড্র করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই স্থানীয় ক্রিকেটের উন্নতি ও পরিকাঠামো উন্নয়ণ না ঘটাতে পারলে কোনও লাভ হবে সেটা তাঁরা জানতেন।

আইসিসি এই অবস্থায় শুরু করে ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ। এর মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েটস দলের প্রথম শ্রেণির খেলার অভিজ্ঞতা বাড়বে বলে মনে করা হয়। ইতিমধ্যে ঘটে গিয়েছিল চরম অঘটন।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপের আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পটচেফস্ট্রুমের প্রথম ম্যাচে কেনিয়া দশ উইকেটে হেরে যায় দক্ষিণ অফ্রিকার কাছে। কিন্তু কানাডাকে (১৯৭) দ্বিতীয় ম্যাচে কেপটাউনে কেনিয়া (১৯৮/৬) হারিয়ে দেয় ৪ উইকেটে। পরের ম্যাচ ছিল নাইরোবিতে। নিউজিল্যান্ড নিরাপত্তার অভাবের অজুহাতে ম্যাচ ওয়াক ওভার দেয়। কেনিয়া জিতে যায়। পরের ম্যাচে চরম অঘটন। কেনিয়া (২১০/৯) হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা (১৫৭) কে। কলিন ওবুয়া (৫/২৪) বিধ্বংসী বল করেন। পরের ম্যাচে স্বাভাবিক ভাবেই জোহানেসবার্গে বাংলাদেশ (১৮৫) কেনিয়ার (২১৭/৭)  সামনে দাঁড়াতে পারেনি। মরিস ওদুম্বে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২৪৬/৬) কেনিয়াকে (১০৪) দাঁড়াতেই দেয় নি কিম্বার্লির ম্যাচে।

সুপার সিক্সে কেনিয়া (২২৫/৬) প্রথম ম্যাচেই ভারতের (২২৬/৪) টপ অর্ডার ধ্বসিয়ে দেয় (৩/২৪) সৌরভ গাঙ্গুলীর অপরাজিত ১০৭ ভারতে জিতিয়ে দেয়। ব্লুম্ফন্টেইনের খেলায় জিম্বাবুয়ে (১৩৩) কে সহজেই হারিয়ে দেয় কেনিয়া (১৩৫/৩)। শেষ ম্যাচে কেনিয়া (১৭৪/৮) অস্ট্রেলিয়াকে (১৭৮/৫) হারাতে পারেনি। কিন্তু লীগের খেলায় পুল বি থেকে সুপার সিক্সে ওঠা দুটি দলকেই হারানোর ফলে ৪ পয়েন্ট পাওয়াই ছিল কেনিয়ার। সুপার সিক্সের খেলায় জিম্বাবুয়েকে হারানোয় তাঁরা সেমি ফাইনালে উঠে যায় প্রথম অ্যাসোসিয়েট দেশ হিসেবে।

সেমিফাইনালে ভারত ৪ উইকেটে ২৭০ তোলে। সৌরভ গাঙ্গুলী অপরাজিত ১১১ করেন। শচীন ৮৩। জবাবে কেনিয়া ১৭৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। যে কেনিয়া ১৯৯৬ সালে সোনার দৌড় শুরু করেছিল সেই দৌড় ২০০৩ এর সেমি ফাইনালে থামলো। এর পর চলবে পতনের পর্ব।

এরপর চেরি ব্লসম কাপ ও আইসিসি ট্রফির পুল সি এর খেলায় সব ম্যাচে হেরে যায় তাঁরা। অধিকাংশ ম্যাচে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় তাঁরা। এরপর জিম্বাবুয়েতে গিয়ে ওডিআই সিরিজ ২-২ এ ড্র করে একটু আশার আলো জাগায়। কিন্ত এরপরেই বাংলাদেশে গিয়ে ৪-০ য় ওডিআই সিরিজ খুইয়ে বসে।

এরপর কানাডা তে গিয়ে ২-০ তে সিরিজ জিতে যায়, বারমুডা সিরিজের ম্যাচ ক্যানসেল হওয়ার পরে বাংলাদেশ কেনিয়া সফরে এসে ওডিআই সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জেতে। বোঝাই যাচ্ছিল, কেনিয়া ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়ছে।

বারমুডা ২০০৬/০৭ কেনিয়ায় খেলতে এলে কেনিয়া ৩-০ e সিরিজ জিতে নেয়। তারপরে অ্যাসোসিয়েটস এর খেলায় তিনটি ম্যাচ জেতে, একটাই হারে। কিন্তু জয়ী ম্যাচ গুলির একটি স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ছয় রানে জেতে, আর হেরে যায় কানাডার কাছে।

এরপর আইসিসি ২০০৬/৭ সালেই অ্যাসোসিয়েটস দের প্রথম ডিভিশন লীগ চালু করলে কেনিয়া একে একে বারমুডা, নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড (১ উইকেটে, ১ ওভার বাকি থাকতে) ও কানাডাকে হারায়, স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারে। কিন্তু ফাইনালে ওঠে ও স্কটল্যান্ড কে হারায়। পরের বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কেনিয়া কানাডাকে হারায় ও নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের কাছে হেরে প্রথম রাউন্ডেই বিদায়।

কেনিয়ার দুর্বলতা প্রকট হয় যখন কানাডা ও বারমুডার বিরুদ্ধে দুটি অ্যালাদা সিরিজে ৫ টি ম্যাচ জিতলেও কোনটি ১, কোনটি ২ ও কোনটি ৩ উইকেটে জিততে হয়। এরপরে স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যায় কেনিয়া। এমনকি আয়ারল্যান্ড ও তাঁদের হারায়।

দেশের মাটিতে ২০০৮/০৯ সালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিয়ে সামান্য চমক দিলেও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে ছিল কেনিয়া, লীগের বাকি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় তারাই ফাইনালে ওঠে, সেটাও পরিত্যক্ত হয়।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা ৭ ম্যাচ হারে। আগে হেরে যাওয়া ম্যাচেও যে লড়াই চলতো সেটা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, উল্টে জেতা ম্যাচ গুলো আসছিল দূর্বল তম প্রতিপক্ষের বিরূদ্ধে, অনেক লড়াই করে। ফলে ২০১১ এর বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করার ২০০৯ এর প্রতিযোগিতায় নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে চতুর্থ হয়ে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়।

২০১০ এর ফার্স্ট ডিভিশন লীগের আগে ১১টা ওডিআই এর মধ্যে মাত্র দুটো জিতেছিল কেনিয়া। ২০০৩ এর রানার্স, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ভারত কে হারানো জায়ান্ট কিলার ডেভিড ক্রমাগত অপসৃয়মান হয়ে উঠছিল।

২০১০ এর ফার্স্ট ডিভিশন লীগের খেলায় সব ম্যাচ হেরে যায় তাঁরা। এমনকি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও। ষষ্ঠ স্থান হয় ছয় দলের মধ্যে। আসলে মরিস ওদুম্বে, স্টিভ টিকোলো, হিতেশ মোদী, দীপক চূড়াসামা, কেনেডি ওটিয়েনোদের কয়েক বছরের মধ্যে অবসর তাঁদের দূর্বল করেছিল। পরিকাঠামো না থাকায় নতুন খেলোয়াড় ওঠেনি।

বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বি পাক্ষিক সিরিজ ২-১ এ জিতলেও বিশ্বকাপে (২০১১) সব ম্যাচ হারে একপ্রকার লড়াই না করেই। এরপর আইসিসি ওয়ার্ল্ড লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১১-১৩) চালু করলে কেনিয়া ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৫টি জিতে পঞ্চম হয়। এরমধ্যে ১০টি ওডিআই ছিল। যার তিনটি জেতে কেনিয়া। দুটি কানাডা ও একটি আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ ওডিআই খেলার যোগ্যতা এমন দেশের বিরুদ্ধেও চারটি ম্যাচের দুটিতে হারে কেনিয়া।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং এ কেনিয়া লীগের খেলায় বি গ্রুপের মধ্যে তৃতীয় হয়ে সুপার সিক্সে ওঠে। তাঁদের একটি ম্যাচ ওডিআই ছিল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেটি তাঁরা জেতেন।

সুপার সিক্সে একটি ম্যাচ জিতে পঞ্চম হয় কেনিয়া। কেবল স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল ওডিআই। সেটা হারে। সেই শেষ। বিশ্বকাপ বা ওডিআই আর খেলা হয়নি তাঁদের। সেটা ২০১৪ সাল। তারপর থেকে ২০২২ অবধি ৮ বছরে ৪১টি লিস্ট এ খেলেছে তারা। গড়ে ৫টি করে। অথচ তার আগের প্রায় ১৮ বছর এই গড় ছিল বছরে ১৩টি করে।

এবারে যদি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ গুলি দেখি, যা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সবথেকে গুরুত্ব পূর্ণ পর্ব ছিল তাহলে এই পতন আরও নজরে আসবে পরিষ্কার।

২০০৪ সালের আন্ত মহাদেশীয় কাপে আফ্রিকা গ্রুপের খেলায় উগান্ডা কে হারালেও নামিবিয়ার সঙ্গে ড্র করে। সেমি ফাইনালে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে গিয়ে বিদায় নেয়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন পাকিস্তান ভারতের এ দলের বিরূদ্ধে চারটি প্রথম শ্রেণির তিনটি ড্র করলেও ভারতের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ হেরে যায়।

পরের বারের (২০০৫) আন্ত মহাদেশীয় কাপে আফ্রিকা গ্রুপের খেলায় হুবহু আগের বছরের ফল হয়। সেমি ফাইনালের আগে জিম্বাবুয়ের এ দলের বিরুদ্ধে দুটো প্রথম শ্রেণির খেলা খেলে কেনিয়া। দুটি ম্যাচই সরাসরি জিতে যায়। এর পরআন্ত মহাদেশীয় কাপের সেমি ফাইনালে বারমুডার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকে ফাইনালে উঠে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে হেরে যায়। অর্থাৎ আন্ত মহাদেশীয় কাপ শুরুর পরে চারটি জয়, দুটি হার, ৬টি ড্র।

২০০৬ এর আন্ত মহাদেশীয় কাপে কেনিয়া একটি জিতে নেয়, একটিতে ড্র করে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে, একটিতে ড্র করে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে। ফলে গ্রুপ লীগে বিদায়। এরপরে ভারত এ দলের বিরুদ্ধে সরাসরি পরাজয়। তারপরেই শুরু হয় আন্ত মহাদেশীয় কাপ কিন্তু এবারের ফরম্যাট দীর্ঘকালীন লীগ ভিত্তিক। সময়কাল ২০০৭-০৮। এই প্রতিযোগিতায় ৪টি জয়, দুটি হার (একটিতে প্রথম ইনিংসে লিড) ও একটি পরিত্যাক্ত খেলা মিলিয়ে তাঁরা তৃতীয় হন।

২০০৯-১০ এর প্রতিযোগিতায় তারা পঞ্চম হয় ৬ ম্যাচের দুটি জিতে, তিনটি হেরে ও একটি ড্র (প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে) করে।

২০১১-১৩ এর প্রতিযোগিতায় ৭ ম্যাচে ১টি জয়, ৩ টি হার, দুটি ম্যাচে হারলেও প্রথম ইনিংসে লিড, একটি পরিত্যক্ত খেলা মিলিয়ে তাঁর ৭ম স্থান পান। সেই শেষ। আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মুখ দেখেনি কেনিয়া। ২৭ বছরে ৫৫ ম্যাচের মধ্যে ১৩ জয়, ২০ হার, ২৩ ড্র, দুটি পরিত্যক্ত। ঘটনাচক্রে কন্টিনেন্টাল কাপ শুরুর পরে ৩৪ টি ম্যাচের মধ্যে ২০০৯ অবধি ৮টি জয়, ৪টি হার, একটি ড্র, একটি পরিত্যক্ত। কিন্তু দীর্ঘকালীন ফরম্যাট আসার পরে তৃতীয় হলেও পরের দুটি কন্টিনেন্টাল কাপে ১৩ ম্যাচে তিনটি মাত্র জয়, ৬টি হার, তিনটি ড্র, কেনিয়ার পতন ঘটায়। তখন কিন্তু ওডিআই খেলাতেও তাঁরা ধুঁকছেন।

বাংলাদেশ সে সময় মোটের ওপর যা হোক ভালো একটা ক্রিকেটকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলো কিন্তু  কেনিয়া এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিলই কমে আসে যখন খেলোয়াড়রা সময়ের সঙ্গে বয়সের ফাঁদে পড়েন। তখন হাল কেউ ধরেনি। পরবর্তী প্রজন্ম চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি। কেনিয়ার তৎকালীন প্রশাসন, ক্রিকেট বোর্ড, স্থানীয় জনগণ কেউই তাদের খেলোয়াড়দের শ্রেষ্ঠ সময়েও দেশের ক্রিকেটের জন্য কিচ্ছু করেনি। ফলাফল অবশ্যম্ভাবী, তারকা খেলোয়াড়দের বিদায়ের সঙ্গে পতন হলো কেনিয়ার ক্রিকেটের। এটাও সত্য কেনিয়ার তরুণ প্রজন্ম ক্রিকেটে মোটেই আগ্রহী নয়। ওদের সমস্ত আগ্রহ অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলে।

এভাবেই বিরাট সম্ভাবনা জাগিয়ে কেনিয়ান ক্রিকেট একসময় সমাপ্ত হয়ে যায়। সেভাবে স্পন্সর ও অন্যান্য সাপোর্ট পেলে হয়তো এ পতন ঠেকানো যেতো। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক তখন হয়ে ওঠেনি। বলা হয়, টিকোলো ওডায়ো ওদুম্বেদের খেলোয়াড়ি জীবন সমাপ্তির সঙ্গেসঙ্গে কেনিয়ান ক্রিকেটও তাদের পুরনো জুতো জোড়া শোকেসে তুলে রাখে।

মাঠের পারফরম্যান্সের বিচারে বাংলাদেশের থেকে ভালো দল হয়েও কেনিয়া টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি। পেলেও লাভ যে হতো না তা প্রথম শ্রেণির খেলার ফল বলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছড়ানোর যে সুবিধা আছে বা তখনও ছিল কেনিয়ায় তা কোনোদিন ছিল না। জিম্বাবুয়ে আগেই  টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও তাঁদের হাল ভালো না।

তবে হ্যাঁ, টেস্ট স্ট্যাটাস পেলে হয়তো পরবর্তীতে স্পন্সর ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা পেতো কেনিয়া। কিন্তু তা হয়নি। আইসিসি যে পরীক্ষা চালিয়েছিল নয়া উদারবাদী মডেলের ভিত্তিতে ক্রিকেট ছড়ানো তার প্রথম সফল উদাহরণ কেনিয়া, কিন্তু পরের পরীক্ষা (ডিভিশন লীগ, আন্ত মহাদেশীয়, দীর্ঘকালীন লীগ হয়ে আজকের কোয়ালিফায়ার) গুলোর কোনোটাই কেনিয়ার পক্ষে ইতিবাচক হয়নি।

পরের পর্ব গুলোয় আলোচনা করবো কীভাবে আইসিসির পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে অ্যাসোসিয়েটস ও অ্যাফিলিয়েট দেশ গুলিকে নিয়ে।

 

(ক্রমশ)

 

 

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *