সার্কাসের ইতিকথা : প্রান্তজনের করতালি। পর্ব ৭। বরুণদেব

0

গত পর্বের পর

সপ্তদশ শতকের শেষে ইংলণ্ডে ঘোড়ার দাম পড়ে যায়। বাজারে জোগান মাত্রাতিরক্ত। ইতিহাসে প্রথম বার প্রায় সবাই একটি করে ঘোড়ার মালিক। বাজারে মন্দার কারণে ব্রিটিশ অভিজাতরা তাদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন আস্তাবলগুলি বন্ধ করে দিলে অশ্বারোহণের ট্রেনাররা দেশ জুড়ে বেকার হয়ে পড়ে। গ্রামে গঞ্জে সরাইখানায় শোম্যান হয়ে খেলা দেখিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন করতে  লাগে। এমনই একজন জ্যাকব বেটস। অসাধারণ দক্ষতায় ঘোড়সওয়ারের খেলা দেখাতেন, তার মধ্যে একটি ছিল একসঙ্গে চারটি ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠে খেলা দেখানো। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ অশ্বারোহী যিনি ইউরোপের নানা প্রান্তে, আমেরিকার ন্যু ইয়র্ক, বস্টন ও অন্যান্য শহরে তাঁর প্রদর্শনী নিয়ে গিয়েছিলেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে  ইংলণ্ড মজে ছিল ঘোড়সওয়ারের কসরতের প্রদর্শনীতে। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ঘোড়সওয়ারের খেলাকে জীবিকা করে নিতেন অনেকেই। অ্যাস্টলেও সেই পথেই পা বাড়ালেন। লন্ডনের দক্ষিণে  সারে (surrey) কাউন্টিতে স্ত্রীকে সঙ্গী করে খুলে ফেললেন তাঁর হর্স রাইডিং স্কুল। সকালে প্রশিক্ষণ, বিকালে শো। বৃত্তাকার এরিনায় ঘোড়সওয়ারের নানান খেলা দেখানো। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজের কাছে জমি লিজে নিয়ে খুলে ফেললেন ‘অ্যাস্টলে’স রাইডিং স্কুল’ । পঁয়ষট্টি ফুট ব্যাসার্ধের বৃত্তর মধ্যে ছাত্রদের নিয়ে খেলা দেখাতে লাগলেন। জনপ্রিয়তা পেলেন। কিন্তু একইসঙ্গে তাঁর মাথায় ঘুরতে লাগল, লণ্ডনের দর্শক টানতে তাঁকে আরও অন্য কিছু আইটেম যোগ করতে হবে। ঘুরতে লাগলেন থিয়েটারে থিয়েটারে।

গৃহযুদ্ধের সময়  আঠারো বছর নিষিদ্ধ থাকার পর  ১৬৬০-এ থিয়েটারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে  ইংলন্ডে থিয়েটারের পুণর্জাগরণ হল। ধনীর অভিজাত ঘেরাটোপ ছেড়ে বাণিজ্যিক থিয়েটার জন্ম নিল। অষ্টাদশ শতকের লন্ডন থিয়েটারে মজে ।

তৎকালীন থিয়েটারের সাথে ভিসুয়াল অ্যাক্ট অর্থাৎ জাগলিং, প্যান্টোমাইম, রোপড্যান্সিং – এগুলি জড়িয়ে ছিল। অ্যাস্টলে বুঝলেন, এই ভিসুয়াল অ্যাক্টই তাঁর শো-এ দর্শক টানবে। ১৭৭০-র লণ্ডনে রচিত হল এক ইতিহাস। অ্যাস্টলের শো-এ ঘোড়সওয়ারের খেলার সাথে জুড়ে গেল অ্যাক্রোব্যাটিক অ্যাক্ট, প্যান্টোমাইম, জাগলিং, টাইটরোপ ওয়াকিং, টাম্বলিং। সফল হল সে প্রচেষ্টা। জন্ম নিল আধুনিক যুগের সার্কাস, যদিও অ্যাস্টলে তাঁর প্রদর্শনীর সাথে ‘সার্কাস’ শব্দটি ব্যবহার করেন নি কোনোদিনই, ‘সার্কাস’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন লন্ডনের গীতিকার ও উদারপন্থী (charles dibdin) চার্লস ডিবডিন, যাঁর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অ্যাস্টলের এককালের সহযোগী ও পরে প্রতিদ্বন্দ্বী চার্লস হিউজ। কিন্তু সার্কাসের এরিনায় অ্যাস্টলে হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি, ভিত তৈরী করে দিয়েছিলেন আধুনিক সার্কাসের। ভাবী যুগ তাঁকেই করেছিল অনুসরণ। তাই অ্যাস্টলে ‘সার্কাস’ শব্দটি কখনো ব্যবহার না করলেও, ইতিহাস আধুনিক সার্কাসের বরমাল্য তাঁকেই পরায়।

থিয়েটারের প্রাঙ্গণ থেকে ভিসুয়াল অ্যাক্টরদের নিয়ে এসে লন্ডন ছেড়ে দল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন অ্যাস্টলে।ইংলন্ডের প্রায় সর্বত্র গড়ে উঠল অ্যাস্টলের অ্যাম্পিথিয়েটার। ফিলিপ অ্যাস্টলের পরিচয় হয়ে গেল অ্যাম্পি ফিলিপ। সাফল্য নিয়ে এলো জনপ্রিয়তা। নিয়ে এলো প্রতিযোগিতাও।

অ্যাস্টলের সহযোগী চার্লস হিউজ (hughes) দল ছাড়লেন। অ্যাস্টলের দেখানো পথ ধরে খুলে ফেললেন ‘হিউজ রাইডিং স্কুল’। এবং সফল হলেন। যুযুধান এই দুই প্রতিযোগীর আসরগুলি চুম্বকের মত মানুষকে আকর্ষণ করল। অর্থনৈতিক সাফল্য এলো। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাও। দু’জনেরই সঠিক লাইসেন্স না থাকায় সারে কাউণ্টির ম্যাজিস্ট্রেটরা তাঁদের শো বন্ধ করে দিলেন।

তল্পিতল্পা গুটিয়ে হিউজ ছাড়লেন ইংলণ্ড, চলে গেলেন ইউরোপ ট্যুরে। আট বছর আর ইংলণ্ডমুখী হলেন না। এই আট বছরে চলল অ্যাস্টলের একাধিপত্য। নতুন করে লাইসেন্স নিয়ে অ্যাস্টলে গোটা ইংলণ্ড জুড়ে তাঁর শো দেখাতে লাগলেন। আবার প্যারিসে তাঁর ‘ফিটস অফ হর্সম্যানসিপ’ দেখিয়ে রাজ-আনুগত্য লাভ করলেন। প্যারিস হয়ে গেল তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি।

আটত্রিশ বছর বয়সে অশ্বারোহীর ভূমিকায় টানলেন ইতি । কাঁধে তুলে নিলেন অশ্বারোহনের নির্দেশকের দায়িত্ব। পরবর্তীকালের সার্কাসের রিং-মাস্টারের যাত্রা, সেই শুরু।

ওদিকে আট বছর ইংলণ্ডের বাইরে কাটিয়ে লণ্ডনে ফিরলেন হিউজ। গীতিকার ও উদারপন্থী চার্লস ডিবডিনের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ১৭৮২-র ৪ঠা নভেম্বর চালু করলেন ‘হিউজ’স রয়্যাল সার্কাস’। ‘সার্কাস’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হল। থিয়েটারের স্টেজের সঙ্গে যুক্ত করলেন সাড়ে ছত্রিশ ফুট ব্যাসার্ধের রিং। এই স্টেজ ও রিঙ এর সম্মেলন সার্কাসের মডেল হয়ে গেল উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত। হিউজের রয়্যাল সার্কাস তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফেলে দিল অ্যাস্টলেকে। কিন্তু হিউজ বা ডিবডিন কেউই অর্থনৈতিকভাবে খুব শক্তপোক্ত ছিলেন না। তার ওপর অর্থ তছরুপের জন্য ডিবডিনকে দল থেকে তাড়ানো হলো। ব্যাঙ্কখেলাপী, লাইসেন্সের সমস্যায় জর্জরিত ‘হিউজ’স সার্কাস’-এর দীপ নিষ্প্রভ হতে শুরু করল। ১৮০৪ এ এক ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলো সার্কাস। ১৮১০-এ  এসে দীপ নিভে গেল চিরতরে। ‘হিউজ’স সার্কাস’ হয়ে গেল থিয়েটার হল।

এদিকে অ্যাস্টলে তাঁর সাম্রাজ্য বাড়িয়ে চললেন। ভারসাইয়ের রাণীর কোর্টে সার্কাস দেখিয়ে পেলেন তাঁর আনুগত্য। প্যারিসে বানালেন এক স্থায়ী অ্যাম্পিথিয়েটার। অ্যাম্পিথিয়েটার বানালেন আয়ারল্যাণ্ডেও। ইতিমধ্যে তাঁর ছেলে তাঁর অ্যাম্পিথিয়েটারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছে।

সময়ের যাত্রাপথ কখনো একরৈখিক নয়। ১৭৮৯-এ ফ্রান্সে শুরু হলো বিপ্লব। প্যারিস ছাড়তে হল অ্যাস্টলেকে। অ্যাম্ফিথিয়েটার লিজ দিয়ে দিলেন বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিকে। ইংলণ্ডে ফিরে ইংলণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় টুর করে বেড়ালেন। ১৭৯৩-এ আবার যুদ্ধের জীবন। ইংলণ্ড ও বিপ্লবী ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ। আবার সেই পুরনো ফিফটন্থ লাইট ড্রাগন। বয়স তখন ৫১ বছর। এদিকে আগুন লেগে গেল তাঁর লণ্ডনের অ্যাম্ফিথিয়েটারে। নতুন উদ্যমে  চালু করলেন, দিলেন নতুন নাম – ‘অ্যাস্টলে’স রয়্যাল গ্রোভ’ ।

১৮০২-এ আমিয়েন্সের শান্তিচুক্তিতে ফ্রান্সে শান্তি ফিরে এলে অ্যাস্টলে ফিরে এলেন প্যারিসে। নিজের অ্যাম্ফিথিয়েটারের জগতে। লণ্ডন ও প্যারিসে অ্যাস্টলে ততদিনে জীবন্ত কিংবদন্তি। ঘনিয়ে এলো শেষের প্রহর। পেটের অসুখে জেরবার হয়ে বাহাত্তর  বছর বয়সে বিদায় নিলেন এরিনা থেকে। মহাবিদায়ের সে দিনটা ১৮১৪-র বিশে অক্টোবর। শেষ হলো সার্কাস ইতিহাসের এক অধ্যায়। সার্কাসের অশ্বমেধ ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে অ্যাস্টলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্যারিসের বাতাসে।

শুধু ইংলন্ড নয়, ইউরোপের গ্রাম শহরেও ফিলিপের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। বিগ ফিলিপ, ফাদার ফিলিপ, অ্যাম্ফি-ফিলিপ, দ্য মোস্ট হ্যান্ডসাম ম্যান অফ ইংলণ্ড- নানা নামে ডাকা হতো তাঁকে। ফিলিপই প্রথম যিনি সমস্ত ধরণের অ্যাক্টকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছিলেন। প্রত্যেকটি জনপ্রিয় বিনোদনের দিকে তাঁর নজর। অঙ্ক কষে বিয়াল্লিশ ফুট ব্যাসার্ধের রিং এর মধ্যে হাজির করেছিলেন ট্রিকরাইডারদের। রিংয়ের ঐ ব্যাসার্ধ্যটাই আদর্শ হয়ে গেল পরবর্তীতে। রিঙয়ের মধ্যে অশ্বারোহীর নাটকে নিয়ে আসতেন নান সাম্প্রতিক ঘটনাবলী। দেখাতেন নেপোলিয়ানের যুদ্ধ। ফিলিপ তাঁর অ্যাম্ফিথিয়েটারে কখনো বন্যপ্রাণী ব্যবহার করেন নি।

চার্লস ডিকেন্স, জেন অস্টিন, উইলিয়াম থাকারে ও অন্যান্যদের লেখায় অ্যাস্টলে উঠে এসেছেন বারবার। তাঁর জীবনটাই এক অসমসাহসীর কাহিনী।  বাড়ি থেকে পালানো। সেনবাহিনীর জীবন। যখন তাঁর সার্কাস সাম্রাজ্য নিয়ে ততটা ব্যস্ত নন, তখন ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্রের হাতে আঁকা মানচিত্র  প্রকাশ করছেন, অশ্বারোহণের ওপর বই লিখছেন, রাজার যুদ্ধাস্ত্রের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন আবার ব্রিটেনের প্রথম হট এয়ার বেলুন আরোহণে ব্রিটেনবাসীদের উৎসাহিত করছেন। সেনাবাহিনী বা অশ্বারোহণের রিং, ব্যক্তিজীবন বা গোষ্ঠীজীবন, বারবার আর্থিক দূরবস্থায় পড়েছেন, বারবার সাহসের ওপর ভর করে এগিয়ে গিয়েছেন এবং জয়ী হয়েছেন। রাজভক্তি ও দেশভক্তি অটুট ছিল সারাজীবন।

ইতিহাসের এক ঘটনাবহুল অধ্যায়ে জীবন কেটেছে অ্যাস্টলের। রাজা জর্জ-২ এর রাজত্বকালে জন্ম, মৃত্যু রাজা জর্জ-৪ এর সময়। প্রথম যৌবনে ব্রিটেনের হাত থেকে আমেরিকান কলোনি হাতছাড়া হতে দেখেছেন। রাজশক্তির ওপর প্রজাদের রাগের প্রতিফলনে  লণ্ডনের কুখ্যাত দাঙ্গা দেখেছেন।

লণ্ডনে ফিলিপের তৈরী অ্যাম্ফিথিয়েটার পর্যটকদের কাছে অবশ্য দ্রষ্টব্য হয়ে গিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর অনেক পরেও, ভিক্টোরিয়ান যুগের শেষ দিকেও, শো-বিজনেসের এক অনন্য ব্র্যাণ্ডের নাম ফিলিপ। অ্যাস্টলে ঘোড়ার লাগাম হাতে রেজিমেন্টেড হয়েছিলেন দু’বার- যৌবনে ও প্রৌঢ় বয়সে। হুঙ্কার দিয়েছিলেন স্বদেশ ইংলন্ডের হয়ে, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। আবার সেই ঘোড়ার লাগাম হাতে যখন অ্যাম্ফিথিয়েটারে ছুটেছিলেন, ফ্রান্সের মন জয় করে নিয়েছিলেন। সার্কাস ইজ এ গ্রেট লেভেলার। ‘ও রে হাল্লা রাজার সেনা, তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল!’

ফিলিপ অ্যাস্টলে শুরু করেছিলেন আধুনিক সার্কাস-সংস্কৃতির যাত্রা। ছিলেন হিউজও। সার্কাস ছড়িয়ে পড়ল ঝড়ের গতিতে। এক দেশ থেকে আর এক দেশ। এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশ।

১৭৯৩ সালে হিউজ (hughes) সেন্ট পিটার্সবার্গে তাঁর সার্কাস নিয়ে গেলেন। ঐ একই বছরে হিউজের ছাত্র ঘোড়সওয়ার জন বিল রিকেটস (rickets) উইনাইটেড স্টেটসের ফিলাডেলফিয়াতে প্রথম সার্কাস খুললেন। ১৭৯৭ এ কানাডার মনট্রিয়েলের প্রথম সার্কাসেও ঐ রিকেটস। ফরাসী অশ্বারোহী লুই সুল্লিয়ের ১৮৫৪-য় চিনে সার্কাস শুরু করলেন। সার্কাসে নিয়ে এলেন চিনা অ্যাক্রোবাট, ট্রাডিশিনাল চৈনিক ব্যালান্স, জাগলিং এর খেলা। ইউরোপ জুড়ে প্রায় প্রত্যেক প্রধান প্রধান শহরে কমপক্ষে একটি করে সার্কাস তৈরী হলো। সার্কাস তখন থিয়েটারের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিত।

অষ্টাদশ শতকের শেষে ইংলণ্ডের ছোট ছোট শহরে সার্কাস পৌঁছে গেল। উনবিংশ শতাব্দীতে রেলগাড়ি এসে সার্কাসের প্রসারে অনুঘটকের কাজ করল। ১৮৭০-র দিকে ট্রেনে করে প্রচুর সার্কাসের দল ইউরোপ আমেরিকা ভ্রমণ করত। বড় সার্কাস ইংলণ্ডের শহরে এলে সার্কাসের প্যারেড হতো রাস্তা দিয়ে। সেটা ছিল  বিজ্ঞাপন। রাস্তার দু’ধারে প্রচুর লোক জড় হত। ১৮৯৯ সালে বার্নাম এন্ড বেইলির সার্কাস যে প্যারেড প্রিন্স অফ ওয়ালেস রোড দিয়ে, সে প্যারেডে মিলিটারি ব্যান্ড বাজিয়ে সত্তরটি ঘোড়ার শোভাযাত্রা। সে রাস্তায় পড়ে মে ফেয়ার পাব, ক্ষতিগ্রস্ত হলো ঘোড়ার শোভাযাত্রায়। সার্কাসের যে অস্থায়ী বাড়িগুলো ছিল, সেগুলিতে আগুন ধরে যেত প্রায়ই। আমেরিকায় ১৮৬১তে খেলা চলাকালীন  সিলিং এর প্লাস্টার খসে পড়ে।

ইটালিয়ান অ্যান্টনিও ফ্রাঙ্কনির হাত ধরে প্রথম ফরাসী সার্কাস সাম্রাজ্য তৈরী হয়েছিল। অ্যান্টনিও ফ্রাঙ্কোনিকে অ্যাস্টলের  পাশাপাশিই আধুনিক সার্কাসের কো-অর্ডিনেটর ধরা হয়। ১৮২৫-এ জোসাহ পুরডি ব্রাউন প্রথম সার্কাস-মালিক যিনি সার্কাসে বড় ক্যানভাসের তাঁবু ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৩৬-এ ব্রিটিশ অশ্বারোহী থমাস কর্ক  ইউনাইটেড স্টেটসে গিয়ে ইংলণ্ড ফিরলেন যখন, নিয়ে এলেন সার্কাসের তাঁবু। এই তাঁবু ইউরোপিয়ান সার্কাসের দলগুলিকে উৎসাহিত করল। সার্কাস আক্ষরিক অর্থে ভ্রাম্যমাণ হয়ে গেল।১৮৬৬-তে ফরাসী সুল্লিয়ের ইউরোপিয়ান সার্কাসে চিনা অ্যাক্রোবাটিক্স নিয়ে আসেন। আমেরিকান সার্কাসে বিপ্লব এনেছিলেন পি টি আরনাম ও উইলিয়াম ক্যারুন কু। সার্কাসের প্রদর্শনীতে পশু আমদানি করা আমেরিকানদের কাজ।

এবং সার্কাস জন্ম দিল এক বিশ্বভ্রামনিকের। ইতালিয়ান জিউসেপ্পে চিয়ারিনি। সার্কাস নিয়ে আজীবন ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে দেশান্তরে।

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply