সৌভাগ্যশলাকা। ধারাবাহিক উপন্যাস। পর্ব ১৪। লিখছেন অলোক সান্যাল

0

(গত পর্বের পর)

ঈশ্বরের জন্য প্রস্তুত পথ

……………………………………..

রাতের গর্ভ থেকে দিনের আলো ফুটতে দেখেছেন জোনাথন। প্রথম নয়, এমন দৃশ্যের নিয়মিত সাক্ষী তিনি। শরীর তার যান্ত্রিক নিয়মে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দু চোখের পাতা এঁটে বসে, তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়৷ অন্ধকার নামলেই অতীত নরক থেকে উঠে আসে! অশরীরী আত্মার মতো বিরাটাকৃতির একটা ছায়া, হয়তো সেই ছায়া তাঁর নিজেরই, দুটো হাত বাড়িয়ে ধরতে চায়৷ জোনাথন পালাতে চান। প্রাণপণে। পথ খোঁজার ক্লান্তিতে ভিজে ওঠে বিছানা। অতীতের আতঙ্ক জাগিয়ে তোলে তাঁকে। আর তারপর, বাকি সময় কেবল অপেক্ষার। অন্ধকারের ওপারেই আছে আলো। আলোর অপেক্ষা। আজও এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। ঘড়ির হিসেবে বড়জোর ঘণ্টা দুই-আড়াই বিশ্রাম নিতে পেরেছেন। বাকি রাতটুকু বন্ধ জানালার সামনে অনন্ত অন্ধকারের মুখোমুখি বসে কাটিয়েছেন। যেন এও এক যুদ্ধ। অন্তহীন। বিরামহীন যুদ্ধ। তামস রাত্রির চোখে চোখ রেখে স্বপ্নে হেরে যাওয়া লড়াইকে বাঁচিয়ে রাখা।

টানা পর্দার ফাঁক দিয়ে একটুকরো নরম আলো লুকিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল বিছানায়। এমা পাশ ফিরতেই বিছানা ছেড়ে তার মুখে উঠে পড়ল। ঠেলে তুলল তাকে। চোখ খুলে কোথায় আছে বুঝতে মিনিট দুয়েক সময় লাগল এমার। গত রাতের কথা মনে পড়তেই তড়াক করে উঠে বসল সে। জোনাথন ডারওয়ার্ড এই বাড়িতেই আছেন! নিচে। এমন একজন নৃশংস মানুষের উপস্থিতিতে সে গোটা রাত নিশ্চিন্তে বিছানায় কীভাবে কাটিয়ে দিল? অথচ গতরাতে ঘরে ঢোকার আগে এলিনকে বারবার সাবধান করে দিয়েছিল। সাবধান করেছিল নিজেকেও। ভাইয়ের কথা মনে  পড়তেই এমা দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে এল। এমনকি স্লিপার পরার কথাও বেমালুম ভুলে ছিটকে বেরিয়ে এল ঘর ছেড়ে। সামনের ঘরেই এলিন। জগতের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তুটিকে হারিয়ে ফেলার উন্মাদনায় সে দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করল।

‘এলিন… এলিন…এলিন…’

ধবধবে সাদা কুইল্ট গায়ে মুড়িয়ে দরজা খুলল এলিন। লম্বা চেহারা আর কুইল্টের ফাঁক গলে বেরিয়ে থাকা মুখে তাকে রাজ হাঁসের মতো লাগছে। বেচারাকে বোনের প্রবল ধাক্কাধাক্কির চোটে প্রায় লাফিয়ে এসে দরজা খুলতে হয়েছে। লুটিয়ে পড়তে চাওয়া চোখের পাতাকে সে বার কয়েক ডলে ঘুমকে পাকাপাকিভাবে বিদায় জানাল।

‘কী হলো? সকাল হতে না হতেই লাফালাফি শুরু! কোনো মানে হয়!’

‘তোর আক্কেল বলিহারি! ভুলে গেছিস হিংস্র শ্বাপদের সঙ্গে একই গুহায় বাস করছি আমরা। এত নিশ্চিন্তে ঘুম আসে কী করে?’

‘হিংস্র শ্বাপদ! গুহা!’

হাই অর্ধেক উঠে মাঝপথেই থেমে গেল এলিনের। বুঝতে দু’দণ্ড সময় নিল সে। তারপর জোরে হেসে উঠল।

‘বুঝেছি… বুঝেছি। তুই মি. ডারওয়ার্ডের কথা বলছিস তো? লোকটাকে একেবারে বাঘ-ভাল্লুক বানিয়ে ফেললি দেখছি!’

‘তার থেকেও ভয়ংকর।’

‘সেই ভয়ংকর মানুষটাই আমাদের সামিরা এবং তার দলবলের খপ্পর থেকে বের করে এনেছে সিস্টার। নইলে এতক্ষণে…’

এলিনকে থামতে হলো। চিৎকার এবং ধাক্কাধাক্কি নির্ঘাৎ নিচের তলাতেও পৌঁছে গিয়েছিল। প্রৌঢ় ধনকুবের সিঁড়ির মুখে উঠে এসেছেন।

‘কোনো সমস্যা এলিন?’

‘না না। তেমন কিছু নয়। এমা স্বপ্নে ভয় পেয়েছে।’

‘তোমার বোনের দুঃস্বপ্নে আমিই কি হানা দিয়েছিলাম?’

তির্যক প্রশ্নটা ছুঁড়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন জোনাথন ডারওয়ার্ড জুনিয়র। এমাও পালটা কটকটে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল।

‘ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। কফি তৈরি আছে।’

এমার চাহনিকে উপেক্ষা করে নিচে নেমে গেলেন তিনি। এলিন দু পা এগিয়ে বোনের কাঁধে হাত রাখল। তারপর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলল, ‘ডোন্ট ওরি ডিয়ার, হোয়াইল এলিন ইজ হিয়ার। যা, ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর আবার তো তোদের রিসার্চ শুরু হবে। তখন ওই হিংস্র শ্বাপদের সঙ্গেই দিব্যি খোশ গল্প জুড়ে দিবি, আর আমি একপাশে পড়ে পড়ে গড়াগড়ি খাব।’

ভাইয়ের কাঁধে আদুরে কিল মেরে এমা নিজের ঘরে ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ করতে একটু বেশিই শক্তি খরচ করল সে।

মিসেস ভ্যালাসের দেওয়া গতকালের পোশাক পরেই নিচের টেবিলে এসে বসেছিল দুই ভাইবোন। জোনাথন ইতিমধ্যেই ব্রেকফাস্টের আয়োজন সেরে ফেলেছেন। রসালো বেকনের সঙ্গে গ্রিল করা টম্যাটো এবং স্ক্র‍্যাম্বলড এগ। কফি তো আছেই। ভদ্রলোকের ইতিহাসে ঝোঁকের কথা এমার অজানা ছিল না। রান্নার ক্ষেত্রেও সমান আগ্রহ! তাদের বসতে দেখে জোনাথন বললেন, ‘তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করা দরকার। এক কাজ করা যেতে পারে, কাছাকাছি একটা বাজার আছে। ছোটো, তবে দরকারি জিনিসপত্র পেতে অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। ব্রেকফাস্ট সেরে হাঁটা দেবে?’

‘তার আগে দ্য গ্রোট অক্স ফিস থেকে যে ছবিগুলো তুলে এনেছেন, দেখি।’

‘পরীদের গুহা! এতক্ষণে ড. এমা মিলারকে খুঁজে পেলাম। সরাসরি কাজে নেমে পড়ার সেই পুরোনো তাগিদ। বরাবর তোমার এই গুণকে শ্রদ্ধা করে এসেছি এমা।’

ঠোঁটের কাছ থেকে কফির পেয়ালা নামিয়ে রাখলেন জোনাথন। মোবাইলটা টেবিলের ওপরেই রাখা ছিল। ঝকঝকে নতুন। গোটা ফ্রান্স জুড়ে অরেঞ্জের একাধিপত্য। সকালেই হ্যান্ড সেটে অরেঞ্জের নতুন নম্বর ভরে রেখেছেন। তখন এমার চিৎকারে ছুটে যাওয়ায় যন্ত্রটিকে সচল করার কথা আর মনে ছিল না। জোনাথন ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে বোতামে আঙুল ছোঁয়ালেন। আধখাওয়া আপেল ভেসে উঠলে সেটা এমার হাতে দিয়ে বললেন,

‘ছোটো স্ক্রিনে ভালো বোঝা যাবে বলে মনে হয় না।’

‘সমস্যা নেই।’

প্লেট থেকে একটা বেকন মুখে তুলে চিবুতে চিবুতে বলে উঠল এলিন। আঙুল দিয়ে দেয়ালে ঝুলন্ত টিভিকে নির্দেশ করে যোগ করল, ‘এটা যদি মরে না গিয়ে থাকে, দিব্যি কাজ চলে যাবে মনে হয়।’

মোবাইলের শক্তিশালী ক্যামেরা, এবং যোগ্য হাত। জোনাথন ডারওয়ার্ড তাড়াহুড়োতেও দৃশ্যগুলো দারুণ ফ্রেমে ধরেছেন! মনে মনে তারিফ করল এমা। আলোর অভাবে পুরোটাই ফ্লাশে তোলা। সেই অসুবিধাকে সরিয়ে রেখেও দিব্যি বোঝা যায়। একটা গুহা। ঠিক মাঝামাঝি উঁচু হয়ে আছে একটা পাথরের বেদী বা ঐ জাতীয় কিছু।

‘ওটা সম্ভবত কারোর সমাধি। অন্তত কাছ থেকে দেখে আমার তাই-ই মনে হয়েছে। এত গোপনীয়তায় রাখা যখন, সেন্ট মরিসের আসল সমাধি হতে পারে।’

ক্যামেরার লেন্স সমাধি থেকে দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল। ২৮৬ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বরের এক অভিশপ্ত দিনের সাক্ষ্য বহন করছে পাথরের গায়ে ফুটিয়ে তোলা ছবিগুলো।

‘শিল্পীর হাত সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো। ছেনি হাতুড়ি দিয়ে এমন ছবি আঁকা!’

টিভির সচল পর্দা এলিনকেও স্থির করে দিয়েছিল। হাতের কাপে চুমুক দিতে সে টের পেল, কফির উষ্ণতা উধাও হয়েছে৷ সূর্যদেব দেখা দিয়েছেন ঘণ্টা তিনেক হলো। পারদ রাতের থেকে বড়জোর দু ডিগ্রি উঠেছে। যথেষ্ট ঠাণ্ডা। কফির মোহ ছেড়ে এলিন আবার টিভিতে চোখ রাখল। লেন্স এবারে সমাধি টপকে বিপরীত দিকের দেয়ালে ইতিউতি কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। আটকানোর মতো তেমন কিছু চোখে পড়ল না।

‘মাঝের উঁচু অংশটা যদি সমাধি হয়, এবং সেন্ট মরিসেরই হয়, তবে সৌভাগ্য শলাকাটি ওখানে থাকার ষোলোআনা সম্ভাবনা।’

বিজ্ঞের মতো থুতনিতে আঙুলের টোকা মেরে বলল এলিন।

‘আর শলাকাটি সেন্ট মরিসের কাছে কীভাবে এল?’

বোনের প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জবাব দিল সে, ‘কোনো মানে হয়! সেন্ট মরিস জিনিসটা কোত্থেকে পেলেন আমি কীভাবে জানব?’

‘আগে তো সেটাই জানা উচিত। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে এবং তার পরেও অনেক বছর রোমান লিজিয়নে একটা প্রথা ছিল। লিজিয়নে যোগ দেওয়ার জন্য যাবতীয় উপকরণ ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা।’

‘মানে! রাজার হয়ে লড়ব আমি, আর আমাকেই টাকা দিয়ে ঢাল তরোয়াল কিনতে হবে!’

‘ইয়েস ব্রাদার। তবে দীর্ঘ যোদ্ধা জীবনের শেষে যদি ধরে প্রাণ থাকে, অবসরে বেচেও দিতে পারো।’

‘এমা ভুল কিছু বলেনি।’

জোনাথন এতক্ষণ চুপচাপ নিজের ভাগের ব্রেকফাস্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এর মাঝে, এমনকি স্ক্র‍্যাম্বলড এগ টুকরো করার সময়েও প্লেট ও ছুরি সংঘাতে এতটুকু শব্দ কানে আসেনি!

‘সারভিয়াস টুলিয়াস, রোমের কিংবদন্তি সম্রাট, জনসংখ্যা বিভাজনের একটা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। মূলত অর্থই ছিল তার মাপকাঠি। তাঁর সেই নীতি রোমান লিজিয়নে মেনে চলা হতো। বরাবর। অর্থাৎ তুমি যদি ধনী শ্রেণির তকমা পেয়ে যাও, সবচেয়ে আধুনিক মূল্যবান সমরাস্ত্র নিজের সঙ্গে বহন করতে পারবে। একটা লিজিয়নে সবার ওপরে আট হাজার যোদ্ধা ছিল, যারা প্রত্যেকেই সমাজের ধনী পরিবার থেকে আসা। এই প্রথম শ্রেণির যোদ্ধারা সব রকমের রোমান অস্ত্র, ভারী ব্রোঞ্জের বর্মে সজ্জিত ছিল। এদের নিচে আরও তিন শ্রেণির যোদ্ধা, যারা অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির, হালকা বর্ম, কম উন্নত অস্ত্র নিয়েই তাদের যুদ্ধ করতে হতো। একেবারে নিচে ছিল যারা, কপর্দকহীন, তাদেরও রোমের জন্য রক্ত ঝরানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হতো না। অবশ্য বেশি কিছু জুটত না তাদের। গুলতি আর পাথর। অস্ত্র যাই হোক, অবসরের সময় লিজিয়নের সদস্যরা তা রোমান আর্মারিতে বিক্রি করে দিত। কেউ কেউ অবশ্য বংশধরের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রেখেও দিত।’

‘বাহ্। অর্থের মাপকাঠিতে সরকারি সুবিধার অগ্রাধিকার। টুলিয়াসের নিয়ম দেখছি জবর শক্তপোক্ত! কয়েক হাজার বছর পরে আজও দিব্যি টিকে আছে।’

অর্ধসমাপ্ত কফির পেয়ালা হাতে উঠে দাঁড়ানোর ফাঁকে বলল এলিন।

‘তা আছে। কিন্তু এমার প্রশ্ন সম্ভবত অন্য কোথাও আটকে আছে। আমরা ধরতে পারছি না। তাই না?’

জোনাথনের প্রশ্নে মৃদু ঘাড় নাড়ল এমা।

‘সেন্ট লংগিনাস একজন খাঁটি রোমান ছিলেন। বিভিন্ন গসপেল থেকে তাই জানা যায়। এদিকে শাহাদাতপ্রাপ্ত সেন্ট মরিস এসেছিলেন ইজিপ্ট থেকে। একজন কপটিক খ্রিস্টান। তাহলে এই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক কোথায়? লংগিনাসের বর্শা থেবান লিজিয়নের কমান্ডারের হাতে এল কীভাবে? বিশপ থিওডরের লেখা কেবল সেন্ট মরিসের হাতে সেই আশ্চর্য বর্শা থাকার কথা বলে। কমবেশি আড়াইশ বছর আগে-পরে জন্মানো লংগিনাস এবং কমান্ডার মরিসের মধ্যে দূরতম কোনো সম্পর্ককেও প্রতিষ্ঠা করার রাস্তায় তিনি হাঁটেননি। তাহলে কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে সেন্ট মরিসের হাতের বর্শাই ঈশ্বরের সন্তানের হৃদয় ছুঁয়েছিল?’

‘কঠিন প্রশ্ন! তাহলে তো একটা কিন্তু থেকেই যায়।’

চিন্তিত সুরে কথাটা বলে উঠে গেলেন জোনাথন। এলিন নিজের কাপ সিঙ্কে রেখে এল।

‘তোর অনুমান, ফোর্ট সিণ্ডের ওই পরীদের গুহায় যারই সমাধি থাক, হোলি লেন্স ওখানে নেই? তাহলে আমাদেরও খামোখা ঝুঁকি নিয়ে আবার সিংহের গুহায় মাথা না গলানোই উচিত।’

‘কিছু না কিছু তো আছেই।’

দরজার মুখ থেকে কথাটা ভেসে এল। জোনাথন চুরুট ধরাতে উঠে গিয়েছিলেন। একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে তিনি যোগ করলেন,

‘নইলে এত সাবধানতা কেন?’

দু’জনের কারোর কথাই এমার কানে ঢুকছিল না। সে একমনে টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আবার আগের ফ্রেম। অন্ধকার গুহার মাঝামাঝি উঁচু হয়ে থাকা বেদী, অথবা সমাধি। যাইহোক না কেন, তার গায়েও বিচিত্র কিছু ছবি পাথর কুঁদে তৈরি করা। এমা দু আঙুলে মোবাইলের ছবিকে জুম ইন করল। অদ্ভুত ছবি! মাটারডামের দৃশ্য নয়। যুদ্ধেরও নয়। মুখোমুখি দুজন মানুষ। একজনের শরীর সম্ভবত মাটিতে অর্ধেক প্রোথিত। অন্যজন তার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশে আরও একটা দৃশ্য। উঁচু মিনারে পাশাপাশি দুজন মানুষ। মাঝখানে পাহাড় বা ত্রিভুজ জাতীয় কিছু আঁকা। নিচে আবার সেই বিজাতীয় ভাষা খোদাই করা।

‘এই ছবিগুলোর কোনো অর্থ থাকতে পারে। চেনা দৃশ্য নয়। সেন্ট-মরিসে চার্চ থেকে শুরু করে লাইব্রেরি, সব জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিশুর জীবনের ঘটনা এবং মাটারডামের দৃশ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গুহার দেয়ালেও তাই। কেবলমাত্র পাথরের বেদীতে অন্যরকম ছবি। কেন?’

কাউকে নয়, প্রশ্নটা নিজেকেই করল এমা। তবে তার কথাগুলো কৌতূহলী করে তুলল ঘরের বাকি দু’জনকেও। জোনাথন দরজার মুখ থেকে সামান্য সরে চোখ রাখলেন দেয়ালের ঝুলন্ত টিভি-তে। এলিনও ফ্রিজের কাছ থেকে সরে এমার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

‘ঠিক বলেছিস, সেন্ট-মরিসের অন্য ছবিগুলোর থেকে এটা দেখছি একেবারে আলাদা! অর্ধ মানুষ, তাকে আশীর্বাদ করছেন কেউ। খ্রিস্ট?’

‘না।’

স্পষ্ট এবং দৃঢ় শোনাল জোনাথনের কণ্ঠস্বর। তাঁর ডান হাতে ধরা চুরুট মুখের সামনে। তবে ঠোঁট ছোঁয়নি। হয়তো স্ক্রিনের দৃশ্য জোনাথনকে থামিয়ে দিয়েছে।

‘প্রভু জিশুর ব্যাপ্তাইজ হচ্ছে। তিনি জল থেকে উঠে আসছেন। তাই শরীরের অর্ধাংশ আঁকা হয়েছে। সামনে হাত বাড়িয়ে রয়েছেন যোহন। মাথার ওপরে দুটো লাইন টানা রয়েছে দেখতে পাচ্ছ? মাঝে একটা গোল মতো কিছু। অস্পষ্ট। বড়ো করার জন্য জায়গাটা ব্লার হয়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে না। খুব সম্ভবত ওটা একটা কপোত। মাথার ওপরে আকাশের দরজা খুলে গেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে ঈশ্বরের আত্মা। কপোতের রূপ নিয়ে। আমি নিশ্চিত, শিল্পী জিশুর ব্যাপ্তাইজের ছবি এঁকেছেন।’

 

(ক্রমশ)

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *