“ইভেন্ট ব্যতীত ছোটো প্রকাশকের গতি নেই।”– বললেন বাসব চট্টোপাধ্যায়, কর্ণধার, সুচেতনা
১. কবে প্রকাশনা শুরু হল ও কীভাবে?
উত্তর: ছোটো থেকেই পারিবারিক ব্যবসা টাইপ ফাউন্ড্রি আর লেটার প্রেসের অনুসঙ্গে বড় হয়েছি।কলেজের গণ্ডি পেরিয়েই মুদ্রণ ব্যবসায় আস্টে পিস্টে জড়িয়ে গেলাম। একদিন বাবার মাস্টার মশাই পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্য চাকরির অবসরের পর দিন-পনেরো ছাত্রের বাড়িতে ছুটি কাটাতে এলেন।
কলকাতা পুলিশের উচ্চপদে চাকরি করবার সুবাদে পুলিশি জীবনের রোমাঞ্চকর কাহিনি আমরা দুইভাই হাঁ হয়ে শুনতাম।কথায় কথায় আমাকে একদিন মুদ্রণ ব্যবসার সংলগ্ন প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করার পরামর্শ দিলেন। কারণ ততদিনে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে ১০টা-৫টার বাঁধাঁ গতের কাজ করায় আমাদের অনিহা।নতুন কোনো কিছু করতে চাই যাতে সৃষ্টিশীলতা আছে। ছাপাখানার ব্যবসার সাথে শুরু হয়ে গেল প্রকাশনার তোড়জোড়। শিল্পী গৌতম চৌধুরী আমার প্রকাশনার লোগো এঁকে দিলেন।
২. কী ধরণের বই আপনারা প্রকাশ করছেন?
উত্তর: ১৯৯৯ সাল থেকে পথ চলছে সুচেতনা। ‘বই ছাপা নয় ছাপ রেখে যাওয়া’ —- প্রকাশন সংস্থা নিজের পরিচয় দেয় এই বিশ্বাস নিয়ে।কথাসাহিত্য,প্রবন্ধ,কবিতা,স্মৃতিকথা,ভ্রমণ, ইতিহাস, দর্শন ও অনুবাদ সাহিত্য–এমন নানা বিষয় সুচেতনার প্রকাশ-ভাবনার মধ্যেই পড়ে। এমনকি কোনো গ্রন্থের জনপ্রিয়তার দিকে তাকাতে গিয়ে কখনোই মেধা বা মননচর্চার গভীরতার বিষয়ে আপস করে না সুচেতনা। আসলে সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চার যে সুদীর্ঘ ধারা মানবসভ্যতার ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে তা পাঠকের কাছে অবিরত বহন করে চলাই ‘সুচেতনা’র প্রধানতম সংকল্প।
৩. আগামীর পরিকল্পনা।
উত্তর: আগামীদিনে যে সব পরিকল্পনা আছে তার মধ্যে ই-পাবলিকেশান অন্যতম। অন্যান্য পরিকল্পনাগুলি ক্রমশ প্রকাশ্য।
৪. আপনাদের প্রকাশিত প্রথম বই ও তার সলতে পাকানোর গল্প।
উত্তর: সুচেতনা প্রকাশিত প্রাথমিক বইগুলির মধ্যে সবচেয়ে মনে পড়ে অন্নদাশংকর রায়ের ‘শিক্ষার ভবিষ্যৎ ‘ গ্রন্থটির কথা।গ্রন্থ নির্মাণের সময় দিনের পর দিন অন্নদাশংকর রায়ের ফ্ল্যাটে যাওয়ার অসামান্য সব অভিজ্ঞতা। সেই উত্তাপ ভুলতে পারিনা। একদিনের কথা মনে পড়ে বইটির ভূমিকা লিখে দিতে অনুরোধ করলাম তাঁকে।আমার কাঁধে হাত রেখে বারান্দায় বসে ডিকটেট করছেন আর আমি লিখে যাচ্ছি। সে সব স্বপ্নের মত অনুভব। কত দ্বিপ্রহর কেটেছে তাঁর সাহিত্য জীবনের নানা উত্থানপতন শুনে।
৫. প্রথম কলকাতা বইমেলার অভিজ্ঞতা।
উত্তর:২০০৩ সালে কলকাতা বইমেলায় আমার প্রথম অংশগ্রহণ। স্ট্যান্ড প্যভেলিয়ান পেলাম সেবার।
৬. আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ দশটি বইয়ের নাম বলতে বললে কোন দশটি আসবে?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। প্রকাশকের কাছে প্রতিটি পুস্তক তাঁর সন্তানের মত। পাঠক প্রিয় হবে প্রত্যাশাতেই একএকটি বইয়ের পরিকল্পনা। নিজে সন্তুষ্ট না হয়ে আমরা বই প্রকাশ করি না। তবু বিক্রয়ের মানদণ্ডে ১০ টি গ্রন্থের উল্লেখ করলাম।
১. ঠগির আত্মকথা / ফিলিপ মিডোজ টেইলর
২. ইংরাজ বর্জিত ভারতবর্ষ/ পিয়ের লোটি
৩. প্রিয় প্রসঙ্গ / সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
৪. কোলাজে আমার কলকাতা/ চিত্ত ঘোষাল
৫. বৃহন্নলা সুরভির প্রেমকথা/ চিত্ত ঘোষাল
৬. আনক্যানি/ অমিত দেবনাথ
৭. ভারত ভ্রমণ / দীন মহম্মদ
৮. বনবন্দুকের ডায়েরি / এ মার্ভিন স্মিথ
৯. অজানা দশ শিরিজঃ
ক. এইচ পি লাভক্র্যাফট
খ. আর্থার কোনান ডয়েল
১০. পংখিলালের গুহা/ দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
৭. বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য প্রকাশকদের শুধু বিজ্ঞাপন ছাড়া বিকল্প পথ ভাবা জরুরি? সেটা কী হতে পারে? এই প্রেক্ষিতে প্রকাশকদের একসাথে কাজ করাটা কতটা জরুরি?
উত্তর: মোবাইল ভ্যানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পুস্তক প্রচার ও বিক্রয় করা যেতে পারে। ধর্মীয় পুস্তক যেভাবে বিক্রয় করা হয়। স্কুল গুলিতে মাসে একদিন পুস্তক প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সঙ্গে অডিও বুকের পরিকল্পনা করা। পেশাদারি পদ্ধতিতে অডিও বুক নির্মাণ।ছোটোদের আকর্ষণীয় বইগুলির পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেসান।
শহরের বিভিন্ন জোন ধরে কমপ্লেক্স গুলিতে একএকটি হল ভাড়া করে পুস্তক মেলা এবং আলোচনা সভা।
প্রকাশকরা একত্রে স্টোরিটেলিং সেশান অনলাইন এবং অফলাইনে আয়োজন করতে পারেন।একত্রে ভাবলে খরচ অনেক কম হতে পারে। ইভেন্ট ব্যতীত ছোটো প্রকাশকের গতি নেই।