সার্কাসের ইতিকথা : প্রান্তজনের করতালি। পর্ব ৯। বরুণদেব
২
কলম্বাসের আমেরিকা অভিযানের ছ’বছর পর ভারতের পশ্চিম উপকূলের কালিকট বন্দরে এসে ভিড়ল তিনটি ছোটো বিদেশি জাহাজ। তাদের নেতার নাম ভাস্কো দা গামা। এ দেশীয় ছোটো ছোটো নৌকাগুলি ফলমূল মাছ ডিম নিয়ে এসে সেই জাহাজগুলির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে লাগল। বিদেশি নাবিকরা কোনো দরদাম না করে কিনে নিল সেসব। তারা কি জন্য এসেছে জিজ্ঞাসা করা হলে একজন নাবিক উত্তর দিলো- খ্রিস্টধর্ম প্রসার ও মশলার কারবার। পর্তুগাল থেকে আসা এই বিদেশি জাহাজগুলির খবর পৌঁছাল কালিকটের জামোরিন রাজার কাছে।
পর্তুগীজরা যখন ভারতে এলো তখন উত্তরে আহমেদনগর ও বেরার, দক্ষিণে বিজাপুর ও গোলকোণ্ডা মধ্যভারতে বিদারের মতো বড়ো বড়ো রাজ্য ছাড়াও বেশ কিছু ছোটো বড়ো রাজ্য ছিল যেগুলির কোনোটা হিন্দু কোনোটা মুসলমান শাসকের অধীনে ছিল। গুজরাটে ছিল মুসলিম রাজত্ব। মালাবারে একাধিক ছোটো ছোটো হিন্দু রাজ্য ছিল। প্রাচীন বন্দরশহর কালিকটের জামোরিন উপাধিধারী রাজাদের মালাবার জুড়ে আধিপত্য ছিল দীর্ঘদিন ধরে।
সমুদ্রপথে করমণ্ডল থেকে মালয়শিয়ার মালাক্কা পর্যন্ত বাণিজ্যে হিন্দু চেট্টিয়ার, হিন্দু-মুসলিম চুলিয়াদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছিল।ভারতের পশ্চিম উপকূলের ব্যবসা বাণিজ্যে গুজরাটিরা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গুজরাট থেকে হিন্দুদের বিভিন্ন জাতি পূর্ব আফ্রিকায় বৈদেশিক বাণিজ্যে যুক্ত ছিল। কালিকট থেকে লোহিত সাগরের পথে বাণিজ্য ছিল মধ্য প্রাচ্যের মুসলিমদের দখলে। গুজরাট থেকে মালাবার হয়ে এডেন, সেখান থেকে মালাক্কা – এই পথ ছিল সবথেকে বড়ো সমুদ্র-পথ। গুজরাট থেকে মে মাসে টেক্সটাইল, কপার, আফিম, মশলাপাতি ইত্যাদি নিয়ে সমুদ্রযাত্রা শুরু করে জুনের শেষে পৌঁছানো যেত মালাক্কায়। সেখানে কিছু পণ্যের বিনিময়ে মিলত চিনের সিল্ক,পোর্সেলিন। এরপর সুমাত্রায় গিয়ে গোলমরিচ। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ, পেগু মায়ানমারের তেনাস্সেরিম (Tenasserim) ও অন্যান্য বঙ্গোপসাগরীয় বন্দরে চাল লাক্ষা ইত্যাদি বিকিকিনি। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া ছেড়ে মালদ্বীপে এসে বর্ষাকাল কাটানো। এরপর হয় গুজরাতে ফিরে আসা অথবা এডেনের দিকে চলে যাওয়া।
মালাবার ও গুজরাটের হিন্দুদের মধ্যে বিভিন্ন তথকথিত নিচু জাতির সাধারণ মানুষদের জীবন ও জীবিকা সমুদ্রকে ঘিরে। উপকূলীয় পথে জাহাজ চালিয়ে, জাহাজ বানিয়ে, সামুদ্রিক মাছ ধরে, তাদের দিন গুজরান। পর্তুগীজপূর্ব সময়ে রাজস্থান গুজরাটের বেনিয়ারা লোহিত সাগররের ও ইয়েমেনের হাদ্রামাউতের মতো বন্দরশহরে বসতি স্থাপন করে যেমন, তেমনি ভাস্কো দা গামার অভিযানের ছ’শো বছরেরও আগে থেকে মালাবারের জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র কালিকটে আরবের মুসলিম ব্যবসায়ীরা বসতি স্থাপন করে। মশলা, গোলমরিচ, আদা ও অন্যান্য ভারতীয় পণ্যের বর্হিবিশ্বে বিপণনে,দেশী ও বিদেশি বণিকদের কাছে বাণিজ্যবন্দর কালিকট ছিল অগ্রগণ্য। পর্তুগীজপূর্ব সময়ে ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যপথে আরব ও মিশরের মুসলমানরা ছিল প্রধান, এদের বলা হতো মুর।
ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ এর ২০শে মে কালিকট বন্দরে এলে, মুর-রা কালিকটের জামোরিন রাজাকে জানাল, এই বিদেশিরা এতদূরে স্রেফ ব্যবসা বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে নি, অন্য কোনো উদ্দেশ্যও আছে। আক্রমণের উদ্দেশ্যে চর হয়ে খোঁজখবর নিতেও আসতে পারে।কাজেই সাধু সাবধান। রাজা সে সাবধান বাণীতে বিশেষ কর্ণপাত করলেন না। ভাস্কো দা গামাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। গামা তাঁকে পর্তুগীজ রাজার চিঠি দিলেন যেখানে তিনি লিখেছেন, তাঁর রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের অনুমতি দিলে বাধিত হব।
ভারতীয় পণ্য মুরদের হাত হয়ে তুর্কীদের হাত ঘুরে পৌছাত খ্রিস্টধর্মাবলম্বী দেশগুলিতে। কন্সতানতিনোপোলের পতন হলে ইটালির বাজারে মধু, দারুচিনি ও অন্যন্য পূর্বদেশীয় পণ্যের অত্যধিক দাম বেড়ে যায়। ইউরোপীয় বাজার চায় সরাসরি ভারতীয় ভূখন্ডের সাথে বাণিজ্য করতে। দেড় লক্ষ জনবসতির পর্তুগালের রাজা চোদ্দ কোটি জনবসতির ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ভারতীয় ভূখণ্ডে সমুদ্রযাত্রার দায়িত্ব দিলেন ভাস্কো দা গামাকে। ইতিপূর্বে পর্তুগীজ নাবিক বার্তোলোমিউ দিয়াস উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে গিয়েছেন। সেই পথ ধরে দশ মাস সমুদ্রে কাটিয়ে ভাস্কো দা গামা পৌঁছলেন কালিকটে।
বাণিজ্য সফল হলো। গামা লিসবনে ফিরলেন। অভিযানের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়েছিল, হিসেব করে দেখা গেল, গোলমরিচ আর ওষুধ ভর্তি জাহাজে তার ষাট গুণ উঠে এসেছে। রাজা উচ্ছ্বসিত হয়ে গামাকে পুরস্কৃত করলেন, নাবিকরা পুরস্কৃত হলো, লিসবন শহর জুড়ে খানাপিনা, উৎসব। পর্তুগাল ইউরোপে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে নিল। ভবিষ্যৎ বাণিজ্য অভিযানকে ত্বরান্বিত করতে দ্বিতীয় অভিযানের দায়িত্ব পেলেন পেড্রো আল্ভারেজ কারবেল।
ষোড়শ শতকে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রধান প্রধান অংশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমুদ্রপথের ঘটনাবলীতে বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। তাঁদের রাজস্বের প্রায় পুরোটাই আসত স্থল থেকে। পর্তুগীজদের দ্বিতীয় অভিযান ১৫০০ সালে, তখনও পাণিপথের প্রান্তর ভারতীয় ভূখন্ডের ইতিহাসে দিক নির্দেশক হয়ে ওঠে নি। উত্তর ভারতে লোদি সাম্রাজ্য অস্তাচলে চলে গেলে চোদ্দ কোটি মানুষের মধ্যে এগারো কোটি মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে বাস করা ভারত ভূখণ্ডের মুঘল রাজকোষ মূলতঃ স্থল নির্ভর, প্রায় পুরোটাই ভূমি রাজস্ব। ১৫২৬ থেকে ১৫৩০ পর্যন্ত রাজত্ব করা বাবর কখনো সমুদ্র দেখেন নি। ১৫৫৬-১৬০৫ পর্যন্ত রাজত্ব করা আকবর ক্যম্বে উপসাগরে প্রথম বার সমুদ্র দেখে উচ্ছ্বসিত হলেন যখন, তাঁর বয়স তিরিশ বছর।
সমুদ্রতীরবর্তী রাজ্যগুলির রাজস্ব ছিল বন্দর নির্ভর। মালাবারে কালিকটের জামোরিন রাজারা ছাড়া কোচিন, কান্নুর, কোল্লাম ও আরও ছোটোখাটো রাজ্যগুলির রাজস্ব মূলতঃ ছিল বন্দর বাণিজ্য নির্ভর। বাণিজ্যের লভ্যাংশ, আমদানি রপ্তানি শুল্ক, পোর্ট চার্জ, রাজ্যগুলির কোষাগার ভরত। পাশাপাশি মশলা ও অন্যান্য চাষবাস থেকে, স্থলপথে পণ্য পরিবহন থেকে কর আদায় চলত।
ভারতীয় সমুদ্রপথের বিকিকিনিতে আরবীয় বণিকদের আধিপত্য। জলদস্যুদের হুঙ্কার থাকলেও এক শান্তিপূর্ণ সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল সে বিনিময় ও চলাচলে। সেখানে হানাহানি বিশেষ ছিল না, তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে যোগ্যতমের উদবর্তনের কথা বলত ভারতীয় মহাসাগর। মালাক্কা, কালিকট, ক্যাম্বে, দিউ, ব্রোচ, সুরাট ও অন্যন্য উপকূলবর্তী বাণিজ্যকেন্দ্রগুলির শাসকরা বাণিজ্যের উপযোগী সুযোগ সুবিধা প্রদান করেতেন। সমুদ্র ছিল সবার জন্য। বন্দর থেকে কোনো জাহাজকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করত না সেই অঞ্চলের শাসকরা। পর্তুগীজরাই প্রথম ভারতীয় সমুদ্রে হানাহানির রাজনীতি নিয়ে আসে।
১৫০০ সালের মার্চ মাসে তেরোটি নৌকা, বারোশো নাবিক, গোলাবারুদ এবং রাজার জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে লিসবন থেকে কালিকটের দিকে রওনা দেওয়া পর্তুগীজদের দ্বিতীয় অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল মালাবারের সমুদ্র উপকূলে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন। কালিকটের রাজার সঙ্গে চুক্তি হলো, বাণিজ্যকুঠিও পেল পর্তুগীজরা । কিন্তু মুর-রা বাধা দিলো। রাজাকে সে কথা জানানো হলো। রাজা দ্বিধাণ্বিত, কি করা উচিত। পর্তুগীজদের এই অভিযানের নেতা কারবেল বন্দরে থাকা একটি জাহাজ আক্রমণ করে বসলেন। দেশীয় ও আরব ব্যবসায়ীরা খেপে গিয়ে পর্তুগীজ বাণিজ্যকুঠি আক্রমণ করল, তিন ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস হলো সে কুঠি, তিপান্ন জন মারা গেল। কারবেল দু’দিন ধরে শহরের ওপর গোলা বর্ষণ করলেন, দশটা জাহাজ ধ্বংস করলেন, চলে গেলেন কোচিন। এই অভিযানে কালিকট ও ভারতীয় সমুদ্র পর্তুগীজ নৃশংসতার সম্মুখীন হলো। সমুদ্রপথে বণিজ্যের দখল নিয়ে আরব বণিক ও পর্তুগীজদের শত্রুতার এই শুরু। পরবর্তীতে বিভিন্ন বন্দরের ছোটোবড়ো দেশীয় রাজারা এই জলযুদ্ধের অংশীদার হয়ে যায়, সুবিধা অনুযায়ী কেউ আরবীয়দের পক্ষে, কেউ পর্তুগীজদের পক্ষে। কোচিনের হিন্দু রাজা কালিকটের জামোরিন রাজশক্তি ধ্বংস করে কালিকটকে নিজ অধীনে নেওয়ার লোভে সহযোগিতা করে বসেন পর্তুগীজদের। কোচিনের রাজার সহযোগিতা পর্তুগীজদের ভারতীয় সমুদ্রে আধিপত্যের প্রধান দোসর হয়ে ওঠে। কারবেল কোচিনে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করলেন। জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে গেলেন দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রী, কস্তুরী, রজন,পোরসেলিন, শ্বেত ও রক্ত চন্দন, কর্পুর, লাক্ষা, আফিম, নানা আয়ুর্বেদিক ওষুধ।
পর্তুগীজদের উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় বাজারে মশলা বাণিজ্যে একচেটিয়া অধিকার অর্জন এবং একই সঙ্গে এশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য থেকে কর আদায় ও এশীয় বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি নিজেদের হাতে রাখা। আর ছিল খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার। এ সবকিছুর মূলমন্ত্র ছিল বলপ্রয়োগ, দস্যুগিরি। ফলে সমুদ্রযাত্রায় আরব-মুসলমান ও ভারতীয় হিন্দু-মুসলিমদের মিলিত সুস্থ বাণিজ্য প্রতিযোগিতার বাতাবরণ ভেঙে গেল পর্তুগীজ জলদস্যুদের ঘূর্ণিঝড়ে।
১৫০২ সালে ভাস্কো দা গামাকে আবার ভারতে পাঠানো হয়। এই তৃতীয় অভিযানের উদ্দেশ্য খুব নির্দিষ্ট। বন্দর নগরগুলিতে নিজেদের দুর্গ বানানো এবং একই সঙ্গে ভারতের সমুদ্রে পর্তুগীজ নৌবহর মোতায়েন করে সমুদ্রের দখল নেওয়া। বাণিজ্যকুঠিগুলি ক্রমশঃ পর্তুগীজ দুর্গে পরিণত হলো। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে কোচিনে প্রথম পর্তুগীজ দুর্গ স্থাপিত হয়। দু’বছরের মধ্যে কান্নুরে। ১৫০৫ সালে প্রথম পর্তুগীজ ভাইসরয় ফ্রান্সিকো দে আলমেইদা ভারতে এসে পৌছান পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে। পর্তুগীজ দুর্গগুলি আর শুধুমাত্র নিজেদের পণ্যের সুরক্ষার ভুমিকায় রইল না, ভারতীয় মহাসাগরে ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাও নিল। বন্দর শহরগুলি পর্তুগীজদের নিয়ন্ত্রণে এলো। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে গোয়া এলো। পরের বছর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার প্রবেশ বন্দর মালাক্কা। ১৫১৫ সালে পার্সিয়ান গালফের মুখে হারমাজ এলো পর্তুগীজ দখলে। এই তিনটি শহরের দখল কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লিসবনে রাজাকে চিঠি লিখলেন ফ্রান্সিস্কো- মুখ্য প্রবেশপথগুলি আমরা দখল করে নিয়েছি। শুধু এডেন বাকি আছে। এডেন নিয়ে নিলেই ভারতীয় সমুদ্রপথের চাবিকাঠি লিসবনের হাতে।
খুব দ্রুত পর্তুগীজ উপনিবেশ প্রতষ্ঠিত হলো ভাররীয় ভূখণ্ডে। পর্তুগীজ-ভারতের রাজধানী ঘোষিত হলো গোয়া। গুজরাটের প্রসিদ্ধ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য বাসাইনের দখল নিল পর্তুগীজরা। বিভিন্ন বন্দর শহরে অন্ততঃ পঞ্চাশটি দুর্গ স্থাপিত হলো। এইসব দুর্গগুলি বিভিন্ন উপায়ে হাতে এলো। কখনো বলপ্রয়োগ করে, কখনো কোচিনের মতো স্থানীয় শাসক জামোরিন রাজার আধিপত্য ও প্রভাবে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে পর্তুগীজদের হাতের পুতুলে পরিণত হলেন। গোয়া ও মালাক্কা অধিকার করা হলো। দিউ, বাসাইন, দমন হাতে এলো শাসকদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে। ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে একশোটি নৌবহর মোতায়েন করে সমুদ্রশাসন করতে লাগল পর্তুগীজরা। ভারতীয় সমুদ্রে সে শাসন এমনই যে দোর্দণ্ডপ্রতাপ মুঘল সম্রাট আকবরকেও তীর্থযাত্রীদের জাহাজের জন্য অনুমতি নিতে হতো পর্তুগীজদের কাছ থেকে।
এই পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপনের পথে তারা শুরু থেকে সাহায্য পেয়ে এসেছিল দেশীয়দের। একদিকে যেমন কোচিনের হিন্দু রাজা পর্তুগীজদের দ্বিতীয় অভিযানের সময় থেকেই তাদের সহযোগিতা, আশ্রয়, বাণিজ্যকুঠি দিয়ে ভারতে পর্তুগীজ উপনিবেশ স্থাপনের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন, অন্যদিকে গোয়া অধিকার করার আগে হিন্দু অভিযাত্রী টিম্মায়া প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছিলেন আলবুকেরকে। মালিন্দি থেকে কালিকটের সমুদ্রযাত্রায় ভাস্কো দা গামার জাহাজের পাইলট ছিলেন একজন মুসলিম নাবিক, ইবন মজিদ। কারবেলের অভিযানে দু’জন গুজরাটি জাহাজী সহায়তা করেছিলেন। ব্যবসায়ী থেকে জাহাজী, সৈন্য থেকে সমঝোতাকারি বা চরবৃত্তি, প্রতিটি বিভাগেই স্থানীয় ভারতীয়দের নিয়ে একশো বছরের পর্তুগীজ সমুদ্র-আধিপত্য গড়ে উঠেছিল। পর্তুগীজদের হাতে ভারতীয়দের প্রবলভাবে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার পথে, এশিয়ার সমুদ্রের লর্ড হওয়ার পথে, ভারতীয় সহায়তায়, কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বর্ণ ছিল না। যুগে যুগে মীরজাফর, জগত শেঠ বা কোচিনের হিন্দু রাজাদের ক্ষমতা দখলের লালসার কোনো ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় হয় না।
(ক্রমশ)
